মুজিব নগর হেডকোয়াটার্সে আমরা পৌছানোর পর কর্নেল ওসমানী মুক্তিযুদ্ধ কিভাবে শুরু হয়েছিল; বর্তমান এবং ভবিষ্যত নিয়ে এক বিশদ বিবরণ দিলেন। তিনি শুরু করলেন, “তোমাদের মনে রাখতে হবে ২৫শে মার্চের পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত আক্রমনের পর ২৬শে মার্চ থেকে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামে প্রথমে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙ্গালী সৈনিক, প্রাক্তন ইপিআর, আনসার, মুজাহিদ ও সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর বীর জোয়ানরা। ২৬-২৭শে মার্চ মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়ে বীর জোয়ানদের সঙ্গে স্বতঃস্ফুর্তভাবে এসে যোগ দিয়েছিলেন ছাত্র, যুবক এবং আপামর জনসাধারণ। সর্বপ্রথম যুদ্ধ হয় নিয়মিত পদ্ধতিতে। আর এই পদ্ধতিতে যুদ্ধ চলতে থাকে মে মাস পর্যন্ত।
শত্রুকে ছাউনিতে যথাসম্ভব আটকে রাখা এবং যোগাযোগের কেন্দ্রসমূহ তাদের কব্জা করতে না দেয়ার জন্য নিয়মিত বাহিনীর পদ্ধতিতে যুদ্ধ করা হচ্ছিল। নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল, যত বেশি বাধা সৃষ্টি করা যায় তা সৃষ্টি করা হবে। যে সমস্ত ন্যাচারাল অবস্ট্যাকল রয়েছে তা রক্ষা করতে হবে, সাথে সাথে শত্রুর প্রান্তভাগে এবং যোগাযোগের পথে আঘাত হানতে হবে। মূলতঃ এটাই ছিল নিয়মিত বাহিনীর রণকৌশল। সংখ্যায় তুলনামূলকভাবে কম হওয়া সত্ত্বেও নিয়মিত বাহিনী অত্যন্ত বীরত্বের সাথেই এ পদ্ধতিতে যুদ্ধ করে।
কোন কোন ক্ষেত্রে একটি রেজিমেন্টকে দু’টি ব্রিগেডের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করতে হয়। সংখ্যায় কম থাকায় নিয়মিত বাহিনীর রণকৌশলে পরে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছিল। কমান্ডাররা ছোট ছোট পেট্রোল বা ছোট ছোট কোম্পানী, প্লাটুনের অংশ দিয়ে শত্রুপক্ষের তুলনামূলক অধিক সংখ্যক সৈন্যকে এনগেজড করে রাখছিলেন। একই সাথে শত্রুর উপর আচমকা হামলাও চালানো হচ্ছিল। এভাবেই চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, রাজশাহী, দিনাজপুর, যশোর, খুলনাতে যুদ্ধ পরিচালিত হচ্ছিল।
সে সময় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডাররা বুঝতে পারছিলেন, কেবলমাত্র নিয়মিত পন্থায় যুদ্ধ চালানো সম্ভব নয়। কারণ তখনকার পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করছিল সর্বমোট ৫টি ব্যাটালিয়ন। তাদের সাথে ছিল ইপিআর, আনসার, মুজাহিদ, পুলিশ, ছাত্র, যুবক ও জনতা। কমান্ডাররা ছাত্র যুবকদের অল্প কিছুদিনের ট্রেনিং দিয়ে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে যোদ্ধার সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করেন। এ ধরণের শক্তি দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে পাক বাহিনীর ৩-৪টি ডিভিশনকে বেশিদিন ঠেকিয়ে রাখা কিছুতেই সম্ভব ছিল না।
তাদের উপুর্যপরি আক্রমনের মুখে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিরোধ ক্রমশঃই দুর্বল হয়ে পড়ছিল। সে ক্ষেত্রে শত্রুপক্ষের এই বিশাল শক্তিকে ধ্বংস করে দেশকে স্বাধীন করা অসম্ভব হয়ে উঠে। তখনই কমান্ডাররা অনুভব করেন তাদের প্রস্তুত হতে হবে দীর্ঘস্থায়ী গেরিলা যুদ্ধের জন্য। এই পাঁচটি ব্যাটালিয়নকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলতে হবে এক বিশাল গেরিলা বাহিনী। একমাত্র বিশাল গণবাহিনীই পারবে শত্রুপক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে নিউট্রেলাইজড করতে।
এ গণবাহিনী এমনভাবে সংগঠিত করতে হবে যেমন মানুষের পেটের অন্ত্র্রে একটি শক্তিশালী জীবানু অন্ত্রটিকে ধ্বংস করে দিতে পারে, তেমনি ভেতর থেকে শক্তিশালী দক্ষ গেরিলা বাহিনী শত্রুর অন্ত্রকেও বিনষ্ট করে দেবে। এছাড়া দেশকে স্বাধীন করা সম্ভব নয়। কারণ শত্রুপক্ষের সংখ্যা বেশি। ওদের বিমান বাহিনী রয়েছে তাছাড়া সম্বলও তাদের অনেক বেশি।
কর্নেল ওসমানীর কথা শুনে মনে প্রশ্ন দেখা দিল? ২৫শে মার্চ রাতে পাক বাহিনী যদি নিরীহ জনগণের উপর পৈশাচিক শ্বেত সন্ত্রাস না চালাত; একই সাথে ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, আনসার, মুজাহিদ, পুলিশ এবং অন্যান্য সামরিক ইউনিটগুলোর বাঙ্গালী সদস্যদের উপর হামলা না চালাত; তবে কি স্বাধীনতা যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটত? স্বাধীনতার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তেন বাঙ্গালী বীর জোয়ানরা? এ ধাঁধাঁর জবাব ঐতিহাসিকরাই আগামীতে খুঁজে বের করবেন সে বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে চললাম।
কর্নেল ওসমানী বলে চলেছেন, “আমার বিশ্বাস ক্লাসিক্যাল গেরিলা ওয়ারফেয়ার করে দেশ মুক্ত করতে হলে বহুদিন যুদ্ধ করতে হবে এবং ইতিমধ্যে আমাদের দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ জনসম্পদ। সেটা ধ্বংস হয়ে যাবে। ”
জনাব ওসমানীর কথায় টিপিক্যাল মধ্যবিত্ত সুবিধাবাদী চিন্তাধারা পরিষ্কারভাবে ধরা পড়ল। পৃথিবীর কোন জাতি তাদের মুক্তি অল্পত্যাগে পেয়েছেন বলে আমার জানা নেই।
যারা হয়তো বা পেয়েছেন তাদের সে স্বাধীনতা অর্থবহ হয়নি। প্রসুতির আতুঁর ঘর থেকেই বিভিন্ন চক্রান্তের স্বীকারে পরিণত হয়েছে তাদের সে স্বাধীনতা। ভৌগলিক স্বাধীনতা অর্জিত হলেও স্বাধীনতার সুফল জাতীয় মুক্তি অর্জন করা সম্ভব হয়নি। নেতৃত্ব পৌঁছে দিতে পারেননি স্বাধীনতার সুফল জনগণের ঘরে ঘরে। অদৃশ্য কলকাঠির নড়াচাড়ায় যে সমস্ত দেশ স্বাধীনতা পেয়েছে; সে সমস্ত দেশের পুতুল সরকারগুলোর কাছ থেকে জনগণ পেয়েছে শুধুই বঞ্চনা, প্রতারণা আর দারিদ্রের অভিশাপ।
আবার কর্নেল ওসমানীর বক্তব্য শুনতে মনযোগ দিলাম, “যুদ্ধকে স্বল্পস্থায়ী করার জন্য এপ্রিল মাসেই আমার মাথায় একটি প্ল্যান এসেছে। একাটি বড় গেরিলা বাহিনী গঠন করে ভেতর থেকে শত্রুর আঁতে আঘাত হানতে হবে এবং পাশাপাশি নিয়মিত বাহিনীর ছোট ছোট ইউনিট অর্থাৎ কোম্পানী বা প্লাটুন দিয়ে শত্রুকে আঘাত করতে হবে এবং বিচ্ছিন্ন হবার জন্য তাকে বাধ্য করতে হবে, যাতে করে কনসেনট্রেটেড অবস্থা থেকে তারা ডিসর্পাসড হয়ে যায়। এই বিচ্ছিন্নতার ফলে তাদের সংখ্যাগরিষ্টতা অকেজো হয়ে পড়বে। শত্রুপক্ষ ছোট ছোট গ্রুপে নিজেদের কমিট করতে বাধ্য হবে। তখন গেরিলা পদ্ধতিতে তার যোগাযোগের রাস্তা, বেতার সংযোগ, রি-ইনফোর্সমেন্টের পথ ধবংস করে তাকে ছোট ছোট পকেটে আইসোলেটেড করে চরম আঘাতে তাদের ধ্বংস করতে হবে।
এজন্য আমার নিয়মিত বাহিনীরও প্রয়োজন রয়েছে। আমার এ পরিকল্পনা অনুযায়ী ডিটেইলড প্ল্যান ইতিমধ্যেই অস্থায়ী সরকার এবং মিত্রদের কাছে পেশ করেছি। তাতে আমি উল্লেখ করেছি, কমপক্ষে দু’লাখের মত গেরিলা বাহিনী এবং ২৫ হাজারের মত নিয়মিত বাহিনী গড়ে তুলতে হবে। সীমান্তবর্তী বিভিন্ন অঞ্চলে কমান্ডারদের অধিনে যে সমস্ত মুক্তিফৌজ রয়েছে তাদের ছাড়া এই নূন্যতম শক্তি আমাকে অবশ্যই গড়ে তোলার অনুমতি দিতে হবে।
বর্তমানে মুক্তিবাহিনীর মধ্যে রয়েছে ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, আনসার, মুজাহিদ, পুলিশ বাহিনীর সদস্যগন তাদের আমি বলি নিয়মিত বাহিনী।
সদ্য ট্রেনিংপ্রাপ্ত ছাত্র যুবকদের বলি অনিয়মিত বাহিনী। ভারতীয়রা তাদের বলেন FF (Freedom Fighters). আমার মতে পরীক্ষিত যোগ্য মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সাথে নতুন রিক্রুটেড বীর জোয়ানদের ট্রেনিং দিয়ে তিনটি নিয়মিত ইনফ্যানট্রি ব্রিগেড গঠন করার পরিকল্পনা নিতে হবে। নিয়মিত বাহিনীর বাকি সদস্যরা Sector troops হিসাবে স্থানীয় কমান্ডারদের অধিনে থাকবে। তাদের মূল দায়িত্ব হবে গেরিলাদের জন্য বেইস তৈরি করে তাদের ট্রেনিং দেয়া এবং দেশের ভেতর ছোট ছোট গ্রুপে তাদের induct করা। গেরিলাদের অপারেশন কোঅর্ডিনেট করার দায়িত্ব থাকবে সেক্টর কমান্ডারদের উপর।
সেক্টর কমান্ডারদের সাহায্যের জন্য গেরিলা অ্যাডভাইজার নিয়োগ করা হবে। সমগ্র বাংলাদেশের রনাঙ্গনকে তিনি ১১টি সেক্টরে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেক্টরের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকবেন একজন সেক্টর কমান্ডার। সেক্টরগুলোর হেডকায়ার্টারস স্থাপিত হবে বাংলাদেশের ভেতর মুক্তাঞ্চলে। সেক্টরগুলোই হবে গেরিলা যুদ্ধের মূল ভিত্তি।
কারণ, বাংলাদেশের মত এত বড় একটা থিয়েটার অর্থাৎ দেশব্যপী রণক্ষেত্রে রয়েছে অসংখ্য নদী-নালা ও ব্যাপক দূরত্ব। কেন্দ্রীভূতভাবে দৈনন্দিন যুদ্ধ পরিচালনার জন্য যে যুক্ত সামরিক সদর দফতর, উপযুক্ত সামরিক অফিসার ও ষ্টাফ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সম্পদ এবং সঙ্গতির প্রয়োজন তা সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। আমার থাকবে ১০জন অফিসার বিশিষ্ট একটি ক্ষুদ্র সশস্ত্র বাহিনীর হেডকোয়ার্টারস। এত বড় একটা বিরাট অঞ্চলব্যাপী সামগ্রিক যুদ্ধে একটি মাত্র কেন্দ্র থেকে দৈনন্দিন আদেশ, নির্দেশ প্রেরণ করা ও সে অনুযায়ী যুদ্ধ পরিচালনা শুধু অসম্ভবই নয়, অবাস্তবও বটে। তাই আমি আমার কমান্ডারদের কাছে আমাদের জাতীয় লক্ষ্য, আমাদের রাজনৈতিক ও সামরিক বিবেচ্য বিষয়ের সঠিক মূল্যায়ন এবং শত্রুর বিরুদ্ধে আমাদের কার্যক্রমের কোন কোন পথ উম্মুক্ত রয়েছে ইত্যদি বিষয়ে সঠিক চিত্র তুলে ধরার জন্য যথাশীঘ্র সম্ভব সেক্টর কমান্ডারদের একটি জরুরী বৈঠক তলব করার চিন্তা-ভাবনা করছি।
জাতীয় লক্ষ্য, আমাদের বাহিনীর করণীয়, বিভিন্ন সেক্টরের কার্যক্রমের সমম্বয় সাধন এবং সাংগঠনিক ও যুদ্ধ পরিচালনার নীতি নির্দেশ জারি করার দায়িত্ব হবে আমার হেডকোয়ার্টারসের। আমাদের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যেক সেক্টর কমান্ডারের নীতি নির্ধারণ ও স্থানীয়ভাবে তাদের দৈনন্দিন যুদ্ধ পরিচালনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে। সেক্টর কমান্ডারদের সাথে লিয়াঁজো অফিসার এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে চলার ইচ্ছা রয়েছে আমার। এছাড়া আমার কমান্ডারদের সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রক্ষা এবং যুদ্ধের অবস্থা সম্পর্কে সরাসরি অভিজ্ঞতা লাভের জন্য আমি এক সেক্টর থেকে অন্য সেক্টরে যাতায়াতও করবো প্রয়োজনে। ” কর্নেল ওসমানীর যুদ্ধ প্রস্তুতির বিশদ বিবরণ আমরা তিনজনই মনযোগ দিয়ে শুনলাম।
তার বক্তব্যে সামরিক প্রস্তুতির বিশদ বিবরণ থাকলেও মুক্তিযুদ্ধের মূল বিষয় তথা রাজনৈতিক দিকটির সম্পর্কে তেমন কিছুই বললেন না তিনি।
যে কোন জাতির মুক্তি সংগ্রামকে সশস্ত্র গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে সফল করে তোলার জন্য রাজনৈতিক আদর্শ ও নেতৃত্বের ভূমিকা মূখ্য। জনগণকে সাথে নিয়েই সংগঠিত করা হয় গেরিলা যুদ্ধ। জনগণকে গেরিলা যুদ্ধে আকৃষ্ট করতে হয় রাজনৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে। কারণ রাজনৈতিক নীতি আদর্শের মাধ্যমেই জনগণ দেখতে পায় তাদের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন এবং বেঁচে থাকার প্রতিশ্রুতি।
তাই অতি প্রয়োজনের খাতিরেই জনগণের মুক্তি ও তাদের আশা-আকাঙ্খার পরিপ্রেক্ষিতে নীতি ও আদর্শ প্রণয়ন করে জাতীয় পরিসরে রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রদানের জন্য গঠন করতে হয় সর্বদলীয় জাতীয় সরকার। এ সরকার সাধারণতঃ গঠিত হয় পরীক্ষিত মুক্তিযোদ্ধা ও দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে। এটাই হচ্ছে প্রতিষ্ঠিত জনযুদ্ধের প্রক্রিয়া। সমসাময়িক পৃথিবীতে সমাজ বিবর্তনের ইতিহাসে পরীক্ষিত এ প্রক্রিয়ার বিপক্ষে একদলীয় একটি অস্থায়ী প্রবাসী সরকারের নিয়ন্ত্রনে দীর্ঘস্থায়ী জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সফলভাবে এগিয়ে নেয়া কি করে সম্ভব? বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্ম হয়েছে দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন পেশার জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে।
রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের আদর্শ এবং নীতিমালায় সর্বস্তরের জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন নেই।
আওয়ামী লীগ মূলতঃ বাংলাদেশের উঠতি বুর্জুয়া এবং পাতি বুর্জুয়া শ্রেণীর রাজনৈতিক দল। সেক্ষেত্রে আপামর জনসাধারণকে সশস্ত্র সংগ্রামে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের একক সরকার নেতৃত্ব দেবে কোন যুক্তিতে? ’৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জনগণের কাছ থেকে ভোট নিয়েছিল আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের দাবিতে, ধর্মীয় আদর্শের আওতায় পাকিস্তানের নতুন শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করবে সে দাবিতে। সেখানে সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামের কোন অঙ্গীকার ছিল না। কর্নেল ওসমানীর বক্তব্য থেকে একটি বিষয়ও পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। স্বাধীনতার সংগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের আহ্বানে শুরু হয়নি।
স্বাধীনতার প্রথম ডাক দিয়েছিলেন অখ্যাত এক তরুণ মেজর জিয়াউর রহমান আর তার ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে স্বতঃস্ফুর্তভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের জনগণ। তাদের অংশগ্রহণে বাঙ্গালী বীর সৈনিক ও নওজোয়ানরা সংগঠিত করেছিলেন প্রতিরোধ মুক্তি সংগ্রাম বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বেঙ্গল রেজিমেন্ট, আনসার, মুজাহিদ, ইপিআর এবং পুলিশ বাহিনীর দেশপ্রেমিক যোদ্ধারাই অগ্রণী হয়ে স্বীয় উদ্যোগে গঠন করে তুলেছিলেন মুক্তিফৌজ।
স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেয়া তো দূরের কথা। আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব ও শেখ মুজিব কখনোই চিন্তা করেননি সশস্ত্র সংগ্রামের কথা।
তাই ছিলনা তাদের কোন পূর্বপ্রস্তুতি। তাদের পার্টি মেনিফেষ্টো, নির্বাচনী প্রচারণা এবং পরবর্তী সময়ে ইয়াহিয়া শাহীর সাথে তাদের রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা ও অন্যান্য কার্যক্রম থেকে এ সত্যই প্রমাণিত হয়। এ সত্যকে অস্বীকার করে আজ কোন অধিকারে প্রবাসে দলীয় অস্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠা করে স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের সকল কৃতিত্বের একচ্ছত্র দাবিদার হয়ে উঠলেন তারা? “মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের মধ্যে ছিল দ্বিধা-দ্বন্দ্ব। অনেকেরই বক্তব্য ছিল আওয়ামী লীগ একাই মুক্তিযুদ্ধ করবে। অন্য কোন দল বা গোষ্ঠি করুক তা হবে না।
” (দৈনিক ইনকিলাবের সাথে জনাব শান্তিময় রায়ের সাক্ষাৎকার)।
এ ধরণের সুবিধাবাদী নেতৃত্বের অধিনেই দেশ স্বাধীন করে গণমুক্তির স্বপ্ন দেখছেন কর্নেল ওসমানী। পরিকল্পনা করেছেন গেরিলা যুদ্ধ করার। অবশ্য তাঁর কথার ফাকে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামের পক্ষপাতী তিনি ও তার সরকার নন। তার মানেই বা কি? তবে কি পর্দার অন্তরালে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অন্য কোন ষড়যন্ত্র চলছে প্রবাসী আওয়ামী লীগ সরকার এবং ভারতীয় সরকারের বোঝাপড়ার মাধ্যমে? তড়িঘড়ি করে অস্থায়ী দলীয় সরকার কায়েম করার মত তাড়াহুড়া করে স্বাভাবিক পরিণতির পরিবর্তে অস্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশকে তথাকথিত স্বাধীনতা প্রদানের ফন্দি আটা হচ্ছে কি সবার অলক্ষ্যে? ভারতীয় নীল নকশা যা আমরা দিল্লীতে অনুভব করে এসেছি তার সাথে কোথায় যেন একটা যোগসুত্র খুজে পেলাম।
তবে কি কর্নেল ওসমানীও ভারতীয় নীল নকশা বাস্তবায়নেরই একজন? এ কথা বিশ্বাস করতে মন কিছুতেই সায় দিচ্ছিল না। কর্নেল ওসমানীকে আমরা চিনি একজন নির্ভীক, স্পষ্টবাদী, স্বাধীনচেতা একজন বাঙ্গালী সৈনিক হিসেবে। অবসর গ্রহণের পর হালে রাজনীতিতে যোগদান করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এমপি হয়েছেন তিনি। কিন্তু তাই বলে কোন লোকের চরিত্রতো রাতারাতি সম্পূর্নভাবে বদলে যায় না। তার বেলাই বা সেটা কি করে সম্ভব? একবার ভাবলাম আমাদের দিল্লীর অভিজ্ঞতা তাকে সম্পূর্ণ খুলে বলে আমাদের মনোভাব পরিষ্কারভাবে ব্যক্ত করি।
আবার ভাবলাম আগে তার কাছ থেকে বুঝে নিতে হবে তিনি এসবের সাথে কতটুকু জড়িত। সেটা না বুঝে সবকিছু খুলে বললে হিতে বিপরীতও হতে পারে। আমরা তিনজনই মহা বিপদের সম্মুখীন হতে পারি। প্রাসঙ্গিক চিন্তা-ভাবনা নিয়ে উভয় সংকটে পড়লাম।
আলোচনাকালে কর্নেল ওসমানী হঠাৎ করেই বলে উঠলেন, “I have decided to send you and Moti as Guerilla Advisor to the sector commanders and Noor shall be at the HQ as my ADC & Personal Staff Officer (PSO).”তার কথা শুনে চমকে উঠলাম।
কি অবাক কান্ড! তাহলে কর্নেল ওসমানী আমাদেরকে নিয়ে ভারতীয় সরকার এবং প্রবাসী সরকার কি ভাবছে সে সম্পর্কে কি কিছুই জানেন না? মনে খট্কা লাগলো। মনে করলাম আমাদের ব্যাপারে হয়তো বা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্বয়ং তাজুদ্দিন ও ভারতীয় সরকারের প্রতিনিধিরা। জনাব তাজুদ্দিন তখন পর্যন্ত কর্নেল ওসমানীকে তাদের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কিছুই জানাননি। আশ্চর্য! মুক্তিফৌজের কমান্ডার-ইন্তচীফ এর কাছে বিএলএফ (বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স) নামের স্পেশাল পলিটিক্যাল ফোর্স গঠনের ব্যাপারে সবকিছুই গোপন রেখেছেন অস্থায়ী সরকার প্রধান জনাব তাজুদ্দিন আহ্মদ। তার মানে এ ব্যাপারে কর্নেল ওসমানীকেও বিশ্বাস করেনি ভারত এবং আওয়ামী লীগ সরকার।
মনে আশার সঞ্চার হল। কর্নেল ওসমানী নীল নকশার প্রণেতাদের একজন নয়। নিশ্চিন্ত হলাম। তাকে বিশ্বাস করে সবকিছুই বলা যায়। বেচারা কর্নেল ওসামানী! তাকে Side track করে ইতিমধ্যেই অন্য খেলা শুরু হয়ে গেছে অথচ তিনি তার কিছুই জানেন না।
কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে আমি বললাম,
-স্যার আপনি আমাদের গেরিলা অ্যাডভাইজার হিসাবে নিয়োগ করতে চাচ্ছেন এতে আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু স্যার, জনাব প্রধানমন্ত্রী ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আমাদের নিয়ে অন্য কিছু চিন্তা করছেন। আপনি কি BLF গঠন করার ব্যাপারে কিছুই জানেন না?
-What is BLF? Can you frankly tell me what is going on? জিজ্ঞেস করলেন তিনি।
-নিশ্চয়ই বলবো স্যার। আপনাকে বিশ্বাস করে সবকিছুই খুলে বলবো।
মুক্তিযুদ্ধের কর্ণধার হিসেবে আপনার উপর আমাদের অগাধ বিশ্বাস রয়েছে। জাতির সাথে আপনি কখনোই বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারেন না সেটা আমাদের বধ্যমূল ধারণা। জাতীয় স্বার্থ বিরোধী যে কোন চক্রান্তকে নস্যাত করে দেবার মত দৃঢ়তাও আপনার রয়েছে, সে ব্যাপারেও আমরা তিনজনই একমত। আমাদের অনুরোধ সবকিছু শুনে আপনি উত্তেজিত না হয়ে অত্যন্ত ধীরসস্থিভাবে চিন্তা করবেন ভবিষ্যতে করণীয় সম্পর্কে। যে কোন অসতর্ক পদক্ষেপের চরম মূল্য দিতে হতে পারে আমাদের সবার।
- I promise you. It will be just between me and you three. Now, let me hear everything that you want to tell in details. তার অভয় অঙ্গীকারে আন্তরিকতার আবেদন স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছিল। আমি বলতে লাগলাম,
-স্যার, দিল্লীতে আমাদের সময় কেটেছে জেনারেল ওবান সিং ও তার সহকর্মীদের সাথে। গেরিলা যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়াদির প্রশিক্ষন ছাড়াও রাজনৈতিক মটিভেশন দেয়া হয়েছে আমাদের। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এবং প্রধানমন্ত্রী তাজুদ্দিন আহ্মদ বর্তমান অবস্থায় গঠিত মুক্তিবাহিনীর বেশিরভাগ কর্মকর্তা এবং সদস্যদের পুরোপুরিভাবে বিশ্বাস করতে পারছেন না। প্রবাসী আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি তাদের সার্বিক আনুগত্য সর্ম্পকেও তারা সন্দিহান।
প্রবাসী আওয়ামী সরকার ও তাদের দল জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে কার্যকরী effective নেতৃত্ব সফলতার সাথে কতটুকু দিতে পারবে সে সর্ম্পকেও ভারত সরকার সুনিশ্চিত নয়। রাজনৈতিক দল হিসাবে চারিত্রিক দুর্বলতা আওয়ামী লীগের রয়েছে প্রচুর, আদর্শগতভাবে রক্তক্ষয়ী একটি জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের নেতৃত্ব দেবার মত মানসিকতা ও প্রস্তুতি কিংবা চরম ত্যাগ স্বীকার করার মত চারিত্রিক গুনাবলীও নেই দলের বেশিরভাগ সদস্যদের মধ্যে। সেক্ষেত্রে এ সংগ্রাম দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়লে নেতৃত্ব চলে যেতে পারে আওয়ামী লীগের হাত থেকে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে মূলতঃ দু’টি শক্তি। চরমপন্থী রাজনৈতিক আদর্শে উদ্ভূদ্ধ বিপ্লবীরা অথবা প্রাক্তন সেনা বাহিনী, আনসার, ইপিআর, মুজাহিদ এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যবৃন্দ।
বর্তমান পরিস্থিতিতে মুক্তি বাহিনীর মধ্যে এদের অবস্থান অতি সুদৃঢ়। দীর্ঘকালীন যুদ্ধে ক্রমান্বয়ে তাদের শক্তি বেড়ে যাবে। পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়বে। সেই অবস্থায় ভারতের বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার স্বাধীনতা সংগ্রামগুলোও কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে তারা বিশেষভাবে চিন্তিত।
যেহেতু ভারত সরকার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের বাইরে অন্য কাউকেই বিশ্বাস করছে না, সে জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে একমাত্র আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রনেই পরিচালিত করতে হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম। যুদ্ধকালীন এবং যুদ্ধাত্তোর উভয় অবস্থায় আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যে কোন হুমকির মোকাবেলা করার জন্য বিশেষভাবে গঠন করা হবে একটি সম্পূর্ন রাজনৈতিক সশস্ত্র বাহিনী। বাহিনীর নাম হবে BLF (Bangladesh Liberation Force) এ বাহিনীর সংখ্যা হবে প্রায় এক লক্ষ। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা এবং কেন্দ্রীয় যুব এবং ছাত্র নেতারাই বিভিন্ন অঞ্চল এবং যুব শিবির এবং শরনার্থী শিবির থেকে রিক্রুটমেন্টে সহযোগিতা করবেন এই BLF গঠনের ব্যাপারে। রিক্রুটেড সদস্যদের ট্রেনিং এর ব্যবস্থার ভার গ্রহণ করবে ভারতীয় সেনা বাহিনীর বিশেষ সদস্যরা।
ট্রেনিং শেষে ওদের ভরনপোষণ এবং deployment করা প্রভৃতি বিষয়ে সবকিছুই করবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এ বাহিনী সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশের সরকারের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজুদ্দিন আহ্মদ এবং আমরা তিনজন ছাড়া কেউ কিছু জানতে পারবে না। আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে ভারতীয় সেনা বাহিনী ও প্রধানমন্ত্রীর মাঝে লিয়াঁজো অফিসার হিসেবে। এ বাহিনীর মূল কাজ হবে স্বাধীনতা উত্তরকালে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রনে থেকে আওয়ামী লীগ এবং তদীয় সরকারের স্বার্থ রক্ষা করা। পরে প্রয়োজনে এ বাহিনীর নাম পরিবর্তন করে রাখা হতে পারে মুজিব বাহিনী।
কোন সন্দেহ অথবা ভুল বোঝাবুঝির উদ্রেক যাতে না হয় তার জন্য যুক্তি হিসাবে প্রচার চালানো হবে, এ বাহিনী সৃষ্টি করা হয়েছে বিশেষ এক প্রয়োজনে। শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের কারাকুঠির থেকে মুক্ত করে আনার জন্য এদের দায়িত্ব দেয়া হবে। রিক্রুটমেন্টে সাহায্য করার জন্য ভারতীয় সরকার ইতিমধ্যেই চারজন যুব ও ছাত্রনেতাকে সিলেক্ট করে নিয়েছে। তারা হলেন জনাব শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক এবং জনাব তোফায়েল আহ্মদ (পরবর্তীতে তারা বাংলাদেশের আপামর জনসাধারনের কাছে ‘চার খলিফা’ বলে পরিচিতি লাভ করেন)। RAW (Research and Analysis Wing) ভারতীয় গোয়েন্দা এজেন্সীর প্রধান জেনারেল ওবান সিং এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে দেরাদুনের অদূরে চাকুরাউল-এ এদের ভারতীয় সেনা বাহিনীর বিশেষ সদস্যরা ট্রেনিং দেবে।
ট্রেনিং পর্যায়ে এবং পরবর্তিকালে ওদের রি-অর্গানাইজ করার দায়িত্বে ভারতীয়দের সাথে আমাদেরও থাকতে হবে। মানে পর্যায়ক্রমে আমরাও হয়ে পড়বো মুজিব বাহিনীর সদস্য।
আমাদের কথা শুনে কর্নেল ওসমানী স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। হতবাক হয়ে বললেন,
- How strange! এ সমস্ত ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। I must find out from the Prime Minister how much does he know?
-অবশ্যই তা আপনাকে জানতে হবে তবে সেটা করতে হবে বিশেষ সতকর্তার সাথে।
অত্যন্ত সেনসেটিভ ব্যাপার। তাই বুঝে শুনে কথা বলতে হবে আপনাকে। জনাব তাজুদ্দিনের সাথে আপনার আলাপের পরই না হয় আমরা সিদ্ধান্ত নেব কি করা যায়।
সেদিনের মত আমাদের একান্ত বৈঠক শেষ হল। কর্নেল ওসমানী শুভরাত্রি জানিয়ে চলে গেলেন।
আমরা তার ঘরের অপরপ্রান্তে মেঝেতে বিছানা পেতে তিনজনই শুয়ে পড়লাম। পরদিন সকালেই কর্নেল ওসামানী জনাব তাজুদ্দিনের কাছে গিয়ে গত রাতের আলোচনা সম্পর্কে আলাপ করে ফিরে এসে জানালেন,
-প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না।
-এ কি করে সম্ভব! দিল্লীতে আমাদের বলা হয়েছে অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে সবকিছুই জানেন।
- No, Boys. He is as much as in dark as I am. And I don’t think he is lieing. এ ব্যাপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ থেকে তিনি যতটুকু সম্ভব জানার চেষ্টা করবেন। of course not exposing anyone. তোমরাও যদি আরো কোন তথ্য সংগ্রহ করতে পার তবে আমাকে জানাবে।
Prime Minister wants to know everything about this nefarious plan. তোমাদের ব্যক্তিগত কার্যক্রম সম্পর্কে ভেবেচিন্তে আমাকে জানিও তোমরা কি করবে? বললেন তিনি।
এখানে পাঠকদের জ্ঞাতার্থে, BLF পরবর্তিকালে মুজিব বাহিনী গঠন এবং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা RAW সর্ম্পকে জেনারেল অরোরার মন্তব্য তুলে ধরা হলbr /> মুজিব বাহিনী এমন এক বাহিনী যা মুক্তি বাহিনী থেকে ছিল একেবারেই আলাদা। আমি এই বাহিনী সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। একদল ছাত্র যারা নির্বাচনের সময় মুজিবের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে তারা অর্থাৎ আওয়ামী লীগের এই তরুণ অংশ আমাদের ইনটেলিজেন্সকে জানায় তারাই মুজিবের প্রকৃত সমর্থক। তাদেরকে ট্রেনিং দিয়ে পাঠালে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে ভালো যুদ্ধ করতে পারবে।
এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানতাম না। তবে মুক্তি বাহিনীর সাথে যখন তাদের গোলমাল হয় তখন প্রবাসী সরকার (তাজুদ্দিনের সরকার) এ বাহিনী সম্পর্কে আমার কাছে জানতে চায়। আমি আমাদের চীফ অফ ষ্টাফ জেনারেল মানিক শ’-কে এ ব্যাপারে জানাতে বলি। তিনিই আমাকে জানান যে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা RAW এই বাহিনী গড়ে তুলেছে। এই বাহিনী নিয়ে সমস্যা যখন বাড়তে থাকে তখন দূর্গা প্রসাদ ধর (ইন্দিরা গানদ্ধীর তৎকালীন মূখ্যসচিব) আমাকে জানালেন, ‘মুজিব বাহিনীর ব্যাপারটা বাংলাদেশ সরকারকে না জানানোর কোন বিশেষ সিদ্ধান্ত নেই।
ব্যাপারটা পরিস্থিতির জন্যই বর্তমানে গোপন রাখা হয়েছে মাত্র। ’ (বাংলাদেশ যুদ্ধের স্মৃতিচারন শিরোনামে নিখিল চক্রবর্তীকে প্রদত্ত সাক্ষাৎকার)
এই সাক্ষাৎকারের বিবরণ থেকে বুঝা যায় প্রধানমন্ত্রী তাজুদ্দিনকে সত্যিই ভারত সরকার এবং ‘র’ এই বাহিনী গঠনের ব্যাপারে অন্ধকারেই রেখেছিল নিজেদের স্বার্থে।
--কর্ণেল (অবঃ) শরিফুল হক বীর উত্তমের "যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি " বই থেকে নেওয়া।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।