আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাংরি আন্দোলনের প্রথম ইশতাহার (নভেমবর, ১৯৬১)

গুগল সার্চ করলে সাপ, ব্যাং পাওয়া যাবে । চেষ্টা করে দেখুন, ইংরেজি ও বাংলায় ।

কবিতা এখন জীবনের বৈপরীত্যে আত্মস্থ । সে আর জীবনের সামঞ্জস্যকারক নয়, অতিপ্রজ অন্ধ বল্মীক নয়, নিরলস যুক্তিগ্গ্রন্থন নয় । এখন, এই সময়ে, অনিবার্য গভীরতার সন্ত্রস্তদৃক ক্ষুধায় মানবিক প্রয়োজন এমনভাবে আবির্ভূত যে, জীবনের কোনো অর্থ বের করার প্রয়োজন শেষ ।

এখন প্রয়োজন অনর্থ বের করা, প্রয়োজন মেরুবিপর্যয়, প্রয়োজন নৈরাত্মসিদ্ধি । প্রাগুক্ত ক্ষুধা কেবল পৃথিবী বিরোধিতার নয়, তা মানসিক, দৈহিক এবং শারীরিক । এ ক্ষুধার লালনকর্তা কবিতা, কারণ কবিতা ব্যতীত কী আছে আর জীবনে! মানুষ, ঈশ্বর, গণতন্ত্র এবং বিজ্ঞান পরাজিত হয়ে গেছে । কবিতা এখন একমাত্র আশ্রয় । কবিতা থাকা সত্বেও, অসহ্য মানবজীবনের সমস্তপ্রকার অসম্বদ্ধতা ।

অন্তরজগতের নিষ্ঠুর বিদ্রোহে, আন্তরাত্মার নিদারুন বিরক্তিতে, রক্তের প্রতিটি বিন্দুতে রচিত হয় কবিতা । উঃ, তবু মানবজীবন কেন এমন নিষ্প্রভ । হয়তো, কবিতা এবং জীবনকে ভিন্নভাবে দেখতে যাঁরা অভ্যস্ত, তাঁদের অপ্রয়োজনীয় অস্তিত্ব এই সঙ্কটের নিয়ন্ত্রক । কবিতা বলে যাকে আমরা মনে করি, জীবনের থেকে মোহমুক্তির প্রতি ভয়ংকর আকর্ষণের ফলাফল তা কেবল নয় । ফর্মের খাঁচায় বিশ্বপ্রকৃতির ফাঁদ পেতে রাখাকে আর কবিতা বলা হয় না; এমনকি প্রত্যাখ্যাত পৃথিবী থেকে পরিত্রাণের পথ রূপেও কবিতার ব্যবহার এখন হাস্যকর ।

ইচ্ছে করে, সচেতনতায়, সম্পূর্নরূপে আরণ্যকতার বর্বরতার মধ্যে মুক্ত কাব্যিক প্রজ্ঞার নিষ্ঠুরতার দাবির কাছে আত্মসমর্পণই কবিতা । সমস্ত প্রকার নিষিদ্ধতার মধ্য তাই পাওয়া যাবে অন্তরজগতের গুপ্তধন । কেবল, কেবল কবিতা থাকবে আত্মায় । ছন্দে গদ্য লেখার খেলাকে কবিতা নাম দিয়ে চালাবার খেলা এবার শেষ হওয়া প্রয়োজন । টেবলল্যম্প ও সিগারেট জ্বালিয়ে, সেরিব্রাল কর্টেক্সে কলম ডুবিয়ে, কবিতা বানাবার কাল শেষ হয়ে গেছে ।

এখন কবিতা রচিত হয় অরগ্যাজমের মতো স্বতঃস্ফূর্তিতে । সেহেতু ত্রশ্নু বলাতকারের পরমূহূর্তে কিংবা বিষ খেয়ে অথবা জলে ডুবে সচেতনভাবে বিহ্বল হলেই, এখন কবিতা সৃষ্টি সম্ভব; শিল্পের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা কবিতা সৃষ্টির প্রথম শর্ত । শখ করে, ভেবে-ভেবে, ছন্দে গদ্য লেখা হয়তো সম্ভব, কিন্তু কবিতা রচনা তেমন করে কোনোদিনই সম্ভব নয় । অর্থব্যঞ্জনাঘন হোক অথবা ধ্বনি পারম্পর্যে শ্রুতিমধুর, বিক্ষুব্ধ প্রবল চঞচল অন্তরাত্মার ও বহিরাত্মার ক্ষুধা নিবৃত্তির শক্তি না থাকলে কবিতা সতীর মতো চরিত্রহীনা, প্রিয়তমার মতো যোনিহীনা, ঈশ্বরীর মতো অনুন্মেষিণী হয়ে যেতে পারে ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.