আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বজ্রপাত বা ঠাটাঃ কি এবং কেনো হয়? বজ্রপাতে মারা যাওয়া লাশ বিক্রি হয় কেনো?

আপনি অবাক হবেন যে পৃথিবীতে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৪০-৫০ বার বজ্রপাত হয়ে থাকে, অর্থাৎ বছরে প্রায় ১৪০ কোটি বার! সাধারণ করে বলতে গেলে- বায়ুমন্ডলের আনব্যালান্সড ইলেকট্রিক চার্জ এর কারণে মাঝে মাঝে যে বিরাট ইলেকট্রোস্ট্যাটিক ডিসচার্জ হয়ে থাকে তা-ই বজ্রপাত বা ঠাটা। ইলেকট্রোস্ট্যাটিক ডিসচার্জ মানেই দুটি বস্তু বা পদার্থের মধ্যকার ইলেকট্রিসিটির হঠাৎ প্রবাহ, এটা হতে পারে বস্তু দুটি পারস্পরিক সংস্পর্শে আসার ফলে কিংবা 'শর্ট-সার্কিট' এর কারণে অথবা 'ডাই-ইলেকট্রিক ব্রেক-ডাউন (যা অনেকটা ইলেকট্রিক সার্কিট ফেইল্যুর এর মতো)' এর কারণে। যাইহোক, বজ্রপাত সাধারণত হয়ে থাকে মেঘ-থেকে-মেঘে কিংবা মেঘ-থেকে-ভুমিতে। এক একটি 'মেঘ-থেকে-ভুমিতে' বা 'ক্লাউড-টু-গ্রাউন্ড' টাইপের বজ্রপাত পৃথিবীতে আঘাত হানার পূর্বে প্রায় ৫ কি.মি. পথ পাড়ি দিয়ে আসে নিমেষেই। শুধু মেঘ থেকেই যে বজ্রপাত হয় তা ঠিক নয়।

তুষার ঝড় বা থান্ডার-স্নো, ধূলি-ঝড়, আগ্নেয়গিরির উদগিরণ, ফরেস্ট-ফায়ার, টর্নেডো, হারিকেন ইত্যাদি থেকেও বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। প্রশ্ন হলো ঠিক কিভাবে এবং কেনো বজ্রপাত হয়ে থাকে? আমরা জানি আদ্র বাতাস একটি ইনস্যুলেটিং ম্যাটেরিয়াল বা ডাই-ইলেকট্রিক এবং প্রত্যেকটি ইনস্যুলেটিং ম্যাটেরিয়ালের একটি 'ম্যাক্সিমাম ইলেকট্রিক ফিল্ড স্ট্রেংথ' থাকে যাকে আমরা 'ডাই-ইলেকট্রিক স্ট্রেংথ' বলি। আদ্র বাতাসের ক্ষেত্রে যখন 'লোকাল ইলেকট্রিক ফিল্ড স্ট্রেংথ' আদ্র বাতাসের 'ডাই-ইলেকট্রিক স্ট্রেংথ'-কে অতিক্রম করে (প্রতি মিটারে প্রায় ৩০ লাখ ভোল্ট!), তখনই ইলেকট্রিক ডিসচার্জ তথা বিপুল শব্দে (সেই সাথে অত্যুজ্জল আলোকচ্ছটা!) বজ্রপাত ঘটে। তবে চার্জ থেকে আলোকচ্ছটার উৎপত্তিটা ঠিক কিভাবে হয় তা নিয়ে এখনো গবষণা চলছে- সম্ভবত ইলেকট্রিক ফিল্ডের মধ্য দিয়ে উষ্ণ-আদ্র বাতাসের সার্কুলেশনের ফলে বজ্রপাতের সময় আলোকচ্ছটার উদ্ভব ঘটে, কারণ তখন বরফ বা পানির কণা চার্জ সংগ্রহ করতে পারে (ঠিক যেমনটি ঘটে থাকে 'ভ্যান ডি গ্র্যাফ জেনারেটর' এর ক্ষেত্রে!)। কিন্তু বাতাস তো বিদ্যুৎ পরিবাহী বা কন্ডাক্টর নয়, তাহলে ঠাটা ভূমিতে আসে কিভাবে? যখন ইলেকট্রিক ডিসচার্জ (ঋণাত্নক বজ্রপাতের ক্ষেত্রে প্রায় ৩০ হাজার অ্যাম্পিয়ার এবং ধনাত্নক বজ্রপাতের ক্ষেত্রে প্রায় ৩ লাখ অ্যাম্পিয়ার, প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১ লক্ষ কিলোমিটার বেগে!) ঘটে ঠিক তখন আদ্র-বাতাসে এক ধরণের ক্রমিক বা সাকসেসিভ ইলেকট্রিক ডিসচার্জ চ্যানেল তৈরি হয় কারণ বাতাসের অণু সমূহের মধ্যকার ইলেকট্রন এবং ধনাত্নক আয়ন সমূহ তখন একে অপর থেকে দূরে সরে যায়।

ডিসচার্জ চ্যানেল তখন 'সুপারহিটিং'(কোনো লিকুইড তার স্ফুটনাংক বা বয়লিং পয়েন্টের উপরের তাপমাত্রায়ও যখন বয়লড না হয়, বজ্রপাতের ক্ষেত্রে তা প্লাজমা টেম্পারেচার) এর শিকার হয়। ফলে হঠাৎ করে বাতাসের প্রচন্ড রকমের প্রসারণ বা এক্সপানসান ঘটে যা শক-ওয়েভ আকারে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং আমরা বজ্রপাত বা ঠাটার গগন-বিদারী আওয়াজ শুনতে পাই। মানে রাখা ভালো যে- বজ্রপাতের ফলে প্রচুর এক্স-রে নির্গমন ঘটে থাকে, কিন্তু বজ্রপাতের ফলে এক্স-রে উৎপন্ন হবার সঠিক কারণ এখনো বিস্তর গবেষণা সাপেক্ষ। তার চেয়েও চিন্তার কথা হলো- বজ্রপাতের ফলে এক্স-রে এর চেয়েও শক্তিশালী গামা-রশ্মির নির্গমন। আরও চিন্তার বিষয় হলো- সাম্প্রতিক গবেষণায় বজ্রপাতের সময় 'অ্যান্টি-ম্যাটার' উৎপত্তি ধরা পড়েছে! এবার আসি গুরুত্বপূর্ণ কথায়! আমরা জানি যে কোনো ইলেকট্রিক চার্জের মুভমেন্টের ফলে ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি হয়।

তা হলে ঠাটার এই বিশাল ইলেকট্রিক ডিসচার্জের সময় চার্জের মুভমেন্টের দরূণ একটা বিশাল ম্যাগনেটিক ফিল্ড অবশ্যই তৈরি হওয়ার কথা! হ্যা, বজ্রপাতের সময় ইলেকট্রিক ডিসচার্জ চ্যানেলে অত্যন্ত শক্তিশালী চৌম্বক-ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। বজ্রপাতের কারেন্ট যখন কোনো পাথর, কোনো ধাতব পদার্থ কিংবা মাটি ইত্যাদির মধ্য দিয়ে যায়- তখন এই অতি-শক্তিশালী চৌম্বক-ক্ষেত্র বা ম্যাগনেটিক ফিল্ডের দরুন ঐ পদার্থ সমূহ পার্মান্যান্টলি ম্যাগন্যাটাইজড হয়ে যায়! ফলে বজ্রপাতের ফলে কোনো মানুষ মারা গেলে তার হাড় সমূহও পার্মান্যান্টলি ম্যাগন্যাটাইজড হয়ে যায় এবং কতিপয় কিছু লোক এই হাড় পাওয়ার জন্য প্রায়ই বজ্রপাতে মারা যাওয়া লাশের সন্ধান করে, এমনকি কবর থেকেও তুলে ফেলে (আমি এটা নিয়েও আরো বিস্তারিত অনুসন্ধান চালাচ্ছি আমার ডেডবডি-ক্রাইম থিসিস পেপারের জন্য, পরে হয়তো আপনাদের জানাতে পারবো)! ধারণা করা হয় পৃথিবীর সব প্রাকৃতিক চুম্বক প্রাচীনকালে এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে। বজ্রপাতের বিপুল শক্তিকে যদি নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের কল্যাণের কাজে লাগানো যেত? প্রতিটা বজ্রপাত প্রায় ৫০০ কোটি জুল শক্তি বহন করে থাকে! আমি বিস্মিত হবোনা যখন দেখবো ভবিষ্যতে মানুষ ঠাটাকেও নিয়ন্ত্রণ করে মানব-কল্যাণে কাজে লাগাচ্ছে! বজ্রপাত নিয়ে 'ফুলমিনোলজি' নামক বিজ্ঞানের একটি শাখা রয়েছে। বজ্রপাত-ভীতিকে মনোবিজ্ঞানীরা 'অ্যাস্ট্রাফোবিয়া' নামে ডাকেন। বিনিয়ামিন ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ সাল, ঢাকা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।