akramsbd@yahoo.com,akramsbd@gmail.com স্কাইপঃAkramsBD
বাংলাদেশে বিদেশী পর্যটক আকর্ষণ করতে গত তিন বছর ধরে ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ শিরোনামের একটি প্রচারণা চালাচ্ছে সরকার। নবগঠিত ‘ট্যুরিজম বোর্ড’ বলছে গত দশ বছরে বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটকের আনাগোনা দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা ট্যুরিজম বোর্ডের তালিকাভুক্ত ৬১ টি পর্যটন গন্তব্যের মধ্যে অন্তত ৭টিতে ভ্রমণ করে একদিনে বিদেশী পর্যটক পেয়েছেন সর্বমোট দুজন।
এরকম প্রেক্ষাপটে শুক্রবার বাংলাদেশে নানা আয়োজনে পালিত হল বিশ্ব পর্যটন দিবস। ঢাকাকে কেউ যদি উপভোগ করতে চান, নি:সন্দেহে তিনি দেখতে চাইবেন ঢাকার পুরনো অংশকে।
ব্রিটিশ কিংবা তারও আগের মোগল শাসনামলের প্রচুর স্থাপত্য-কীর্তির ছড়াছড়ি ঢাকার এই অংশে। এখানকার বেশ কিছু জায়গাকে তো এরই মধ্যে জাতিসংঘ বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে।
ধারণা করি, ঢাকার এই অংশটিতে ঘোরাঘুরি করলে হয়তো বিদেশ থেকে আসা পর্যটক কিংবা পশ্চিমা কমবয়সী ব্যাকপ্যাকারদের দেখা পাব। পর্যটকের সন্ধানে এক সকালে বেরিয়ে পড়েন বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা আহরার হোসেন। তিনি যাত্রা শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল সংলগ্ন ঢাকা গেট থেকে।
সেখান থেকে নাজিমুদ্দিন রোড ধরে, লালবাগ, শাঁখারিবাজার, মৌলভীবাজার, আরমানিটোলা হয়ে পৌঁছান সদরঘাট।
ঢাকার এই অংশটা খুবই ব্যস্ত। সরু গলির দুপাশে অসংখ্য দোকানপাট। কুলি কামিন আর ঠেলাওয়ালাদের হাঁকডাক। সেই সাথে ব্যস্ত পথচারীদের ছুটে চলা।
হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা চষে বেড়িয়েও কোনও ব্যাকপ্যাকারের সন্ধান পানটি তিনি। সদরঘাটে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা আহসান মঞ্জিলে ঢুকে পড়েন তিনি। দেখা মেলে প্রথম বিদেশী পর্যটকের।
জেমস সং এসেছেন চীন থেকে।
তার উদ্দেশ্য মূলত ভ্রমণ এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা যাচাই। বরিশালের ঝালকাঠি ও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ঘুরে ঢাকায় এসে মিস্টার সং বলছেন, ‘আমি গত ৫দিন ধরে বাংলাদেশে আছি কিন্তু বিমানবন্দরের বাইরে আর কোনও বিদেশিকে আমি দেখিনি’।
‘আমার কাছে এটা কোনও প্রমোদ ভ্রমণ ছিল না, বরং এটাকে একটা অ্যাডভেঞ্চার বলতে পারেন। আমার মতে কেউ কেউ এটা পছন্দ করবে, আবার অনেকে অপছন্দও করবে। সত্যি কথা বলতে গেলে, খুব কম পর্যটকই এখানে বেড়াতে আসতে চাইবে’।
বাংলাদেশ ভ্রমণ শেষে দেশটি সম্পর্কে এই উপসংহার টানেন চীনা পর্যটক জেমস সং।
ঢাকার পুরনো অংশে ঘোরাঘুরি করে একটা ব্যাপার স্পষ্ট হয়, এখানে বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা খুবই কম। অথচ প্রতিবেশি ভারতের কলকাতা শহরের পুরনো অংশ যেটা অনেকটা ঢাকার পুরনো অংশের মতোই সেখানে গেলেও প্রচুর ব্যাকপ্যাকারের দেখা মেলে। ‘এখানকার পরিবেশ পরিষ্কার করতে হবে। এখানে এত নোংরা, এত দূষণ।
সামনেই বুড়িগঙ্গা নদী। সেখানে পানি অসম্ভব নোংরা। বিদেশিরা নোংরা পছন্দ করে না। ’ এমন মšত্মব্য করলেন, অনিবাসী বাংলাদেশি এহসান খান।
আহসান মঞ্জিলের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ডক্টর মোহাম্মদ আলমগির অবশ্য বলছিলেন প্রায় প্রতিদিনই প্রচুর পরিমাণে বাংলাদেশি দর্শনার্থীর পাশাপাশি পনেরো কুড়ি-জন বিদেশি এখানে আসেন।
ঢাকা গেট থেকে বিবিসি বাংলার যে সংক্ষিপ্ত সফর শুরু হয়েছিল তা আহসান মঞ্জিলে গিয়ে শেষ হলেও পথিমধ্যে বাংলাদেশের পর্যটন বোর্ডের তালিকাভুক্ত আরও ৬টি পর্যটন গন্তব্য অতিক্রম করেন আহরার হোসেন। এর মধ্যে ছিল সোহরাওয়ার্দি উদ্যান, কার্জন হল, লালবাগ কেল্লা, আর্মেনিয়ান চার্চ, বাহাদুর-শাহ পার্ক এবং সদরঘাট।
দিনের দ্বিতীয় যে বিদেশি পর্যটকের দেখা পাওয়া যায়, সেটাও বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে। এহসান খান মালয়েশিয়ার বাসিন্দা হলেও তিনি মূলত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। বুড়িগঙ্গার পাড়ে দাঁড়িয়ে মিস্টার খানের সঙ্গে কথা বলছিলেন আহরার, যদিও নদীর দূষিত পানির গন্ধে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকাটা ছিল রীতিমত কষ্টসাধ্য।
মি. খান বলছেন, ‘এখানকার পরিবেশ পরিষ্কার করতে হবে। এখানে এত নোংরা, এত দূষণ। সামনেই বুড়িগঙ্গা নদী। সেখানে পানি অসম্ভব নোংরা। বিদেশিরা নোংরা পছন্দ করে না।
তাছাড়া এখানে একটু বসার কোনও জায়গা নেই, চা-কফি খাওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই। কেন এখানে আসবে মানুষ’?
বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের প্রসারে সরকারের শুভেচ্ছা-দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রথম এভারেস্ট জয়ী বাংলাদেশি মুসা ইব্রাহিম। তিনিও বলছেন, বাংলাদেশি পর্যটকদের মধ্যে পরিবেশ দূষণ করা এবং পর্যটন গন্তব্যের বিভিন্ন ক্ষতিসাধন করার ব্যাপক প্রবণতা তিনি দেখতে পেয়েছেন, যা অদূর ভবিষ্যতে এসব পর্যটন-গন্তব্যকে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটক কম আসার কারণ হিসেবে মি. ইব্রাহিম উল্লেখ করেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের প্রচারণা কম হওয়াকে। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের বড় অংশই রয়েছে বাংলাদেশে।
এই বনাঞ্চল ‘বেঙ্গল টাইগারে’র আবাসস্থল হিসেবে বিখ্যাত।
২০১১ সালে বাংলাদেশ যখন ক্রিকেট বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক ছিল, তখন সরকারিভাবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ শিরোনামের একটি বিজ্ঞাপন-চিত্রটি প্রচার করা হয় বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটক আকর্ষণের জন্য।
মূলত: বছর তিনেক আগে আত্মপ্রকাশ করা সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এই প্রচারণা শুরু করে।
এর আগে বাংলাদেশে পর্যটন নিয়ে সরকারের যা ছিল তা হলও বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, যেটি মূলত বিমান চলাচল নিয়েই অধিকাংশ সময় ব্যস্ত থাকে।
আর ছিল পর্যটন কর্পোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান যেটির মূল কাজ হোটেল ও রেস্তোরার ব্যবসা করা।
ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী আখতারুজ জামান খান কবিরও স্বীকার করেন, এখন পর্যন্ত বহির্বিশ্বে যথাযথভাবে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করা সম্ভব হয়নি। বোর্ড বাংলাদেশের পর্যটন আকর্ষণের যে তালিকা করেছে সেখানে একষট্টিটি গন্তব্যের উল্লেখ রয়েছে।
গন্তব্যগুলোর মধ্যে সুন্দরবন হলো বিশ্বের সবচাইতে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল আর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে বলা হয় দুনিয়ার দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত।
বোর্ড যে তথ্য উপাত্ত দিচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে গত দশ বছরে বিদেশি পর্যটকদের আগমন দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে প্রায় ছয় লাখে দাঁড়িয়েছে।
গত বছর পর্যটন খাত থেকে বাংলাদেশ আয় করেছে একশো মিলিয়ন ডলার।
এগুলোকে অর্জন হিসেবেই মনে করছে বোর্ড।
তবে ট্যুরিজম বোর্ডের কর্মতৎপরতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল। তিনি বলছেন, ট্যুরিজম বোর্ডের কোনও তৎপরতা তার চোখে পড়ছে না।
মি. উজ্জ্বল আরও বলছেন, ‘শুধু কক্সবাজার বা সুন্দরবন থাকলেতো হবে না, সেখানে গিয়ে পর্যটকেরা কি করবে? শুধু কি সারাদিন সৈকতে বসে থাকবে? তাদের ভ্রমণকে আনন্দদায়ক করতে যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সাথে পরিকল্পিতভাবে রাস্তাঘাট ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হোটেল মোটেলও নির্মাণ করতে হবে’।
বাংলাদেশের মানুষের যে পর্যটনের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে সেটা বোঝা যায় দেশটির বিভিন্ন পর্যটন গন্তব্যে দেশি পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় দেখে। অ-পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা হোটেল মোটেলগুলোতে জায়গা ফাঁকা থাকছে না। ফি বছর বাড়ছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
এমনকি পর্যটকদের জন্য প্রয়োজনীয় নানা সরঞ্জামের বিশেষায়িত দোকানপাটের দেখা মিলছে এখন। ঢাকার শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে এমনই একটি দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে নানা রকম ট্রাভেল গিয়ার বিক্রি হচ্ছে।
ট্যুরিজম বোর্ড বলছে, ২০২১ সালের মধ্যে তাদের লক্ষ্য বার্ষিক দশ লাখ বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ।
কিন্তু স্থানীয় পর্যটকেরা যেভাবে ক্রমাগত পরিবেশ দূষণ করছে, আর যে হারে অপরিকল্পিত অবকাঠামো গড়ে উঠছে পর্যটন গন্তব্য-গুলোয়, সেখানে ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের একষট্টিটি তালিকাভুক্ত পর্যটন গন্তব্যের অবস্থা কি দাঁড়াবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
আমাদের সময়
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় লিখছি, সারা দুনিয়াতে বাসে, ট্রেনে, প্লেনে ঘুড়ে যা না কষ্ট; তার চেয়ে বেশী কষ্ট ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে গাবতলী, সদরঘাট কিংবা কমলাপুর যেতে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।