মুতাসিমের ফালতু ব্লগে আপনাকে স্বাগতম! দুনিয়ার সব ফালতু ফালতু লেখা গুলা পাবেন এখানে।
এটা হচ্ছে সায়ানের একটা গান। আমার কাছে মারাত্বক লাগসে পুরা এলবামটা। আপনাদের যাদের স্বাধ্য আছে তারা কিনে গান গুলো শুনোন। বাংলাদেশে এই রকম গান গুলা আরো আগে হওয়া দরকার ছিলো।
আমি এখানে জনতার বেয়াদবী গানটার লিরিক্স এবং জন্ম কথা পোস্ট করলাম।
জনতার এ বড্ড বাড়াবাড়ি
আমাদের দুই নেত্রীর নামে করে মারামারি
আমি জানি, আমি জানি, আমার দু'চোখের মণি
কোনদিন করেনি তো ঝগড়াঝাঁটি কাট্টি-আড়ি
জনতা তোমায় তুমি প্রশ্ন করো
কি পাবার জন্যে তুমি কার ইশারায় মরতে পারো
শোনো বলি তোমায় যারা ভাগ করেছে দলে দলে
বোঝোনি তারা সবাই হাত মেলানো তলে তলে
ভালো করে খেয়াল করো আমাদের দু' মহারাণী
তাহাদের জন্মদিনে পাঠাচ্ছে শুভেচ্ছা বাণী
এখানে সেখানে কোন অনুষ্ঠানে দেখা হলে
দু'জনেই আগ বাড়িয়ে হাসিমুখে কথা বলে
দু'জনার জন্যে জানি দু'জনারই পরান কাঁদে
জনতা বোকার মতন পা দিয়েছো কাহার ফাঁদে
দু'জনার একজনও তো চায় না কারোর একটু ক্ষতি
জনতা তোমার কেন ঝগড়াঝাঁটির এ দুর্মতি
ওরা তো পরস্পর-কে বন্ধু ডাকে
তোমাদের মধ্যে কেন সকাল বিকেল ঝগড়া লাগে
শোনো বলি ওরা দুজন মিলে মিশে ভালোই আছে
পুলিশের তাড়া খেয়ে তুমিই শুধু উঠলে গাছে
ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলেই তর্কাতর্কি মাঝে মাঝে
সোহাগ আছে দুই সখীতে, মান অভিমান তাইতো সাজে
তাই বলে শত্রু তারা, এমন কথা কে বলেছে?
বাজি ধরে বলতে পারি, ভুল বুঝেছে, ভুল বকেছে
জনতা তোমার মাথায় শুধুই বুঝি গোবর পোরা
নিজেকে প্রশ্ন করো কার জন্যে খাটছো ভাড়া
মিছে মিছে বোকার মতন নিজের পায়ে কুড়োল মেরে
নিজেদের মধ্যে কোনও লাভ হবে না লড়াই করে
জনতা এখন থেকে ওসব ছাড়ো
আমাদের উদারপন্থী নেত্রীদ্বেয়র দু'হাত ধরো
শোনো বলি এখন থেকে আর কোরো না চুলোচুলি
রাণীরা কষ্ট পাবেন তোমার হাতে দেখলে গুলি
এই গানটির নিশানা সাধারণ মানুষের দিকে। যতটা না দুটো দলের অসংলগ্ন রাজনীতির ওপর বিরক্তি, তার চেয়ে অনেক বেশী বিরক্তি সাধারণ মানুষের নির্বুদ্ধিতার ওপর। সেই বিরক্তির যাচ্ছেতাই প্রকাশ নিয়েই এই গান। রাজনৈতিক-ভাবে অসচেতন বা উদাসীন থাকলে একটি মানুষ কখনই তার নাগরিক দায়িত্বের পুরোটা পালন করতে পারেনা।
রাজনৈতিক সচেতনতা থেকে বিচ্ছিন্নতা কখনই সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু সমপৃক্ত হতে যদি বা চাই, ঠিক কোথায় আর কতোটা? বাংলাদেশের রাজনীতির(?) দুটি দশক দেখবার দুর্ভাগ্য হয়েছে। সেখানে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত মানুষদের কতজনকেই'বা আমরা মরতে দেখেছি? অন্যদিকে, সাধারণ মানুষের প্রাণহানির ঘটনা কত সংখ্যক? পরিসংখ্যান নিয়ে বসলে যেই সংখ্যা-গুলো পাবো, তাতে সাধারণ মানুষের মৃত্যুর প্রতি আগ্রহ দেখে অবাক হতেই হয় !
এরকম রাজনীতি আমাকে আকৃষ্ট করে না - যেখানে রোজকার মৃত্যু অবধারিত এবং যেখানে সাধারণ মানুষের মৃত্যুর হার নেতাদের মৃত্যুর তুলনায় অনেক বেশী! আক্রোশটা সাধারণ মানুষের ওপরই অনেক বেশী হয় তখন। রাজারা রাজনীতি করবেন সেটাই স্বাভাবিক। এই দেশের রাজনীতিতে যে সমস্ত আচার-ব্যবহার দেখা গেছে সেগুলো রাজনীতির সংজ্ঞাটিকেই লজ্জিত করেছে বারেবারে।
রাজনীতিবিদ না বলে বলা ভালো ক্ষমতাগ্রহী কিছু মানুষ, যা যা করা দরকার, তাই তাই করবেন, আজকে যাকে বকবেন, কালকে তার গলায় মালা দেবেন - এমন তো আমরা বহুবার দেখেছি! আজকে যাদের দা-কুমড়ো চলছে, কালকে তারা রাম-লক্ষণ হয়ে গেলো, এমনও তো দেখলাম! কিন্তু আজকে যে এই প্রক্রিয়াতে অংশ নিতে গিয়ে মরে গেলো, আগামীকাল কি সে বেঁচে ফিরবে? মানুষ কি তার নিজের ভালোটা বুঝবেনা? এহেন নির্বুদ্ধিতার দৃশ্য দেখতে দেখতে বিরক্ত ও ক্লান্ত। যেই মিছিলে তোমার জীবনের নিরাপত্তা নেই, সেই মিছিলে তুমি গেলে কেন? আমি হলে যেতাম না !
দেশ আমার প্রিয়। প্রিয় নেতারাও আরো প্রিয়। কিন্তু জীবনের অধিক প্রিয় কিছুই নয়। দেশের জন্যে মরতে পারলে মন্দ না, কিন্তু আরো বড় কোন কারণ দরকার।
প্রিয় নেতাদেরকে সিংহাসনে বসাবার চেয়েও বড় কোনো কারণ। কিংবা অপ্রিয় প্রতিদ্বন্দ্বীদেরকে সিংহাসন থেকে নামানোর চেয়েও বড় কোনো কারণ।
নেতারা যা বলেন, যা করেন, সবই ঠিক! তারা কখনও ভুল বলেন না! রাজনীতি করতে গিয়ে তারা যদি মৃত্যুকে রাজনীতির অবধারিত, অপরিহার্য আর মহিমান্বিত অংশ হিসাবে দেখতে চান, সেটা তাদের পক্ষে অন্যায় আমি তা বলছি না। তারা দাওয়াত দেবেন এটা তাদের পক্ষে স্বাভাবিক, আর আমি বর্জন করছি এটা আমার যৌক্তিক প্রতিক্রিয়া। আমার এই জীবনটি আমাকে তো কোনো নেতা দেননি।
এই অমূল্য জীবনটিকে তুচ্ছ কারণে বিপদগ্রস্ত, ঝুঁকিগ্রস্ত করতে আমি তাই পারছিনা। দুর্ঘটনার মৃত্যু "দুর্ভাগ্য", কিন্তু এহেন মৃত্যু আমার কাছে "নির্বুদ্ধিতা"। তাই আমার এই "ওয়াক আউট"!
সময়ের সাথে সাথে আধিপত্য স্থাপনকারী দলের নাম পাল্টাবে, নেতাদের নাম পাল্টাবে, কিন্তু মানুষের জায়গাটিতে মানুষই থাকবে। জনতার জায়গাটিতে জনতাই থাকবে। ক্ষমতাগ্রহী মানুষ মানুষকে ব্যবহার করেই নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে চাইবেন চিরকাল।
জনতাকেই বুঝতে হবে তার শক্তি, তার লাভ, তার ক্ষতি। অকারণ প্রাণদানের মধ্যে যেই বোকামি বা বেয়াকুবি আছে সেটি'কে "বেয়াদবি"তে নামান্তর করা, আমার অসহায় অভিমানের ক্রুদ্ধ বহিঃপ্রকাশ মাত্র! অভিমান আসলে তাদের সঙ্গেই বেশী, যারা শুধু শুধু হারিয়ে গেছে এই অসুস্থ প্রক্রিয়াতে বোকার মতন অংশ নিতে গিয়ে। তাদের মৃত্যুর দায়িত্ব কেউ স্বীকার করেনি। সকল দলের রাজনীতির "ধরন" গণতন্ত্রের যাদুকাঠির স্পর্শে ন্যায্য বলে ঘোষিত। জনতার সেই সকল অ-নিরাপদ রাজনীতিতে নির্বোধ অংশগ্রহণ অসচেতনতারই দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
নাগরিক হিসেবে এইরূপ অসচেতনতা, যার পরিণাম অকাল-মৃত্যু , কিংবা অযাচিত ক্ষতি, আমার চোখে তা কোনো দেশপ্রেমিকের আত্মত্যাগ নয়, কোনো আন্দোলনের পূর্বশর্তও নয়, বরং এক ধরনের "আদব-হীনতার"ই শামিল। তার প্রতি নিন্দা জানিয়েই এই গান।
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে - আমাদের নেত্রীরা অতটা বন্ধুসুলভ কবে ছিলেন, যতটা এই গানটিতে দেখা যাচ্ছে? সাধারণতঃ স্বাভাবিক অবস্থায় তাদের তো মুখ দেখাদেখি বন্ধ থাকে! কি লজ্জার কথা!! কি লজ্জার প্রশ্ন!!!
যে কোনো সভ্য দেশে, সরকারি এবং বিরোধী দলের মধ্যে ক্ষমতায় টিকে থাকবার এবং ক্ষমতায় উত্তরণের একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকলেও সাধারণতঃ তাদের আচার ব্যবহারে একটা স্বাভাবিক যোগাযোগ রক্ষার শিষ্টাচার লক্ষ্য করা যায়। বলা'ই বাহুল্য আমাদের দেশটা অশিক্ষায় আক্রান্ত। এদেশের রাজনীতির অঙ্গন সেই অশিক্ষার সবচেয়ে বড় প্রমাণ; হয়তো বা উৎস'ও! আমাদের রাজনীতির সংস্কৃতিতে এই 'অনুষ্ঠানে দেখা হবার' বা 'হাসিমুখে কথা বলবার' রেওয়াজটা খুব একটা আমরা দেখতে পাইনি এখনো।
কিন্তু কোনো সুদূর ভবিষ্যতে যদি ঠিক যেমনটা হবার কথা তেমনই ঘটে, যখন রাজনীতির মাঠে খেলোয়াড়দের মধ্যে একটা স্বাভাবিক যোগাযোগ থাকবে; যে যার নিয়ম 'তৈরি করে' নিজের মতন খেলবে না, চলবে না; প্রতিষ্ঠিত নিয়মগুলোর প্রতি সকলের শ্রদ্ধা থাকবে - অর্থাৎ আমরা সার্বিক অর্থে 'শিক্ষিত' ও 'সভ্য' হয়ে উঠবো - তেমন একটা আদর্শ সুখচ্ছবি যদি বাস্তবে আমরা কোনদিন পেয়েও যাই, সেদিনও কি 'মানুষ' হিসেবে আমরা নিরাপদ হবো? সেদিনও কি আমরা ব্যবহৃত হবো না? সেদিনও কি তাদের আমাদেরকে প্রয়োজন পড়বে না যাবতীয় ঝুঁকিপূর্ণ মিছিলে, সামনের সারিতে তাদের হয়ে দাঁড়াবার জন্যে? তখনও কি আমরা নিজেদের নির্বুদ্ধিতায় প্রতারিত হয়ে তাদের ঝুঁকিপূর্ণ রাজনীতিতে অংশ নিয়ে মৃত্যুর শিকার হবার বিপদ থেকে মুক্ত হবো? সেটাও কি তাদের দোষ?
আমি বলি, আজও তা আমাদের দোষ। সেদিনও তা আমাদের দোষ হবে। এই গান মানুষের নির্বুদ্ধিতার প্রতি অভিমানের গান। বুদ্ধির কাছে শেখার এবং বাঁচতে চাওয়ার অনুরোধের গান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।