তারা বলে সম্ভব না, আমি বলি সম্ভাবনা
পনের কোটি জনগোষ্টি আর চৌষট্টি হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশ। ইদানিং বাংলাদেশের যে কোন প্রসঙ্গেই হারাধনের কবিতাটি মনে পড়ে। কবিতার বিষয়বস্তুর সাথে বাংলাদেশের কি অদভুত মিল! হারাধনের ছেলে ছিলো দশটি, যারা মারা গিয়েছিলো একের পর এক। একটি গেলো বাঘের পেটে, একটিকে কাটলো সাপে, কোনটি মরলো জলে ডুবে, কোনটি ···!!!
ছোটবেলায় পড়েছিলাম সোনালী আঁশের দেশ, বাংলাদেশ। অর্থকারী ফসল পাটকে ঘিরে গড়ে ওঠা মিল, কারখানা, ব্যবসাকেন্দ্র।
সমুদ্র আর নদী বন্দরগুলোর অবিরাম ব্যতা পাটকে ঘিরে। আর কাজের বিৃত পরিধি মানেই মুদ্রার সঞ্চালন। কম-বেশী যাই হোক দিন শেষে চাল-ডালের যোগানটা ঠিকই আসত। ছেলে- মেয়েদের শিার ধারণাটাও আসে। গড়ে ওঠে পাটকল কেন্দ্রিক স্ড়্গুল-কলেজ।
দেশের সামগ্রিক স্বারতা বিকাশে আসে চমতকার এক গতি। তারপর? কালে কালে হারাধনের এই ছেলেটি গেলো বাঘের পেটে। মিলগুলোতে বাসা বাঁধলো ইঁদুর আর বাদুর। শ্রমিকরা চলে এলো নাগরিক শ্রম বাজারে। কাজ একটি, সেই কাজের উপর ঝাপিয়ে পঢ়ছে দশজন, বিশজন।
কাজ নেই, খাওয়াও নেই।
নব্বই এর দশক। দেশে এলো আরেক জোয়ার। ব শিল্পে বিনিয়োগের জোয়ার। িনিং মিল, নিটওয়্যার ফ্যাক্টরী, ব্যাকওয়ার্ড ইন্টিগ্রেশন।
সা শ্রমের এই দেশে হলো বিপুল কর্মসংস্থান, বিশেষ করে গ্রামীণ নারীদের। রণশীল সমাজ অভ্যা হয়ে উঠলো নারীশ্রমের প্রবল উপস্থিতিতে। সেই ষাটের দশকের পাটকলেরই দৃশ্য। তফাতটা হলো, এখন সকালে দলবেধে কাজে যাওয়া নারীদের চোখে সমৃদ্ধি ও স্বাধীনতার স্বপ্ন। এ পবিবর্তন পারিবারিক ও সামাজিক স্বীকৃতির এবং উপলব্ধির।
মেয়েরা এখন আর কারো জন্য বোঝা নয়।
আমেরিকার বড় বড় ডিপার্টমেন্ট ষ্টোরে যে কোন পাঁচটি পোষাক তুললে দেখা যায় তিনটির গায়ে লেখা, মেইড ইন বাংলাদেশ। কি আনন্দ! কিন্তু ঘি তো সবার পেটে সয়না। হারাধনের কবিতা আছে। জ্বালাও পোড়াও, ভাঙচুরও আছে।
প্রতিযোগিতার এই বিশ্ব বাজারে সময়মতো পণ্য সরবরাহ হলো জীয়ন কাঠি। মিলের উতপাদন যদি হয় তিগ্রস্থ, সময় মতো প্রোডাক্ট যদি না যেতে পারে বন্দরে, বন্দর থেকে যদি না ছাড়ে জাহাজ, তবে যা হবার তাই ঘটে। জলে ডোবার আগে হারাধনের সেই ছেলেটি ধুকতে থাকে।
এতো গেল লেবার ইন্টেনসিভ শিল্পের কথা। বাংলাদেশে নীরবে ঘটে গেছে আরো একটি বিপ্লব।
ওষুধ শিল্পের মতো বিশেষায়িত একটি শিল্পে স্বয়ংসর্ণতা, স্বনির্ভরতা অর্জন। বাংলাদেশের আভ্যরীন ওষুধ বাজার এখন বাতসরিক ছয় হাজার কোটি টাকার। যার ৯৭ শতাংশ যোগান দেয় দেশীয় ওষুধ উতপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশ্বের সত্তরটিরও অধিক দেশে রপ্তানী হয় প্রায় তিনশ কোটি টাকার ওষুধ। ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন (ডব্লিউটিও) আর ট্রিপসের (ঞজওচঝ) আওতায় ২০১৬ সন পর্য পেটেন্টেড ওষুধ উতপাদন আর রপ্তানীর যে অমিত সম্ভাবনা তা নিয়ে সরকারী-বেসরকারী মহলে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়।
ওষুধ শিল্পকে ঘোষণা করা হয় থ্রাষ্ট সেক্টর।
কিন্তু বেঁচে থাকে হারাধনের কবিতা। এবার শুরু হয় ওষুধ শিল্পকে ঘিরে দেশী-বিদেশী চক্রা আর নেতিবাচক প্রচারণা। বাংলাদেশে শুধুই নকল আর ভেজাল ওষুধ তৈরী হয়। কাজেই দেশী ওষুধ খাওয়া যাবে না।
ছয় হাজার কোটি টাকার ওষুধ যদি বিশ হাজার কোটি টাকায় আমদানী হয়, তাহলেই পাওয়া যাবে আর্জাতিক মোড়লদের সাহায্য ও কািখত সুস্থতা।
দোজখের একটা কৌতুক শুনেছিলাম। একজন গেছে দোজখ পরিদর্শনে। বিশাল এক কড়াই, তাতে গরম তেল ফুটছে। পাপীদের ফেলা হচ্ছে সেই কড়াইয়ে।
আর্তচিতকারে ভারী হয়ে আছে আকাশ-বাতাস, বিকটদর্শন রীরা টহল দিচ্ছে চারপাশে, যাতে কেউ পালাতে না পারে। আতংকিত পরিদর্শনকারী গেল দোজখের পরের অংশে। সেখানেও প্রায় একই দৃশ্য। গভীর এক কড়াইতে তেল ফুটছে, পাপীদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে সেই কড়াইয়ে কিন্তু আশেপাশে কোন প্রহরী নেই।
প্রশ্ন করে জানা গেল এটি বাংলাদেশের জন্য নির্দিষ্ট দোজখ ।
কেউ কড়াইয়ের ফুট তেলের উপরে উঠে যেতে বা বেরিয়ে আসতে চাইলেও পারবে না। পাশের বাংলাদেশী ভাই তাকে ঠ্যাং ধরে নামিয়ে আনবে, পালাবে কোথায়!
বাংলাদেশ ওষুধ শিল্পে স্বয়ংসর্ণ হতে চায়। রপ্তানী বাজার বাড়াতে চায়! বটে!! সরকারী দপ্তরগুলো কি ঘুমিয়ে আছে? গণমাধ্যমই বা চুপ থাকে কি করে? বাংলাদেশের ওষুধ নিয়ে একটি বিদেশী সার্টিফিকেট তৈরী করা হবে, যাতে বলা হবে এটিতে কোন কার্যকরী উপাদান নেই! দাতাগোষ্ঠির সার্টিফিকেট বলে কথা! পত্রিকায় ঘটা করে আটা-ময়দার গল্প ছাপা হবে। কে কাকে দেয় প সমর্থনের সুযোগ? পরনির্ভরতার কড়াইয়ের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করা যাবে না, বাংলাদেশের দোজখে প্রহরী লাগে না, জানেনই তো !
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।