গত কিস্তি ছাপা হবার আগেই বোঝা গিয়েছে আন্দোলনের প্রশ্নে দোদুল্যমানতা ও পরাশক্তির ফাঁদে খাবি খাবার দুর্দশাই বিএনপি বেছে নিয়েছে। বিএনপি বাংলাদেশের জনগণের ওপর নয়, নির্ভর করতে চাইছে জাতিসংঘের ওপর। আন্দোলন থেকে পিছু হটে জাতিসংঘের সহায়তায় ক্ষমতায় আসতে চাইছে। বিএনপি হরতাল-অবরোধ বা কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচিতে যাবে না। গরম ভাব ত্যাগ করে বিএনপি নরম হয়েছে।
এর পরিণতি বিএনপির নেতানেত্রী বিশেষ ভাবে খালেদা জিয়া যথেষ্ট ভেবেছেন মনে হয় না। কিন্তু জাতিসংঘকে ডাকাডাকি শুধু বিএনপির জন্য নয়, বাংলাদেশের জন্যও আত্মঘাতী পথ। বিএনপির অবিলম্বে এই পথ থেকে সরে আসা উচিত। এই বিপজ্জনক পথে পা বাড়ানোর চেয়েও, জনগণের ওপর আস্থা বজায় রেখে বিএনপির কিছুই না করা অনেক শ্রেয়। আওয়ামী লিগের পক্ষে এক তরফা নির্বাচন ও ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখা সাময়িক আপদ তৈরি করবে, কিন্তু ক্ষমতার এই চরিত্রকে জনগণ রাজনৈতিক ভাবে প্রত্যাখান করবে।
এ কথা নিশ্চিত বলা যায়। কিন্তু জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় মেনে পরাশক্তিকে ডেকে আনার মধ্য দিয়ে বিএনপি বাংলাদেশের জনগণের কাছ থেকে দূরে সরে যাবে। এ রাজনীতি বাংলাদেশের জন্য বিপজ্জনক। প্রথম আলো্র খবর হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে সমঝোতায় আসতে জাতিসংঘকে বিএনপিই অনুরোধ করেছে। তারা সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে হলেও সরকারের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চায় (দেখুন, ‘বিএনপির দৃষ্টি এখন জাতিসংঘের দিকে’ প্রথম আলো, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩)।
বিএনপির ধারণা হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের সমাধান বাংলাদেশের জনগণ নয়, দেবে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহল। আর তাদের জোরেই আওয়ামি লিগকে সমঝোতায় আসতে বাধ্য করতে চায় তারা। প্রথম আলোর এই একটি খবরই জনগণের বিপুল একটি অংশের বিএনপির বিরুদ্ধে চলে যাবার জন্য যথেষ্ট। শুধু গণ আন্দোলনের দিক থেকে নয়, নির্বাচনপন্থি রাজনৈতিক দল হিসাবেও এই ধরণের নীতি আত্মঘাতী। যদি নির্বাচন হয়, তাহলেও ভোট বাক্সেও এর প্রভাব পড়বে।
এর পালটা শেখ হাসিনার পদক্ষেপ বিএনপিকে আরও বিপাকে ফেলেছে। গত সোমবার সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের সময় ও নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো পেশ করে সমঝোতার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। শেখ হাসিনা চাইছেন বিএনপি জাতিসংঘের কাছেই দেনদরবার করুক। এতে শেখ হাসিনার লাভ ছাড়া ক্ষতি নাই। এক নম্বরে লাভ বিএনপির রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতার মাত্রায় আরও ধস নামানো।
দুই নম্বর লাভ, বাংলাদেশকে জাতিসংঘের হাতে তুলে দেওয়ার দায় তিনি নিচ্ছেন না, দরকার হলে তিনি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেই নিরাপদে ক্ষমতা থেকে প্রস্থান করতে পারবেন। আওয়ামি লীগের নেতাদের জন্য এর চেয়ে নিরাপদ ব্যবস্থা আর কিছুই হতে পারে না। ইতোমধ্যে সচিবালয়ে সচিবসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, “আগামী ২৭ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই অন্তর্বর্তী সময়ে জাতীয় সংসদ বহাল থাকলেও অধিবেশন বসবে না। মন্ত্রিসভা থাকবে, তবে কোনো নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেবে না”।
তাঁর এই ঘোষণার কোন আইনী মূল্য নাই। কারণ তিনি ইচ্ছা করলে যখন খুশি ২৪ জানুয়ারির আগে পর্যন্ত ভিন্ন কথা বলে এই সিদ্ধান্ত পালটিয়ে দিতে পারেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে এটাও স্পষ্ট যে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের ‘শক্ত’ অবস্থান নেওয়া ছাড়া অন্য কোনো পথ কখনই খোলা ছিল না, এখনও নাই। অথচ বিএনপি আন্দোলনের কথা না ভেবে জাতিসংঘের অধীনে ক্ষমতায় যেতে উদ্গ্রীব হয়ে আছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসাবে সরকার পক্ষ ছাড়া বিএনপির তরফে কারা যোগদান করে এখন আমাদের তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।