আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সম্পর্ক- প্রাক কথন: ১

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

তুই কখন প্রেমে পড়ছিস প্রথম? প্রশ্নটা হতবাক করে না, বরং সময়টা নির্ধারণ করতে গিয়েই সমস্যায় পড়লাম, প্রেমের বোধ বোধ হয় মানুষের যৌনতার বোধ জন্মানোর সাথে সাথেই জন্মায়। শাররীক বৃদ্ধির পরিমাপ হয়তো আমাদের প্রেমে পড়বার বয়েসটাকে ঠিক করে দেয়। আমাদের যৌনচেতনা গড়ে উঠে আমাদের পরিপার্শ্ব দেখে। আমাদের সেরা কামনীয়, রমনীয় নারীরা কোনো না কোনো ভাবে আমাদের শৈশবের সৌন্দর্য্যের সমীকরণ মেনে চলে। প্রথম প্রেমে কবে পড়ে মানুষ? বয়ঃসন্ধি কালে, নিশ্চিত ভাবেই মানুষ বয়ঃসন্ধি কালে কোনো না কোনো ভিন্ন লিঙ্গকে কামনা করে।

খুব বেশী ব্যতিক্রম না হলে বাংলাদেশের মানুষ সমলিঙ্গের প্রেমে পড়ে না। এইসব সমকামী প্রেম নিয়ে ভাবিত না হয়ে আমরা বরং বিষমকামী প্রেম নিয়ে চিন্তাভাবনা করি। আমরা কাদের পছন্দ করি- কারা ছিলো আমাদের প্রথম প্রেম? যেসব স্কুলে একদা মোটামুটি সুন্দরী শিক্ষিকা ছিলো, একটু উঁচু ক্লাশের ছেলেরা সেই শিক্ষিকার প্রেমে পড়েছে। কিংবা পড়াতো দিদিমনি, কিংবা বন্ধুর বড়বোন, যার সাথে সম্পর্ক হয়তো একটা সময় স্বাভাবিক ছিলো, তবে ভেতরে প্রেমবোধ তৈরি হওয়ার পরে যেই সম্পর্কটা জটিল এবং কুটিল হয়ে গিয়েছে , হয়তো মাত্র এক মাসের ব্যবধানেই বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে যায়। একই ভাবে মেয়েরা স্কুলের মোটামুটি মাঝবয়স্ক শিক্ষকদের প্রেমে পড়ে।

কিংবা বান্ধবীর বড় ভাই, কিংবা একটু বয়স্ক মানুষের প্রেমে পড়ে। বিষয়টা অদ্ভুত হলেও বাস্তব মনে হয় আমার কাছে। আমরা প্রথম যাদের প্রেমে পড়ি, বিশেষ ব্যতিক্রম না হলে সেই প্রেমাস্পদের বয়েস আমাদের দ্বিগুনের বেশী হয়। আমরা- ছেলে মেয়ে উভয়েই- বয়ঃসন্ধি কালে আমাদের গুরুজনদের প্রেমে পড়ি। সময়ের সাথে এই বয়েসে ব্যবধানটা কমতে থাকে।

আমরা কৈশোরের অবসানে প্রায় সমবয়স্কদের প্রেমে পড়ি। যৌবনেও আমাদের আগ্রহ থাকে জুটির ভেতরে বয়েসের ব্যবধান যেনো ৪ বছরের বেশী না হয়। অদ্ভুত ঘটনা ঘটে ঠিক ৩৫ পার হওয়ার পরে। বিশেষত ৩২ পার হওয়া ছেলেদের ক্ষেত্রে বিষয়টা বেশী দেখা যায়- মেয়েদের ক্ষেত্রে বিষয়টা তেমন প্রকট হয়ে উঠে না, কারণ ৩২ বছর পর্যন্ত অবিবাহিত মেয়েরা সামজিক চাপে মানসিক সুস্থতা হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশে। ৩২ পার হওয়ার পরে ছেলেদের মেয়ে খুঁজবার প্রয়োজন দেখা দেয়।

অন্তত স্বাভাবিক উপয়ে ৩২এর ছেলেদের প্রায় সমবয়সীদের সাথে প্রেম হওয়ার সম্ভবনা ক্ষীণ। এমন কি পরিচিতদের ভেতরেও এমন কেউ নেই যাদের সাথে তার বয়েসের ব্যবধান ন্যুনতম ৫ বছর, সুতরাং এই সময় থেকেই যদি ছেলে বিয়ের জন্য মেয়ে দেখা শুরু করে তবে ৩২ এর যুবক ভাবে মেয়ের সাথে তার বয়েসের ব্যবধান থাকবে ৮। ৩৫ এগিয়ে বয়েসের ব্যবধান বেড়ে দাঁড়অ ১০ থেকে ১২। এবং খুব কম সংখ্যাক হলেও ৩৮ বছরের পরে বিয়ে করেছে যারা তারা সাধারণত ২০ থেকে ২২ বছরের মেয়েকে বিয়ে করে। যদি কোনো ভাবে হিসাবটা ৫০ এর ঐ দিকে নিয়ে যাওয়া হয় তবে দেখা যাবে পঞ্চাশোর্ধ কোনো প্রৌঢ় ঠিকই লোলিতার মতো কাউকে খুঁজছে।

একই ভাবে লোলিতাও সেই সময়েই খুঁজছে এই বয়েসের একটা মানুষকে। এটা অতিমাত্রায় সাধারণীকৃত বক্তব্য- তবে এই বক্তব্যের পেছনে আমার একটা সাধারণ যুক্তি আছে। আমরা নিজেরা নিরাপত্তা এবং আশ্রয় চাই। একটা সম্পর্কের কাছে আমাদের প্রত্যাশাও কিন্তু এমনটাই। আমরা এমন একজনের সাথে সম্পর্কিত হতে চাই যে আমাদের মানসিক নিরাপত্তা দিবে।

শাররীক কামনার বিষয়টা হয়তো থাকে, তবে অধিকাংশ সময়েই শাররীক কামনার বোধটা উহ্য থাকে, বয়ঃসন্ধি কালের প্রেমে শাররীক কামতাড়না প্রায়শঃই অনুপস্থিত থাকে। বয়ঃসন্ধি কালের সমস্যা হলো উপযুক্ত অবস্থান খুঁজে না পাওয়া। শৈশব এবং কৈশোরের মাঝামাঝি একটা অবস্থানে ত্রিশঙ্কু হয়ে থাকা বয়েস এটা। একটু বয়স্ক মানুষেরা এড়িয়ে যায়, তাদের নিজস্ব গোপনীয়তার জগত তৈরি হয়ে যায়। স্কুলের বড় ভাইদের নিজস্ব জগতেও প্রবেশাধিকার থাকে না তাদের।

বাসায় বড় ভাইয়ের সাথে সম্পর্কটা ঠিক থাকে না, সেও একই সমস্যা কাটিয়ে নিজস্ব জগতে সমাহিত। বাসায় মায়ের সাথে সম্পর্কটা আগের মতো থাকছে না, বাবার সাথেও সম্পর্কটা ঠিক নেই। কেউই আমাদের সমস্যা বুঝে না, সবাই নিজের নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত- এই জায়গা থেকেই বয়ঃসন্ধি কাল শুরু হয়। বাংলাদেশে এখনও এই সময় নিয়ে তেমন কাজ হয় নি। এই বয়েসের মনঃস্তত্ব নিয়ে কাজ হচ্ছে না, এটা মানুষের জীবনের স্বাভাবিক একটা পর্যায়, এই অনুভুতি সবাই পার হয়ে এসেছে এই স্বীকৃতিটুকু দেওয়ার মতো ব্যবস্থাও অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত।

সবাই এই বয়েসে উপেক্ষিত বোধ করেই বড় হয়েছে। সুতরাং এমন একজন মানুষকে খুঁজে প্রককিশোন বয়সী ছেলে মেয়ে- যে তাদের স্বীকৃতি দেবে এবং তাদের সমস্যার কথা শুনবে। তাদের গাইড করবে এবং আশ্রয় দিবে। এবং এই সময়টাতেই মানুষ নির্ভরতা খুঁজতে একটু বয়স্ক মানুষের কাছে যায়। সুতরাং আমরা যখন আমাদের বড় বোনদের, স্কুলের শিক্ষিকার কিংবা অন্য কোনো পরিচিত যুবতি এবং প্রৌঢ়দের প্রেমে পড়ছি তখন আমাদের সমবয়সী মেয়েরাও প্রেমে পড়ছে, হয়তো স্কুলের শিক্ষক, গৃহশিক্ষক, কিংবা বড় ভাইয়ের বন্ধু, কিংবা বান্ধবীর বড় ভাই, কিংবা আরও একটু এগিয়ে গেলে মাঝ বয়সী কোনো প্রৌঢ়ের যে তার লোলিতাকে খুঁজছে।

আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাপন ও সামাজিক প্রথা বিবেচনা করলে দেখা যাবে, আমাদের অধিকাংশ মানুষেরই প্রথম সন্তান জন্মেছে যখন তাদের বয়েস ৩০ এর কোঠায়। বিশেষত যারা অন্তত কম্পিউটার ব্যবহার করে এই লেখা পড়ছে তাদের প্রায় সবারই বাবাদের প্রথম সন্তান জন্মেছে ২৫ থেকে ৩০ বছরের মাঝামাঝি সময়ে। বয়ঃসন্ধি কালের প্রেম শাররীক সম্পর্ক পর্যন্ত গড়াবে কি না এটা অনেক সমীকরণের উপরে নির্ভর করলেও আমার অনুমাণ বিষয়টা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েই বলা যায়, প্রায় সমবয়সী জুটি, যাদের বিয়ে হয়েছে ২৫ এর পরে তাদের সন্তানেরা বয়ঃসন্ধি কালে সম্পর্কে জড়ালে সেটা শাররীক ঘনিষ্ঠতার পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। অন্য ক্ষেত্রেও বিষয়টা ঘটতে পারে। তবে শাররীক সম্পর্কের বিষয়টা যেহেতু দ্বিপাক্ষিত সুতরাং এই সম্পর্ক ঘটবার সময় দ্বিপাক্ষিক বিষয়াদিও বিবেচনার দাবি করে, যারা ২৫ এর পরে বিয়ে করেছে এবং এই দাম্পতি প্রায় সমবয়স্ক, তাদের ক্ষেত্রে একটা বাস্তবতা হলো- তারা যখন মাঝবয়েসে নিজেদের জীবনের সমস্যায় খাবি খাচ্ছে।

পুরুষের ক্ষেত্রে যাকে বলা যায় মিড লাইফ ক্রাইসিস, সেই একই সময়ে মহিলার জীবনে যেটা মেনোপোজজনিত শাররীক ও মানসিক জটিলতা। সুতরাং নিজস্ব জীবনের ঝামেলা মেটাতে ব্যস্ত এই জুটি তার বয়ঃসন্ধিকালের সন্তানকে তেমন সময় দিতে পারে না। এই সন্তানেরা যদি অন্য কোনো মিড লাইফ ক্রাইসিসে ভোগা মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলে তবে শাররীক ঘনিষ্ঠতাই আমার কাছে অনিবার্য মনে হয়। এই ক্ষেত্রে দুজন দুজনের পারানি হয়ে উঠে। বয়ঃসন্ধি কালের এই পরিণতি এড়ানোর একটা উপায় হলো সন্তানকে উপযুক্ত সময় দেওয়া।

নিজের জীবনের ঝামেলায় জড়িয়ে থাকলেও সন্তানকে যথেষ্ট সময় দিয়ে তাদের জীবনের সমস্যার কথা এবং সাফল্যের কথা আগ্রহ নিয়ে শোনা এবং তাদের অর্জনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়তো এই পরিণতি ঠেকাতে পারে অধিকাংশ সময়ই। নচেত বয়ঃসন্ধি কালের সন্তান আশ্রয়ের খোঁজে যাবে অন্য কোনো মাঝবয়সী মানুষের কাছে। অন্য একটা অনুমান হলো, নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে মাঝবয়সী মানুষের প্রেমের পড়বার সম্ভবনা যতটুকু, শেষ সন্তানের ক্ষেত্রে ঠিক সেই সম্ভবনা কম। শেষ সন্তানটি হয়তো যার প্রেমে পড়বে তার সাথে বয়েসের ব্যবধান হবে ১০ থেকে ১৫ বছর। কিন্তু প্রথম সন্তান যার প্রেমে পড়বে তার সাথে বয়েসের ব্যবধানটা হবে ২০ থেকে ২৫ বছর।

বিষয়টার পরিসংখ্যানগত প্রমাণ নেই, কিংবা এমন কোনো গবেষণা উপাত্তও দেওয়া সম্ভব না আমার পক্ষে, তবে আমার মনে হয় যদি কেউ এই বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে তবে আমার এই অনুমাণ মিলে যাওয়ার সম্ভবনা ৫০ ভাগ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।