!!!
১৯৪৩ সাল। ২য় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। বাংলার একটি ছোট্ট গ্রামে ব্রাহ্মণ গঙ্গাচরণ আসেন বসবাস করতে। সাথে তাঁর বউ অনঙ্গ। যুদ্ধের কারণে বাজারে চালের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে চাল হয়ে যায় দুষ্প্রাপ্য।
বুদ্ধিমান গঙ্গাচরণ প্রথমদিকে খাবার সংগ্রহ করতে পারলেও পরে বাধ্য হয়ে অনঙ্গকে কাজ করতে দিতে রাজী হন। খাদ্যের অভাবে গ্রামে লোক মারা গেলে গ্রামবাসী গ্রাম ছেড়ে যাওয়া শুরু করে। এই দুর্ভিক্ষের কারণে বাংলায় ৫০লাখ লোক মারা যায় এবং যা মানবসৃষ্ট মন্বন্তর নামে পরিচিতি লাভ করে।
বিভুতিভুষণ বন্ধ্যোপাধ্যায়’এর ‘অশনি সংকেত’ উপন্যাস অবলম্বনে সত্যজিৎ রায়ের এই চলচ্চিত্রে অনঙ্গ বউয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বাংলাদেশের ববিতা। ছবির শুরুতে দেখা যায় নদী থেকে ফেরার পথে গ্রামের মহিলারা অনঙ্গকে জানায়, অনঙ্গ আসাতে পুরো গ্রাম আলো হয়ে গেছে।
শ্রী রায় সম্ভবত এই থিমের উপর ভিত্তি করে পুরো ছবিতে ববিতাকে সেলুলয়েডে ধারণ করেছেন।
অনঙ্গের প্লাক করা ভ্রু, পলিশড নোখ, শ্যাম্পু করা চুল, কন্ঠে শুদ্ধ বাংলা নিয়ে সমালোচনা থাকলেও তা ববিতার অভিনয় ও সৌন্দর্যকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি। পুরো ছবিতে ববিতার পর্দা উপস্হিতি ছিল এককথায় অসাধারণ। এছাড়া সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সাথে ববিতার কেমেস্ট্রিও ছিল আকর্ষণীয়। এই ছবির কারণেই ববিতা পেয়ে যান আন্তর্জাতিক তারকার খ্যাতি।
ববিতার স্মৃতিতে ‘অশনি সংকেত’ চলচ্চিত্রের টুকিটাকি:
■ ছবিতে কাজ করার জন্য সত্যজিতের সাথে দেখা করতে ববিতা কলকাতা যান। সাথে বড়বোন সুচন্দা। প্রথমদিন কড়া মেকাপ নিয়ে নায়িকার সাজে সত্যজিতের বাড়িতে হাজির হন ববিতা। সত্যজিৎ জানান তিনি মেকাপ ছাড়া ববিতাকে দেখতে চান। অতএব পরের দিন ববিতা হাজির হন কোন মেকাপ ছাড়াই।
ফলশ্রুতিতে ববিতা পেয়ে যান অনঙ্গ বউয়ের চরিত্র। যার জন্য অপর্ণা সেন, শর্মিলা ঠাকুরের আগ্রহ ছিল অপরিসীম।
■ শ্যুটিং চলাকালীন সময়ে সত্যজিৎ জানতে চাইলেন ববিতা কলকাতায় কী দেখতে চান। ববিতা জানান তিনি কলকাতার শ্মশান ঘাট দেখতে চান। অবাক হলেন সত্যজিৎ।
কলকাতায় এতো বিখ্যাত জিনিস রেখে তাঁর নায়িকা কি না দেখতে চাইছে শ্মশান ঘাট !!! পরিচালক পরে ব্যবস্হা করে দিয়েছিলেন।
■ শ্যুটিং স্পট থেকে ফেরার পথে ছোট্ট সেতু পার হতে যেয়ে ববিতা তাঁর পায়ের চপ্পল ফেলে দিয়েছিলেন। পরে দেখলেন স্বয়ং সত্যজিৎ সেই চপ্পল হাতে নিয়ে ফিরছেন। অবাক হলেন ববিতা। মুগ্ধ হলেন পরিচালকের মহানুভবতায়।
■ বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটিসহ সত্যজিৎ রায় আমন্ত্রিত হয়েছেন। সাথে তাঁর ছবির শিল্পীরা । জার্মান তখনও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। এয়ারপোর্টে আটকে দেয়া হলো ববিতাকে। ববিতা কেঁদেকেটে অস্হির।
সত্যজিৎ বললেন, আমার নায়িকা যেতে পারবে না এটা হতেই পারেনা। আয়োজকদের সাথে কথা বললেন সত্যজিৎ এবং ভেতরে ঢোকার অনুমতি পান ববিতা।
১০১ মিনিটের এই ছবি ১৯৭৩ সালে ভারতে রিলিজ হয়। ১৯৭৩ সালে বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এই ছবি সেরা চলচ্চিত্র ক্যাটাগরীতে গোল্ডেন বিয়ার পুরস্কার, ১৯৭৪ সালে শিকাগো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা চলচ্চিত্র ক্যাটাগরীতে গোল্ডেন হুগো পুরস্কার এবং ১৯৭৪ সালে ভারতের শ্রেষ্ঠ বাংলা চলচ্চিত্র ও সেরা মিউজিকে পুরস্কার লাভ করেন সত্যজিৎ রায়। ছবিটি ডিভিডিতে পাওয়া যায়।
আগ্রহী হলে দেখে নিতে পারেন।
ইউটিউবে ছবিটি (Distant Thunder ) ১০টি অংশে ভাগ করে আপলোড করা আছে।
_____________________________________________
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশী পত্র-পত্রিকা। নেটে সার্চ দিয়ে ভাল কোন ছবি পাইনি। তাই পাইরেটেড ডিভিডির স্ক্রিনশটকেই ছবি হিসেবে ব্যবহার করতে হলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।