জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই
পৃথিবীর বহু দেশে জঙ্গী হামলা এখন একটি বড় সমস্যা। আমাদের দেশেও জেএমবি নামে একটি দল জঙ্গী হামলা শুরু করেছিল। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের অপতৎপরতা রুখে দিয়েছে। কিন্তু তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে এ কথা বলা সম্ভব নয়। কয়েকদিন আগেও ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকসহ এক জেএমবি জঙ্গীকে আটক করা হয়।
মুম্বাইতে সম্প্রতি বড় ধরনের জঙ্গী হামলা হয়ে গেল। ভারত সরকার বলছে, তারা বিজয় লাভ করেছে। জঙ্গীর হাত থেকে তারা সবগুলো ভবনের দখল নিতে পেরেছে। জঙ্গীদের বেশির ভাগ নিহত এবং কেউ কেউ জীবিত ধরা পড়েছে।
যে কোন জঙ্গী হামলার ক্ষেত্রে কতগুলো মিল রয়েছে।
যারা জঙ্গী হিসেবে আক্রমণ পরিচালনা করে তারা কোন সংখ্যা লঘু বা বঞ্চিত লোকদের প্রতিনিধি হয়। তাদের কিছু দাবি দাওয়া থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, তারা তাদের দেশে নির্যাতনের শিকার।
কিছু উদাহরণ দেই, ফিলিস্তিন, চেচনিয়া, কাশ্মীর ইত্যাদি অঞ্চলের অধিবাসীরা সেখানকার সরকার বা সংখ্যাগুরু বা রাষ্ট্রের কর্ণধারদের অত্যাচারের শিকার। এদের মধ্যে কেউ কেউ জঙ্গী হয়ে উঠছে।
আমাদের আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক। কিন্তু গণতন্ত্রের নামে আমরা আসলে প্রতিষ্ঠা করেছি সংখ্যাগুরুদের রাষ্ট্রব্যবস্থা। ফলে সংখ্যালঘুরা যে কোন রাষ্ট্রে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়। ভোটের রাজনীতিতে তাদের প্রভাব নেই বলে তাদের মতামতকে কোন গুরুত্ব দেয়া হয় না। তাদের প্রতি অমানবিক আচরণ করা হয়।
যারা নেতা নির্বাচন হন, তারা তাদের জন্য কোন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম হাতে নেন না।
অন্যদিকে যখন কোন সংখ্যালঘু বা দুর্বল গোষ্ঠী অত্যাচারিত হতে থাকে, নিজের জাতির প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তাদের মধ্য থেকে সৃষ্টি হয় জঙ্গী। এই জঙ্গী সৃষ্টিতে কারো না কারো মদদ থাকতেই পারে। কিন্তু কার মদদ আছে, তার চেয়ে জরুরী বিষয় হল, কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে একজন মানুষ আত্মঘাতী হয়, সেটা বিবেচনা করা।
আমাদের দেশে মাদ্রাসায় পড়া শিক্ষার্থীরা হয় এতিম নতুবা অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান।
তারা দেখে তাদের পড়াশোনা তাদের জীবনযাত্রাকে বদলাতে পারে না। তাদের অর্থনৈতিক টানাপোড়েন চিরকাল থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। তাছাড়া তাদের পাঠ্যসূচিতে তারা জানতে পারছে গণতন্ত্র ইসলামসম্মত নয়। নিজের ও আদর্শগত পরিবর্তনের জন্য তারা মরিয়া হয়ে জঙ্গী হয়ে ওঠে। এদের শিক্ষা ব্যবস্থা এমনভাবে বদলানো উচিত যাতে তারা ভবিষ্যতে খুব সহজে কর্মসংস্থান করতে পারে।
কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে তারা দারিদ্রের দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসবে। ফলে তাদের মধ্যে জঙ্গী হওয়ার প্রবণতা থাকবে না।
আমাদের ও পৃথিবীর তাবৎ সভ্য দেশের উচিত, সংখ্যালঘু ও সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণীর আর্থিক নিরাপত্তা ও সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া। নিরাপদ ভবিষ্যৎ পাওয়ার নিশ্চয়তা পেলে কেউ আর জঙ্গী হবে না। বুঝতে হবে জঙ্গী সমস্যাটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সমস্যা নয়, এটি একটি ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা।
একে সামাজিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।