নির্বাচন ভাবনা : যুদ্ধাপরাধীরা প্রত্যাখ্যাত হবে
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
********************************************
এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বেশ কয়েকটি কারণেই খুব তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমত, এবার ছবিসহ নতুন ভোটার তালিকায় নির্বাচন হচ্ছে। এতে ভুয়া ভোটের সুযোগ থাকছে না। ভোটার তালিকাভুক্তির সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পাওয়ায় নাগরিকরা ভোটদানে আরো বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবেন। তারপর প্রথমবারের মতো এবারের নির্বাচনে ‘না’ ভোটের বিধান একটি উল্লেখযোগ্য দিক।
‘না’ ভোট দানের সুযোগ থাকার কারণে কোনো আসনে কোনো প্রার্থীকেই পছন্দ না হলেও একজন ভোটার অসহায়বোধ করবেন না। বরং ‘না’ ভোট দিয়ে তিনি তার প্রতিবাদ জানাতে পারবেন।
ওয়ান ইলেভেনের পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটা গণজাগরণ তৈরি হয়েছে। এবার দুর্নীতিবাজরা স্পষ্টভাবে চিহ্নিত হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষ এখন অনেক বেশি সজাগ।
এর প্রভাব নিশ্চয়ই নির্বাচনে পড়বে; জনগণ দুর্নীতিবাজদের ভোটে প্রত্যাখ্যান করবেন। একইভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধেও জনমত সোচ্চার হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডাররা সংগঠিত হয়ে মাঠে নেমেছেন। এর আগে যুদ্ধাপরাধীদের এভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। যুদ্ধাপরাধীরা এবার প্রত্যাখ্যাত হবে বলেই আমার বিশ্বাস।
মনে হচ্ছে এবার একটি দুর্নীতিমুক্ত ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন আমরা পাবো। এখন পর্যন্ত বড় কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। বিগত নির্বাচনে যে সহিংসতা হয়েছে এবং নির্বাচন-উত্তর সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর যে নির্যাতন হয়েছে তার পুনরাবৃত্তি এবার হবে না বলেই আশা করি। নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী কর্তৃপক্ষ আমাদের নানাভাবে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন। তবে উল্লেখ করতেই হয় নির্বাচনে জোটপ্রার্থী গণতন্ত্রী পার্টির নেতা নুরুল ইসলামের অগ্নি˜গ্ধ হয়ে মৃত্যুর মর্মান্তিক ঘটনাটি।
তার এই মৃত্যু যদি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে তা এ নির্বাচনের একটি বিষাদময় ঘটনা হিসেবেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আসন্ন নির্বাচনের আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো এ নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি চোখে পড়ছে না। দু এক জায়গায় টাকা ছড়ানোর খবর আসলেও তা একেবারেই বিচ্ছিন্ন। সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া প্রার্থীরা এবার নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার চেষ্টা করছেন। যত্রতত্র ক্যাম্প, দেয়ালে পোস্টার, দেয়াল লিখন দেখা যাচ্ছে না।
অবশ্য নেতানেত্রীরা গভীর রাতেও মিটিং-মিছিল করছেন। প্রচারণার শেষ সময়ে এ রকমটা অস্বাভাবিক নয়।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এবার রাজনৈতিক দলগুলো চেষ্টা করেছে ভালো লোকদের মনোনয়ন দিতে। নেতিবাচক ইমেজসম্পন্ন কিছু লোক অবশ্য প্রার্থিতা পেয়েছেন। তুলনামূলকভাবে মহাজোটের প্রার্থীরা অনেক পরিচ্ছন্ন ইমেজের।
বিএনপি-জামাত জোটে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী, গডফাদার এবং অভিযুক্ত দুর্নীতিবাজদের আত্মীয়স্বজন মনোনয়ন পেয়েছেন। এর জন্য দেশবাসীর কাছে তারা চিহ্নিত হয়ে থাকবেন। নির্বাচনের পর তারা এর বিরূপ ফলও নিশ্চয়ই পাবেন।
এবার নির্বাচনের আগে নির্বাচনী সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজটিও একটি প্রয়োজনীয় ও ইতিবাচক কাজ হয়েছে। এতে আসনগুলোর মধ্যে ভোটার সংখ্যার ব্যবধান কমেছে এবং নতুন নতুন প্রার্থীরও সামনে আসার সুযোগ হয়েছে।
উল্লেখ করা দরকার, এবার রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী মেনিফেস্টো তৈরিতে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে। আওয়ামী লীগের বছর-ওয়ারি পরিকল্পনার উপস্থাপনাটি অভিনব। বিএনপিও তাদের মেনিফেস্টোতে অনেক ইতিবাচক পরিকল্পনা-প্রতিশ্র“তি রেখেছে। নিজেদের শাসনামলের ব্যর্থতা স্বীকার না করলেও বিদ্যুৎ জ্বালানি এসব খাতে তাদের শোচনীয় ব্যর্থতা, দুর্নীতিÑ এসব কিছু মাথায় নিয়েই নিশ্চয় তারা নির্বাচনী মাঠে নেমেছে। শুধু প্রার্থী বা দল নয়, ভোটার, সাধারণ জনগণের মধ্যেও এবার নির্বাচন নিয়ে সচেতনতা ও উৎসাহ লক্ষণীয়।
অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতা ও দক্ষতার সঙ্গেই নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। সবকিছু মিলিয়ে আমি আশাবাদী যে, একটি স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পেতে যাচ্ছি আমরা। এ নির্বাচন হবে এ দেশের নতুন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার শুরু। এই একটি নির্বাচনের মাধ্যমেই আমাদের পূর্ণ গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটবে না, তবে কিছু দূর এগোলেও তা হবে আমাদের জন্য বিশাল অর্জন।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
---- ভোরের কাগজ । ২২ ডিসেম্বর ২০০৮
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।