যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
একজন একটা কাটা হাত নিয়ে এসেছে। কনুই থেকে কাটা। রক্ত যেন না ঝরতে পারে সেজন্য প্রসেস করা। তারমানে বৈধভাবে কাটা। রিসেপশনের সুন্দরী তাকে দাড়াতে বলে রিসিভার তুলে ভেতরে কাউকে কিছু জানিয়ে একটা ভিজিটরস কার্ড ধরিয়ে দিল।
বললো, যান ভেতরে যান!
ভদ্রলোক কাটা হাত নিয়ে ডোরলকে ডিজিটাল কার্ড পাঞ্চ করতে দরজাটা স্যাত করে খুলে গেল। ভেতরে ঢুকতে একজন এসেম্বলার তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেল প্রোডাকশন কস্ট ডিভিশনে।
যে ডেস্কে নিয়ে গেল সেখানের ভদ্রলোক একটা কাটা কান খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছিল। ভদ্রলোককে দেখে নিজের কান চুলকাতে চুলকাতে বললো, কখন কাটা?
এই তো! আধঘন্টা হবে! বলে লোকটা চেয়ারে ধপাস করে বসে পড়লো। কাটা হাতের নখগুলো শক্ত হয়ে আছে।
একটা নখের উপরে চাপ দিয়ে সাদা একটা প্রলেপ দেখার চেষ্টা করলেন।
সেন্টারের কস্ট ডিভিশনের লোকটা তার হাতের কাটা কানটা রেখে আগন্তুকের দিকে পূর্ণ মনযোগ দিলেন। কাটা হাতটা নারীর বুঝতে তার সময় লাগে না। খানিকটা নেলপালিশ উদ্ধার করা যায় ভাল করে দেখলে।
কি করবেন?
আমার হাতে এটা এসেম্বেল করতে চাই।
কতক্ষণ সময় লাগবে?
অর্গান ডিভিশনের রশিদ আছে?
হু! এই বলে একটা রিসিপ্ট বের করে দেয়। সেখানে সুরভী শিকদার লেখা আছে বিক্রেতার নাম হিসাবে। দাম ৩০ হাজার টাকা।
লোকটা একটু মুচকি হেসে বললো, ঘটনা কি ভাই? এই হাতে কি আছে?
সুরভীর কাটা হাত নিয়ে বসে থাকা ভদ্রলোকের মেজাজ একটু গরম হয়ে ওঠে। বলে, আপনার এত কি জানার দরকার? কত লাগবে আর কতক্ষণে পারবেন সেটা হিসাব করুন!
এক্সিকিউটিভ ফুস করে একটু দমে যায়।
কাটা হাতটা নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে। তারপর একটা স্ক্যানিং মেশিনের উপরে রেখে কম্পিউটারে তথ্য চালান করে ভেইনের সংখ্যা। স্ক্রিনে ভেসে ওঠে ১৮,৫২৬। প্রতিটা ভেইনের জন্য দশটাকা লাগে। ভারী মুখে বলে এক লাখ পচাশি হাজার! কি নাম আপনার?
জারিবুল তৈয়ব।
দেড় লাখে পারবেন?
নাহ!
ঠিক আছে কাজ শুরু করেন।
সেন্টারের এক্সিকিউটিভ মনে মনে বেটাকে পাগল ঠাউরেছে বুঝতে পারে তৈয়ব। এখন সবাই চেঞ্জ করছে নাক, আর উনি কিনা নিয়ে এসেছেন হাত! ফ্যাশন বলতে একটা কথা আছে। তাছাড়া পুরো দেহ অদল বদলও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যেমন তার বন্ধু পুরো মাথাই বদল করেছে স্ত্রীর সাথে।
সে এখন নারীর দেহ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তৈয়ব কারণ জিজ্ঞেস করায় বলেছিল, বিশ্বাস নাই, ওর দেহ আমি পাহারা দিয়ে রাখছি!
তৈয়বকে এক্সিকিউটিভ অন্য একটা রুমে নিয়ে গেল। সেখানে অনেক মানুষ অপেক্ষায়। কারো হাত নেই, কারো পা নেই। সুন্দর প্রত্যঙ্গের মালিকেরা উচ্চদামে তাদের দেহ বিক্রি করছে।
এখন শুধু মাথা থাকলেই হয়। মোটা টাকা বাগিয়ে একটা কুৎসিত দেহ নিয়ে ঘুরে বেড়াতে তাদের আপত্তি নেই।
তৈয়বের হাতের কেন সখ হলো তাও আবার নারী হাতের সেটা নিয়ে কৌতুহল বেড়ে গেল এসেম্বলারদের মধ্যেও।
ভেইন কানেক্টর হিসাবে যে মেয়েটি আছে তার আবার শরীরটা একজন অল্পবয়স্ক বালকের। সে কতক্ষণ হাতটা নেড়ে চেড়ে বললো, এই হাতে মনে হয় যাদু আছে!
প্রধান সংযোগকারী হাতটিকে একটা রি-এনার্জিং প্লান্টে ঢুকিয়ে তৈয়বের দুই হাতের মাপঝোপ নিয়ে একটা কাটিং মেশিন ফিট করলো কনুইয়ে।
ভেইন কানেক্টর মুখ টিপে হাসছে। তৈয়বের দিকে তাকিয়ে বললো, সাধু সাধু! আপনার এই শখ হলো কেন?
তৈয়বের আবারো মেজাজ খিচরে গেলো। বললো, যে কাজের জন্য বলা হয়েছে তাই করুন!
মেয়েটা একটু থতমত খেয়ে গেল। খ্যাচ করে তৈয়বের ডান হাত আলাদা হয়ে গেল কনুই থেকে। ঘন্টাখানেকের মধ্যে সুরভির হাত লেগে গেল তৈয়বের হাতে।
পেমেন্ট করে তৈয়ব ডানহাতটা রমনীর বানিয়ে রাস্তায় নামলো। একবারও তার কর্তিত হাতের কথা জানতে চাইলো না। সেন্টারের লোকজন বিক্রি করবে কিনা জানতে চাইলে তাদেরকে ফ্রি দিয়ে দিল।
তৈয়বের মুখের কোনে এক চিলতে রোদ্দুরের মত হাসি খেলে গেল। হিউম্যান এসেম্বলার সেন্টারের লোকজন জানে না সুরভীর হাত সে নিজেই কেটে নিয়ে এসেছে।
রিসিপ তো এমন কতই বানানো যায়!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।