বেশ কিছুদিন আগের কথা। রাজনীতিবিদ কথাটাকে গালি হিসেবেই ব্যবহার করতাম। বিতৃষ্ণা এতোটাই তীব্র ছিল কেউ কোন নীতিকথা বললেও কটাক্ষ করতাম। আমার নিজের লেখালেখিকেও কখনও শ্রদ্ধার চোখে দেখিনি। মনের এক কোনে একটা সন্দেহ কাজ করত, হয়তো একটু নাম হওয়ার জন্যই লিখছি।
দেশে প্রচুর অন্যায় অনিয়ম হচ্ছে, সেগুলো নিয়ে দুকলম লেখা খুব কঠিন কাজ না। দুই দলকে সমান পরিমাণ গালি দিয়ে, নিজের জন্য একটা ‘নিরপেক্ষ কলামিস্ট’ এর লেবেল জোগাড় করা কোন সমস্যাই না।
একটি ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম, আর তা হচ্ছে এদেশের কিছু হবে না। দুটি দলই গলা পর্যন্ত দুর্নীতি তে ডুবে আছে। তাঁরা কেউই চায় না এর অবসান হোক।
একটি ই চাওয়া, ক্ষমতায় যাওয়া এবং নাক ডুবিয়ে দুর্নীতি করা। মাঝে মাঝে দু একটা বক্তৃতা দেয়া, গনতন্ত্রের জন্য গলা ফাটানো। এসব কথা এতোটাই অবিশ্বাস করি যে কারো গায়ে রাজনীতির গন্ধ পেলেই দূরে সরে থাকতাম। সময় কাটানোর অন্যতম সঙ্গী করেছিলাম আমার ল্যাপটপ কে। সঙ্গে ইন্টারনেট আর ফেসবুক।
‘তাহরির স্কয়ার’ এর সাফল্য অনেককে উৎসাহিত করেছিল। এদেশেও এমন একটা হবে এমন আশা দিয়ে অনেকেই ফেসবুকে লেখালেখি করত। অনেকটা নাক সিটকানো ভাব নিয়ে লেখা গুলো পরতাম আর হাসতাম, ‘বলে কি?’ আমার কখনই মনে হয় নি এমনটা হওয়া সম্ভব। বিশেষকরে নব্বই এর আন্দোলন যেভাবে এই দুই দলের স্বার্থপরতার বলি হল তা দেখাবার পরে আর কেউ কোন আন্দোলন করবে বা বলা যায় এই দুই দলের নেতৃত্বে কোন আন্দোলন করবে।
আবার অন্য উপায় যে ভাববো, শত চেষ্টা করেও পারিনি।
বাকী আর আছে কে? বামপন্থী দল? এগুলো তো দিনে তিনবার ভাঙ্গে। যত না কর্মী তাঁর চেয়ে নেতা বেশী। সবাই আঁতেল। এক সপ্নের দুনিয়ায় বসবাস। বাকী থাকে কে? সাধারণ জনতা।
তাঁদের অবস্থা সবচেয়ে করুণ। তাঁদের নিয়ে সত্যিকার অর্থে ভাববার কেউ নেই। মাঝে মাঝে হরতাল সফল করার জন্য ধন্যবাদ দেয়া হয়। কখনো তাঁদের কুপিয়ে মারা হয় কখনও বাসে আগুন লাগিয়ে।
এই সাধারণ মানুষ একাট্টা হবে এমন আশা অনেককেই করতে দেখেছি।
উদাহরণ দেয়া হত ফুলবাড়ির। প্রথমে হাসতাম পরে বিরক্ত হতাম। কেউ বলত যুব সমাজ নেতৃত্ব দিবে। সেখানেও কোন আশা কখনও দেখিনি। আসলে যুব সমাজ বলতে চখের সামনে ভাসতো সরকারী দলের কিছু ক্যাডারের ছবি।
হয় তাঁরা হরতাল বিরোধী কিছু মিছিল করছে নয় কুপিয়ে মানুষ মারছে। বিরোধী দলের ছাত্রদের ছবি ছিল নিরীহ রিক্সাচালকের টায়ারের বাতাস ছেড়ে দেয়া কিংবা গাড়ী ভাংচুর। কার কাছে আশা রাখবো?
তাই দেশে ‘তাহরির স্কয়ার’ এর মত ঘটনা ঘটবে কেউ বললে বিরক্তিতে মুখ ফিরিয়ে নিতাম। একই বিরক্তি হয়তো অনেকে আমার লেখার ব্যাপারেও দেখাতেন। আর এভাবেই সবাই যে যার মত নিজেদের বিরক্তি প্রকাশ করে চলছিলাম।
আর হয়তো মনে অজান্তেই বিশ্বাস করে চলছিলাম, ‘এর বেশী আমাদের কিছুই করার নেই’। আজ সব ওলট পালট হয়ে গেল। রায় শোনার পরে ভাবলাম, সব শেষ। যদিও খুব আশা করিনি, মনে হয়েছিল কিছু একটা খেলা চলছে, তারপরও ভেবেছিলাম, ‘হয়তো’।
এমন সময় ফেসবুকে দেখলাম কিছু ম্যাসেজ।
শাহবাগে আসবার। তখনও আশা করি নি কিছু হবে। আসলে যুব সমাজ একত্রিত হতে পারে, এমন ধারনাই কেন যেন মনে গাঁথতে পারছিলাম না। তাই কিছুক্ষণ পরে পরে ফেসবুকের আপডেট চেক করছিলাম। নতুন কিছু ঘটলো কি না।
মুক্তিযুদ্ধ ব্যাপারটা যুবসমাজের মনের কতটা গভীরে গেঁথে আছে তাঁর কোন ধারণাই আমার ছিল না। দেশের নতুন ‘তাহরির স্কয়ার’ এ তাঁর দেখা পেলাম।
এই মুহূর্তে আমার মানসিক অবস্থা বেশ ভয়ংকর। এমন একটা জাগরণ দেখতে পেয়ে উৎসাহিত। আবার অন্যদিকে দারুণ ভয়ে ভীত।
যদি এই আন্দোলনের রাজনীতি করণ হয়? যদি এখানে সেই চিরাচরিত দলাদলি, গ্রুপিং শুরু হয়? কে নেতা হবে, কে আন্দোলন পরিচালনা করবে। কিংবা উপরের নির্দেশে চালিত হওয়ার কোন ঘটনা ঘটবে। এমনটা হলে? একটি দারুণ সুযোগের অকাল মৃত্যু হবে।
আমি জানি না এই আন্দোলনের কি পরিসমাপ্তি হবে। ফাঁসির রায় নিয়ে এরা ফিরতে পারবে কি না।
‘আমাদের বাস্তবতার নিরিখে চিন্তা করতে হবে’ এমন সব ভাওতাবাজি কথা বলে সবাইকে প্রশমিত করার চেষ্টা হবে কি না। ‘আমি আপনাদের আশ্বাস দিচ্ছি’ বলে একটা মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে এই আন্দোলনকে অন্য খাতে নেয়ার চেষ্টা হবে কি না তা সময় বলে দেবে। তবে আমি মনে প্রানে চাই এই আন্দোলন সফল হোক। দেশের মানুষের চেতনা নিয়ে আমার যে ধারণা ছিল তা যেন মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এই যুব সমাজ যেন আমাকে ভুল প্রমাণিত করে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।