দেশে প্রতিবছর বজ্রপাতে মারা যাচ্ছে দেড় থেকে দুই শ মানুষ। সরকার একে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে না দেখে ‘আপদ’ হিসেবে দেখছে।
১ সেপ্টেম্বর দেশের পাঁচ জেলায় নয়জন মানুষ বজ্রপাতে মারা গেছে। এই নিয়ে এ বছর ১৮০ জন মানুষ বজ্রপাতে মারা গেল। গত তিন বছরের মধ্যে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ।
গত তিন বছরে কোনো একক প্রাকৃতিক ঘটনার মধ্যে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এর সুনির্দিষ্ট তথ্য দুর্যোগ-ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরসহ সরকারের কোনো সংস্থার কাছে নেই।
সরকারের সমন্বিত দুর্যোগ-ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির (সিডিএমপি) হিসাব অনুসারে, ২০১২ সালে বন্যায় ১৩০ জন মানুষের মৃত্যু হয়। সরকারি হিসাবে সে বছর কোনো প্রাকৃতিক ঘটনায় এটিই ছিল সবচেয়ে বেশি মৃত্যু। বেসরকারি সংগঠন দুর্যোগ ফোরামের হিসাবে দেখা গেছে, একই বছর বজ্রপাতে নিহত মানুষের সংখ্যা ছিল ১৫২।
২০১১ সালে তা ছিল ১৭৯। আর এ বছর ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মারা গেছে ১৮০ জন। এর মধ্যে ২৭ জনই শিশু।
এ বিষয়ে দুর্যোগ-ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) সামছুর রহমান প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। কিন্তু সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই।
এর প্রভাব যেহেতু স্থায়ী নয়, তাই একে দুর্যোগ না বলে আপদ বলতে হবে।
এই আপদের ঘটনা নিয়ে তথ্যভান্ডারের কাজ শুরু করেছে সিডিএমপি। সংস্থাটির দুর্যোগে সাড়াপ্রদান ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ আব্দুল লতিফ খান জানান, বজ্রপাত ঘটনার ভৌগোলিক মানচিত্র তৈরির কাজ শুরু হবে শিগগিরই। এ ছাড়া সচেতনতামূলক কর্মসূচিও নেওয়া হবে।
বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা আলাদা করে সুনির্দিষ্ট করা না হলেও সম্প্রতি দুর্যোগবিষয়ক পরিস্থিতি প্রতিবেদনে এই সংখ্যাটি যুক্ত করার কাজ শুরু করেছে দুর্যোগ-ব্যবস্থপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় দুর্যোগ সমন্বয় সাড়াদান কেন্দ্র (এনডিআরসিসি)।
কিন্তু সেটিও অসম্পূর্ণ বলে মনে করেন বাংলাদেশ দুর্যোগ ফোরামের আহ্বায়ক গওহর নঈম ওয়ারা।
দুর্যোগ ফোরামের হিসাবে, ৬ মে দেশের ১১টি জেলায় বজ্রপাতে মারা যায় ২৩ জন। মৃত ব্যক্তিদের নাম ও ঠিকানাও আছে সংগঠনটির কাছে। কিন্তু এনডিআরসিসির হিসাবে সেদিন মৃতের সংখ্যা ছিল মাত্র পাঁচ। আর চলতি বছর বজ্রপাতে নিহত মানুষের অর্ধেকই কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা ও মৌলভীবাজারের।
দুর্যোগ-ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা বলছেন, বড় গাছের অভাব বজ্রপাতে মৃত্যুর একটা কারণ হতে পারে। অন্যদিকে শহরাঞ্চলে ঘরবাড়ি বেশি হলেও সেখানে বজ্রনিরোধক থাকায় বজ্রপাতের ঘটনা কম। কিন্তু গ্রামের এই নিরোধক হিসেবে কাজ করতো যে বড় গাছ, তার সংখ্যা গেছে কমে। তাতেই বাড়ছে প্রাণহানি।
বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার কারণ কি বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি? ঠিক এই মুহূর্তে এর জন্য সুনির্দিষ্ট প্রমাণভিত্তিক উপাত্ত নেই বলে জানান সেন্টার ফর গ্লোবাল চেঞ্জের নির্বাহী পরিচালক আহসানউদ্দিন আহমদ।
তিনি প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বাড়ার ফলে বাষ্পীভবনের পরিমাণও বেড়েছে। এর ফলে তৈরি মেঘে মেঘে সংঘর্ষও অনিবার্যভাবে বাড়ছে, যা বজ্রপাত আকারে আঘাত হানছে বলে ধারণা করা যায়।
বজ্রপাতে মৃত্যুর বিষয়টির কিছু কারণ উল্লেখ করে আহসানউদ্দিন বলেন, বজ্রপাতের ঘটনা খোলা প্রান্তরে বেশি দেখা যায়। বর্তমানে কৃষিশ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে। এটি মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার একটা কারণ হতে পারে।
এ ছাড়া আগে কৃষিতে ধাতব যন্ত্রপাতির ব্যবহার ছিল না বললেই চলে। কৃষকের কাছে বড়জোর কাস্তে থাকত। কিন্তু এখন ট্রাক্টরসহ নানা কৃষি যন্ত্রাংশ বা মুঠোফোনের মতো ধাতব যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেড়ে গেছে। এসব ধাতব বস্তুর ব্যবহার বজ্রপাতে ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।