আহসান মোহাম্মদ
নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা যে শেষ হয়ে যায় নি বা একে একটি পূর্ব পরিকল্পিত পথে পরিচালিত করতে ক্ষমতাশীনদের পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টায় যে ইতি টানা হয় নি, তা বিগত কয়েকদিনের ঘটনা থেকে কারো বুঝতে বাকী থাকার কথা নয়। ১৯ তারিখে বিএনপির সাথে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে চূড়ান্ত সমঝোতা হওয়ার পরও ক্ষমতাশীনদের নগ্ন হস্তক্ষেপে তা বানচাল হয়ে যায়। বাংলাদেশের রাজনীতির সবথেকে চতুর ও নীতিহীন খেলোয়াড় এরশাদ আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন যে, একতরফা নির্বাচন হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিবেন না। সেদিন বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলে তিনিও তাতে যোগ দিতেন। দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু থেকে সম্ভাব্য সকল চাতুর্য দিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হয়েছে।
তবে শেষ মুহূর্তে খালেদা জিয়ার সময়োচিত প্রেস ব্রিফিং ও পদক্ষেপের কারণে সে প্রচেষ্টা সফল হয় নি। যে কোন ভালো পরিকল্পনাতে কিছু ব্যাকআপ প্লান থাকে। মুল পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে সেইগুলোকে কাজে লাগানো হয়। ক্ষমতাশীনদের প্রস্থান পথের পরিকল্পনাতে তা না থাকাটা অস্বাভাবিক।
কি হতে পারে সেই ব্যাকআপ প্লান?
১. প্রথমত: নির্বাচন বানচালের চেষ্টা আবারো হতে পারে।
এর কিছু লক্ষণ এখনই দেখা যাচ্ছে। নির্বাচন ঠেকাতে হলে দেশে একটি গোলোযোগপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে। তার কিছুটা মহড়াও বিভিন্নভাবে চলছে বলে মনে হচ্ছে। গত কয়েকদিনে অতি সামান্য কারণে বেশ কিছু সংঘর্ষ হয়েছে। বোরহান উদ্দীন কলেজের পাশে কর্ণফুলি শপিং সেন্টার চলছে এক যুগেরও বেশী সময় ধরে।
কখনো ছাত্রদের সাথে দোকানীদের মারামারি বাধলো না, অথচ, এই জরুরী অবস্থার মধ্যে তারা মারামারি করতে গেলো। টিভি চ্যানেলগুলোতে দেখা গেছে হঠাৎ করেই সেখানে লগি চলে এসেছে, সেগুলো দ্রুত চলে গেছে হাতে হাতে এবং সংঘর্ষ শুরু হয়ে গেছে। অতি সামান্য কারণে মারামারি বাধছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মধ্যে। কিছুদিন আগে একটি ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল যে, তাদের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কারা দেয়াল লিখন করছে। উল্লিখিত ছাত্র সংগঠনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্মুক্তভাবে কাজ করতে পারে না।
দেখা যাচ্ছে, ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে কাজ করা হচ্ছে।
এরকম আরেকটি রহস্যময় ঘটনা ঘটলো গত ২৯ নভেম্বর রাতে বিমান অফিসের সামনে। রাত সাড়ে নটার সময় সেখানে কয়েকশত লোক এসে বলাকা ভাস্কর্য ভাঙ্গতে থাকে। পত্রিকার রিপোর্ট থেকে জানা যায়, তারা আধা ঘন্টা ধরে ভাঙচুর করার পর পুলিশ আসে। রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকায় রাত সাড়ে নয়টা কোন রাতই নয়।
সেখানে ভাস্কর্য ভাংচুর হচ্ছে, এ কথা জানতে পুলিশের লাগলো আধাঘন্টা। ভাস্কর্য ভাংচুরকারীদেরকে নিবৃত করতে পুলিশ তরিৎ ব্যবস্তা না নিলেও তাদেরকে বাধা দিতে যাওয়া সাংবাদিকদের উপর ঠিকই চড়াও হয়েছে। ঢাকা শহরে ভাস্কর্যটি রয়েছে ১৯৮৯ সাল থেকে প্রায় বিশ বছর ধরে। এতোদিন পরে হঠাৎ ‘ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’র নযরে পড়লো এটি? বিষয়টি কি বিস্ময়কর নয়? বস্তুত: ক্ষমতাশীনদের ইশারা ছাড়া এ ধরণের ঘটনা ঘটতে পারে না।
নির্বাচনের মাসটি যেহেতু মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাস তাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ বিপক্ষ নিয়ে সংঘর্ষ সৃষ্টিরও প্রচেষ্টা চালানো হবে।
বিষয়টি সব সময়েই স্বৈরাচারদের জন্য একটি লোভনীয় হাতিয়ার।
সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য কোন মারাত্মক পন্থা বেছে নেয়াও অসম্ভব নয়।
২. নির্বাচন বানচাল করা না গেলে ক্ষমতাশীনেরা পছন্দ করে না - এমন জোটের সমর্থকেরা যেন ভোট দিতে নিরুৎসাহিত হয় সে ব্যবস্থা করা হতে পারে। এখানে উল্লেখ্য যে, কেন্দ্র ভিত্তিক রাজনৈতিক সমর্থন বিবেচনা করে একটি বিশেষ দলকে জিতিয়ে আনার জন্য নির্বাচন কমিশন সীমানা পুন: নির্ধারণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাতে একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্টতার খবরও সংবাদ মাধ্যম প্রকাশ করেছে।
ক্ষমতাশীনদের নিকট এ তথ্য অবশ্যই রয়েছে। নির্বাচনের আগের রাতে বাছাইকরা এলাকায় ভয়-ভীতি ছড়ানো হতে পারে। এ ক্ষেত্রে গ্রেফতারের ভয়, আবারো জরুরী অবস্থার গুজব ইত্যাদি ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তাতে রাজনৈতিক কর্মীদের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যককে ঘরছাড়া করা সম্ভব হতে পারে।
৩. তাছাড়া নির্বাচনের ফলাফল কেন্দ্রের বাইরে নিয়ে বদলানোর একটি প্রচেষ্টা হতে পারে।
এ উদ্দেশ্যে কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে করে রেখেছে। এ কারণে নতুন মিডিয়া পলিসি করা হচ্ছে যেন কেন্দ্র থেকে ফলাফল নির্বাচন কমিশন ছাড়া কেউ ঘোষণা করতে না পারে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তার কিছু মহড়াও হয়েছে। মেয়র পদে একজন প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করার পর একটি রাজনৈতিক দলের চাপে ফলাফল পাল্টে ফেলা হয়। পরে জানানো হয় যে, একটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার নাকি ফলাফল নিয়ে বাড়ী চলে গিয়েছিলেন।
নির্বাচন কমিশন, সরকার বা সংবাদ মাধ্যম আমাদেরকে অবশ্য জানায়নি যে আর কতজন প্রিজাইডিং অফিসার এ ধরণের কাজ করেছেন।
৪. নির্বাচন পরবর্তী সময়ের জন্যও ব্যাকআপ প্লান তৈরী থাকতে পারে। এক্ষেত্রে থাইল্যান্ড থেকে শিক্ষা নেয়া প্রয়োজন।
আমাদের দুর্ভাগ্য যে, এই ধরণের পরিকল্পনাতে সব সময় একটি রাজনৈতিক দল এবং দেশের বিশিষ্টজনদের একটি অংশ হয় সমৃক্ত থাকে না হয় সক্রিয় সমথর্ন দিয়ে থাকে। চূড়ান্ত বিচারে তারা লাভবান না হলেও তাদের কারণে জনগণকে বার বার অগণতান্ত্রিক শাসন সহ্য করতে হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।