বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে লিখতে গেলে মুশকিল,আগের দিন প্রশংসা করে কিছু লিখলে পরেরদিনই সেটা গিলে ফেলা লাগে। তবে আমরা বেহায়া জাতি,খালেদা-হাসিনা-এরশাদকেই ২ দিন পরে পরে ক্ষমা করে দেই,বেচারা ক্রিকেটারদের আর কি করতে পারি? কাজেই আবারো বসতে হলো। যদিও একটা টেস্টের প্রথম দিনে ২৫০ রানে অলআউট সেটা লেখার মত বিষয় না,বরং বিষয় হলো ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং শেখানো শেষ উইকেট জুটির ব্যাটিং,যেখানে
মুশফিকুর রহিম আর মাহবুবুল আলমের ব্যাটিংয়ের ভিডিও দেখিয়ে নিশ্চিতভাবেই আশরাফুল এবং ইমরুল কায়েস কে ব্যাটিংয়ের স্বরে-অ স্বরে-আ শেখানো যাবে।
২-৩ দিন আগেই প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাথে তর্কাতর্কির সময় আশরাফুল বড় গলায় বলেছিল,পয়সা খরচ করে কেন প্রবাসীরা তাদের খেলা দেখতে আসে,কেউ তো তাদের আসতে বলেনি। উক্তিটা শুনে অনেকটাই আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের কথা মনে পড়ে গেল,যে আমরা চুরি করি,তোমাদের দেখতে বলেছে কে, ঘরে গিয়ে চোখে হাত চাপা দিয়ে রাখলেই পারো।
হায় আশরা-ফুল,কাদের টাকায় তোমাদের বিদেশে পাঠানো হয় বা বছরে কোটি টাকা দেয়া হয়, সেটা কি কখনো ভাবো?এই একটা উক্তির জন্যই আশরাফুলের বড় ধরণের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শাস্তি হতে পারতো,এতগুলো মানুষের
আবেগকে অপমান করার সাহস শুধুমাত্র শিক্ষাবন্ঞ্চিত মূর্খের পক্ষেই থাকা সম্ভব। কিন্তু এই দেশে শ্যুটার আসিফকেও পুলিশে পেটায়,কাজেই আশরাফুলের কিছু হয়নি। বরং নির্লজ্জ ব্যাটিং করে আজকেও ১ রান করে (৯ বল খেলে) মরকেলের বলে কট অ্যান্ড বোল্ড। নিশ্চিত আজকেও দাঁত কেলিয়ে খিঁচিয়ে জানাবে,আসলে ব্যাটিং আর ফর্ম ঠিকই আছে,শুধু বলটা জায়গামত লাগছে না। যদিও শেষ ১০টা টেস্টে তার ব্যাটিং দেখলে বলতে ইচ্ছা হয়,হে মহারাজ,আর কতকাল তোমার ব্যাটে বল লাগিবার পানে বুভুক্ষু দৃষ্টিতে তাকাইয়া থাকবো,রাত পোহাবার কত দেরি পান্ঞ্জেরী?
এতো গেলো একজনের কথা,কিন্তু বাকিদের কথাও বলার মত না।
ইমরুল কায়েস যে একজন ওপেনিং ব্যাটসম্যান,সেটা তার বালকসুলভ ব্যাটিং দেখে বোঝার উপায় নেই। বাকি ব্যাটসম্যানরাও,এমনকি ৬৭ রান করা জুনায়েদও,দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের শর্ট বল আর বাউন্সের সামনে যেভাবে কুঁকড়ে যাচ্ছিলো আর একটা পুল বা হুকও না খেলে বল ছেড়ে গা বাঁচানোর ধান্দায় ছিলো,তাতে মনে হলো শুধু ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল উইকেট বানালেই হবে না,অবিলম্বে মানসিক
বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলিয়ে তাদের সাহসও বাড়ানো দরকার।
বাউন্সি উইকেটে শর্ট বল কিভাবে খেলতে হয়,সেটা জানা গেল ১৯৪ রানে ৯ উইকেট যাবার পরে,যখন মুশফিকুর রহিম আর মাহবুবুল আলম ক্রিজে,আর গ্রায়েম স্মিথ ব্যাটিংয়ের শ্যাডো শুরু করে দিয়েছেন স্লিপে দাঁড়িয়ে। দক্ষিন আফ্রিকার গতিদানবদের বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এই উইকেটেই হয়ে গেল ইনিংসের সর্বোচ্চ ৫৬ রানের পার্টনারশিপ,যেটা শেষ উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চও বটে। একের পর এক শর্ট বলে পুল আর হুক করে মুশফিকুর বাকিদের দেখালো কিভাবে সমান বাউন্সের ফাস্ট পিচে সত্যিকারের ফাস্ট বোলারদের খেলতে হয়।
ব্যাপারটার মহিমা পরিষ্কার হচ্ছে না বোধহয়,তাহলে একটা উদাহরণ দেয়া যাক,ডেল স্টেইনের মাত্র ৩ ওভারে রান উঠেছে এই সময় ৩০,যার মাঝে রয়েছে ১টা ৬ আর ৪টা ৪ আর ৩টা ২। ১টা বল বাদে সব ক'টাই ছিল শর্ট বলে পুল আর হুক থেকে। সাহসী ব্যাটিং,দেখেও আনন্দ। তারচেয়েও বড় আনন্দ স্টেইনের আস্ফালন,এনটিনির ক্যাচ ছেড়ে দেঁতো হাসি দিয়ে সেটা থামানোর চেষ্টা,মরকেলের হতাশায় শূন্যে লাথি ছোঁড়া আর স্মিথের গোমড়া মুখ দেখা,যে আনন্দ ক'দিন আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও মুশফিক আমাদের দিয়েছিল।
অবশেষে,২৫০ রানে,এনটিনি পায়ে টান পড়ায় মাঠ ছেড়ে যাওয়ায় তার বদলে বল করতে আসা মন্ডে জন্ডেকির বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরত আসা মুশফিকুরের আউট হবার মাধ্যমে শেষ হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস।
মুশফিকের ৮৪ বলে খেলা ৬৫ রানের ইনিংসে ৯টি চার,২ টি ৬। তবে এরপরেও আশরাফুল বা টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা কিছু শিখবে,এমন আশা করতে পারছি না বেশি একটা,যার মুখ বড় সে কাজে প্রায়ই বড় হয়না,গুরুজনরা তাই বলে থাকেন।
যারা মাহবুবুল আলমের অবদানটা এখনো বুঝতে পারেননি,তাদের জন্য বলি,৫৬ রানের পার্টনারশিপে এই বোলারের অবদান মাত্র ১,কিন্তু ২৮টি বল ঠেকিয়ে দলের রানটাকে ২৫০ এ নেয়াই যেত না এই সহায়তাটুকু না পেলে। আহা,কবে যে অন্যরা এই ঠেকানোটা অন্তত শিখবে!
[শেষ খবর,দক্ষিন আফ্রিকা ১৭/১। আরো একটা যেতে পারতো,কিন্তু আমলার বিরুদ্ধে নিশ্চিত কট বিহাইন্ডের আবেদন আম্পায়ার প্যাঁচা মুখ করে প্রত্যাখ্যান করলেও রিপ্লেতে সেটা আউটই দেখা গেছে।
ছোট দলের এটাও এক সমস্যা,সব সিদ্ধান্তই তাদের বিপক্ষেই যায়। ]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।