সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসৃত...............।
মাননীয় শেখ হাসিনা,
২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হবার পর হতে বিগত কয়েকদিনে নিঃসন্দেহে আপনার অসংখ্য শুভানুধ্যায়ীর পরামর্শ এবং উপদেশবাণীর ভারে আপনি জর্জরিত! মিডিয়া, পত্র-পত্রিকা, সাক্ষাৎকার এমনকি ব্লগে আপনাকে উদ্দেশ্য করে শত শত পরামর্শ বর্ষণ করা হয়েছে। হয়তো বেশীরভাগ আপনি পড়ার সুযোগ ও পাননি। আমার এই পত্রের ভাগ্যে ও নিশ্চিতরূপে তাই ঘটবে। আর যদি কপালগুনে আপনার চোখে পড়ে ও যায়, সেক্ষেত্রে এটি 'বোঝার উপর শাকের আঁটি' ছাড়া কিছুই হবেনা; ও আপনি সামলে নিতে পারবেন।
আমি প্রথমেই আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। কেউ মেনে নিক বা না নিক, তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি এবং অবিসংবাদিত নেতা। আপামর জনসাধারনের সর্বোচ্চ সমর্থন নিয়ে তিনি এদেশের শাসনভার গ্রহণ করেছিলেন, অথচ তিন বছরের মাথায় সে জনপ্রিয়তা শূণ্যের কোঠায় নেমে আসে। আর ফলশ্রুতিতে, তাঁকে বরণ করতে হয় ইতিহাসের এক দুঃখজনক পরিণতি। এক রাতের মাঝে পুরো পরিবার হারিয়ে ব্যক্তি হাসিনার বুকে কষ্টের নদী বইছে, সন্দেহ নেই।
কিন্তু রাজনীতিবিদ শেখ হাসিনা এ ঘটনা হতে শিক্ষা গ্রহণ করবেন আশা করি। কেননা, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কোন নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচনে আপনার চেয়ে বেশী আসন নিয়ে আর কেউই জিতে আসেননি। ’৭৩-এর নির্বাচনে হয়তো বঙ্গবন্ধু এর চেয়ে বেশী আসন পেয়েছিলেন, কিন্তু সে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে অনেক কুকথা ও শোনা যায়। তাই অন্তত পাঁচ বছর এই জনপ্রিয়তাকে ধরে রাখাটাই আপনার মূল চ্যালেঞ্জ রূপে গন্য হবে।
গত কয়েকদিনের পরিশীলিত কথা ও আচরনে আপনি প্রমান করতে পেরেছেন যে, সুস্থ রাজনীতির ময়দানে আপনি অনেক বেশি পরিণত হয়ে উঠেছেন।
ভবিষ্যতে এ আচরন ধরে রেখে ও নিজ দলে এ আচরনের চর্চা করে আপনার এখন, অন্যদের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপনের পালা।
দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা ইত্যাকার নানা কাজের মাধ্যমে এদেশের দিনবদলের কারীগর হবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আপনি মানুষের মন জয় করেছেন। এ ব্যাপারে অতিসত্বর পদক্ষেপ না নিলে জনগণ নিজেদেরকে প্রতারিত বলে ভাবতে শুরু করতে পারে। একটা বিশাল সংখ্যার ভাসমান ভোট আপনার বিজয়কে নিরংকুশ করে তুলেছে। বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিলে, বলতেই হয় যে, এ অভাবনীয় ফলাফলের পেছনে আপনার দলের সহজ প্রতিশ্রুতিগুলোর পাশাপাশি বিগত রাজনৈতিক সরকারের অদূরদর্শীতা ও জনবিচ্ছিন্নতা ও কম দায়ী নয়।
অথচ, তাঁরা ও প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জনসমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেছিলেন। তাই, জনগণ যখন সব ভুলে আপনাদের কোলে তুলে নিয়েছে, তখন বেচাল দেখলে ফেলে দিতে ও দ্বিধা করবে না।
ইতিহাস বলে, এদেশের সকল সরকার প্রধানের দূর্গতির মূল কারণ তার চারপাশে ঘিরে থাকা চাটুকার আর সুবিধাভোগীর দল। এদের কাছ হতে নিজেকে সরিয়ে রেখে ত্যাগী- বঞ্চিত ও যোগ্য নেতা-কর্মীদের সাথে থাকুন। দেশ শান্তিতে থাকবে।
বিরোধী দলের কথাকে মূল্যায়ন করুন। যে কোন মূল্যে জাতীয় সংসদকে সচল রাখুন। ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের গুরুত্ব পাশ্চাত্য ও দূর প্রাচ্যের কাছে দিন দিন বেড়েই চলেছে। সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তির আধিপত্যের বিপরীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাইলে সকলের অব্যাহত সমর্থনের কোন বিকল্প নেই।
যুদ্ধঅপরাধীদের বিচারের দাবীর প্রতি আপনাদের অকুন্ঠ সমর্থন আর আপনার প্রতিপক্ষের চরম উদাসীনতা ও আপনার বিজয়ের পথকে মসৃন করে তুলেছিল।
তাই অতি শীঘ্রই, এ বিচারের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তবে, এ ব্যাপারে অবশ্যই রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর প্রতিহিংসার উর্ধ্বে উঠে ন্যায়বিচারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ত্বরিত পদক্ষেপ বিচারের কাজের গতি কমিয়ে দেবে!
’৭২ এর সংবিধানের দিকে ফিরে যাবার ব্যাপারে দলের ভিতর হতে এবং তথাকথিত সুশীল সমাজের চাপ আপনাকে সহ্য করতে হতে পারে। জানি, এর সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আবেগ বিজড়িত। কিন্তু ভুলেও এ কাজ অন্তত এখন করতে যাবেন না।
তিন-চতুর্থাংশ সংসদ সদস্যের জোরে হয়তো এ কাজ হয়ে যাবে; কিন্তু, মনে রাখবেন, এদেশের আপামর জনসাধারনের কাছে এটি একটি ধর্মহীন সংবিধান রূপে চিহ্নিত। জোর-জবরদস্তি করে চাপিয়ে দিতে চাইলে সমস্যা হয়ে যাবে।
সবশেষে, বলতে চাই, আপনি এখন দল-মত নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিকের অভিভাবক। যারা আপনাকে সমর্থন দেয় নি তারাও এদেশের নাগরিক। অবাধ্য সন্তানকে পিতা-মাতার যেভাবে স্নেহমাখা হৃদয়ে কাছে টেনে নেন, আপনি সে পদক্ষেপই নিন।
বিমাতাসূলভ আচরন করে পারস্পরিক দূরত্বকে বাড়িয়ে তুলবেন না, আশা করি।
পাঁচ বছর পরে আপনাকে যে উচ্চতায়, যেখানে দেখতে চাই, সে উচ্চতায়, সেখানেই দেখবো, এই আশাবাদ ব্যক্ত করে শেষ করছি। ভালো থাকুন।
ধন্যবাদ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।