http://shudipto.co.nr
শীতের সকালে ঘুম থেকে ওঠা বেশ কঠিন। কম্বলের নিচে যে আরামদায়ক উষ্ণতা জমে থাকে তার মায়া কাটিয়ে ওঠা বেশ কঠিন। কথাটা সবার জন্যই প্রযোজ্য, আর আমার মত অলসের জন্য অতিমাত্রায় প্রযোজ্য। এর ওপরে যদি যুক্ত হয় সাপ্তাহিক ছুটি, তাহলে মানসিক কষ্টটা বেড়ে যায় অনেক গুণ। বাসার অন্য সবাই ঘুমে, আর আমি বই খুলে পড়তে বসছি - একবার চিন্তা করুন কি হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি।
আজ সকালটা শুরু হয়েছিল ঠিক এভাবেই।
মাঝে মাঝে মনটা খুব বিদ্রোহী হয়ে উঠে। কেন? কেন আমাকে এত কষ্ট করতে হবে? যদিও ভালো করেই জানি, কষ্টটা শুধু আমার জন্য নয়; ক্লাসে আরো যে নিরানব্বইজন ছাত্রছাত্রী আছে সবার জন্যই প্রযোজ্য। তারাও আমার মতই একই মর্মপীড়ায় আক্রান্ত, হাতে গোনা কয়েকজন অতিমাত্রায় বাস্তববাদী ছাড়া - শীতের সকালে কম্বলের নিচে জমে থাকা উষ্ণতা তাদের মনে কোন আলাদা ভাবাবেগ সৃষ্টি করে না।
ঘুম থেকে উঠলাম বটে, কিন্তু পড়তে বসতে ইচ্ছে করলো না।
বাইরে তাকালাম - প্রচণ্ড ঘন কুয়াশা। আমার রুমটা উত্তরমুখী, জানালা বন্ধ থাকলেও হিমালয় থেকে বয়ে আসা বাতাস রুমটাকে শীতল করে রাখে ঠিকই। অনেক কষ্টে নিজের আলস্যভরা শরীরটাকে নিয়ে গেলাম ডেস্কের সামনে। নোটগুলো খুললাম, পড়লাম। মাথায় তেমন কিছু ঢুকলো না।
বুঝতে পারলাম আজ পরীক্ষায় নাসা স্যারের অংশে সাদা খাতা জমা দিয়ে আসা ছাড়া আমার গতি নেই।
আমাদের এই স্যার আমাদের খুবই বিপদে ফেলেছেন। শুনেছি তিনি নাকি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছেন, চলে যাবেন। যেহেতু চলে যাবেন তাই পড়ানোর তেমন একটা গরজ নেই। ক্লাস মিস দিয়েছেন অনেকগুলো, যেটুকু না পড়ালেই নয় ওটুকুই পড়িয়েছেন।
সবচেয়ে বড় কথা - উনি আমাদের কোন ক্লাসটেস্ট নেন নি। অন্যান্য সাবজেক্টে যা পড়াশোনা হয় তা মূলত ক্লাসটেস্টের কারণেই। সুতরাং উনার সাবজেক্টে সবার অবস্থাই কম বেশি খারাপ, আর আমার মত যারা ফাঁকিবাজ তাদের অবস্থা আরো বেশি খারাপ।
বাসা থেকে বের হলাম একটু দেরি করে, কারণ ছুটির দিনে রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকবে জানা কথা। বাসস্ট্যান্ডে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে হল না, ভাগ্যটা ভালোই বলতে হবে।
সাধারণত ছুটির দিনে রাস্তা ফাঁকা থাকলেও বাসের জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়।
ফাঁকা বাসটা হাতেগোনা কয়েকজন যাত্রী নিয়ে ছুটে চললো। পরের স্টপেজে বাসে উঠল মারুফ, ছেলেটা বি সেকশনে পড়ে। পরিচয় হয়েছে মাত্র দিন কয়েক আগে। আমার পাশে বসলো, কুশল বিনিময় আর ভদ্রতাসূচক দুটো কথা বলে যে যার পড়ায় মন দিলাম।
পরের স্টপেজে বি সেকশনের মুজাহিদ এবং আরেকটা ছেলে (নাম জানি না) উঠল। দেখলাম সবাই নাসা স্যারের অংশ নিয়ে খুবই চিন্তিত। ত্রিশ নম্বরের পরীক্ষায় পনেরো নম্বর নাসা স্যারের আর বাকি পনেরো শাহরিয়ার স্যারের। শাহরিয়ার স্যারের অংশ সবাই বেশ ভালোই পারে। কারণ তিনি একটা ক্লাস টেস্ট নিয়েছিলেন।
ভার্সিটিতে ঢোকার সময় দেখলাম গাড়িতে বসে সামিরা পড়ছে। ওর পড়ার ভঙ্গিটা অদ্ভুত। কেমনভাবে যেন মাথা দোলাতে দোলাতে পড়ে।
পরীক্ষা নিয়ে আমি কোনকালেই তেমন একটা উদ্বিগ্ন ছিলাম না, এখনও নই। তবে এটাও সত্যি নাসা স্যারের অংশে যে অবস্থা, এত খারাপ অবস্থা নিয়ে আমি এর আগে কোন পরীক্ষা দেই নি।
সুতরাং এটা মোটামুটি নিশ্চিত ছিলো যে এই পরীক্ষা আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ পরীক্ষাগুলোর একটা হতে চলেছে।
পরীক্ষা শুরু হল। শাহরিয়ার স্যারের অংশের লেখা শেষ হয়ে গেলো পঁয়ত্রিশ মিনিটের মাথায়। পঞ্চান্ন মিনিট বাকি আর খাতায় লেখা বাকি পনেরো নাম্বারের। কমন পড়েছে মাত্র ছয় নম্বর।
হালকা ধারণা আছে আরো তিন নম্বর।
লিখলাম মনের মাধুরী মিশিয়ে। স্যার যা দেন।
পরীক্ষা শেষে নিজেকে ক্লান্ত এবং অবসন্ন মনে হচ্ছিল। সামিরার সোশিওলজির একটা নোট আমার কাছে ছিল।
নোটটা ওকে ফেরত দিয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিলাম।
বাসায় ফিরে নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে ঘুমালাম টানা সাড়ে তিন ঘণ্টা।
কাল আবার পরীক্ষা আছে। সোশিওলজি। তারপর টানা তিনদিন বিরতি - ইলেকশন উপলক্ষে।
কাল হয়ত একটু নিশ্চিন্তে থাকতে পারব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।