তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে জীবনের নিয়মে।
ছুটির দিনগুলো নিজের মতো করে কাঠানোর মজাই আলাদা। গত সপ্তাহো পুরোটাই বৃষ্টিহীন ছিলো। একদিকে ভালোই। অন্যদিকে আগামী সপ্তাহে যে বৃষ্টি হবে সেটা মোটামুটি শিওর ছিলাম।
হলোও তাই। শনিবার ছোটবোনের সাথে বাইরে যাবার ইচ্ছে ছিলো। ক্রিসমাস উপলক্ষে হয়তো বিভিন্ন জিনিসের ডিসকাউন্ট দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। উনি মনে হয় কি সব কেনাকাটা করবেন। কিন্তু শপিং সেন্টারমুখো হতে আমার বিরাট এলার্জি।
মা'কে ম্যানেজ করে পাঠিয়ে দিলাম।
বন্ডের নতুন ফিল্ম দেখার চেষ্টা করলাম। কিছুক্ষন দেখে ভালো লাগলো না। এতো ডিসুম-ডিসুম ভালো লাগে না। পিচ্চকাল থেকেই ইংরেজি ছবির ভক্ত।
প্রতি রবিবার, বোধবার বিভিন্ন ইংরেজি সিরিয়েল হতো। পড়াশোনা বাদ দিয়ে দেখতাম। মাঝে মাঝে মায়ের কিছু বখশিশ (পিঠুনি) পাওয়া যেতো। কার্টুন ছবির কথা নাই বা বল্লাম। এখনো ঘন্টার পর ঘন্টা কার্টুন দেখি।
ইন্টারনেটে কিছু করার নেই। টিভি অন করে ঘন্টা তিনেক কার্টুনছবি দেখা হলো। যোহরের নামায পড়ে আবারো ইন্টারনেট অন করে দেখি দেশ থেকে এক বন্ধু চ্যাট করার জন্য চিল্লাইতেছে। কি আর করার। বসে পড়লাম।
চ্যাটের পাশাপাশি খাবারও শেষ। কিছুক্ষন পর বন্ধু জিঞ্জেস করলো দুপুরের খাবার খেয়েছি নাকি? বল্লাম তোর সাথে কথা বলার ফাকেই শেষ। শুনে অবাক হলো। জিঞ্জেস করলো চ্যাট + দুপুরের খাওয়া কিভাবে একসাথে করলাম। বল্লাম:
এইটা যদি বুঝতা
তাইলে কি আর ডানহাত দিয়ে....(শূন্যস্হান)।
বল্লাম প্লেটে ভাত, তরকারী নিয়ে ওভেনে গরম করে চামচ দিয়ে খেয়েছি। খাবারের এইরকম করুন অবস্হা শুনে দু:খ প্রকাশ করলো। বল্লাম ঘরে ৩/৪ রকমের আইটেম রান্না করা আছে। কিন্তু সব সাজিয়ে খেতে গেলে একঘাদা খাওয়া হবে। আর একাএকা এতো সাজিয়ে খাওয়ার এনার্জি কোনকালেই ছিলো না।
তাই সর্টকার্টে খাওয়া হলো, সাথে ডায়েট। অনেকক্ষন ব্লা, ব্লা করে বিদায় নিলো।
চিন্তা করলাম দুপুরে ঘুমাইনি অনেকদিন। ছোটবেলায় মায়ের হাতের অনেক মার খেয়েছি দুপুরে ঘুমানোর জন্য। কিন্তু তখন কি আর ঘুম আসে।
এখন একটু চান্স পেলেই হলো। চাকরীতে ঢুকে বদঅভ্যেসটা বেশ জ্বালাতন করেছে। ছাড়তে অনেক কষ্ট হয়েছিলো। অফিসে তো প্রথম প্রথম লাঞ্চের পর পুরো শরীর কাপিয়ে ঘুম আসতো। ব্লাককফি, হোয়াইট কফি খেয়েও ঘুম তাড়ানো যেতো না।
অনেকদিন পর ভাবলাম আজকে দুপুরে ঘুমাই। যদিও ভয় হচ্ছিল রাতের ঘুমটা শিকে চড়বে। রুমটাকে অন্ধকার করে টিভি অন করে দিলাম ঘুম। এক ঘুমে সন্ধ্যা। বাসায় কেউ নেই।
আমিও স্বপ্ন দেখতেছিলাম ফযরের নামাযের সময় হইছে। আসলে তখন এশার নামাযের সময় হইছে। তড়িঘড়ি করে উঠে নামায পরে চা বানালাম। চায়ের সাথে টা হিসেবে মায়ের বানানো কেক। মনে মনে ভাবি চায়ের সাথে একটু সিঙ্গাড়া, সমুচা হলে বেশ হতো।
কিন্তু কপালে নাই
রবিবার থেকেই সোমবারের কামলা দেওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি শুরু। বাইরে ফাজলামি বৃষ্টি চলছে। মা-বাবা বাইরে গেছেন। আমরা ভাই-বোন কার্টুন দেখতে ব্যস্ত। হঠাৎ মনে হলো এইসব বৃষ্টির দিনে ভাত-মাছ দিয়ে দুপুরের খাবার হলে ভালো দেখায় না।
বাসায় আসার পর আমার অনেক প্রিয় খাবার থেকে বঞ্চিত। আলুভর্তা, পাস্তা, শুটকি ভর্তা, ডিম ভাজি, টুনফিশ, ভুনাখিচুড়ি এগুলো এখন প্রায় জাদুঘরে। যখন হোস্টেলবাসী ছিলাম তখন তো কয়েকদিন পরপরই ভুনাখিচুড়ি সাথে ৪/৫টা ডিম ভাজি অথবা ইলিশ ভাজি হতো। প্রায় বছরখানেক রান্না করা হয় না। বাসায় মা যা রান্না করে তাই খাই।
পছন্দ অপছন্দ বলতে কিছু নেই। মনেমনে আলুভর্তা আর ডিমভাজির চিন্তা করলাম। ভাবলাম অল্পসময়ে আলুভর্তা করা সম্ভব। কিন্তু পেয়াজ কাটবে কে? রান্না করতে আমার কোন সমস্যা নেই। কিন্তু এই একটা জিনিস আমার খুব ভয় করে।
একটা পেয়াজ কাটলে ৩/৪ঘন্টা চোখ জ্বালাপোড়া করবে। আরও সমস্যা হাতে পেয়াজের খুশবু লেগে থাকে। হাত থেকে গন্ধ ছাড়ানো আরেক হ্যাপা। হাবিজাবি চিন্তা না করে আলুসিদ্ধ সাথে কয়েকটা ডিমও সিদ্ধ দিলাম। পেয়াজ, কাচামরিচ, ধনিয়া পাতা কেটে রেডি করা হলো।
মরিচের পরিমান ইচ্ছে করে বেশি দিলাম। মাঝে মাঝে ঝাল খেতে ভালোই লাগে। এতো কাচামরিচ দিয়েছি যে পরেরদিনের আউসগাঙ্গের চিন্তা করে ভীত হলাম। শুধু ভর্তা দিয়ে দুপুরের খাবারটা ভালোই হলো। তারপর শুরু হলো আসল খেইল।
ভর্তায় এতো ঝাল ছিলো যে ঠোট, কান, মুখ সব লাল। ছোটবোন দেখে ফাজলামি করলো কতোক্ষন। মায়ের পানদানি থেকে ভালো করে চুন দিয়ে পান-সুপারী জর্দা সহকারে খেলাম। পান খাওয়া পারিবারিক সংস্কৃতি। যদিও এখন পান খাওয়ার সংস্কৃতি বাসা থেকে প্রায় বিতাড়িত।
দেশে থাকতে নানী আর বোনেরা মিলে ভালই পান খাওয়া শিখাইছিলো। গ্রামে বেড়াতে গেলেই হইছে। নানী বলবে ভাত খাওয়ার পর পান না খেলে কি আর ভালো লাগে। উনি খুব সুন্দর করে পান-সুপারী সাজিয়ে রাখতো। শতশত সুপারী গাছ ছিলো আমাদের।
পুরো বছরের সুপারীর জুগান দিয়ে আত্মীয়দেরও দেওয়া হতো। এখন হাতেগোনা কয়েকটি গাছ হয়তো পাওয়া যাবে। তখন শুধু ছুটিতে গিয়ে পান-সুপারী খাওয়া হতো। একটু একটু খেয়ে অভ্যেস হয়ে গিয়েছিলো। তবে দাঁত নষ্ট হবে দেখে পরে একদম বাদ।
দুপুরের আলুভর্তার ডোজ মনেহয় বেশি হয়ে গিয়েছিলো। সন্ধ্যার পর ফল খেয়ে ঘুম।
এভাবেই ছুটির দুই দিন নিহত হলো
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।