রাসুল (সাঃ) একদিন ফজর নামাজ আদায় করার পর সাহাবীদেরকে বললেন সবাই নিজ নিজ নামাজের স্থানে বসে থাক। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: তোমরা কি জান আমি কেন তোমাদেরকে এখানে একত্র করেছি? তোমাদেরকে কোন কিছুর প্রতি উৎসাহ কিংবা কোন কিছু থেকে ভীতিপ্রদর্শনের জন্য একত্রিত করিনি। বরং, আমি তোমাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় জানানোর জন্য একত্রিত করেছি। আর তাহল-তামীম দারী ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং তার বিগত একটি সামুদ্রিক সফরের ঘটনা বর্ণনা করেছে, যা আমার পূর্বেকার ঘটনার সত্যতা প্রমাণ করেছে। সে অন্যদের সাথে একটা সামুদ্রিক সফরে ছিল।
সেখানে সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গ তাদেরকে নিয়ে খেলা করেছে। একমাস পর তারা একটা দ্বীপের কাছে এসে একটি জন্তুর দেখা পেল। তাকে জিজ্ঞাসা করল: কে তুই? সে বলল: আমি পাহারাদার। সামনে ওই ঘরটার দিকে যান। সেখানে একজন লোক আছেন।
তিনি আপনাদের কাছ থেকে কিছু তথ্য নেয়ার জন্য খুবই আগ্রহী। আমরা মনে করলাম হয়ত সে কোন শয়তান হবে। আমরা সেখানে গিয়ে বিশালদেহী একজন মানুষকে দেখলাম। এ রকম মানুষ কখনো আমরা দেখিনি। তার হাতগুলো ঘাড়ের সাথে বাঁধা।
সে তাদেরকে বায়সান খেজুর বাগান, জুগার কুপ ও উম্মী নবী (মুহাম্মদ সা.) সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করল। তারপর, সে নিজের পরিচয় দিল। বলল: আমি দাজ্জাল। অচিরেই আমাকে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। আমি সারা দুনিয়ায় ঘুরে বেড়াব মক্কা ও তাইবা ব্যতিত।
রাসুল (সাঃ) বললেন: শুনে রাখ! এটাই (মদীনা) তাইবা। এখানে সে প্রবেশ করতে পারবে না। (মুসলিম, আবু দাউদ)
মহা-দুর্ভিক্ষের কালে দাজ্জাল খাদ্যদ্রব্য নিয়ে এসে বলবে, “আমি হচ্ছি সমগ্র জগতের পালনকর্তা। হে লোকসকল! তোমরা আমার প্রতি ঈমান আন! আমি তোমাদের খাদ্য দেব, পানীয় দেব, সম্পদ দেব, যা চাও- সব দেব”। নবী করীম সা. বলেছেন- “স্মরণ রেখো! দাজ্জাল কিন্তু একচোখে কানা হবে।
আর তোমাদের প্রকৃত পালনকর্তা কানা নন!!” (বুখারী)এক কথায় দাজ্জাল খাট, বিশাল দেহ, বিশাল মাথা, উভয় চোখে ত্রুটিযুক্ত, ডান চোখটি ভাসমান আঙ্গুর সদৃশ (কানা), বাম চোখে চামড়া, ঘন কুকড়ো ও অগোছালো চুল, সাদা চামড়ার দেহ, দুই নলার মধ্যবর্তী স্থানে যথেষ্ট ফাক এবং দুই চোখের মাঝে ك ف ر (কাফের) লেখা বিশিষ্ট হবে। দাজ্জাল পৃথিবীতে কয়দিন অবস্থান করবে? প্রশ্নের উত্তরে নবী করীম সা. বলেছেন- চল্লিশদিন। প্রথম দিন এক বৎসর, দ্বিতীয় দিন এক মাস, তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের ন্যায় হবে।
নবী করীম সা. বলেন- “প্রাচ্যের দিক থেকে দাজ্জাল মদীনায় আগ্রাসণের উদ্দেশ্যে আগমন করবে। উহুর পর্বতের পেছনে অবতরণ করা মাত্রই ফেরেশতারা তার চেহারাকে শামের দিকে ঘুরিয়ে দেবেন।
সেখানেই তার বিনাশ ঘটবে। -” (মুসলিম)“ঈসা বিন মারিয়াম দাজ্জালকে লুদ শহরের প্রধান ফটকের কাছে হত্যা করবেন। -” (তিরমিযী)হাদিসের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, শেষ জমানার সকল যুদ্ধ-ই তীর তলোয়ার এবং অশ্বের মাধ্যমে সংঘটিত হবে। দাজ্জাল আসার আগে পৃথিবীতে ইহুদী এবং খ্রিষ্টান যুদ্ধ হবে। যুদ্ধে ইহুদীরা অনেক খ্রিষ্টান মেরে ফেলবে।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইহুদীদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের সাপোর্ট দিবে খ্রিষ্টানরা। দাজ্জাল যখন বের হবে তখন হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম যমীনে তাশরীফ আনবেন। যখন ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম নামাযে দাড়াবেন, ইকামত চলতে থাকবে এমন সময় উনি ছাদে নামবেন। পরে সিড়ি দিয়ে উনাকে নিচে নামানো হবে এবং ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনাকে বলবেন প্রথম ওয়াক্ত আমি আপনার পেছনে নামায আদায় করব এরপর থেকে আমি নামায পড়াব।
আল্লাহর রসুল বলেছেন- আদমের সৃষ্টি থেকে কেয়ামত পর্যন্ত এমন কোন বিষয় বা ঘটনা হবে না, যা দাজ্জালের চেয়ে গুরুতর ও সংকটজনক (হাদীস- এমরান বিন হোসায়েন (রাঃ) থেকে মোসলেম)।
তিনি এ কথাও বলেছেন যে- নুহ (আঃ) থেকে নিয়ে কোন নবীই বাদ যান নি যিনি তাঁর উম্মাহকে দাজ্জাল (Dajjal) সম্বন্ধে সতর্ক করেন নি (হাদীস- আবু ওবায়দা বিন যার্রাহ (রাঃ) ও আব্দুলাহ বিন ওমর (রাঃ) থেকে আবু দাউদ, বোখারী, মোসলেম ও তিরমিযি)। শুধু তাই নয়, আল্লাহর নবী নিজে দাজ্জালের সংকট (ফেত্না) থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন (হাদীস- আয়শা (রাঃ) থেকে বোখারী)। দাজ্জাল (Dajjal) শব্দের অর্থ চাকচিক্যময় প্রতারক, যেটা বাইরে থেকে দেখতে খুব সুন্দর কিন্তু ভেতরে কুৎসিত। যেমন মাকাল ফল, দেখতে অতি সুন্দর, মনে হবে খেতেও অতি সুস্বাদু, কিন্তু আসলে খেতে বিস্বাদ, তিক্ত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।