কোন আপডেট নেই।
(এই লেখাটা শুধুমাত্র আমার ব্লগপাতার জন্য, প্রথম পৃষ্ঠা দর্শন হয়নি। )
কেমন যেন একটা সময় যাচ্ছে। ...বুঝতে পারছিনা কিছু। দিনগুলো যেন পার হয়ে যেতে হয় তাই পার হয়ে যাচ্ছে।
শীতের প্রথম হিমেল বাতাসটা কেমন করে যেন মনের ভেতরটাও হিম-কুয়াশার চাদরে ঢেকে দিয়েছে। বাইরের একটু উষ্নতার জন্য খুব হুহু করছে ভেতরটা।
কোন কিছুর সাথেই নিজেকে মেলাতে পারছিনা। কোথায় যেন নিত্যসুরটা কেটে যাচ্ছে। প্রতিদিনের কাজগুলো যেন করতে হয় তাই করে যাচ্ছি।
ঝামেলাগুলোও কেন যেন বেশি করে সুযোগ নিতে চাইছে। ফাইনাল পরীক্ষার আর কয়েকটাদিন মাত্র আছে। কি যে হবে। ...ইচ্ছে করছে সব ছেড়েছুড়ে কোন একটা দিকে দৌড় দেই। ফরেস্ট গাম্প এর মত।
ক্লাস, পরীক্ষা, কাজ, টিউশ্যনি সব কিছু থেকে পালাতে চাই। এমনকি নিজের থেকেও। যতদূরে সম্ভব...
খুব প্রিয় একজন ফ্যাকাল্টি কোন এক অজানা কারণে আমার কোন কাজই পছন্দ করছেন না। আমি যা করি যেটাই বলি কোনটাই তার মনে ধরে না। প্রযেক্ট রিপোর্ট লেখায় আমার ধৈর্য়্য আর কয়েকদিনের ভেতর মনে হয় রবার্ট ব্রুসকেও পার করে দেবে।
...উল্টাপাল্টা কিছু হলে আমি শেষ।
...আর ভাল্লাগে না। লাইব্রেরিতে পড়তে গিয়ে একগাদা আজাইরা (!) বই নিয়ে সারাদুপুরের ব্রেকটা পার করছি কয়েকদিন। একাডেমিক বই আর আজাইরা বইএর স্তুপ নিয়ে কোনার কোন এক টেবিলে পাহাড় বানিয়ে আজাইরা বই এ ডুবে থাকি। যেমন আজকে ওয়াইম্যাক্সএর ডকুমেন্ট খুজতে গিয়ে আমি প্রায় সারাদুপুর আরজআলী মাতুব্বর সমগ্র, টবে ফুলের চাষ, শহীদ কাদরির কবিতা সমগ্র্র, মানিক সমগ্র, মুনতাসির মামুনের ঢাকার ইতিহাস, পুথি-সংগ্র্রহ, ইন্ডিয়ান মেডিসিনাল প্লান্ট এইগুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি করে সময় পার করেছি।
তারপর বুকসর্টারের "ক্যান আরজ আলী কে নোবেল দেয়া উচিৎ ছিল আর হুমায়ুন আজাদ আরো কয়েকজন নাই ক্যান" এইটা নিয়ে ইতং-বিতঙ কথা শুনলাম। আমার পরিচিত এই বুকসর্টার আরজ আলী মাতুব্বর, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস আর হুমায়ুন আজাদ এর ভয়াবহ ভক্ত। আর কোন এক অজানা কারণে আমাকে খুব পছন্দ করেন। আমার যাবতীয় অত্যাচার মুখ বুজে এবং হাসিমুখে সহ্য করেন।
আমাকে পছন্দ করেন এমন মানুষের সংখ্যা এমনিতেই কম, আর দিন দিন আরো কমে যাচ্ছে।
...মাঝে মাঝে চিন্তা করলে অবাক লাগে কেমন করে কেমন করে যেন আমার বন্ধুর সংখ্যা আশংকাজনকভাবে কম। ....অবস্থা এমন যে ...মরলে খাটিয়ার চারপাশে কাধ দেওয়ার মত চারটা বন্ধু খুজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ।
বন্ধু মানে প্রতিদিন দেখা হচ্ছে... কথা হচ্ছে টাইপ না। যে বন্ধুর জন্য সব করা যায় এমন বন্ধু যেগুলো আছে তাদের সাথে অনেকদিন দেখা বা কথা নাই। আমার এমনই হয়।
...দেখা যায় খুব ভাল মিল হয় এমন বন্ধু পেলাম... বড়জোর ১বছর ... তারপর কোন এক অজানা কারনে আমি বিরক্ত বোধ করতে থাকি। আর ক্লাসমেটগুলার সাথে ...বন্ধুতা হয়ে ওঠে না। এমনিতে ভাল ক্লাস বন্ধু... মানে সেমিস্টার এর ভেতরে সবাই সবার খুব ক্লোজ ... কিন্তু সেমিস্টার শেষ হলে সব যেন কেমন করে ছিটকে যায়। তবুও কিছু আঠালো বন্ধু কেমন করে কেমন করে যেন ঝুলে থাকে। ...বা আমরা থাকি।
....আসলে যে বন্ধুগুলো এখন আছে তাদের থাকার পেছনে আমার কোন ভাল অজুহাত নাই। তারা আছে কারণ তারা নিতান্তই ভালমানুষ আর আমার মত অমানুষের জন্য তাদের বুকের পাহাড়সম মমতা অপচয় করত প্রস্তুত। ....
এই চমৎকার মানুষগুলো বাদ দিলে, আমার জন্য আছে... এমন মানুষ এই বিশাল শহরে ...আসলেই নাই। ...আপচুচ।
গতকাল এক সাংবাদিকের লেখা ঢাকা মেডিক্যাল এর মর্গের অভিজ্ঞতার কথা পড়ছিলাম।
প্রতিদিনই নাকি এই শহবে বেশ কিছু মানুষ বেওয়ারিশ হয়ে শেষ যাত্রা করেন।
...বেওয়ারিশ !!! কথাটা রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুরের জন্য মনে হয় আমরা বেশি শুনে অভ্যস্ত। কিন্তু একটা মানুষের দেহ... প্রাণ নেই, ঠিকানা নেই .... তাই ...বেওয়ারিশ??? ...খুব খারাপ লেগেছিল। পত্রিকায় আমরা কত দূর্ঘটনার কথা পড়ি। ... এত সংখ্যক মানুষ নিহত।
...সংখ্যাগুলো আসলেই কাঠখোট্টা। একটা মানুষ, দুইটা মানুষ, দশটা মানুষ.... আচ্ছা সংখ্যাদিয়ে কি ক্ষতিটা বোঝানো যায়? একটা মৃত্যু কি কেবল আরো একটা প্রাণহীন দেহ??
একটা মানুষ... তার পার করা কতগুলো সময়... কম স্মৃতি... কত ছোট-বড় গল্প.... সব হারিয়ে কেবলই একটা বেওয়ারিশ লাশ??
একটা মানুষ নাই হয়ে গেল... একটা পরিবারের একটা অংশ নাই হয়ে গেল ....হয়ত খুব প্রিয় একটা গল্পের এক অংশের অংশিদার চলে গেল ....
কোন একটা মানুষ তার জন্য এক ফোটা চোখের জল ফেলবে না। প্রিয়জন হারানোর একটা দীর্ঘশ্বাসও বাতাস ভারী করবে না। এমন বিদায় কেমন করে হয়?
মর্গের ডোম কসাইয়ের মত ঠান্ডা শরীরটায় ছুরি চালিয়ে বাশের চাটাইয়ে মুড়িয়ে তার দায়িত্ব শেষ করে আরেকটা দেহ টেনে নেবে নির্বিকার ভাবে। তারপর রিকশা-ভ্যানে ফেলেরাখা মালপত্রের মত করে ঢাকার ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় চাটাইয়ে মোড়া বেওয়ারিশ লাশ হয়ে নাম-হীন কোন একটা অন্তিম শয্যায় শেষ হবে সব গল্পের।
বেওয়ারিশ যে।
যদি হুট করে হারিয়ে যাই ....আমার রেখে যাওয়া শূন্যস্থান অনুভব করবে এমন কয়জন আছে এই শহরে... তাই ভাবছিলাম। নিজেকে চাটাইয়ে মোড়ানো প্রাণহীন একতাল মাংসপিন্ড ভাবার চেষ্টা করছিলাম।
....পারলাম না। ....এত শূন্যতার ভার নেওয়ার মত ক্ষমতা এখনো হয়নি।
তবে হ্যাঁ। ...যেখানে কামলাখাটি সেখানে হয়ত আমার খোজ পড়বে ....কাজ পালানো ফাকিবাজ পার্টটাইমার হিসেবে। সন্ধার ক্লাসের আগে যেখানে চা-খাই... সেই মামা হয়ত মনে করবে আউলাটাইপ রেগুলার কাস্টমারের কথা। যে তার ফ্লাস্কের কড়াতিতা রংচায়ের কোন কারন ছাড়াই প্রশংসা করত। ...আন্দালিব হয়ত একটু খোজাখুজির চেষ্টকরবে ...তবে খুব সম্ভাবনা যে ও দুই-একদিন আমার খোজ না পেয়ে বিরক্ত হয়ে একলাইনের একটা মেইল করে আবার নিজের জ্ঞানার্জনের মহাসাগরে ডুব দেবে।
আর বুকসর্টার মামা হয়ত আমার পছন্দের সাথে মেলে এমন নতুন কোন বই এলে তাকে তোলার আগে দুয়েকদিন ওনার টেবিলে রেখে আমার জন্যে অপেক্ষা করবেন। ব্যাস ...শেষ। ... ....
এই শহরটাকে আমি বরাবরই খুব অপছন্দ করি। কারণ স্বার্থপর এই শহরটা খুব বেশি নিঃসঙ্গ। চার পাশের অনেক কোলাহলে হয়ত বোঝা যায় না।
কিন্তু আমার মত রাস্তার মানুষেরা টের পায়... এই শহরের নিঃসঙ্গতা।
নিঃসঙ্গবুকে একরাশ ইট-কাঠ, লোহালক্কড় আর শহরের মানুষগুলোর ঝেড়ে ফেলা দুঃখ্য চেপে রেখে এই শহরটা নিঃসঙ্গ মানুষগুলোর অপেক্ষায় খাকে। নিঃসঙ্গতা যাদের এই শহরে রিকশা-ভ্যানে চাপানো বাঁশের চাটাইয়ে মোড়া বেওয়ারিশ করে তোলে।
মন খারাপ... তাই এই ফালতু আগামাথা ছাড়া আবজাব লেখা। অবশ্য এটা লেখা না।
আবর্জনা। এই ধরনের আবর্জনা প্রথম পাতায় দেবার মত দুঃসাহস দেখাতে পারলাম না। শুধুমাএ আমার ব্লগপাতায় প্রকাশ করা হল।
ছবিটি anis_niit's এর ফ্লিকার একাউন্ট থেকে ধার করা।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।