আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক: যাঁর চিন্তায় বাংলাদেশ নামক জাতি রাষ্ট্রটির অস্তিত্ব ছিল অনিবার্য।

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ

জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক-এর নাম আমরা সবাই কমবেশি জানি; কিন্তু তাঁর সম্বন্ধে কতটুকু জানি? আমরা কি জানি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশদ্রোহিতার অভিযোগে তাঁকে তাঁর অনুপস্থিতিতে ১৪ বছর সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছিল? সেদিন আহমাদ মোস্তফা কামাল-এর লেখা (আমাদের মুক্তিযুদ্ধ: অনিবার্য ছিলো, আকস্মিক নয় ) পড়তে পড়তে আমার অনিবার্যভাবেই অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক-এর কথা মনে পড়ে গেল। কেননা, কামালের সে অনবদ্য লেখায় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক-এর প্রসঙ্গ উল্লেখিত ছিল। আমি সে প্রসঙ্গে পরে আসছি।

অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক-এর জন্ম ১৯১৪ সালে। ঢাকার নবাবগঞ্জ জেলার পারাগ্রাম-এ। পারাগ্রাম এখন অবশ্য উপজেলা। বাবা আবদুল আলী-চাকরি করতের ব্রিটিশ ভারতের পুলিশ বিভাগে। আমরা জানি, পুলিশ বিভাগের চাকরি বদলীর চাকরি।

সুতরাং ছেলেবেলায় নানা জায়গায় ঘুরেছেন আবদুর রাজ্জাক। ছেলেবেলার পড়াশোনা: যেমন রংপুরে, তেমনি হুগলীতে ঢাকার সরকারি মুসলিম হাইস্কুল। রাজ্জাক ম্যাট্রিক পাস করেছেন ঐ স্কুল থেকেই। আই. এ- পাস করেছেন ঢাকা কলেজ থেকে। ১৯৩১ সাল।

ভর্তি হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক-অর্থনীতি বিভাগ নামে একটি পৃথক বিভাগ ছিল, সে বিভাগেই ভর্তি হলে। এম. এ পাস করলেন ১৯৩৬ সালে । ঐ বছরই রাজনৈতিক-অর্থনীতি বিভাগে লেকচারার পদে যোগ দিলেন রাজ্জাক। পরে অবশ্য রাজনৈতিক-অর্থনীতি বিভাগ ভেঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতি নামে দুটি পৃথক বিভাগ হল।

রাজ্জাক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ বেছে নিয়েছিলেন। কখনও আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিভাগেও কাজ করেছেন। আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিভাগটি গঠিত হয়েছিল ইতিহাস বিভাগ ভেঙ্গে। ১৯৫০ সাল। লন্ডন গেলেন রাজ্জাক।

। ভর্তি হলেন লন্ডন স্কুল অভ ইকনমিক্সে। অবশ্য কোনও ডিগ্রি না নিয়েই দেশে ফিরে এলেন। আসলে ডিগ্রির প্রতি বিন্দুমাত্র মোহ ছিল না রাজ্জাকের। তাঁর জীবনও ছিল অত্যন্ত সাধাসিধে।

সংসারে জড়াননি, ছিলেন চিরকুমার। খুব বই পড়তেন। শুনেছি জ্ঞানতৃষ্ণার্তরা তাঁর কাছে এলে তিনি নাকি ভীষন উজ্জ্বীবিত বোধ করতেন। তবে রাজ্জাকের লেখার অভ্যেসও তেমন ছিল না। কেন? বলতে পারি না।

কয়েকটি প্রবন্ধ ও লিখিত ভাষন ব্যতীত তাঁর কোনও প্রকাশিত লেখাই নেই! রাজ্জাকের আগ্রহ এবং পান্ডিত্য ছিল প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস ও রাজনীতি। কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক বিশ্বাস কী ছিল? এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান লিখেছেন, The "pernicious" influence of his political ideas on the dissenting politicians of the 1960s once led the Ayub regime to dismiss him from his teaching position at Dhaka University on the allegation that he was not mindful of his duties as a teacher, but which the government failed to establish in the court. His "treasonable" acts during the War of Liberation earned him in absentia a fourteen-year rigorous imprisonment.(বাংলাপিডিয়া) এবার আহমাদ মোস্তফা কামাল-এর লেখার প্রসঙ্গে আসি। (আমাদের মুক্তিযুদ্ধ: অনিবার্য ছিলো, আকস্মিক নয় ); আবদুর রাজ্জাক মনে করতেন যে, দেশ বিভাগের পরবাঙালির একাংশ (অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ) বৃহত্তর ভারতীয় জাতিসত্ত্বায় মিশে যেতে সম্মত হলেও অপরঅংশটি (অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্থান) পাকিস্থানের অংশ হতে সম্মত হল বটে-তবে পূর্ববাংলার নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য (সাংস্কৃতিক) অক্ষুন্ন রেখেই। কামাল লিখেছেন, (অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের মতে) যে বৈশিষ্ট্য জন্ম দিল ভাষা আন্দোলনের-যার চূড়ান্ত পরিণতিই জাতীয় রাষ্ট্র বাংলাদেশ। আহমাদ মোস্তফা কামাল-এর লেখাটির লিঙ্ক- Click This Link অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের সান্নিধ্যে যাঁরাই এসেছেন তারা প্রত্যেকেই অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক কে বলেছেন: “শিক্ষকের শিক্ষক।

” এই একটি মাত্র উক্তিতে আমরা বুঝতে পারি অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক-এর মননশীলতার গভীরতা পরিমান। যা তা লোক তাঁর পাশে ভিড় করেননি। তাঁর অনুগামীদের মধ্যে যেমন ছিলেন বঙ্গবন্ধুর মতন প্রাজ্ঞ নেতা, তেমনি আহমেদ ছফার মতন প্রাজ্ঞ লেখক। আহমেদ ছফা তো বটেই- সলিমুল্লাহ খান, অধ্যাপক আহমেদ কামাল প্রমূখ -রাজ্জাক ঘরানার সার্থক উত্তরসূরী। তখন বলছিলাম যে, আসলে ডিগ্রির প্রতি আবদুর রাজ্জাকের বিন্দুমাত্র মোহ ছিল না।

তারপরও ১৯৭৩ সালের প্রথম দিকে ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় আবদুর রাজ্জাককে পি এইচ ডি প্রদান করেন। তাঁর জ্ঞানসাধনার কথা তাহলে সীমান্ত অতিক্রম করেছিল? ১৯৭৫ সালে সিনিয়র লেকচারার হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেন রাজ্জাক। ১৯৭৫ সালে তৎকালীন সরকার আবদুর রাজ্জাককে জাতীয় অধ্যাপক পদে অধিষ্ঠিত করে। আবদুর রাজ্জাকের মৃত্যু ১৯৯৯ সালের ২৮ নভেম্বর। মাঝেমাঝে আমার মনে হয়-অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের জ্ঞানের আলোয় আলোকময় হয়েছেন অল্পসংখ্যক মানুষ।

তাঁর ছাত্রছাত্রীরা, তাঁর সান্নিধ্যে যারা এসেছেন, তারা। অথচ, আবদুর রাজ্জাক বই লিখেননি বলে বৃহত্তর বাঙালি জাতি জানলই না কী তিনি ভাবতেন। আমার মনে হল, আবদুর রাজ্জাক এক মৌন পাহাড়, যে পাহাড়ের সোনার খনির সন্ধান অল্প সংখ্যক অভিযাত্রীই জানে। পরে আবার মনে হল, পাহাড়েরও তো ছায়া থাকে, যা অতি গভীর। গভীর ও বিস্তারিত।

তথ্য ও ছবি: বাংলাপিডিয়া।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.