আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাতের মেঘ-বৃষ্টি-বজ্রপাত পরিদৃশ্য


ধ্রুপদী দ্রৌপদী বর্ষা বাঙালির মনের ভেতর নিয়ে আসে ভাবজগতের বাণী। বাংলার ষড়্ঋতুর ভেতরে বর্ষাই হচ্ছেন একমাত্র নারী। আমি তো এই রমণীরই গর্ভজাত। আমি বর্ষার জাতক। আর জাতক হলে যা হয়, বর্ষাকে নিয়ে আমি আর কী ভাবব, দুরন্ত সন্তানের জননীর মতো তিনিই আমাকে নিয়ে সর্বদা ভাবেন।

আমাকে তিনি আপন হাতে আগলে রাখেন সকল বিপদ ও বিপর্যয় থেকে। তিনি নিজের হাতে আমার জীবনকে সাজিয়ে দেন, ফুলে ফলে ভরিয়ে দেন এবং আমার জীবনের স্বপ্নকে পূর্ণ করে দেন। বর্ষাকাল ঘরে থাকবার কাল, কল্পনা করবার কাল, গল্প শোনবার কাল,ভাইবোনে মিলে খেলা করবার কাল। বর্ষার অন্ধকারের মধ্যে অসম্ভব উপকথাগুলো কেমন যেন সত্যি হয়ে দাঁড়ায়। ইদানিং আকাশের মান-অভিমানের পালায় মনটা বেশ স্নিগ্ধ হয়ে আছে।

বিকেল থেকেই শ্রাবণের মত মেঘ জড়ো হচ্ছিল গগন জুড়ে। এই কদাচিৎ বৃষ্টির দেশে বসে বাংলার বাল্যকালের শ্রাবণের বাদলাটা স্মরণ করছিলাম। তাই মনে পড়ে, শ্রাবণের দিনগুলোতে আমাদের ত্রিকোণী দীর্ঘ উঠোনময় আমরা ছুটে বেড়াতাম; বাতাসে দুমদাম করে দরজা পড়ত, প্রকাণ্ড তেঁতুলগাছ তার সমস্ত অন্ধকার নিয়ে নড়ত, উঠোনে প্রায় আধাহাত জল দাঁড়াত, ছন্দের তালে টিনের চালে বর্ষণের শ্রুতিমধুর শব্দ এবং চাল থেকে স্থূল জলধারা উঠোনের জলের উপর প্রচণ্ড শব্দে পড়ত ও ফেনিয়ে উঠত। এই জলধারাগুলোকে দিক্‌হস্তীর শূঁড় বলে বনে হত। উঠোনের মাঝে মাঝে ফল-ফুলের গাছগুলো, বিশেষত ছোট আকারের গাছগুলো জলের ওপর কোনোরকমে জেগে থাকত এবং কোথা থেকে যেন গুড়া মাছ পালিয়ে এসে উঠোনের জলমগ্ন গাছের মধ্যে খেলিয়ে বেড়াত, তখন হাঁটুর কাপড় তুলে উঠোনময় জলে দাপাদাপি করে বেড়াতাম।

বর্ষার দিনে বিদ্যালয়ে যাবার কথা মনে হলেই প্রাণ কী অন্ধকারই হয়ে যেত!!! বাতায়ন ভেদ করে হিমেল হাওয়ায় কম্পুর সামনে বসে ঝিমুতে ঝিমুতে কখন যে শৈশব রাজ্যে চলে গেছি, বুঝতেই পারি নি। হঠাৎ করেই ঘোর কেটে গেল বিকট মেঘের গর্জনে ও বিদ্যুৎ চমকানিতে। পাশে শুয়ে-বসে থাকা আমার বেড়াল বাহিনী দেখি নিমেষের মধ্যে কর্পুরের মত হাওয়া। দৌঁড়ে ছুটে গেলাম ঝুল-বারান্দায়। তখন সবে মাত্র টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হয়েছে।

এমন নয়নভিরাম দৃশ্য বহুকাল চোখে পড়ে নি এবং অনুভবও করি নি। আলোকচিত্রগ্রহণযন্ত্রটি সবসময়ই কার্যকরী অবস্থায় এবং হাতের কাছেই থাকে। ছবিগুলোতে শুধুমাত্র কনট্রাস্ট’এ একটু কাঁচি চালানো হয়েছে।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।