আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নুয়াখাইল্যা হেরেম(চৌমুহনী টু .........)

আমার মৃত্যু যেন আমার সকল ইচ্ছা পূরণের পর হয়

মনটা অনেক অস্থির লাগছে। ভালো লাগছে না কিছুই। কনে কে বিদায় দিয়ে আমরা সবাই বাড়ীতে আসলাম। জামান সাহেব তার চাচার বাড়ীতে গেলেন। বাবু আর আমি শোয়ার ঘরে সিগারেট টানছিলাম।

বাবু তার ক্যামেরার ছবি দেখতে বললো। কিন্তু দেখতে ইচ্ছে করছে না। বাবু বেশ জোরাজোরি করতে লাগলো মেয়েদের ছবি দেখতে। বাধ্য হয়ে তার ক্যামেরায় কিছু ছবি দেখলাম। লাবণ্যর ছবিই বেশি।

আমার মন খারাপ দেখে বাবু বললো কি হয়েছে। কিছু না বলে অন্য দিকে কাত হয়ে শুয়ে থাকলাম। বাবু তার ব্যাগ থেকে একটা মদের বোতল বের করলো। অবাক হলাম ও যে মদের বোতল নিয়ে এসেছে একবারো আমাকে বলেনি। মদ খাবার জন্য বললো, এতেও না বললাম।

কিন্তু বাবু খুব করে ধরেছে। নীচতলা থেকে কিছু চানাচুর ও নিয়ে এসেছে। ও মদ গ্লাসে দিলো। একটার পর একটা প্যাক খেয়ে গেলাম কিন্তু কিছুই মালুম হলো না। বাবু আমাকে এভাবে মদ না খাবার জন্য পরামর্শ দিলো।

কিন্তু আমি ওর কাছ থেকে বোতলটা নিয়ে গ্লাসে ঢেলে মদ খাওয়া আবার শুরু করলাম। বাবু আমার হাত থেকে বোতলটা নিয়ে আমার চোখের দিকে চেয়ে আছে। চোখ থেকে কখন যে পানি পড়তেছিলো তা টের করতে পারি নি। বাবু কিছু বলার সাহস পেলো না। সকাল হতেই রেডি হয়ে নিলাম।

জামান সাহেব কে বলে চলে যাবার অনুমতি চাইলাম। কিন্তু উনি আবার সেই থাকার জন্য অনুরোধ জানালেন কিন্তু উনাকে না বলে আমি ব্যাগ হাতে দাড়িয়ে রইলাম চলে যাবার জন্য। জামান সাহেবের ফোন বাজলো। একটু পর জামান সাহেব বললেন উনার শালীর বিয়েতে যেনো এটেন্ড করি তাই থাকতে হবে। বললাম আমার বাসা থেকে অনেক জরুরী ফোন এসেছে আমাকে চলে যেতেই হবে।

জামান সাহেব তেমন কিছু বললেন না। উনি আমাকে বাসে তুলে দেবেন বলে রেডি হতে গেলেন। বসার ঘরটায় ব্যাগ নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম। ভাবী আসলো আমাকে বিদায় দিতে। ভাবী আমাকে বিদেয় দিয়ে চলে গেলেন।

বাবু আসলো ও ঢাকায় যাবে। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে কিছু বললো না। লাবণ্য ফিরে আসেনি। কনের সাথে বরের বাড়ী আছে। জামান সাহেব রেডি হয়ে আসলেন।

সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা রওয়ানা হলাম। রিক্সায় বসে যাচ্ছি কেউ কথা বলছি না। মেইন রোড আসতেই একটা বাসে উঠলাম। জামান সাহেব বললেন উনি চৌমুহনী যাবে সেখান থেকে আমাকে বাসে উঠিয়ে দেবে। আমরা তিনজন বাসে উঠে চৌমুহনী আসলাম।

জামান সাহেব বাবুকে থাকতে বললেন। বাবু প্রথমে না করলেও পরে ঢাকা যাবে না বললো। জামান সাহেব যাচ্ছেন ছেলেদের বাড়ীতে কথা পাকাপাকি করতে। ছেলেকে তাড়াতাড়ি চলে যেতে হবে তাই তারা বিয়েটা সারতে চায়। বাবু মাঝে মাঝেই আমার দিকে তাকায় কিন্তু কিছু বলে না।

বিলাস কাউন্টারে এসে টিকেট কাটলাম। বাস আসতে আরো ১৫মিনিট লাগবে। জামান সাহেব আমাকে বিয়ের দাওয়াত দিলেন। ঢাকায় অনুষ্টান হবে আমাকে অবশ্যই আসতে হবে আরো অনেক কথা। উনাকে না করলাম না।

হ্যা বলে আশ্বস্ত করলাম। উনাকে ফোন করতে বললেন কোন দরকার বা এমনিতেই। উনিও আমাকে ফোন করবেন। আমার বাসার ঠিকানা চাইলো, কিন্তু আমি মিথ্যা বললাম যে বাসা চেন্জ করবো, পরে আপনাকে ফোন করে জানিয়ে দেব। বাস আসলো।

মাঝ বরাবর সিট পেলাম। সেই একই সুপারভাইজারের সাথে দেখা। জামান সাহেব আর বাবু আবারো বিদায় নিয়ে চলে গেলো। বাসে বসে আছি। ১০-১২ জন যাত্রী হবে।

বাস ছাড়লো। কিছুদুর যেতেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ফিরে যেতে ইচ্ছা হলো। কিন্তু আমি মনের কাছে হেরে গেছি। আজ বাসটাও মনে হচ্ছে অনেক জোরে ছুটছে।

টানা কিছুদিনের স্মৃতি আমাকে ধাওয়া করে বেড়াচ্ছে। সীটে বসে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি জানি না। চোখ খুলতেই দেখি বাস দাড়িয়ে আছে। আবারো সেই বিরতির জায়গা। নামতে ইচ্ছে হলো না।

সীটে বসে একটা সিগারেট ধরালাম। পানির পিপাসা পেয়েছে। নেমে দোকান থেকে একটা পানির বোতল কিনলাম। ব্যাগটা সাথেই ছিলো। দাড়িয়ে দাড়িয়ে আরেকটা সিগারেট টানছিলাম।

সুপারভাইজার এসে বললো গাড়িতে গিয়ে বসতে বাস এখনি ছেড়ে দেবে। কিন্তু আমার মনটা যেনো নোয়াখালীর ওই অচেনা হোটেল যেখানে চা খেয়েছিলাম সেখানেই পড়ে আছে। হঠাৎ মাইন্ড চেন্জ করলাম। একে এক সব যাত্রী বাসে উঠতে লাগলো। কিন্তু আমি সবাই কে আড়াল করে হোটেলের ভিতরে এক জায়গায় গিয়ে বসে থাকলাম।

কিছুক্ষন পর মাইকে ঘোষনা দিলো ঢাকাগামী বাসের কোনো যাত্রী বাকী থাকলে তাড়াতাড়ি বাসে যেতে। আমি ভয়ে আরো চুপসে গেলাম। তাড়াতাড়ি করে ব্যাগটা নিয়ে টয়লেটে চলে গেলাম। ১০মিনিট পর বের হয়ে দেখি বাসটা নাই। আজ মনটা দোটানায় পড়ে আছে।

ঢাকা যাবার ইচ্ছে নাই, ফিরে যাবার সাহস ও পাচ্ছিনা। আরো কিছু গাড়ী এসে দাড়ালো, সবাই যার যার মতো চলেও গেলো। কিন্তু আমি সাবধানতায় ব্যাগটা নিয়ে পিছু হটছিলাম। দূরে কোথায় দূরে দূরে আমার মন বেড়ায় গো ঘুরে ঘুরে যে বাঁশিতে বাতাস কাঁদে সেই বাঁশিটি সুরে সুরে যে পথ সকল দেশ পারায়ে উদাস হয়ে যায় হারায়ে যে পথ বেয়ে কাঙাল পরান যেতে চায় কোন অচিনপুরে (ধন্যবাদান্তে বিষাক্ত মানুষ)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।