আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সর্ব রোগের দাওয়াই এবং অভিশপ্ত গাছড়া

ভাসমান

সর্ব রোগের দাওয়াই এবং অভিশপ্ত গাছড়া __মুআম্মার আল-গাদ্দাফী সুসংবাদ ! সুসংবাদ !! যারা অপসারণ রোগে ভুগছেন তাদের জন্য মহা সুসংবাদ। বেনগাজী উপত্যকায় পাওয়া গেছে এক আশ্চর্য গাছড়া এবং হাকিম হাছান চাচা তা দিয়ে এক অলৌকিক বনাজি দাওয়াই তৈরি করেছেন। তার এই দাওয়াই এক শ' ভাগ গ্যারান্টি দিয়ে সারিয়ে দিবে যে কোনো ধরনের অপসারণ রোগ। প্রায় তিন মিলিয়ন প্রত্যক্ষদর্শীর সামনে তিনি তার সেই অলৌকিক দাওয়াইয়ের কারিশমা জাহির করেছেন.. সুতরাং আর কোনো ভাবনা নেই .. ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে হাকিম হাসান চাচার সাথে তার হাকিমখানায় গিয়ে সাক্ষাত করে এসেছি। তিনি বলেছেন তার এই দাওয়াই অপসারিতদের রোগ মহূর্তের মধ্যে সারিয়ে দিতে সক্ষম, এটা এখন পরীক্ষিত সত্য।

তবে যারা এখনো অপসারিত হন নি তাদের সম্পর্কে হাকিম হাসান চাচা কিছু বলেন নি। কিন্তু তারা অপসারিত হওয়ার সাথে সাথে তার এই দাওয়াই অব্যার্থ মলম হয়ে তাদের রোগ সাড়িয়ে দিব্তে সেটা তিনি নিশ্চিত করেছেন। অন্যান্য রোগ বালা ?.. অন্যান্য রোগের দাওয়াইও আছে হাকিম হাছান চাচার কাছে। তবে তার জন্য আছে ভিন্ন গাছড়া। সব রোগের জন্য আলাদা আলাদা গাছড়া।

একই গাছড়া দিয়ে সব রোগ সাড়িয়ে দেওয়ার মত ফেরেব্বাজিতে নেই হাকিম চাচা। সব রোগের আলাদা আলাদা দাওয়াই। উদাহরণত মাথা ঘুরানি ব্যামো। মাথা ঘুরানি রোগে ভুগছেন ?.. কোনো ভাবনা করবেন না .. চলে আসুন হাকিম হাসান চাচার দাওয়াখানায়। বাচ্চার জন্য বায়নাকরা ঈদের জামা কিনতে বেরিয়েছেন, জানতেন সাধারণ বাজারে জামাটা এক দিনারে বিক্রি হয়।

কিন্তু সখ করে 'ব্রাণ্ডেড শো-রুমে' ঢুকে দেখলেন ওখানে ওটার দাম ২০ দিনার। মনে মনে সখের পাছায় কষে একটা লাথি মেরে সাথে সাথে বেরিয়ে এসে ফিরে গেলেন সাধারণ বাজারে। কিন্তু ওখানে পেলেন না জামাটা। বাধ্য হয়ে আবার গেলেন শো-রুমে। কিন্তু .. গিয়ে দেখেন আপনার অনুপস্থিেিত পাঁচ মিনিটের মধ্যে জামাটার দাম পাঁচ দিনার বেরে গেছে : ২৫ দিনার.. আপনার মাথা ঘুরছে ? চোক্ষের সামনে দুনিয়াটা দুলছে ?.. কোনো ভাবনা করবেন না।

চলে আসুন হাকিম হাছান চাচার দাওয়াখানায়। হাকিম হাছান বলেছেন তিনি আল্লাহর উপর এক শ' ভাগ ভরসা রেখে এবং নিরান্নব্বই পারসেন্ট গ্যারান্টি দিয়ে এই রোগের চিকিৎসা করেন। এই ধরনের মাথা ঘুরানি ব্যামোর জন্যও তিনি বিশেষ এক প্রকার বনাজি দাওয়াই বানিয়েছেন। হাকিম হাসান চাচা আরো বলেছেন, তিনি বিশেষ একটা গাছড়া আবিষ্কার করেছেন। গাছড়াটা সাধারণত পাওয়া যায় পুরোনো গোরস্তানে।

এই গাছড়াটা দিয়ে তিনি, চোখের যাই ঘটুক সব দেখেও গোরবাসীদের মতই নীরব থাকতে পারে, তাদের জন্য একটা বিশেষ দাওয়াই তৈরি করেছেন। তিনি নিশ্চিত করেছেন এই দাওয়াই তাদের এই ব্যামো নিশ্চিত সারিয়ে দিবে। তার দাওয়াখানায় গিয়ে দেখিছি তিনি তার তৈরি ঔষধের বিশাল একটা তালিকা তৈরি করেছেন। তালিকাটার উপর নজর বুলালে দেখা যাবে হাকিম হাছান চাচার দাওয়াই আমাদের যাবতীয় রোগ-বালা সারিয়ে দিতে পারে, আমাদের মুক্তি দিতে পারে সরকারী হাসপাতাল, প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে ছুটাছুটি করা থেকে। আল্লাহর তওফিকে কোনো রকমে একবার হাকিম হাছান চাচার দাওয়াইখানায় যেতে পারলেই হল.. ব্যাস আর কোনো চিন্তা নেই।

তবে তার ওখানে নিশ্চই দীর্ঘ লাইন হবে। তাতে কি ? হাকিম হাসান চাচার কথামত এই দাওয়াই যদি সর্বরোগ ভাল করে দিতে পারে তাহলে তার জন্য আমরা কয়েক দিন বা কয়েক মাস লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারব না ?.. এতটুকো ধৈর্য, ব্যাস ! তারপর সে দাওয়া পাওয়া গেলে আমাদের আর কোনো ভাবনা নেই। আমরা তো আমাদের গাছপালা কেটে, ক্ষেতখামার ফসলি জমিন সমান করে দিয়ে তার উপর সুন্দর সুন্দর দালান তুলেই ফেলেছি... গবাদি পশু সব জবা করে ফেলেছি.. যেগুলো এখনো বেঁচে আছে সেগুলো ইনশাল্লাহ জবে করব আগমি কোরবানীর ঈদে.. সমাজ আমাদের বাচ্চাদের পড়ালেখার খরচ বহন করছে.. রেডিও চ্যালেনগুলো বিনাপয়সা গান শুনাচ্ছে.. টেলিভিশন চ্যানেলগুলো মাগনা ছবি দেখাচ্ছে.. আমাদের কাজ হচ্ছে শুধু আয়েশ করে শুয়ে-বসে গান শোনা, ফিল্ম দেখা, যার যার আক্কেল অনুসারে সে গান-ফিল্ম ব্যাখ্যা করা বা সমালোচনা করা এবং রোগ-বালায় পড়লে সম্পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে হাকিম হাসান চাচার দাওয়াই সেবন করা.. ব্যাস ! এই তো, এই সব ইত্যাদি ইত্যাদি করা ছাড়া আমাদের তো আর বিশেষ কিছু করার নেই। কারণ আমাদের সমাজই তো আমাদের বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য বিনাপয়সায় সিডি বিলাচ্ছে... এই সব সিডি আমাদের বাচ্চাদের স্বভাব-চরিত্র ধ্বংস করছে ? বিনোদনের নামে পশ্চিমারা এই সব গান-ফিল্মের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে আমাদের বাচ্চাদের মাথায় তাদের চিন্তা চেতনা তাহজীব-তামাদ্দুন ঢুকিয়ে দিচ্ছে ? .. ধ্যাৎ ! কে বলে তোমাদের এই সব গাঁজাখোরী কথা ? .. ওতে কিছু আসে যায় না। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা হচ্ছে আমাদের কোনো কাজ করতে হয় না, কিছু উৎপাদন করতে হয় না, বাচ্চাদের লেখাপড়া-চিকিৎসা টিকিৎসার জন্য মাথা ও শরীর কোনোটাই ঘামাতে হয় না।

আমাদের অলস অনুৎপাদনশীল সমাজটাই সব করে দিচ্ছে। এমনকি মাতৃভূমি রক্ষার জন্য সংগ্রাম টংগ্রাম.. এখন তাও আমাদের করতে হচ্ছে না। যদিও আমরা বলেছিলাম : 'জন্মভূমি রক্ষা করা, তার জন্য লড়াই করা, আত্মদান করা সব নাগরিকের পবিত্র দায়িত্ব'। এখন আমরা বুঝতে পারছি আমরা একটা ডাহা মিথ্যে কথা বলে লেলে ছিলাম। আমরা সে ভুল শোধরাবার চেষ্টা করছি।

জন্মভূমি রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব থেকে বাঁচার প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কারণ আমরা এখন শান্তি ও ভালবাসার দূত। আমাদের শ্লোগান : 'আস্সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকুতুহু' সবার উপর শান্তি ও খোদা তালার রহমত বর্ষিত হোক। ইসরাঈলের উপর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক, আমরিকা, উত্তর আটলান্টিক জোট.. সবার উপর খোদার রহমত নেমে আসুক... মালেকী, শাফেঈ, হাম্বলী, হানাফী সব মজহাবে সালামের জবাব দেওয়া ওয়াজিব। এই মাসআলাটা আমরা জানি।

তাই আমরা প্রতিদিন অধীর আগ্রহে ইসরাইল ও তার বন্ধুদের সালামের জবাব শোনার আশায় কান পেতে থাকি। আশায় থাকি একদিন ভোরে ঘুম থেকে ওঠে ঠিক শুনতে পাব ইসরাইল বলছে : 'ওয়ালাইকুম সালাম ... রাবেতা, তাজুরা, বাইতুল মুকাদ্দাস, বাগদাদের উপর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক..। তাছাড়া এখন তো রাবেতার ঔষধ ফেক্টরীগুলোর উপর খোদাতালার রহমত বর্ষিত হওয়ার বিশেষ দরকারও নেই। কারণ এখন তো আমাদের হাকিম হাসান চাচা আছেন। তিনি বনে জঙ্গলে মাঠে ঘাটে ঘুরে আমাদের জন্য অলিক সব গাছড়া সংগ্রহ করছেন এবং আমাদের জন্য সর্বরোগের নিরামক দাওয়াই তৈরি করছেন।

তার দাওয়াই গ্যারান্টি দিয়ে সব রোগ-বালা সারিয়ে দিচ্ছে। সর্ব রোগ ... এমনকি বার্ধক্য রোগও। হা। আমার ঠিক মনে নেই। তবে যদ্দুর মনে পড়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করতে তার দাওয়াখানায় গেলে তিনি এমন কিছু একটাই বলেছিলেন : তার দাওয়াই বার্ধক্যও ভাল করে দিতে পারে.. আল-হামদু লিল্লাহ।

আমরা অনেক ভাগ্যবান। আমরা সব সমাধান করে ফেলেছি। বেচারা অন্যান্য জাতিগুলোর কত কষ্ট। নিজ দেশ রক্ষা করার জন্য তাদের বুকের রক্ত ঢেলে, প্রাণ দিয়ে লড়তে হয়, উৎপাদনের জন্য শরীর ঘাম ঝড়িয়ে নখ দিয়ে মাটি খুড়তে হয়, পিয়াজ-রসুন চাষ করতে হয়... বেচারা !! ফিলিস্তীনের জবরদখল রক্ষা করার জন্য বেচারা ইসরাইলকে দিন-রাত বন্দুকের ট্রিগারে আঙ্গুল দিয়ে বসে থাকতে হয়.. বেচারা ...................... আমরিকানদেরও কত কষ্ট। তাদের দেশের নিরাপত্বা রক্ষা করার জন্য কোটি কোটি ডলার খরচ করে মহাশূন্যে পর্যন্ত ঘাঁটি বানাতে হয়.. হারে বেচারা !! কিন্তু দেখ আমরা ! আমাদের এই সব কোনো বালাই নাই।

আমাদের আছে হাকিম হাসান চাচার বনাজি দাওয়াই.. আমাদের কাজ হচ্ছে শুধু সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। বিনা দ্বিধায় সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। কোনো প্রতিবাদী হৈচৈ আমাদের থামাতে পারে না, কোনো ষঢ়যন্ত্র আমাদের দমাতে পারে না.. সব ভয়-ভীতি মাড়িয়ে, বিকট এক মনোবলে গাছ পালা কাটার জন্য আমরা শুধু সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। কৃষি-ফিসি দিয়ে আমরা কি করব ?.. এখন তো আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করবে জাতীয় খাবার অধিদপ্তর। আসমান থেকে হলেও তারা আমাদের জন্য প্যাকেট বদ্ধ বা টিনজাত খাবার আমদানী করবে।

এখন তোমরা স্বাধীন হয়ে গেছ .. ক্ষমতা এখন জনগণের হাতে, জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস, যাও এই সব গাছপালা কেটে ফেলে একটা বিপ্লব ঘটিয়ে দাও.. আমরা আর চাষাভূষা থাকতে চাই না। বড় একটা বিপ্লব ঘটিয়ে আমাদের ব্যবসায়ী .... ফেরিওয়ালা বানিয়ে দাও। তোমাদের সন্তানদের ......... ব্রোকারী.......... শিক্ষা দাও। কাট.. গাছপালা কাট.. এই পৃথিবীর গা' থেকে হতভাগা সবুজ রঙ্টাই মুছে ফেল, তোমাদের দৃঢ় পায়ে জাবালে আখদারের সমস্ত বৃক্ষ উৎখাত করে ফেল, তোমাদের জমিনের খেজুর গাছগুলো কেটে তার উপর দোকান বা বিউটিপার্লার বা হার্ডওয়ার স্টোর বানাও.. খেজুর গাছটাছ দিয়ে আমরা কি করব ?.. পৃথিবীর নানান দেশ তো আমাদের জন্য হরেক রকম মিষ্টান্ন বানিয়ে পাঠাচ্ছে। আমরা ভদ্রলোক, আমাদের পছন্দ বিচি ছাড়া খেজুর, ছিলকা ছাড়া কমলা এবং গাছ ছাড়া যাইতুন... সুতরাং সব গাছ কেটে ফেল বিশেষেত সেই অভিশপ্ত বৃক্ষ দুটি্তযাইতুন ও খেজুর গাছ।

এভাবে আমরা পৃথিবীর অগ্রসর অভিজাতগুলোর সমপর্যায়ে পৌঁছতে পারব.. ক্ষেপনাস্ত্র ও আনবিক বোমা থেকে চির নিরাপদ হয়ে থাকব .. এভাবে আমরা অনেক দিনের পশ্চাৎপদতাকে পিছনে ফেলে অগ্রসরতা অর্জন করতে পারব ..

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.