আত্মবিশ্বাসহীনতায় প্রকট হচ্ছে আত্মার দেউলিয়াত্ব, তবুও বিশ্বাস আগের মতই নিশ্চল..
মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে নবম শ্রেণী মানে বোধহয় বিশেষ কিছু_ স্কুলের সার্বিক নিয়ন্ত্রণটাই থাকে তাদের হাতে। তো, তখন নবম শ্রেণীতে সবেমাত্র উঠেছি, এমন সময় আমাদের কয়েকবন্ধুর খেয়াল হল সাংস্কৃতিক সপ্তাহ উদযাপনের, সেই উপলক্ষে দেয়ালিকা প্রকাশিত হবে, সাংস্কৃতিক-সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা হবে এবং শেষদিনে হবে ১৫-২০মিনিটের মঞ্চ নাটিকা। । যেহেতু আমরা কেউই অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত নই, তাই বিখ্যাত নাটকগুলোর নাট্যরূপ দেয়া এবং সেই অনুযায়ী অভিনয় করা আমাদের কল্পনাতীত কল্পনা ছিল। ।
তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আমি-ই লিখব আমাদের সামর্থ্য-সীমাবদ্ধতা অনুযায়ী। । তখন ছিল মার্চ মাসের ১মসপ্তাহ, আর ২সপ্তাহ পরেই স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে এস এসসি উপলক্ষে, এমন একটা সময়। হাতে সময় ছিল খুবই স্বল্প, অন্যদিকে বাসায় বসেও লেখার ঝামেলা। আম্মুকে লুকিয়ে কবিতা লিখলেও নাটক লেখা তো একটু বেশি সময়ের ব্যাপার।
। তাই, পুরো নাটকটি লিখেছিলাম এক বন্ধুর বাসার ছাদে বসে চা খেতে খেতে। তবে, দুঃখের বিষয় হল এত লুকোচুরি করে লেখা নাটকটির বেশ কয়েকটি রিহার্সেল দিলেও শেষপর্যন্ত মঞ্চায়ন সম্ভবপর হয়নি আমাদের তৎকালীন প্রধান শিক্ষকের ঔদার্যে; আমাদের সাধারণ জ্ঞান-বিতর্ক আর দেয়ালিকা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। তাই আমার লেখা প্রথম মঞ্চনাটিকাটিই একটি পণ্ডশ্রমে পরিণত হয়েছিল। ।
। কাব্যের ঘোড়ারোগ লিখতে গিয়ে এই নাটিকাটিও ডায়েরীতে খুজে পেলাম।
চরিত্র পরিচিতি
কাশিনাথ রায় : জমিদার
নগেন্দ্র কুমর : মন্ত্রী
সুখেন দত্ত : সেনাপতি
নিজাম : বিপ্লবী নেতা
অতিরক্ত: পুলিশ, গুপ্তচর, খানসামা, নায়েব, অন্যান্য।
দৃশ্য-১
( জমিদার তার খাসদরবারে বসে আছেন, সেখানে উপস্থিত অন্যান্য সভাসদবর্গ, দরবারের কার্যক্রম শুরু হবার অপেক্ষায়)
মন্ত্রী: জাহাপনা, আমাদের নিয়োজিত গুপ্তচর দরবারে প্রবেশের অনুমতি চাইছে।
জমিদার: ভিতরে আসতে বলুন
(গুপতচর দরবারে প্রবেশ করবে এবং নবাবকে কুর্নিশ করবে)
গুপ্তচর: জাহাপনার জয় হোক।
জমিদার: কী খবর নিয়ে এসেছো গুপ্চর?সব ভালতো?
গুপ্চর: (আতঙ্কিত)না হুজুর, খুবই খারাপ সংবাদ বয়ে এনেছি। প্রজা বিদ্রোহের সমস্ত আয়োজন সম্পণ্ন প্রায়, এমনকি অনেকেই আর খাজনা দিতে রাজি নয়। ওরা আপনার জমিদারিত্ব মানেনা। একটা কিছু ব্যবস্থা নিন হুজুর,আমি তো ভযেই মরে যাচ্ছি!
sb]জমিদার: খামোশ বেয়াদব! আমার রাজ্যে বিদ্রোহ? সবকয়টা বিপ্লবীকে আমি দেখে নেবো। ।
(কিছুক্ষণ ভেবে) তুমি এখন আসতে পার। তুমি তোমার কাজ করে যাও, আর প্রত্যেকটা ঘটনা আমাকে জানাতে থাক।
(সেদিনের মত দরবার মুলতবি করা হল)
দৃশ্য-২
(জমিদার তার খাসকক্ষে বসে আছেন। খাসচাকর মদ পরিবেশনে ব্যস্ত)
খাসচাকর : হুজুর, আপনার এই যে আপনার অমৃত।
জমিদার: (ব্যাকুল)কই দাও দাও, আহ! কতক্ষণ ধরে তেষ্টায় গলাটা শুকিয়ে গেছে।
(দ্বাররক্ষীর প্রবেশ। জমিদারকে কুর্নিশ করবে)
দ্বাররক্ষী: জাহাপনার জয় হোক। আমাদের গোমস্তা সাহেব এসেছেন, আপনার দর্শনপ্রার্থী।
জমিদার: (বিরক্ত) আসার আর সময় পায়না এরা? যাও আসতে বল।
(গোমস্তা কক্ষে প্রবেশ করে জমিদারকে কুর্নিশ করার সঙ্গে সঙ্গেই চমিদার যেন তার উপর ঝাপিয়ে পড়ল)
জমিদার: কি ব্যাপর গোমস্তা, কাজ কর্ম কিছু কর? প্রজারা খাজনা দিতে অস্বীকার করার সাহস পায় কিভাবে?
গোমস্তা: জাহাপনা, আমি আমার দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করে যাচ্ছি তো।
কিন্তু এই প্রজাগুলো সব হারামির বাচ্চা। সময়মত খাজনা তো দিবেইনা, বরং চাইলে আরও উছিলা দেখাবে!
জমিদার: (হুঙ্কার দিয়ে) কতল কর-গ্রেফতার কর এইসব নচ্ছার প্রজাদের। এক্ষুণি যাও।
গোমস্তা: (মুচকি হেসে) তা আর বলতে! আমি অপরাধী ২জনকে গ্রেফতার করেই নিয়ে এসেছি জাহাপনা। রক্ষীরা বাইরে ওদের নিয়ে অপেক্ষা করছে।
জমিদার: বেশ বেশ। আজ সারারাত ওদের কারাবন্দী করে রাখো। কাল দরবারে ওদের বিচার হবে।
এখন যাও বিশ্রাম নাও। এই খানসামা, আমার সুধা দাও।
( গোমস্তা ক্রুঢ় হাসি দিয়ে চলে গেল)
দৃশ্য-৩
(প্রজারা মাঠে সমবেত হয়েছে, সবাই বসে আছে বিদ্রোহী নেতা নিজামের কথা শোনার জন্য, নিজাম চারদিক চেয়ে কথা বলার জন্য প্রস্ত্ততি নিচ্ছে। দূরে দাঁড়িয়ে সমস্ত ঘটনাটিই দেখছে জমিদারের গুপ্তচর)
নিজাম: সমবেত প্রজা ভাইয়েরা , আজ আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলার জন্য এখানে একত্রিত হয়েছি। অত্যাচারী জমিদার আমাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। আমাদের প্রজা ভাইয়েরা বিনা কারণেই নির্যাতিত হচ্ছে, অনেকেই অন্য এলাকায় পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে । এটাকে বেচ থাকা বলেনা।
প্রজা১: কিন্তু এ ছাড়া আমরা কী-ই বা করতে পারি! আমাদের প্রতিপক্ষ জমিদার স্বয়ং। তার সঙ্গে আমাদের মত সহায় সম্বলহীন প্রজা কিভাবে পারবে?আমি তো বলব, আমাদের ভাগ্যকেই মেনে নেয়া উচিৎ।
নিজাম: তবুও আমরা স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই। সেজন্যই শয়তানদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
"কিন্তু এই পরাক্রমশালী প্রতিপক্ষের সঙ্গে আমরা পারব কিভাবে?"-অন্য এক প্রজা বলল।
নিজাম: আমরা আমাদের সর্বত্মক প্রচেষ্টা চালাবো। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় আছেন। তাই জয় আমাদেরই হবে। সেজন্যই আমাদের সংঘবদ্ধ হতে হবে< আর বিচ্ছিন্নতা নয়।
(উপস্থিত প্রজারা তুমুলভাবে আলোড়িত হল যেন, ওদিকে জমিদারের গুপ্তচর অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত জমিদার কুঠির দিকে রওয়ানা দিল)
( চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।