আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প‌্যারিস ভ্রমন-৩ (আইফেল টাওয়ার)

তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে জীবনের নিয়মে।

প্রথম যখন প‌্যারিস বেড়াতে আসি তখন বেশ ভালোই ঠান্ডা। এমনিতেই গ্রুপের কারোরই এতো হাঠার অভ্যেস নেই তার উপর ঠান্ডা। স্নো পড়তেছিলো সাথে ঠান্ডা বাতাস। ঠান্ডার এই দিকটি বেশ ভয়াবহ কষ্ট দেয়ে।

ঠান্ডা বাতাস সাথে বৃষ্টি। ওদের বাস/মেট্রোর টিকেটের ব্যাপার বুঝতে পারিনি। জার্মানির মতো এতো সহজ উপায়ে টিকেট করার ব্যাপার ছিলো না। টিকেট পাঞ্চ করলে গেইট খুলবে(ইংল্যান্ডের মতো)। জার্মানিতে পুরো উল্টো।

তুমি টিকেট ছাড়াও ট্রেনে উঠতে পারো। দামি ট্রেন হলে ট্রেনের ভেতরেই টিটি টিকেট চেক করতে আসলে টিকেট কাটতে পারবে। বাস, ট্রাম, আন্ডারগ্রাউন্ডে টিকেট না কেটে উঠলে ৪০ ইউরো জরিমানা। টিটি সাধারনত সিভিল ড্রেসে উঠে বসে থাকে। যেকোন সময় চেক করতে পারে।

কখনো পুরো একমাস টিকেট চেকারের দেখা মিলে না। কখনো প্রতিটি ট্রেনেই পাওয়া যায়। টিকেটের দাম জার্মানির তুলনায় অনেক বেশি। সুতরাং হন্টনই ভরসা ছিলো। আইফেল টাওয়ারের মাথা দেখেই হাটা দিয়েছিলাম।

ভাবলাম ঐতো দেখা যায় আইফেল টাওয়ার। কিন্তু হাঠতে গিয়ে সবারই অবস্হা খারাপ। এক সিনিয়র ভাই পায়ের ব্যাথায় পেছন থেকেই চলে গেলেন। শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যার সময় টাওয়ারে গিয়েছিলাম। প্রায় ৩/৪ কি.মি হাঠতে হয়েছিলো।

টাওয়ারের উপর উঠতে আরো ৪৫ মিনিট। তবে উপরে উঠে সব কষ্ট ভুলে গিয়েছিলাম। রাতের প‌্যারিস যে এতো সুন্দর ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। ছবি তুলেও কাউকে বুঝানো যাবে না। শুধু অনুভবের ব্যাপার।

ঐসময়ের মুহুর্তগুলোকে ছবিতে বন্দি করা সম্ভব না। আমিও সেই চেষ্টা করিনি। অনেকক্ষন চুপচাপ দাড়িয়ে থেকেছিলাম। রাতের প‌্যারিস যে এতো সুন্দর সেটা দোস্তকে বলিনি। বল্লে হয়ত পাগলটা রাতে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করবে।

ইচ্ছে করেই চেপে গেলাম। স্টেশনে যার অপেক্ষার কথা ছিলো দেখলাম উনি জায়গামতোই দাড়িয়ে আছেন। যদিও কিছু ব্যাকাপ ছিলো। তবে যাদের বলার কথা ছিলো ওদের কথা শুনে বন্ধু নাকচ করে দিলো। টাঙ্গাইলের কিছু স্হানীয় মাস্তান শ্রেনীর লোকজন রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে ওখানে আছে।

অবশ্য শেষ ভরসা ছিলো টেক্সি। যদিও খরচের পরিমান বেশি হতো। তবে খরচের জন্য কখনোই আমাদের বেড়ানো বাধাগ্রস্হ হয়নি। দেশে থাকতে এক ঘন্টার নোটিশে ৪/৫জন বন্ধু এক সপ্তাহের জন্য কক্সবাজার। টাকা নেই তো কি হয়েছে।

যার আছে সে দিবে। পরবর্তিতে পরিশোদ করে দিলেই হলো। যদিও ১০ বছর আগে বেড়াতে যাওয়ার টাকা এখনো বাকি পড়ে আছে( ভেনিশিং পেইড )। নেমেই সিগারেট টানার জন্য জায়গা খুজতে লাগলাম। আবহাওয়া যদিও বেশ ঠান্ডা তবে রোদ ছিলো।

ইউরোপের আবহাওয়ার গতি প্রকৃতি কিছু জানা আছে। ভাবলাম আজকের দিনটি হয়ত ভালো হবে। কফি সপে গিয়ে তিনজন কফি খেয়ে প্রথমেই আইফেল টাওয়ারের দিকে যাত্রা। আমাদের সম্মানিত গাইডের প‌্যারিস মোটামুটি নখদর্পনে। আমার ইচ্ছে ছিলো আমরা পুরো দিনের জন্য গ্রুপ টিকেট করে ফেলবো।

সস্তা হবে আর বারবার টিকেট কাটার ঝামেলা থেকে মুক্ত। গাইড জানালেন গ্রুপ টিকেটের দাম বেশি হবে। তর্কে গেলাম না। যদিও জার্মানিতে গ্রুপ টিকেট বেশ সস্তা। গ্রুপে ৫জন যাওয়া যায়।

১০ মিনিটের মধ্যে টাওয়ারের মাথা দেখতে পেলাম। দোস্ত খুব এক্সসাইটেট। ক্যামেরার শার্টারে টিপাটিপি চলতে লাগলো। গাছের ফাক ফোকর দিয়ে যেখানেই আইফেলের সাক্ষাত পাওয়া যায় সেখানেই ক্যামেরার টিপাটিপি। টাওয়ারের নীচে বেশ ছিমছাম পরিবেশ।

ট্যুরিষ্ট মোটামুটি কম। এখন অবশ্য সিজনও না। তারপরও উপরে উঠার জন্য অনেক লম্বা লাইন। নীচে কিছুক্ষন ফটো সেশন শেষ করে লাইনে খাড়ালাম। ২/৩টা ঢিলেঢালা সিকিউরিটি চেকিং শেষ করে লিফটে।

টাওয়ারের নীচে ফুটপাতে স্যুভিনির বিক্রি করা লোকদের পুলিশি দৌড়ানি দেখে বেশ খারাপ লাগলো। যদিও দেখে মনে হলো বেশির ভাগ লোকই আফ্রিকান। তারপরও যে কিছু বাঙালী ভাই আছেন সেটা আমি নিশ্চিত। দুই ভাগে টাওয়ারের মাথায় উঠতে হয়। যারা একদম উপরে উঠতে ইচ্ছুক না ওরা মধ্যভাগে নেমে যাবে।

ওখান থেকে অন্য লিফট দিয়ে একদম উপরে। প্রচুর জার্মান ট্যুরিষ্ট দেখলাম। মনে হয় যাতায়াত সহজ তাই যে কেউ অল্প সময়ে যেতে আসতে পারে। উপরে উঠে আবারো ফটোসেশন। তবে আগের মতো এতো এক্সসাইটেট লাগেনি।

উপরে তো দেখার কিছু নেই। শুধু ফ্রান্সে শহরটাকে বিভিন্ন এঙ্গেলে দেখা যায়। বিভিন্ন দেশের পতাকার সাথে বাংলাদেশের পতাকাও দেখলাম। আইফেল কাকা, কাকী, উনার দোস্ত উপরে বসে আছেন। সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।

বাইরের কিছু ছবি তুললাম। (সুন্দর সুন্দর ছবি দেখে কিন্তু ফ্রান্সে অবৈধ উপায়ে আসার চেষ্টা করবেন না প্লিজ। পরবর্তিতে কিছু বাঙালী ভাইয়ের কষ্টের জীবন যাপনের কথা বর্ননায় থাকবে। ছবিতে সবকিছুই দেখতেই সুন্দর। কিন্তু বাস্তবতা বড়ই কঠিন।

ছবির মানুষের সাথে ভ্রমনের সামান্যই সম্পর্ক। অনেকগুলো ছবি আপলোড করলাম)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।