আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিভিন্ন ধর্মে একত্ববাদ -১ (হিন্দু বা সনাতন ধর্ম)

"A little knowledge of science makes man an atheist, but an in-depth study of science makes him a believer in God." Francis Bacon.
আর্য ধর্মসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও বেশি জনসংখ্যা বিশিষ্ট ধর্ম হচ্ছে হিন্দু ধর্ম । প্রকৃত পক্ষে "হিন্দু" একটি পারস্য শব্দ এবং হিন্দু শব্দ দ্বারা সিন্ধু উপত্যাকা এলাকার অধিবাসীদের বুঝানো হত । বর্তমানে প্রচলিত অর্থে হিন্দু একটি সাধারণ ধর্মের নাম যার আওতায় অনেক শ্রেনীর ও অনেক বর্ণের বিভিন্ন বিশ্বাস আছে , যাদের অধিকাংশের ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তি হচ্ছে বেদ, উপনিষদ এবং ভগবত গীতা । হিন্দু ধর্মে ঈশ্বরের সাধারণ ধারণাঃ হিন্দু ধর্ম সাধারণভাবে বহু ঈশ্বরবাদী ধর্ম হিসেবে পরিচিত । অধিকাংশ হিন্দুই এ কথার সত্যতা স্বীকার করেন এবং অসংখ্য দেবতার অস্তিত্বের বিশ্বাসের মাধ্যমে এ স্বীকৃতি প্রকাশ প্রকাশ করেন ।

কোন কোন হিন্দু ত্রয়ী ঈশ্বর তত্ত্বে বিশ্বাস করেন । তবে শিক্ষিত হিন্দু যারা তাদের ধর্মগ্রন্হ ভালোভাবে অধ্যয়ন করেছেন তারা জোর দিয়ে বলেন যে, একজন হিন্দুর উচিত একজনমাত্র ঈশ্বরে বিশ্বাস করা এবং তাঁর উপাসনা করা । পবিত্র কুরআন বলে, "এসো, আমাদের এবং তোমাদের মাঝে একটি সাধারণ বিষয়ে ঐক্যমতে পৌছি । সাধারণ ঐক্যমতের বিষয় এই যে, আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করি না । " (৩ঃ৬৪) এখানে সাধারণ ঐক্যমতের কথা হয়েছে যে, আমরা আল্লাহ (একমাত্র ঈশ্বর/স্রষ্টা) ছাড়া আর কারো ইবাদত করি না ।

ভগবত গীতা হিন্দুদের সকল ধর্ম গ্রন্হের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ও জনপ্রিয় ভগবতগীতা । গীতার নিম্নলিখিত শ্লোকটি বিবেচনা করে দেখুনঃ " তারা, যাদের জ্ঞান-বুদ্ধি বস্তুগত আকাংখার দ্বারা বিলুপ্ত হয়েছে, বিভিন্ন উপদেবতার কাছে আত্নমর্পণ করে এবং নিজেদের প্রবৃত্তির দ্বারা চালিত হয়ে উপাসনার বিশেষ নিয়মনীতি অনুসরণ করে । " এখানে গীতা বস্তবাদী লোকদের সম্পর্কে উল্লেখ করেছে যারা বস্তুবাদী এবং প্রকৃত ঈশ্বর বাদ দিয়ে অন্য উপ-দেবতার উপাসনা করে । উপনিষদসমূহঃ ১. "একমেবা দ্বিতীয়াম" "তিনি এক একক, যাঁর কোন দ্বিতীয় নাই । " [চান্দোগ্য উপনিষদ ৬ঃ২ঃ১] ২. উপনিষদের নিম্নের শ্লোকটিও দেখুনঃ "ন-কস্য কাসুজ জানিতা ন কাধিপাহ" "তাঁর কোন পিতা-মাতা নাই, কোন প্রভুও নাই ।

" [সেভতাসাভাতারা উপনিষদ ৬,৯, দ্বিতীয় ভাগ, পৃষ্ঠা ২৬৩] ৩.উপনিষদের আরো শ্লোক দেখুনঃ "ন তস্য প্রতিমা আসাতি" "তার সমতুল্য কেহ নাই" [সেভতাসাভাতারা উপনিষদ, অধ্যায় ৪ঃ১৯] "নৈনম উরধভাম ন তিরানকাম ন মাধ্য ন পারিজাগ্রাভাত না তাসি প্রতিমে আস্তি যস্যনামা মাহাদ যাসাহ" "তার সমতুল্য কেউ নাই, যার নাম মহা গৌরবের । " (এস. রাধা কৃষ্ঞান The principal Upanishad, কৃত পৃ.৭৩৬ এবং ৭৩৭) উপনিষদের উপরোল্লিখিত শ্লোকসমূহ কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতসমুহের সাথে তুলনা করে দেখুন । " এবং তার সমকক্ষ আর কেউ নাই । " [আল-কুরআন-১১২ঃ৪] "তার সমতুল্য আর কেউ নেই । " [আল-কুরআন-৪২ঃ১১] ৪. ঈশ্বরকে কোন বিশেষ আকারে কল্পনা করার বিষয়ে উপনিষদের নিম্নোক্ত শ্লোকসমূহে মানুষের অক্ষমতা তুলে ধরা হয়েছেঃ " না সমুদ্রসে তিস্হাতি রুপম অ্যাস্যা, ন কাকসুসা পাস্যতি কাস ক্যানাইয়াম ।

হ্রদা হ্নদিস্হাম মানাসা য়া এনাম, এভাম ভিদুর আমর্তাস তে ভবন্তি । " "তার আকার বা রুপ দেখা যায় না; কেউ তাকে চোখ দিয়ে দেখতে পারেনা । যারা হৃদয় এবং মন দিয়ে তাকে হৃদয়ে উপলব্ধি করে, তারাই অমর হয় । " [সেভতাসাভাতারা উপনিষদ, অধ্যায় ৪ঃ২০] পবিত্র কুরআনে এই রুপ বিষয় নিম্নোক্ত আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছেঃ "কোন দৃষ্টি তাকে দেখতে পারেনা , কিন্তু তাঁর দৃষ্টি সবার উপরে । তিনি সকল উপলব্ধির উপরে, অথচ তিনি সকল জিনিসের বিষয়ে অবগত ।

" [আল-কুরআন-৬ঃ১০৩] বেদঃ হিন্দু ধর্ম গ্রন্হসমূহের মধ্যে বেদকে সর্বাপক্ষো পবিত্র ধর্মগ্রন্হ বিবেচনা করা হয় । প্রধান বেদ ৪টি । যথা- ঋগ বেদ, যজুর্বেদ, সাম বেদ এবং অথর্ব বেদ । ১. যর্জুবেদঃ " ন তস্য প্রতিমা আস্তি" "তার কোন আকার নাই " [যজুর্বেদ,৩২ঃ৩] এতে আরো বলা হয়েছে" তিনি অজাত, তাই তিনি আমাদের উপাসনার অধিকারী । " "তার কোন আকার নেই, নিশ্চয়ই তার গৌরব বিরাট ।

তিনি তার ভিতর ধারণ করেন সকল উজ্জ্বল বস্তু । আমার প্রার্থনা তিনি যেন আমার ক্ষতি না করেন । তিনি অজাত, তিনি আমাদের উপাসনার অধিকারী । " [যর্জুবেদ,by Devi Chand পৃ.৩৭৭] "তার কোন অংশীদার নেই এবং তিনি পবিত্র । " [যর্জুবেদ,৪০ঃ৮] "তিনি উজ্জ্বলতায় সমাসীন ।

তিনি অমূর্ত নিরাকার, শরীর-বিহিন এক পবিত্র সত্তা, যাকে কোন অশুভ ভেদ করে নাই । তিনি সুদূরদর্শী, প্রজ্ঞাময়, সর্বব্যাপী সয়ম্ভু, যিনি যথার্থভাবে অনন্ত সময়ের জন্য লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট করেছেন । " [যর্জুবেদ-৪০ঃ৮] " আন্ধাতামা প্রাভিশান্তি ইয়ে অসম্ভূতি মুপাসতে" । "তারা অন্ধকারে প্রবেশ করে, যারা প্রাকৃতিক বস্তুসমূহের (আগুন,পানি ইত্যাদি) পূজা করে, তারা মহাঅন্ধকারে প্রবেশ করে যারা সৃষ্টি বস্তু (যেমন-পাথর বা মাটি দ্বারা তৈরী) পূজা করে " [৪০ঃ৯] ২. অথর্ব বেদঃ "দেব মাহা ওসি" "ঈশ্বর নিশ্চয়ই মহান " (অথর্ব বেদ-২০/৫৮ঃ৩) " তুমি যেমন মহান, তেমনই তোমার মহত্ব প্রশংসার দাবীদার; নিশ্চয়ই তুমি মহান হে ঈশ্বর । " (অথর্ব বেদ, সংহতি ভলিউম-২, উইলিয়াম ডিমাইট হুইটনি, পৃ.৯১০) পবিত্র কুরআনের সূরা রাদ -এ অনূরূপ অর্থের একটি আয়াত আছেঃ 'তিনিই মহান, তিনিই শ্রেষ্ঠ ।

' (আল-কুরআন-১৩ঃ৯) ৩. ঋগ বেদঃ সকল বেদের মধ্যে ঋগ বেদ প্রাচীনতম । হিন্দু ধর্মাবলম্বীগণ ঋগ বেদকে সবচেয়ে পবিত্র বিবেচনা করেন । ঋগ বেদে উল্লেখ আছে, "বিজ্ঞ পুরোহিতগণ এক ঈশ্বরকে বহু নামে ডাকেন " [ঋগ বেদ-১ঃ১৬৪ঃ৪৬] "মা চিদান্যাদভি শাংসাতা " "হে বন্ধুগণ, সেই একমাত্র ঐশী সত্তা ছাড়া আর কারো উপাসনা করো না । " [ঋগ বেদ সংহিতি, ভলিউম-১১, পৃষ্ঠা ১ও ২ । স্বামী সত্য প্রকাশ স্বরস্বতি এবং সত্যকাম বিদ্যালংকার ।

] " জ্ঞানী যোগিরা তাদের হৃদয় ও মন দিয়ে সে সর্বোচ্চ সত্তার ধ্যান করেন যিনি সর্বত্র বিরাজিত, মহান এবং সর্বজ্ঞ । একমাত্র তিনি তাদের কাজ সম্পর্কে অবহিত বিধায় সকল ইন্দ্রিয় অঙ্গ-প্রতঙ্গকে তাদের নিজ নিজ কাজের দায়িত্ব অর্পণ করেন । নিশ্চয়ই , শ্রেষ্ঠ গৌরব সে মহান স্রষ্টার । " [ঋগ বেদ-৫ঃ৮১] হিন্দু বেদান্ত সুত্র এর ব্রক্ষা সুত্রাঃ " একাম ব্রহাম, দ্ভিতিয়া নাস্তে নেহ না নাসতে কিনচান " "ঈশ্বর, কেবলমাত্র একজন, দ্বিতীয় কেউ নেই; কেউ নেই, কেউ নেই, মোটেই কেউ নেই । " চলবে ..............
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.