আমার মৃত্যু যেন আমার সকল ইচ্ছা পূরণের পর হয়
লেখক মনে মনে অনেক কথা চিন্তা করছে। কি জানি সব আবোল তাবোল। কাশেম সাথে সাথেই আছে। রাত প্রায় ১২টা হঠাত করে মোবাইল বেজে উঠলো। রিসিভ করতেই দেখি জামান সাহেব।
কাদো কাদো গলায় বললেন উনার বাচ্ছাটা হাসপাতালে। আমি থ হয়ে গেলাম। কিছুক্ষন আগেও ভালো দেখে এসেছি। জলদি করে ঠিকানা নিয়ে গেলাম হাসপাতালে। গিয়ে দেখি প্রায় ৩০-৪০ জন হবেই।
কেউ কান্না করছে, কেউ হাউমাউ করে কান্না করছে, কেউ এক কোনায় চুপ মেরে আছে, আবার কেউ বা পায়চারী করছে। জামান সাহেবের দেখা পেলাম না। ফোন করার সাহস পেলাম না। বাইরে দাড়িয়ে সিগারেট ধরালাম। মোবাইল বেজে উঠলো, জামান সাহেব কল করেছে।
জানালেন তিনি তিনতলার একটা কেবিনে আছেন। সেখানে গেলাম। সেখানে আরেক কান্ড, মহিলারা সবাই কান্নাকাটি করছে। কি হয়েছে জানতে চাইলে জামান সাহেব বলেন হঠাত করে বমি করছিলো বন্ধই হচ্ছিল না। এখন অনেকটা ঠিক আছে।
স্যালাইন দেওয়া। সকাল বেলা ছেড়ে দিবে। প্রায় সবাই এ খবর পাবার পর বাসায় চলে গেছে। জামান সাহেব আমাকেও যেতে বললেন কিন্তু আমি গেলাম না। রাত তিনটা।
পুরা শহরটাই নীরব। পাশে চা খেতে গেলাম। দোকানদার বসে বসে ঝিমাচ্ছে। চা অর্ডার দিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম। চা পান করে আবার হাসপাতালে আসলাম।
হাসপাতালটা অন্ধকার, দু একটা বাত্তি ছাড়া সব বাত্তি বন্ধ। রিসিভশনে সোফায় হেলান দিয়ে শুয়ে থাকলাম. কখন যে ঘুমিয়ে গেছি টের পাইনি। ভোর ৫:১৭ ঘুম ভাঙ্গলো।
সকাল ৯টা। সবাই বাচ্ছাটাকে নিয়ে বাসায় ফিরলাম।
বাচ্ছাটা আবার কি সুন্দর খেলছে, বোঝাই যাচ্ছেনা যে সে অসুস্থ ছিলো। ওদিকে আজ সন্ধ্যায় নাকি আবার জামান সাহেবের কাজিনের বরের হলুদে যেতে হবে! দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে ঘুম দিলাম। ঘুম থেকে উঠতেই আবার কাশেমের চেহারা দেখলাম।
> কেমন আছো কাশেম?
> জে ভালা! আমনে কেরুম আছেন?
> আমিও ভালো
> ভাইয়া কইছে আমনেরে রেডি হইতেন। হে মিয়া বই রইছে...
তাড়াতাড়ি রেড়ি হয়ে জামান সাহেবের সাথে দেখা করলাম।
জামান সাহেব একটা পান্জাবী পরে বসে আছে। দেখেই সালাম দিলাম। জামান সাহেব জানালেন কিছুক্ষণ পর তারা রওনা দেবেন বরের বাসা উদ্দেশ্য। আমাকে বললেন
> আপনি একটা পান্জাবী ট্রাই করেন!
> না না আমি ঠিক আছি
> লাবণ্য! আমার পান্জাবীটা নিয়ে আয়!
লাবণ্য পান্জাবী নিয়ে হাজির। যুবতীর মনটা বেজার মনে হলো।
পান্জাবীটা দিয়ে চলে গেছে। পান্জাবী পরে রেডি হলাম। জামান সাহেব সহো রিক্সায় উঠলাম। সিগারেট টানতে টানতে জামান সাহেব বলেন উনার কাজিনের বিয়ের তারিখ কাল বাদে পরশু ঠিক হয়েছে। কিন্তু কিছু কারনে অনুষ্ঠান ছেলের বাড়ীতে হবে, তাই কাল আমাদের সবাইকে গ্রামে যেতে হবে।
আমাকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে বলরেন। বরের বাসায় পৌছে গেছি। সেখানে অনেক ভীড়। বর বাবাজী হাসি মুখে বসে আছে সবাই তাকে হলুদ লাগাচ্ছে। এবার অনেক সুন্দরী মেয়ে দেখতে পেলাম।
কিছু স্থানীয় আবার কিছু ঢাকা থেকে এসেছে। মনে মনে লাবণ্যকে খুজচ্ছিলাম। কোথাও তার দেখা নাই। রাগ করে মনে হয় আসেনি। হালকা নাস্তা দেয়া হলো।
নাস্তা খেয়ে বরের সাথে পরিচিত হলাম। বর ইটালী প্রবাসী। নিজের দোকান আছে ইটালীতে। বিয়ের ছ মাসের মাথাই বউকে নিয়ে যাবে বললো। অনুষ্ঠানে আসছি কিনা তা প্রশ্ন করলো।
হ্যা বলে তাকে আশ্বস্ত করলাম।
পিছন থেকে কে যেনো আমাকে ডাকছে। তাকিয়ে দেখি লাবণ্য। কি ভাগ্য আমার।
> আপা আপনাকে ডাকছে
> কেনো?
>সেটা গেলেই টের পাবেন
ভয়ে ভয়ে ভাবীর সাথে দেখা করতে গেলাম।
ভাবীকে সালাম দিলাম। কিছু মুরব্বী ও ছিলো। ভাবী দেখলাম তার এক বান্ধবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন, সাথে তাঁর বোন ও ছিলো। তাদের ও সালাম দিলাম। বান্ধবীর বোন আবার ঢাকা পড়াশুনা করে, তাই পরিচয় হচ্ছিল।
ওদিকে দেখলাম যুবতী সাঁই করে চেলে গেলো। আজ যুবতীর মন খারাপ কিন্তু কেনো বোঝা গেলো না। ভাবী আমাকে নানা প্রশ্নে জর্জরিত করতে লাগলেন।
> আপনি কাউকে চেনেন না তার পরেও সাহস করে নোয়াখালী চলে এসেছেন?
> না আসলে আমি এরকমই!
> যাই হোক আপনার বাবা মার সাথে কথা হয়েছে?
> জী হ্যা হয়
> অনুষ্ঠানের জন্য রেডিতো? আপনারা তো শহরের! গ্রামে গিয়ে থাকতে পারবেন?
> হ্যা হ্যা পারবো... আমি আগেও ছিলাম।
> আপনি নাকি সাঁতার জানেন না?
> না মানে শিখেছিলাম ভুলে গেছি।
ভাবীর অট্টহাসি।
লেখক বাহানা দিয়ে ভাবীর কবল থেকে রেহাই নিয়ে বের হয়ে এলেন। কালকের দিনটা হাতে আছে পর দিন গ্রামে অনুষ্ঠানটা এটেন্ড করে সোজা ঢাকা চলে যাবো। ম্যাপটায় আবার পয়েন্টিং করতে হবে, এখানে কাজ হবে না। রাত ১০:৩০।
জামান সাহেব আসলেন, সাথে করে নিয়ে গেলেন। ভাগ্য ভালো আজ কাশেম সাথে নেই। সবার সাথে বিদায় নিয়ে আমরা বাসার দিকে রওয়ানা দিলাম। পৌছাতে পৌছাতে ১১:১৫। জামা কাপড় চেন্জ করে ঘুমাতে গেলাম।
হঠাৎ করে মোবাইল বেজে উঠলো। ফোন হাতে নিয়ে দেকি শারমিন ফোন করেছে। শারমিন লেখককে ভালবাসে, কিন্তু লেখক সব সময় ওর কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ায়, শারমিনের বাবা আর্মির লোক, বেশ রাগী আর শারমিনকে কোনো বড় আর্মি অফিসারের সাথেই বিয়ে দেবে সো গলায় দড়ি বেধে ধাক্ক দেবার লোকের আমার দরকার নেই। লেখক ফোন ধরলেন। অপর পাশ থেকে
> কি ব্যাপার, ফোন ধরতে এতক্ষন লাগে?
> না ঘুমিয়ে ছিলাম।
> তুমি নাকি আবার ট্যুরে বের হয়েছে।
> না না কে বলেছে! আমি তো ঢাকায়
> মিথ্যা বলবে না, তোমার বাসায় গিয়েছি, তোমার ফ্রেন্ড বলেছে তুমি আবার বের হয়েছো, তা এবার কোথায়?
> শুনো আমি এখন ঝগড়া করতে চাইনা, ফোন রাখো আসলে সব বলবো।
......................................@###@!!!???
ফোন রাখতেই কিছু রমনীর হাসি কানে আসলো লেখকের। তাকিয়ে দেখে যুবতী আর তার সখীরা উঠানে কি যেনো করছে! এত রাতে কি করছে এরা? লেখক ঘুমাতে গেলেন। হঠাৎ দরজায় শব্দ
> কে ?
> আমি জামান!
দরজা খুললাম।
জামান সাহেব হাসি মুখে প্রবেশ সাথে দুলাভাই ও আছে। কি ব্যাপার বুঝলাম না। দুলাভাইকে সালাম দিলাম। দুলাভাই কি খবর জানতে চাইলেন। জামান সাহেব ইতস্ত বোধ করতে লাগলেন।
> জামান সাহেব কিছু বলবেন?
> না আসলে আজ আমরা সব পুরুষেরা ঠিক করেছি রাতে বাইরে থাকবো।
> বাইরে মানে কোথায়?
> আমাদের পুরান বাড়ীতে, ওখানে সামান্য পার্টির ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাবেন?
> জী যাবো!
রাত ১টা। সবাই রেডি হয়ে দুই রিক্সা নিয়ে চললাম। ২০মিনিটের পরে একটা ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে একটা বাড়ীর সামনে আসলাম।
সেখানে আরো লোকজন আছে। সবার সাথে পরিচয় হলাম। এরা জামান সাহেবের রিলেটিভ তবে দুরের, বাড়ী দেখাশুনা করে। ভিতরে গেলাম। জামান সাহেব বললেন আজ রাতে পুরুষ পার্টি।
মদ খাবার অভ্যাস আছে?
> না মানে ইয়ে....
> আরে বুঝে গেছি... হা হা হা
একটা রুমে গেলাম, সেখানে বিদেশী মদ রাখা আছে, সাথে চানাচুর, চিপস, মুরগী ফ্রাই। অবাক হলাম। টেনশনে একটা সিগারেট ধরালাম। জামান সাহেব দুলাভাই আমি আর এক লোক তাস খেলতে বসলাম। সাথে একটা লোক আছে যার নাম বাহার, সে আমাদের মদ বানিয়ে সার্ভ করতেছে।
আজব সব কাহীনি। মদের গ্লাসে প্রথম চুমুকের সাথে সাথেই মনে হলো মনের ভিতরের কষ্টের আগুনে কে যেনো শীতল পানি ঢেলে দিয়েছে.......
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।