আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নুয়াখাইল্যা হেরেম (পরের খবর)

আমার মৃত্যু যেন আমার সকল ইচ্ছা পূরণের পর হয়

লেখক বাসায় পৌছে গেছে। জামান সাহেব জলদি করে বসতে দিলেন। খাবার দেয়ার কথাও বললেন। লেখক যুবতীকে মনে মনে খুজতেছে। কিন্তু যুবতী মনে হয় তার সাথীদের সাথে ব্যস্ত।

হঠাৎ করে এক পাল মুরব্বী আসলেন। সবাইকে সালাম দিলাম। জানা গেলো তারা জামান সাহেবের বাবা মা ও দুলাভাই। জামান সাহেবের বাবা মা ও দুলাভাই এসেছেন আমেরিকা থেকে। খাবার টেবিলে গেলাম।

মুরগীর মাংস, গরু, শাক সবজি, বিভিন্ন রকমের ভর্তা, যেমন শুটকি, টমেটো, শিম, আরো ছিলো। পেট পুরে ভাত খেয়ে একটু খাটে হেলান দিয়েছিলাম, জামান সাহেব এসে নিয়ে গেলেন তাদের জমি দেখাতে। রিক্সায় উঠলাম, রিক্সাওয়ালা আমাকে দেখে সালাম দিলো। > আমনেও কি আমরিকা থান? > না না, আমি বাংলাদেশ। > জামান ভাই ভালা মানুষ, হে মিয়া দেশে আইলেই আঁরে ডাকে, আঁই হারাদিন হে মিয়ার লগে থাই।

> ও আচ্ছা > আমনে কি জামান ভাইয়ের বন্ধুনি? > না মানে পরিচিত.... ইতিমধ্য জামান সাহেব রিক্সায় আসলেন। উনার জমি জায়গার একটা বিশদ বর্ননা দিলেন। ১০ মিনিট রিক্সা চলার পর উনার জমি দেখতে পেলাম। জামান সাহেব বললেন যা দেখতেছেন তা সব আমার। আমি প্রায় ফিট হয়ে যাচ্ছিলাম।

প্রায় ৬০ বিঘা হবেই। জামান সাহেব সিগারেটে সুখ টান দিতে দিতে বললেন বিদেশে আর কত থাকবো বলেন! এবার ফিরে এসে দেশে কিছু করবো। বউ আর বাচ্ছার পাসপোট হয়ে গেলেই চলে আসবো। সন্ধ্যা হয়ে গেল। আমরা ফিরে আসছি।

রিক্সাওয়ালা আর জামান সাহেবের মধ্য কথা হচ্ছে: > জামান ভাই উত্তরের জমিত এবার ধান হয় ন। আঁই গেছিলাম। আমনে থাইকতে থাইকতে এবার জমি ইয়ান বেচি আলান > আরে না হাগল হইছোত নি! আব্বা হুইনলে আঁই শেষ। > আঁই মিয়া ভাইরে কমু, আমনে খালি হে কইবেন। > আরে না আব্বা মনে কস্ট হাইবো।

হে জমি আম্মার নামে... আব্বা বেইছতো ন বাসায় ফিরে এলাম। অনেক ক্লান্ত লাগছে। এদিকে জামান সাহেব ও পিছু ছাড়ছে না। > জামান সাহেব আমি একটু বাইরে গেলাম। > না না আপনি হারিয়ে যাবেন > চিন্তা করবেন না ঠিক ফিরে আসবো > আচ্ছা বাইরের ওই রিক্সা নিয়ে যান।

> না না প্লিজ আমি একাই ঠিক আছি... আপনি চিন্তা করবেন না। বের হলাম। বাসা থেকে বের হয়ে শহরের পথে হাটতে থাকলাম। শহরটা ছোট। আর রাতে তেমন একটা জমজমাট ও হয়না।

হঠাৎ করে এক বাসা পার হতে শুনলাম জোরে জোরে পড়া মুখন্ত করার চেষ্টা। অনেকদিন পর এরকম কিছু শুনলাম। একটা হোটেলে আসলাম। চা দিতে বললাম। একটা ছোট্ট ছেলে বয়স ৮ কি ১০ হবে চা নিয়ে আসলো।

ওকে একটা সিগারেট আনতে বললাম। > কি সিগারেট খাইবেন? > ***** ! ও চলে গেলো সিগারেট আনতে। নিমিষে সিগারেট নিয়ে হাজির। ভাংতি টাকা দিতে চাইলো কিন্তু আমি না নিয়ে ওকে টাকা রাখতে বললাম। বেশ খুশি হলো।

বের হলাম হোটেল থেকে। এক পাড়া দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম। কিছু উঠতি বয়সের ছেলেদের দেখলাম আড্ডা দিতে। সাথে একটা হুন্ডা ও ছিলো। ওদের ছাড়িয়ে গেলাম।

কিন্তু কি মনে হলো ওদের সাথে আড্ডা দেবার খুব ইচ্ছে হলো। ফিরে এলাম। সিগারেটের আগুন চাইতে সিগারেটটাই বাড়িয়ে দিলো। সিগারেট ধরালাম। সেখানে দাড়িয়ে সিগারেট টানতে থাকলাম।

তারা একটু বিব্রত হলো। তাদের এই অবস্থা দুর করার জন্য বললাম > এই শহরে আমি কাউকে চিনি না, একা ঘুরতে বের হয়েছি। ভাবলাম আপনাদের সাথে একটু আড্ডা দেই, তাই সিগারেটের বাহানা দিয়ে আপনাদের কাছে এসেছি। তারা একজন আরেকজনের মুখের দিকে চাইতে লাগলো। তার পর আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম।

সবাই হ্যান্ড শেক করলো। পরিচিত হলাম। তাদের বয়স ২০ থেকে ২২ এর মধ্য হবে। সবাই বেশ মিশুক। সবাই স্থানীয়।

সবচাইতে মজার ব্যাপার হলো তারা নাকি সারা রাত বাইরে আড্ডা দেয়। ভোর বেলা বাসায় যায়। জানতে চাইলে বলে এটা নাকি তাদের স্টাইল। তাদের দলের নাম নাইটবার্ড। বেশ মজার।

কথায় কথায় কথন যে ১১:৩০ বাজে বুজতে পারলাম না। হঠাৎ একজন বললো আপনি বাসায় যাবেন না। আমি ঘড়ি দেখে অনেকটা অবাক, এত রাত হয়ে গেছে আমি বুঝতেই পারি নি। বললাম আজ সারা রাত আপনাদের সাথে থাকলে কোনো সমস্যা হবে? সবাই আবার বিব্রত হয়ে গেলো। পরে বুঝলাম না আর বিরক্ত করা উচিত হবে না।

কেটে পড়ি। হাটতে লাগলাম। হাটতে হাটতে হঠাৎ করে মনে হলো পথ হারিয়ে ফেলেছি। কারন আমি যে পথ দিয়ে এসেছি তার সাথে এটা মিলছে না। আবার উল্টা হাটতে লাগলাম।

৩০ মিনিট হাটার পর সঠিক রাস্তা পেলাম। ওদিকে ১২:১৫ প্রায়। খুব খিদা পেয়েছে। ভাত খেতে এক হোটেলে আসলাম। গরুর মাংস দিয়ে ভাত দিতে বললাম।

কেন জানি হোটেলের খাবার আমার কাছে সব সময় ভালো লাগে । বিল চুকিয়ে সিগারেট ধরিয়ে হাটতে লাগলাম। দুরে একজন লোক দেখলাম, জামান সাহেবের মত দেখতে। কাছে গিয়ে দেখি জামান সাহেব আর সাথে রিক্সাওয়ালা। জামান সাহেবের চেহারায় একটা ভয়ের ছাপ।

আমাকে দেখতেই তিনি বুকে জড়িয়ে নিলেন। বললেন কোথায় ছিলেন আপনি? আপনাকে খুজতে খুজতে আমার জান বের হয়ে গেছে। আপনার মোবাইল নাম্বারটা দিয়ে যাবেন না আমাকে! আমি শুধু উনার চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলাম। বাসায় আসলাম। ঢুকতেই দেখি বাসার সব সদস্য এক জায়গায় বসে আছে।

আমাকে দেখা মাত্রই তারা একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন। জামান সাহেবের বাবা মা দুলাভাই সবাই মোটামুটি একটা কড়া শাসনের সুরে কিছু কথা শুনালেন। আপনার এভাবে যাওয়া ঠিক হয়নি. এখন সময় খারাপ, যদি আপনি হারিয়ে যেতেন, যদি কিছু একটা হয়ে যেত....... চুপ করে তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আশ্চর্য আমাকে চেনে না জানে না, তাই এত মায়া!!! দুলাভাই খেতে আসতে বললেন। বাসার কেউ এখনো খায়নি।

রাত ১:৩০ চেপে গেলাম। বাসার সবার সাথে আবার খেতে হলো। রাতের খাবারের আয়োজন দেখে আমি অবাক। বড় বড় মাছের টুকরা ভাজি করা, মুরগী, গরু, লাল শাক, ভর্তা (চার পদের হবে), আরো নানা রকমের খাবার। খাবার শেষ করে ঘুমাতে গেলাম।

জামান সাহেব হঠাৎ করে আসলেন। ছাদে নিয়ে গেলেন। এই লোকটাও আজব। সিগারেট দিলেন। নানা কথা শুরু করলেন।

রাত ৩টা.... অচেনা শহরে আমার চেনা চাঁদ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।