যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি
বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে - বিশেষ করে কোর রাজনীতিকের সমালোচনা করা মানেই একটা মৌচাকে ঢিল মারা। রানী মৌমাছিকে সুরক্ষা দেবার জন্যে যেমন সৈনিক মৌমাছিগুলো নিজেদের জীবন বিসর্জন দিতে কুন্ঠিত নয় - তেমনি বাংলাদেশের রাজনৈতিকদলগুলো সমর্থকরাও নিজেদের নেত্রীর মর্যাদা আর "ভাবমূর্তি" রক্ষার জন্যে নিজের বিবেককে ট্রাঙ্কের ভিতরে লুকিয়ে রেখে বাখোয়াজি করতে লজ্জিত হয় না।
এই হলো ভুমিকা। এবার আসল কথায় আসি। একটা দেশ বা সমাজে বসবাসের জন্যে দরকার একটা নিরাপদ পরিবেশ।
এই নিরাপত্তা হবে সামাজিক, অর্থনৈতিক -মোটকতা দৈনন্দিন জীবনে একজন মানুষকে কোন বিষয়ে ভীত হওয়ার মানেই সেই সমাজ ঠিকমতো কাজ করছে না।
আর সমাজের নিরাপত্তা নিম্চিত করার জন্রে তৈরী হয় আইন। আইন কিভাবে কাজ করে সেই দিকটা একটু ভেবে দেখি। ধরা যাক একটা শহরে ৫০ হাজার মানুস বাস করে। নগর কর্তৃপক্ষ মনে করলো শহরটাকে জীবানুমুক্ত রাখতে যেখানে সেখানে থু থু ফেলা বন্ধ করা দরকার।
তাই এরা আইন পাশ করলো। জরিমানা নির্ধারিত হলো - আর করদাতাদের টাকায় কয়েকজন পরিদর্শক নিয়োগ করা হলো - যারা জরিমানা করতে পারার মতো ক্ষমতা পেল।
কিন্তু সেই শহরের একজন মানুষ যিনি যথেষ্ঠ ক্ষমতাশালী এবং একদল অন্ধ সমর্থককের সমর্থন উপভোগ করেন - সে নগর কর্তৃপক্ষকে পছন্দ করে না। সে চায় নগর কর্তৃপক্ষের সকল কাজ ব্যর্থ হউক আর মানুষ তাদের অপছন্দ করুক। তাই সে নিজেই একদিন প্রকাশ্যে থু থু ফেলা শুরু করলো আর তার অনুসরন করে অন্ধ সমর্থকরা দলে দলে রাস্তায় থু থু ফেলার আন্দোলনে নামলো।
এদের দাবী রাস্তায় থু থু ফেলা তাদের গনতান্ত্রিক অধিকার।
এই অবস্থায় নগর কর্তৃপক্ষে সামান্য লোকবল আর সীমিত শক্তি দিয়ে কি শহরকে জীবানু মুক্ত করতে পারবে? উত্তর হবে "না"।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যে আইন মানার পক্ষে লোকের সংখ্যা বেশী থাকা জরুরী। আর বিবেকবান মানুষের কাছ থেকে সমাজ তাই আশা করে।
(২)
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন গত দুই বছরে বেশ কিছু ভাল কাজ করেছে।
তার মধ্যে একটা হলো ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরী করা। আগের ভোটার তালিকা নিয়ে যত কম কথা বলা যায় ততই ভাল। নিজে ব্যক্তিগত ভাবে নির্বাচনে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি - আগের ভোটার তালিকাগুলো ব্যবহার করে নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করা ছিলো ভুল। ১৯৯২ সালে একবার ভোটার আইডি তৈরীর প্রচেষ্টা হয়েছে। তখনকার দলীয় সরকারের চামচারা সব টাকাই লুটে খেয়েছে - যার দায়দায়িত্ব অবশ্য তৎকালীন সরকারের।
কিন্তু সেই নেতারাই সেই ভুর স্বীকারতো করেই না - বরঞ্চ এবারের ভোটার তালিকাতে নিজের না না উঠিয়ে একটা নাটকের মঞ্চ তৈরী করছে। একজন দায়িত্ববান নাগরিক হিসাবে আর একজন নেতা হিসাবে ভোটার লিস্টে নাম উঠিয়ে ভাল কাজের উদাহরন সৃস্টি করার সুযোগ পেয়েও উনি এই সির্বাচন কমিশনকে হেয় করার জন্যে অপেক্ষা করছেন সুযোগের। সুযোগ অবশ্য আসবে যখন ভোটার নাম্বার ছাড়া মনোনয়ন জমা দিলে তা বাতিল হবে - তখন নির্বাচন ভন্ডুলের একটা পরিবেশ তৈরী করা যাবে। নির্বাচনে গিয়ে জনগনের মুখোমুখি হওয়ার চাইতে যদি ভোট বন্ধ করে দেওয়া যায় - তাইলে গোল্ড ফিশ ম্যামোরির জন্যে পরিচিত বাংলাদেশীদের অতীত ভুলানো জন্যে আরও কিছু সময় পাওয়া যাবে।
একজন নেতার জন্যে শোভন হয় যখন সে জনগনকে সন্মান করে।
যেখানে বাংলাদেশের সম্ভাব্য সকল নাগরিক ভোটার লিস্টে নাম উঠিয়ে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখালো -তখন একজন নেত্রী তা অবজ্ঞা করে অবশ্যই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল জনমতকে অশ্রদ্ধা দেখালো।
আরেকটা বিষয় নির্বাচন কমিশন করেছে - তা হলো আরপিও ২০০৮। অনেক আইন দেশে আছে । কিন্তু প্রয়োগের অভাবে আর প্রয়োগ সংক্রান্ত জটিলতায় সেইগুলো অর্থহীন হয়ে যায়। যেমন বিগত সংসদের একজন এমপি জামাতের সাইদী হাইকোর্ট কর্তৃক যার নির্বাচন বাতিল ঘোষিত হওয়ার পরও পুরোটার্ম এমপি থেকেছে।
সেখানে আইন থাকার কোন অর্থ হয় না - যেখানে তা প্রয়োগ করা দুরহ। এবার নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক সংস্থা হিসাবে আইন প্রয়োগের সুযোগ পেয়েছে। তা বাতিলের জন্যে দাবী জানাচ্ছে বিএনপি জামাত জোট। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে যদি বৈষম্য হয় তা বিচারের ভার যদিও হাইকোর্টের উপর বর্তাবে - তারপরও এরা আইনটাই পছন্দ করছে না। কারন কি?
এখটু লক্ষ্য করলেই বুঝা যাবে কেন বিএনপি এই ধারার বাতিল চায়।
আরপিও অনুসারে এবারের প্রার্থী মনোনয়ন হতে হলে তৃনমুলের সংশ্লিস্টতা লাগবে। কিন্তু গত দুইদিনে যা দেখলাম - তাতে মনে হচ্ছে - বিএনপি আরপিওকে অবজ্ঞা করেই মনোনয়ন দেবে। এখন যদি কেউ এই প্রক্রিয়াকে চ্যালেজ্ঞ করে তাহলে বিএনপির ৩০০ আসনেই প্রার্থী অবৈধ হয়ে যাবে - কিন্তু বাস্তবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে এই কাজটা করা সম্ভব হবে না। ফলে হয় নির্বাচন কমিশন কোন একটা বাইপাস খুঁজে বের করে তাদের নিজেদের সাখেই প্রতারনা করবে - নতুবা ঠুঁটো জগন্নাথের মতো সির মেরে যাবে। দুই ক্ষেত্রেই একটা চমৎকার উদ্যেগ ব্যর্থ হবে।
একটা দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলের কাজ থেকে দেশ এই ধরনের নেতিবাচক রাজনীতি আশা করে না।
মুল কথা হলো - বিএনপি এই সরকার আর নির্বাচন কমিশনের সকল সীমানা পরীক্ষা করছে - তাদের মুল কাজ একটা সুষ্ঠ নির্বাচনের মাধ্যমে একটা দায়িত্বশীল সংসদ তৈরীর সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। দূর্নীতির দায়ে অভিযুক্তরাও যাতে নির্বাচন করে নির্বাচিত হতে পারে তার জন্যে আরপিও ৯১(ই) বাতিল দরকার। জেনেশুনেও অভিযুক্তদের প্রার্থী কর হবে আর অভিযুক্তরা নির্বাচিত হয়েও কোর্ট কেস করে পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবে।
গত অক্টোবরের নির্বাচন দাবী করা দলটি ডিসেম্বরে নির্বাচনের প্রস্তুতি দেখে মনে হচ্ছে নির্বাচনে তাদের তেমন আগ্রহ নেই।
সব কিছু দেখে মনে হচ্ছে - বিএনপি জামাত জোট নির্বাচন না করার সকল সম্ভাব্য উপায় গুলো খুঁজছে। শুধু মাত্র তাদের নির্বাচনে না যাওয়ার একটা সুতসই কারন খুঁজে পেতে চাচ্ছে - যাতে নির্বাচনে নি গিয়ে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানো যায়। আর নির্বাচন না হলেতো আরো ভাল।
আশা করছি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসাবে নির্বাচন কমিশন আর সরকারের সকল ভাল পদক্ষেপগুলো সমর্থন করে কোন রকম বিতর্ক তৈরী না করেই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে। যদি এই বছর নির্বাচন না হয় আর একটা অনির্বাচিত সরকার তাদের স্থায়িত্ব দীর্ঘায়িত করে - তার সম্পূর্ন দায় দায়িত্ব নিতে হবে বিএনপি জামাত জোটকে।
সময় তাদের ক্ষমা করবে না - সেই বিষয়ে নেতানেত্রীর যথেষ্ঠ সচেতন হওয়া দরকার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।