আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২৯শে এপ্রিল ১৯৯১



২৯শে এপ্রিল ১৯৯১, তারিখটা কি আপনাদের মনে আছে? বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া প্রলয়ংকরী একটা রাত। যা সরাসরি দেখার সৌভাগ্য বা দূর্ভাগ্য যাই বলুন আমার হয়েছে। ঐ সময়ে আমরা কক্সবাজার এ থাকি বাবার কর্মক্ষেত্রর সৌভাগ্যে। সপ্তাহটা আর অন্যান্য সপ্তাহ গুলির মতোই স্বাভাবিক ভাগে চলছিল, ২৬ কি ২৭ তারিখ থেকে আকাশ মেঘলা হয়ে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হতে থাকে, আর আবহাওয়াটা একটু অন্য রকম হয়ে যায় (কিছুটা দম বন্ধ অবস্থা হলে যেমন হয়)। ২৯ তারিখ, বিকেলে আমি ঘরের কিছু কাজের জন্য বাজারে যাই এবং তারাতারি ফেরৎ চলে আসি, সম্ভাব্য বেশী বৃষ্টির হাত থেকে বাচার জন্য।

রাত ৮টার দিকে বিটিভির খবরে শুনি ৭ নং সিগন্যাল চলছে, যা পরবর্তীতে স্লাইকোন এর রুপ ধারন করে মাঝরাতে কক্সবাজার উপকুলের দিকে এগিয়ে আসছে। যার বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় প্রায় ২১০ কি.মি.। এরই মধ্যে আমরা বাতাসের তীব্রতা টের পাচ্ছি তখন বাজে মাত্র রাত ৮.১৫মি., ৮.২০মি. এর দিকে ইলেক্ট্রিসিটি চলে যায়। বাবা যেহেতু উচ্চ পদস্ত সরকারী কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ডাক পড়ল ঘূর্ণিঝড় কন্ট্রোল রুমে। বাবা চলে গেলেন তার ডিউটিতে আর বাসায় রইলাম আমরা চার ভাইবোন ও মা।

যত রাত হচ্ছে ততই ঝড়ের গতি বাড়ছে। আমরা সরকারী কলোনীর একটি তিনতলা বিল্ডিং এর তিনতলায় থাকতাম। প্রায় রাত ১১টার দিকে বাতাসের গতি এত বেড়ে যায় যে বিল্ডিং এর সিড়ি কোঠায় থাকা টিনের চাল গুলো সবকয়টা একে একে উড়ে যায়। যদি ভুমিকম্প হয় তাহলে বিল্ডিং থেকে নেমে যাওয়ার জন্য আমরা সহ বিল্ডিং এর অন্যান্য বাসিন্দার প্রস্তুত হয়ে আছি। এরই মধ্যে চলছে ঘরের পানি মোছার কাজ, বাতাসের তোরে ভেন্টিলেটর দিয়ে ঘরের ভেতর পানি ঢুকছে।

ভোর ৩টার দিকে কাজিনের রেখে যাওয়া রেডিওটা চালু করলাম আর তখনই শুনলাম বিশেষ খবরে ৮ নং মহাবিপদ সংকেত চলছে, আর বিস্তারিত শুনার আগেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। ভোর ৪.৩০ মিনিট এর দিকে বাতাসের তীব্রতা কমে এসে পরিস্থিতি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে আসে এবং আমরা ঘুমাতে যায়। পরদিন সকালে যখন ঘুম থেকে উঠে বাইরের দিকে তাকালাম তখন দেখলাম স্বচ্ছ নীল আকাশে সাদা তুলার মতো মেঘ আর দারুন বাতাস। এ দেখে বুঝার কোন উপায় নাই যে, গত রাতে এই শহরের উপর দিয়ে কি তান্ডব বয়ে গেছে। নাস্তা খেয়ে আমি আর আমার এক বন্ধু দুইজন দুইটা সাইকেল নিয়ে শহরের অবস্থা দেখতে বের হলাম।

প্রথমেই গেলাম এয়ারপোর্ট সেখানে গিয়ে দেখি রানওয়েতে প্রায় ৬ ইঞ্চি বালুর স্তর পরে আছে। এরপর একে একে বিভিন্ন যায়গা ঘুরে সী বিচ এলাকায় গেলাম, ঐ খানে যেতে গিয়েই প্রথম ধাক্কা খেলাম। হোটেল শৈবাল, মোটেল প্রবাল, উপল এর সীমানা প্রাচীর বলে কিছুই সব ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশে আছে এবং বিচের রাস্তা কিছুতা অংশ এমনভাবে উল্টে আছে যেন মনে হচ্ছে কেউ কেটে রাস্তা উল্টিয়ে রেখেছে আর সাগর তো উত্তাল। পরবর্তী অংশ আগামী পর্বে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.