২০০৯ সালের ঘটনা। এইস এস সি পরীক্ষা শেষ। ঢাকায় এসেছি কোচিং করতে। উঠেছি মাজহারুল মামার বাসায় (দূর সম্পর্কের মামা)। মামার বাসা থেকেই কোচিং করি নিয়মিত।
দেড় মাস পর আমার রেজাল্ট হয়। কোচিং এ থাকতেই খবর পাই আমি কৃতিত্বের সাথে জি পি এ-৫ পেয়েছি। ভাবের শেষ নেই আমার। ভাব ধরে বাসায় ফিরলাম সন্ধ্যার কিছু পর। বাসায় ফিরে দেখি উৎসব-উৎসব পরিবেশ।
ললাটে চিন্তার রেখা ফুটে উঠল। আমার রেজাল্ট উপলক্ষে কি এতসব আয়োজন? ব্যাগটা রুমে রেখে ফ্রেশ হতে যাব এমন সময় মামা আমার রুমে ঢুকলেন। মামার সাথে এতদিনে খুব কমই কথা হয়েছে আমার। তাই একটু অবাকই হলাম।
মামা সামান্য রাগ হয়েই জিগ্যেস করলেন, "কোথায় ছিলি এতক্ষন? আজ হুমায়ূন এখানে খেতে আসবে।
রেডি থাকিস। তুই পয়সা হারানোর যে ম্যাজিকটা জানিস, ওইটা দেখাবি। "
ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম। আমিই তো হুমায়ূন। আবার কোন হুমায়ূন খেতে আসবে।
আমি তখনো জানিনা হুমায়ূন আহমেদ মাজহারুল মামার বন্ধু।
রাত ১০ টার দিকে হুমায়ূন আহমেদ স্যার আসবেন। উত্তেজনায় আমার হাত-পাঁ কাঁপছে। স্বাভাবিক ভাবেই অন্যসব টিন-এজারদের মত আমার প্রিয় লেখকদের তালিকায় হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবালের নাম সবার প্রথমে। আমি আনন্দে আত্মহারা।
আমার জি পি এ-৫ পাওয়ার আনন্দকেও অতিক্রম করেছে এই আনন্দ।
আমরা অধীর আগ্রহে বসে আছি। মাজহার মামা আনতে গেছেন স্যারকে। রাত প্রায় ১০.৩০ বাজে। কোন খবর নেই।
মাজহার মামার ফোনটাও বন্ধ। আমরা যখন ধরেই নিয়েছি যে, স্যার আর আসবেননা ঠিক তখনই ঘড়ঘড় করে গেট খোলার আওয়াজ হল।
মাজহারুল মামা রুমে ঢুকলেন। তাঁর মুখটা সামান্য বিমর্ষ। আমরা জিগ্যেস করলাম, " কি হয়েছে? স্যার আসবেন কিনা?"
কিছুক্ষন পর হাত দুটো পিছনে বেঁধে, মাথা নিচু করে রুমে ঢুকলেন সেই মানুষটি- যার জন্য অধীর আগ্রহে বসে ছিলাম আমরা এতক্ষণ।
স্যার জানালেন যে, তিনি কিছুই খেতে পারবেননা। আর এজন্যই মামার মনটা সামান্য খারাপ। হুমায়ূন আহমেদ মানেই আড্ডা, হুমায়ূন আহমেদ মানেই গল্প। আড্ডা, গল্পে ৩ ঘণ্টা কখন পার হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। এর মধ্যেই আমি আমার ম্যাজিক দেখিয়েছি, স্যারের ম্যাজিক আমরা দেখেছি।
অবশেষে যাবার পালা। যাবার আগে স্যার মামাকে ডেকে বললেন, "মাজহার, তুমি সময় করে একদিন আমার বাসায় এস। আমি হিমু আর মিসির আলীর শেষ পরিণতি নিয়ে দুটো বই লিখেছি। ওগুলো তোমার কাছে থাকবে। আমি মরার পর প্রকাশ করো ওগুলো।
"
আমি অনেক ঘ্যানঘ্যান করে মামার কাছ থেকে পাণ্ডুলিপি দুটো নিয়ে পড়েছিলাম। যদি মামার অনুমতি পাই তাহলে কিছুদিনের মধ্যেই গল্প দুটো পর্যায়ক্রমে প্রকাশিত হবে সামু ব্লগে। ততদিন ভাল থাকুন, সামু ব্লগের সাথেই থাকুন
(কাল্পনিক) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।