অতীত খুড়ি, খুঁজে ফিরি স্বজাতির গুলিবিদ্ধ করোটি
আপা, সংসদ নির্বাচনে জনগণের একতরফা রায় নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন আপনি ও আপনার দল। অভিনন্দন সেজন্য। গণতন্ত্রের রাজপথে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিজয় অবশ্যই আনন্দের। কিন্তু আমি আপা বিজয়ের আনন্দ করতে আসি নাই। বিচারের দাবি নিয়ে আসছি।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি। আর সেইজন্য আপনার সামনে তুলে ধরছি ১৬ বছর আগে জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে আপনারই ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশ। ১৯৯৬ সালের ব্যর্থতা নিশ্চয়ই ২০০৯ সালেও দেখতে হবে না আমাদের। স্বাধীনতার পক্ষের আপামর জনগণের বিশ্বাস, এবার আপনি নিশ্চয়ই সেটা করে দেখাবেন। আমরা আশায় বুক বাধলাম।
(১৬-৪-১৯৯২ সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশ)
'অবাক পৃথিবী, অবাক করলে তুমি'
মাননীয় স্পিকার, গত কয়েকদিন ধরে আমরা যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি, এটা আমাদের দূর্ভাগ্যই বলতে হবে, আজ একজন যুদ্ধাপরাধী, স্বীকৃতি যুদ্ধাপরাধী হিসেবে যার বিচার হয়েছে- সে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব হারিয়েছে, রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে, ভোটার তালিকায় যার নাম নেই; ভোট দেবার, ভোটে অংশ গ্রহণ করবার সব অধিকার হারিয়েছে। রাজনীতি করার সে অধিকার হারিয়েছিলো, আজ স্বাধীনতার এত বছর পর তাকে নিয়ে আলোচনা করতে হচ্ছে এবং সে যুদ্ধাপরাধী কিনা, তার পক্ষে কেউ কেউ কিতাবের পর কিতাব তুলে নিয়ে এমনভাবে ওকালতিতে নেমেছেন এর প্রতিবাদ বা নিন্দা করার ভাষা আমার জানা নেই। শুধু সুকান্তের ভাষায় বলতে হয়, 'অবাক পৃথিবী, অবাক করলে তুমি!' আমরা বিস্মিত, অবাক, মর্মাহত এবং ব্যথিত হয়েছি। শুধু মনে হয়, আমরা কি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে বাস করছি, নাকি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের পরও বন্ধনীতে কোনো নাম অলিখিতভাবে লিখিত হয়েছে, আমরা সেই দেশে বাস করছি? সে প্রশ্নটাও আজ বারবার মনে জাগছে।
মাননীয় স্পিকার, আজ অনেক কথা বলার আছে।
কিন্তু ওকালতির বহর দেখে আজকে সেসব কথা বলতেও যেন নিজেকে ছোটো মনে হচ্ছে। কারণ ন্যাক্কারজনকভাবে ওকালতিপনায় একজন যুদ্ধাপরাধীকে রক্ষা করার আপ্রাণ প্রচেষ্টা আমরা দেখতে পাচ্ছি। একটা কথা আছে যে, 'অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর'-অনেকটা সেই অবস্থায়ই চলে গিয়েছে। কারণ আজকে এই সংসদে দাঁড়িয়ে ঠিক এইভাবে জামাতের মতো একটি দল, যে দল স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলো, আর তারই নেতা গোলাম আযম একজন যুদ্ধাপরাধী। তারপক্ষে একটি দল ওকালতি করছে, যে দলের নেতাও মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন।
সে দলের দিকে যদি আমি তাকাই তাহলে আজ বহু চেহারা আমার নজরে পড়ে, যারা কেউ স্বামী হারিয়েছেন, ভাই হারিয়েছেন- বাবা হারিয়েছেন। সেই দলের মধ্যে থেকে যখন কথাগুলো আসে, তখন সত্যি কাতর না হয়ে পাথর হওয়া ছাড়া আর কোনো গত্যান্তর থাকে না, মাননীয় স্পিকার।
রাজাকাররা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অংশ
মাননীয় স্পিকার, আপনি জানতে চেয়েছেন, আল-বদর, রাজাকার পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অক্সিলারি ফোর্স (সহযোগী বাহিনী) কিনা? এই প্রশ্ন গতকাল এসেছে। আর আমাদের কোনো কোনো ব্যারিস্টার সাহেবের বক্তব্য শুনে মাঝে মাঝে ভুলে যাচ্ছিলাম, আমরা কি কোর্টে দাঁড়িয়েছি নাকি সংসদে বসে আছি।
রাজাকার বাহিনী অক্সিলারী ফোর্স ছিলো কিনা, আমি একজন তার স্বাক্ষী।
তার কারণ হচ্ছে, ১৯৭১ সনে আমার মা, আমার বোন, আমার ভাইয়েরা, আমার স্বামী, আমার চাচা-চাচী, আমরা সবাই পাকিস্তান আর্মির হাতে দীর্ঘদিন বন্দী ছিলাম। এই বন্দী অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে আমার সন্তান হয়। ধানমন্ডীর ১৮ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে আমরা যখন বন্দী ছিলাম, তখন পাকিস্তানী আর্মির সঙ্গে তাদের মিলিশিয়া বাহিনী আমাদের ওই বাড়িটি পাহারা দিতো। ছাদের উপর কয়েকটি মেশিনগান পাতা ছিলো, বাঙ্কার করা ছিলো এবং যুদ্ধ যখন চলছিলো,তার একটি পর্যায়ে দেখা গেলো পাকিস্তানের সেই মিলিশিয়া বাহিনী, যারা বেলুচ রেজিমেন্টে ছিলো, তাদেরকে সরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের কিছু রাজাকারকে অস্ত্র হাতে নিয়ে পাকিস্তানি মিলিটারির সঙ্গে সেই বাড়ি পাহারা দেবার কাজে নিয়োজিত রেখেছে। রেশনে যে খাবার আসতো, তা রাজাকারদের জন্যই আসতো।
পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর একটি অংশ হিসেবে তারাও বাড়ি পাহারা দিতো। আমার মনে হয়, এর থেকে জ্বলন্ত প্রমাণ আর কিছু হতে পারে না....
(রাজাকারদের বিষয়ে গেজেট নোটিফিকেশন উত্থাপন করেন তিনি)
গোলাম আযম নরঘাতক
মাননীয় স্পিকার, এটা অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনক বিষয় যে এতদিন পর আমাদের প্রমাণ করতে হচ্ছে যে গোলাম আযম রাজাকার প্রধান ছিলেন কিনা? গোলাম আযম যে একজন হত্যাকারী ছিলেন, তার একটি প্রমাণ আমি এখানে দিচ্ছি। হোমনা থানার প্রতিনিধি নিশ্চয়ই এখানে আছেন। কুমিল্লার হোমনা থানার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জনাব সিরু মিয়া দারোগা ও তার কিশোর পুত্র আনোয়ার কামালকে গোলাম আযমের লিখিত পত্রের নির্দেশে হত্যা করা হয়। সিরু মিয়া দারোগা মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিন থেকে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ট্রেনিং ও অপারেশন চালাতেন।
'৭১এর ২৭ অক্টোবর সিরু মিয়া দারোগা এবং তার কিশোর পুত্র আনোয়ার কামাল মুক্তিযুদ্ধে ট্রেনিং ক্যাম্পে যাওয়ার সময় অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ে। সিরু মিয়া মুক্তিযুদ্ধে অনেক দুঃসাহসিক কাজ করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কাজ করেছিলেন যে তিনি আমাদের প্রবাসী বিপ্লবী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের স্ত্রী বেগম তাজউদ্দিনকে সপরিবারে কুমিল্লা সীমান্ত পার করে পৌছে দিয়েছিলেন। সেই সিরু মিয়াকেও গোলাম আযমের নির্দেশে হত্যা করা হয়েছিলো। তার নজির ও প্রমাণ (একখানা কাগজ দেখিয়ে) এই কাগজে রয়েছে।
আপনি চাইলে এই কাগজও আপনার কাছে দিতে পারি।
মাননীয় স্পিকার, আজকে আমরা আইন হাতড়ে বেড়াচ্ছি যে কোন আইনে তাকে বিচার করা যায়। এখানে বিএনপির ব্যারিস্টার সাহেবরা অনেক কথাই বলেছেন। আজকে আমার দলের পক্ষ থেকে আমরা Act XIX of 1973 (আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইন) উল্লেখ করেছি। এই এক্টের ধারা অনুযায়ী ট্রাইবুনাল গঠন করে বিচার করা যেতে পারে বলে আমাদের সদস্যরা যে প্রস্তাব রেখেছেন, সরকার পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে নানা রকম অজুহাত দেখাচ্ছেন।
গোলাম আযম একজন নরঘাতক। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে যারা বিশ্বাস করে তাদের মনে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকতে পারে, এ কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আমরা জানি, অন্তত এই বিষয়ে কারো মনে কোনো সন্দেহ নেই।
প্রকৃত অপরাধীদের ক্ষমা করা হয়নি
আজকে এই সরকার একটি কথা বলছেন যে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমা করেছিলো। হ্যাঁ মাননীয় স্পিকার, ক্ষমা করেছিলো।
কিন্তু কেনো ক্ষমা করা হয়েছিলো? মাননীয় স্পিকার আপনি জানেন যে বঙ্গবন্ধু কোন অবস্থার প্রেক্ষিতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রায় ৩৭ হাজার দালাল বন্দী হয়। এবং এই সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর প্রায় ২৬ হাজার দালাল মুক্তি পায়। তারপরও ১১ হাজার দালাল তখনও বন্দী ছিলো এবং তাদের বিচার কাজ চলছিলো। এর মধ্যে অনেক বন্দী সাজাপ্রাপ্ত ছিলো।
পরবর্তীকালে আমরা দেখেছি এইসব সাজাপ্রাপ্ত বন্দীরা এই স্বাধীন বাংলাদেশের মন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর পদও অলংকৃত করেছে।
মাননীয় স্পিকার, আজকে বলা হয় আওয়ামী লীগ এইসব দালালদের সাজা দেওয়ার জন্য কিছূই করেনি। আওয়ামী লীগ ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করে যে ক্লেমেন্সি (সাধারণ ক্ষমা) দিয়েছিলো, সে কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু সেটা কেন করতে হয়েছিলো? সেইসব বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে কাদেরকে ফেরত আনা হয়েছিলো?
মাননীয় স্পিকার, আপনি জানেন, দেশবাসী নিশ্চয়ই তা জানে। সেইসময় প্রায় চারলক্ষ বাঙালী পাকিস্তানে বন্দী অবস্থায় ছিলো।
তাদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজন বাঙালীদের ফিরিয়ে আনার জন্য রাস্তায় নেমেছিল, বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়েছিলো। আমাদের কাছে এসেও অনেকে কান্নাকাটি করেছেন। এইরকম একটা অবস্থায় সেইসব বাঙালীদের ফিরিয়ে আনার জন্যই এই ক্লেমেন্সি (সাধারণ ক্ষমা) দেয়া হয়েছিলো। এদেশে ফেরত আসতে পেরেছিলেন আজকে যিনি আমাদের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল নুরুদ্দিন, আজকে যিনি বিডিআর প্রধান জেনারেল লতিফ এবং জেনারেল মাহমুদুল হাসান, জেনারেল সালামসহ অনেকেই। আজকে এখানে মন্ত্রীদের সারিতে বসে আছেন মজিদ-উল হক সাহেব, মোস্তাফিজুর রহমান সাহেব।
সেদিন এই ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছিলো বলেই তারা দেশে ফেরত আসতে পেরেছিলেন। এবং আমি মনে করি, তারা সকলেই বঙ্গবন্ধুর সেই প্রচেষ্টার কথা আজ কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবেন এবং বলবেন ক্লেমেন্সি দিয়ে বঙ্গবন্ধু কোনো ভুল করেননি। কিন্তু ক্লেমেন্সি দিলেই যে বিচার করা যাবে না এমন তো কোনো কথা নেই। এদের বিচার করার জন্য তো বঙ্গবন্ধু অ্যাক্ট করে রেখেছিলেন, সেটা হলো Act XIX of 1973 (আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইন) এবং সংবিধানের ৪৭(৩) অনুচ্ছেদে স্পষ্ট বিধান রয়েছে যে এদের বিচার করা যাবে।
সাধারণ ক্ষমা করার ব্যাপারে আরো কিছু কারণ ছিলো।
মাননীয় স্পিকার আপনি সেসব কথা জানেন, কারণ আপনি নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা। এই দেশে যে মুক্তিযুদ্ধ হয় সেটা গেরিলা যুদ্ধ ছিলো। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে, বাড়ির কোনো একজনকে কোনো একটা পদে রেখে সেই বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের যুদ্ধ পরিচালনা করেছে এবং এই ধরণের যে সমস্ত কেস ছিলো, যারা প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছে, তাদেরকেই বঙ্গবন্ধু সাধারণ ক্ষমা করেছিলেন। কিন্তু যারা সত্যিকার যুদ্ধাপরাধী, বিশেষ করে যারা গণহত্যা চালিয়েছে, যারা লুটতরাজ করেছে, যারা নারী ধর্ষণ করেছে, যারা অগ্নিসংযোগ করেছে তাদেরকে কিন্তু ক্ষমা করা হয়নি....
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধকে রক্ষা করবো
মাননীয় স্পিকার, আজকেও যারা গণ আদালতকে অস্বীকার করতে চায়, আমি তাদের একটি কথাই বলতে চাই, আমরা আন্দোলন সংগ্রামের সময় বারবার অঙ্গীকার করেছি, এমনকি তিনজোটের যে রূপরেখা, সেই রূপরেখায়ও আমরা উল্লেখ করেছি যে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখব, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মূল্যবোধকে আমরা রক্ষা করবো। আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করেছি জনগনের রায় নিয়ে।
জনগনকে সামনে নিয়ে। জনগনের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে এবং সেই রায়ের ফলে আজকের এই সংসদ। এই সংসদে আজকে যদি প্রশ্ন ওঠে গণআদালত বৈধ না অবৈধ, তাহলে জনগণকেই অস্বীকার করা হয়। কিন্তু ক্ষমতার মোহে পড়ে জনগনকে অস্বীকার করলে এর যে ভয়াবহ পরিণতি হবে তার দায়দায়িত্ব আজকে যারা ক্ষমতায় আছে তাদেরকেই নিতে হবে।
মাননীয় স্পিকার.... নানা জটিল সমস্যা আমাদের রয়েছে।
সেই সমস্যার সাথে সাথে আজকে যাদের ওকালতি সরকার করছেন, তাদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপে আজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও সারা বাংলাদেশে এদের সন্ত্রাসী আঘাতের ফলে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মীরা মৃত্যুবরণ করছে, আঘাত প্রাপ্ত হচ্ছে এবং তারা আরও বেশী সন্ত্রাসী তৎপরতা সৃষ্টি করবে যখন দেখবে সরকারী দল তাদেরই পক্ষ হয়ে ওকালতি করে যাচ্ছে। আজকে আমার ভাই মেজর হাফিজ সাহেব অত্যন্ত চমৎকারভাবে বলেছেন যে, যখন আমাদের ব্যারিস্টার সাহেবরা ওকালতি করছিলেন তখন জামাতে ইসলামীর কিছু কিছু এমপি সাহেব অত্যন্ত উৎফুল্ল ছিলো ফলে তাদের আর কিছু বলার নাই তাদের (জামাত) হয়ে ওকালতি তো তারা (বিএনপি করেই যাচ্ছেন)।
গোলাম আযম ও সহযোগীদের বিচার করতে হবে
এই মহান সংসদের সে অধিকার রয়েছে। জাতি সেই অধিকার দিয়েছে।
এই সংসদ সার্বভৌম সংসদ। সেই লক্ষ্যে- একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধাচারণ, যুদ্ধ ও গণহত্যাসহ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সাধন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরও পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধারের সাথে জড়িত থেকে বাংলাদেশের বিরোধিতা, বিদেশী নাগরিক হওয়া স্বত্বেও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে বেআইনী রাজনৈতিক তৎপরতায় লিপ্ত পাকিস্তানী নাগরিক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ জনগণের যে মতামত প্রতিফলিত হয়েছে তাকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ আন্তর্জাতিক ক্রাইম অ্যাক্ট ১৯৭৩ (Act XIX of 1973) অনুসারে ট্রাইবুনাল গঠন করে, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ বিচারের জন্য আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আমি আপনার মাধ্যমে এই সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। সেই লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়কে গোলাম আযম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে মামলা দায়ের ও বিচারের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব রাখছি। একইসঙ্গে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদে জনগনের এই মতামত প্রতিফলনকারী গণআদালতের উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে জারীকৃত অসম্মাণজনক মামলা দায়ের করার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ওই মামলা প্রত্যাহারের জন্য আমি আপনার মাধ্যমে সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।
..... আমি আশা করি, আর কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে না থেকে শত শহীদের আত্মার প্রতি সম্মাণ জানিয়ে শত লাঞ্ছিত মা বোনের ইজ্জতের প্রতি সম্মাণ জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও লক্ষ্যকে প্রতিষ্ঠিত রেখে একটা নরঘাতক গোলাম আযমের বিচারের প্রশ্নে আর কোনো দ্বিমত কেউ রাখবেন না।
এই আশা পোষন করে আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি।
ধন্যবাদ।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
১৬-৪-১৯৯২ ইং।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।