বাংলা আমার দেশ হত্যাকাণ্ডে কাদের মোল্লার সরাসরি স¤পৃক্ততা প্রমাণে ব্যর্থ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ হয়েছে সহায়তা, নৈতিক সমর্থনের
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্ল¬ার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ঘটনায় সাড়ে ৪শ' জনকে হত্যার অভিযোগ উত্থাপিত হলেও ট্রাইব্যুনাল কোনো হত্যার ঘটনায় তার সরাসরি স¤পৃক্ততা পায়নি। অর্থাত কাদের মোল্ল¬া নিজ হাতে কাউকে গুলি করে হত্যা করেছেন এমন কোনো সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষ্য দেননি। রায় পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোনো কোনো ঘটনায় কাদের মোল্ল¬া রাইফেল হাতে দাঁড়িয়েছিলেন মাত্র। কিন্তু রাইফেল দিয়ে কাউকে গুলি করেছেন এমন চাক্ষুষ সাক্ষী ট্রাইব্যুনাল পায়নি।
ঘাটার চর ও ভাওয়াল খানবাড়ি হত্যাকাণ্ড স¤পর্কে রায়ে বলা হয়, হত্যাকাণ্ড যে ঘটেছিল তা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই, কিন্তু এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আসামির অংশগ্রহণ বা সংশ্লি¬ষ্টতা প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাই-ব্যুনালে কাদের মোল্ল¬ার বিরুদ্ধে মিরপুরে পল্লব হত্যা, কবি মেহেরুননিসা, তার মা এবং দুই ভাইকে মিরপুরের বাসায় গিয়ে হত্যা, সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব হত্যা, ভাওয়াল খানবাড়ি ও ঘাটার চর (শহীদনগর) এলাকায় শতাধিক নিরস্ত্র গ্রামবাসী ও দুজন নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা, মিরপুরের আলোকদীতে ৩৪৪ জনকে হত্যা, মিরপুরে হযরত আলী, তার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই বছরের ছেলেকে হত্যা এবং তার ১১ বছরের মেয়েকে ধর্ষণসহ বিভিন্ন ঘটনায় প্রায় সাড়ে ৪শ' ব্যক্তিকে হত্যার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। একটি ঘটনা বাদে সবকয়টি ঘটনায় কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করে ট্রাইব্যুনাল মোট ৪৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়। এর মধ্যে, মিরপুরের আলোকদি গ্রামে ৩৪৪ জনের বেশি মানুষ হত্যা ও মিরপুরের হযরত আলী ও তার স্বজনদের হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন (৩০ বছর) কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এই দুই হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩ এর ২০ এর ২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ২০ (২) ধারা অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল আসামিকে মৃত্যুদণ্ড বা অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী অন্য যেকোন কারাদণ্ড দিতে পারে।
কিন্তু ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্ল¬ার ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সিদ্ধান্তই ঘোষণা করে।
মিরপুরের আলোকদি গ্রামে ৩৪৪ জনকে হত্যার প্রসঙ্গে রায়ে বলা হয়, 'হত্যাকাণ্ডের সময় কাদের মোল্লাকে রাইফেল হাতে সশরীরে উপস্থিত দেখা গেছে। ' কিন্তু কাদের মোল্ল¬া গুলি করে কাউকে হত্যা করেছেন এমন চাক্ষুষ সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেননি। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের সময় কাদের মোল্লার উপস্থিত থাকার বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রায়ে বলা হয়, 'কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধ যখন অনেক ব্যক্তি ঘটায়, তখন ওই ব্যক্তিদের প্রত্যেকে ওই অপরাধ এককভাবে সংঘটনের জন্য সমানভাবে দায়ী'।
এছাড়া মিরপুরের ১২ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর কালাপানি লেনের হযরত আলী, তার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই বছরের ছেলেকে হত্যা এবং তার ১১ বছরের মেয়েকে ধর্ষণের সঙ্গে কাদের মোল্ল¬া সংশ্লি¬ষ্ট ছিলেন মাত্র। তিনি কাউকে ধর্ষণ বা হত্যা করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ তার সাক্ষ্যপ্রমাণ ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে ব্যর্থ হয়। এ প্রসঙ্গে রায়ে বলা হয়, 'আইনগতভাবে ধরে নেয়া যায়, অপরাধ সংঘটনে আসামি নৈতিক সমর্থন ও সাহায্য করেছেন।
এদিকে, আরো তিনটি ঘটনায় কাদের মোল্ল¬াকে মোট ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এর মধ্যে কাদের মোল্ল¬ার নির্দেশে আকতার গুণ্ডা একাত্তরের ৫ এপ্রিল মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র পল্ল¬বকে গুলি করে হত্যা করেছে মর্মে অভিযোগ উত্থাপিত হয়।
কিন্তু কাদের মোল্ল¬া নিজেই পল্লবকে হত্যা করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ এমন কোনো প্রমাণ আদালতে হাজির করেনি। তার বিরুদ্ধে সহায়তার অভিযোগ উঠে। এ প্রসঙ্গে রায়ে বলা হয়, প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে পাওয়া গেছে, একাত্তরে নবাবপুর থেকে পল্ল¬বকে ধরে আনার মতো দুষ্কর্মে আসামির 'সহযোগিতা' ছিল।
কাদের মোল্ল¬া ও তার সহযোগী কর্তৃক কবি মেহেরুননিসা, তার মা এবং দুই ভাইকে মিরপুরের বাসায় হত্যার অভিযোগ উত্থাপিত হয়। কিন্তু এ ঘটনাকেও ট্রাইব্যুনাল দেখেছে, নৈতিক সমর্থন ও উতসাহের অংশ হিসেবে।
এ প্রসঙ্গে রায়ে বলা হয়, সহযোগীদের নেতৃত্ব দেয়ার মাধ্যমে কাদের মোল্ল¬া এ হত্যাকাণ্ডে 'নৈতিক সমর্থন' ও 'উতসাহ' জুগিয়েছেন, যা দুষ্কর্মে 'সহযোগিতার' মতো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একই ধরনের মন্তব্য করে সাংবাদিক
খন্দকার আবু তালেব হত্যাকাণ্ডের উপসংহার টানে ট্রাইব্যুনাল। এ তিনটি অভিযোগে তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ
(ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩ এর ২০ এর ২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ২০ (২) ধারা অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল আসামিকে মৃত্যুদণ্ড বা অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী অন্য যেকোন কারাদণ্ড দিতে পারেন। কিন্তু এ তিনটি ঘটনায় কাদের মোল্ল¬াকে একক দণ্ড হিসেবে মোট ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
এদিকে, কাদের মোল্লা ও ৬০ থেকে ৭০ জন রাজাকার কেরানীগঞ্জ থানার ভাওয়াল খানবাড়ি ও ঘাটার চর (শহীদনগর) এলাকায় শতাধিক নিরস্ত্র গ্রামবাসী ও দুইজন নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছে মর্মে অভিযোগ আনা হয়। এ অভিযোগ থেকে কাদের মোল্লাকে খালাস দেয় ট্রাইব্যুনাল। এ প্রসঙ্গে রায়ে বলা হয়, রাষ্ট্রপক্ষকে আসামির পরিচয় সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে হবে। পরিচিতির বিষয়টি মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ঘটনা দেখেছে এমন সাক্ষীদের পর্যবেক্ষণের দীর্ঘতা, শনাক্তকরণের আগে সাক্ষীর সঙ্গে আসামির পরিচিতি এবং আসামির স¤পর্কে সাক্ষীর
বর্ণনাকে বিবেচনায় আনা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের সপ্তম সাক্ষী আবদুল মজিদ পালোয়ান ও অষ্টম সাক্ষী নূর জাহান যে আসামিকে চিনতেন, তা প্রাপ্ত সাক্ষ্যে ট্রাইব্যুনাল বিশ্বাস করতে পারেনি।
এই দুই সাক্ষী এ ধরনের দাবিও করেনি।
ট্রাইব্যুনাল এসব বিষয় বিবেচনা করে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, ঘটনার দিন পাকিস্তানি সনাদের সঙ্গে রাইফেল হাতে কাদের মোল্ল¬া ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়নি। এছাড়া গণহত্যার ঘটনায় কাদের মোল্লা দুষ্কৃতকারীদের সঙ্গে ছিলেন মর্মে রাষ্ট্রপক্ষের সপ্তম ও অষ্টম সাক্ষীর বক্তব্য যুক্তিসঙ্গত নয়। আবার রাষ্ট্রপক্ষের সপ্তম সাক্ষীর সাক্ষ্য ছিলো পর¯পরবিরোধী।
প্রসঙ্গত, এ ঘটনায় রাষ্ট্রপক্ষে তিনজন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন।
এর মধ্যে প্রধান সাক্ষী ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা
মোজাফফর আহমেদ খান। কিন্তু তিনিও কাদের মোল্ল¬া কাউকে গুলি করে হত্যা করেছেন এমন কোনো জবানবন্দি দেননি। বরং তিনি বলেন, ঘটনার আগের দিন ঢাকার শারীরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সামনে কাদের মোল্ল¬াকে রাইফেল হাতে তিনি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন। এ প্রসঙ্গে রায়ে প্রশ্ন করা হয়, এ জবানবন্দির মাধ্যমে এটা কি প্রমাণ করে আসামি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
সাক্ষী মজিদ পালোয়ান তার সাক্ষ্যে বলেন, কাদের মোল্ল¬া নামে এক ব্যক্তিকে পাঞ্জাবি পায়জামা পরা অবস্থায় দেখেছি তবে কাউকে হত্যা করতে দেখিনি।
তাকে শুধু রাইফেল হাতে দাঁড়িয়ে থাকতেই আমি দেখেছি। সাক্ষী নূরজাহানও ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষী ছিলেন না। তিনি জবানবন্দিতে বলেন, কাদের মোল্ল¬ার জড়িত থাকার বিষয়টি আমার শ্বশুরের মুখে শুনেছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।