আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রঙিলা দুনিয়ার ঢঙিলা মানুষরে তুই

mahbub-sumon.com

১. ঘটকালীর সুযোগ না পেলেও মাঝে সাজে গোয়েন্দাগীরি করতে হয়। তেমন বিশাল কিছু না; অমুক ছেলের খোজ, তমুক মেয়ে কি রকম এই সব আর কি। জিনিসটা ভালো না লাগলেও অনেক সময় এক রকম বাধ্য হয়েই করতে হয়। ঘটনা বেশ কবছর আগের। পাশের এক বড় শহর থেকে লতায় পাতায় এক বড় ভাই উনার বোনের জন্য হবু জামাই খুঁজতে খুঁজতে কিভাবে জানি বের করলেন হবু জামাই আর আমি একই শহরের বাসিন্দা।

তো যাই হোক, উনি ছেলের পাত্তা লাগাতে বল্লেন, আমিও লাগালাম। উনি ফোন করে বলেন " ছেলে কি রকম ? " আমি বলি " ছেলে ভালোই তবে হালকা পাতলা পানাভ্যাস আছে। " "চলবো না" "ক্যানে বাহে ?" "মদ খাওয়া ছেলে চলবো না, এইটাই ফাইনাল" আমি বলি " হ " " হ মানে ?" "হ, মাইনে হইলো আপনে খাইলে সমস্যা নাই, আর ওই পোলায় খাইলে সমস্যা ? " " কি বলো ? " " ছেলে এক অজি মাইয়ার লগে লিভ টুগেদারও করে, যেমনটা আপনে করতেন শম্পা ভাবীরে বিয়া করার আগে ! " ২. পানাভ্যাসের কথা যখন আসলই তখন আরেকটা গল্প বলি। বৈদেশে আসার পর টের পাইলাম অনেকের কাছেই ড্রিংক করা স্মার্টনেসের লক্ষন। আমার অভ্যাস নাই বল্লে অনেকেই এমন ভাবে তাকায় যেনো আমি এই মাত্র বড়িশালের লন্চে সদরঘাটে নেমে ডাক পারছি " ও মনু "।

একবার এক আড্ডায় ' টাকিলার' কথা শুনে আমিতো ভেবেছিলাম যাদের টাক আছে তারাই টাকিলা খেতে পারে। পরে অবশ্য বারে কিছুদিন কাজ করায় এসব ধন্ধ কেটে গিয়েছিলো। সব ককটেল পার্টিতেই শক্ত পানীয়ের সাথে নরম পানীয়ও থাকে। কেউ কাউরে যাইত্তা ধরে না যে খাইতেই হইবো, তোমার ইচ্ছা হলে খাইবা - নাইলে নাই, নো চাপাচাপী ( এই জিনিসটা অনেক দেশী ভাই করে, চাপাচাপী, না খাইলে বলে ' হালায় ক্ষ্যাত' )। ৩. এবারেরটা অজএইড স্কলারশীপে আসা এক ভদ্রলোককে নিয়ে।

ভদ্রলোক দেশের কোনো এক সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, নামটা না হয় নাই বল্লাম। ভদ্রলোক আর আমি একই কলেজ থেকে পাশ করা বলে পরিচয় আগে থেকেই ছিলো। দু বছরের শিক্ষা ছুটি শেষ করে উনি এখানে এসেছিলেন। তো পড়া শেষ করে যথাসময়ে উনি দেশে ফেরতও গিয়েছিলেন। শুনেছি দেশে গিয়ে নাকি উনি বড় গলায় বলতেন " দেশের ছেলে দেশে ফেরত এসেছি।

ওখানে বড় চাকুরির অফার পেলেও সেটা গ্রহন না করে অল্প টাকার মাস্টারীতে ফেরত এসেছি" । অবশ্য সেটা গোপন করতেন যে অজএইড স্কলারশীপে এখানে আসলে কেউ পিআর এর এপ্লাই করতে পারেন না, দেশে ফেরত যেতে বাধ্য। ১ বছর হলো উনি আবারো এসেছেন, এবার পিএইচডি করতে। মাঝে সাজে কথা হয়। কথার মাঝে টের পাই, উনি এবার থেকে যাবেন।

"দেশের অবস্থা খারাপ, ছেলে- মেয়ের স্কুলের ঠিক নাই, চাকুরীতে বেতন কম " ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি উনাকে বল্লাম " বস, এইবার কি সব পাক্কা ! ফেরত তাইলে যাইবেন না ? " ৪. পার্থের এক সুশীলের সাথে হালকা পাতলা বাতচিত হয়। সুশীল সাহেব আবার নাস্তিক, যদিও নিজেকে মুক্তমনা হিসেবে পরিচয় দেন। তবে উনার একটা ভালো দিক হলো, উনি উনার নাস্তিকতা আমার উপর চাপায় দেন না। আমিও তেমন গা করি না, উনি নাস্তিক - কি আস্তিক।

যার যার বিশ্বাষ তার তার কাছে। সেই দিন ফেসবুকে উনার বিয়ের ছবি দেখে আমি পুরা টাস্কি খেয়ে গেলাম। ফোন দিয়া বল্লাম " বড় ভাই, টুপি মাথায় মোনাজাত ধরা আবুলটা কি আপনে ? " " হ, বিয়ার দিনে সবার চাপাচাপিতে পড়তে হইছিলো " আমি কই " মোনাজাতও দেখি করছিলেন ?" " হ" " তাইলে আপনের নাস্তিকতা সেই দিন কই আছিলো বস ? " ৫. বেশ কমাস আগে সিডনীর এক বাঙালী বাসায় গিয়েছিলাম। সাথে বউ ছিলো। জাতি সত্বায় বাঙালী হলেও উনারা অবশ্য নিজেদের বাঙালী বলেন কি না সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে আমার।

উনাদের কাছে বাঙালী পরিচয়ের চাইতে নাকি মুসলমান পরিচয়টাই বড় !! আজিব চিন্তা-চেতনা। যাই হোক গল্পে ফেরত আসি। আরো কিছু অতিথী অবশ্য সেখানে ছিলো। আংকেল আমাকে আর আমার বউকে ডাইনিং এ নিয়ে গেলেন তখন ভেবেছিলাম উনার বাসার অন্যদের সাথে অন্তত পরিচিত হওয়া যাবে। খাওয়া হলো- দাওয়া হলো; তবে বাসার অন্য কারো সাথে দেখা হলো না।

আমার সামনে আসলে নাকি পর্দা রাখা যাবে না। অথচ আংকেল ঠিকই আমার বউয়ের সামনে এসেছেন, যেখানে আমার বউয়ের পর্দার কথা উনার চিন্তায়ও আসেনি। কি অদ্ভুত বৈপিরত্য। পর্দা শুধু নিজের পরিবারের জন্য ? পাত্র-পাত্রির নাম গোপন করা হলো আমার পিঠ রক্ষার জন্য। তবে ঘটনটাগুলো সত্য- লেখার স্বার্থে কিছুটা পরিবর্তিত।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।