বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
উৎসর্গ: প্রিয়কবি ফারিহান মাহমুদ।
অভ্যন্তরীণ পর্যটন তত্তের উদ্ভাবক জুবায়ের রহমান গত পৌষে হোসেনপুর গ্রাম বেড়িয়ে গেলেন। যে-কটা দিন জুবায়ের রহমান হোসেনপুর গ্রামে ছিলেন রহমান সাহেব উত্তেজিত হয়েই ছিলেন।
তার কারণ ছিল।
জুবায়ের রহমান অভ্যন্তরীণ পর্যটন সস্পর্কে আরও কটি নতুন কনসেপ্ট দিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
ক) সন্ধ্যার পর বাউল কনসার্ট।
খ) সপ্তাহব্যাপী পিঠা মেলা।
গ) পাল পাড়ায় একটি স্থায়ী প্রদর্শনী কেন্দ্র।
শীত সকালের মিঠে রোদে কাচারিবাড়ির টানাবারান্দায় বসে গুড়ের চা খেতে খেতে জুবায়ের রহমান বললেন, পাল পাড়ায় যারা মূর্তি তৈরি করে প্রথমেই তাদের প্রথম শ্রেণির শিল্পীর মর্যাদা দিতে হবে।
রহমান সাহেব মাথা নাড়লেন। পাল পাড়ার বিপিন রহমান সাহেব-এর ছোটবেলার বন্ধু। কত সুন্দর ছবি আঁকত বিপিন। ঘুড়ি তৈরি করত।
সেদিন বিকালে হোসেনপুরের হাটে বিপিনকে দেখলেন রহমান সাহেব। অনেক দিন পর। কেমন বুড়িয়ে গেছে বিপিন। অভাব।
জুবায়ের রহমান চা শেষ করে ততক্ষণে একটা সিগারেট ধরিয়েছেন।
একমুখ ধোঁওয়া ছেড়ে বললেন, পাল পাড়ায় একটি স্থায়ী প্রদর্শনী কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। শহর থেকে লোকে যেহেতু হোসেনপুরে আসতে শুরু করেছে, ক্রেতা তারাই।
আপনি ঠিকই বলছেন। রহমান সাহেব বললেন।
জুবায়ের রহমান বললেন, তাতে সম্প্রদায়টা বাঁচবে।
আগে মূর্তি গড়ার মাটি ফ্রি পেত ওরা। এখন কিনতে হয়।
হ। জানি। বিপিনের বহুৎ কষ্ট।
বিপিন কে? জুবায়ের রহমান কিঞ্চিত বিস্মিত।
রহমান সাহেব বললেন, আরে বিপিন। পালপাড়ায় বাড়ি। আমার ছুটবেলার দোস্ত।
ও।
তো ওদের বাজার তৈরি করতে হবে। পন্য উৎপাদনকারীদের জন্য বাজারই হচ্ছে আসল। জুবায়ের রহমান বললেন। শহরের পর্যটকরাই পাল পাড়ার মূর্তিগুলি কিনবে। দেখবেন তখন ওদের অবস্থাটা বদলে যাবে।
আর?
আর? রহমান সাহেব সামান্য ঝুঁকে পড়েন।
জুবায়ের রহমান বললেন, সন্ধ্যার পর বাউল গানের কনসার্টের আয়োজন করতে পারেন। সন্ধ্যার পর তো অতিথিরা ঘুরে বেড়ায় না। এই উঠানেই মঞ্চ করুন না কেন? গ্রামের বাউলদের সঙ্গে চুক্তি করুন। তা হলে ওদের হাতে কিছু পয়সা আসবে।
বাংলাদেশে বাউলদের দুঃখকষ্ট দেখে এত কষ্ট লাগে যে কি বলব? অথচ ওদের মতন শুদ্ধাত্মা আর কোথায় আছে?
কথাট রহমান সাহেব বুঝলেন না। বললেন, তয় গান কি ফ্রি হবে?
না, না ফ্রি হবে কেন? পৃথিবীতে কোন্ জিনিসটা ফ্রি বলুন। গান শোনার জন্য অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে। ১০ টাকা হলেও দিতে হবে। আসলে আমি চাইছি অভ্যন্তরীণ পর্যটনকে করের আওতায় আনতে।
আপনিও বছর শেষে আয়ব্যয়ের হিসাব করে কর দেবেন কিন্তু।
রহমান সাহেব বললেন,দিমুনা মানে। জীবনে হারাম খাইনি। এখন এই শেষ বেলায় আমার কী ভূতে ধরবে?
জুবায়ের রহমান বললেন, অভ্যন্তরীণ পর্যটন করের আওতায় এলে সরকার আরও রাজস্ব পাবে। তখন জনগনের আরও সেবা করতে পারবে।
আমি কেবল পদ্মা ব্রিজের কথা ভাবি না রহমান সাহেব। আমি লক্ষ্মীপুর-ভোলা ব্রিজ ... মানে মেঘনা ব্রিজ নির্মানেরও স্বপ্ন দেখি।
কথাটা রহমান সাহেব ঠিক বুঝলেন না। তিনি বললেন, আর পিঠা উৎসবের কথা তখন কি ...কথা শেষ হল না। রহমান সাহেবের মোবাইল বাজল।
পুরনো মডেলের একটা মোটোরোলা। নীল রঙের। হ্যালো। কে? ও আপনি। আরে চিনুম না মানে? আপনার মেয়ে কেমন আছে।
ভালো। যাক। আসলে আমি কই কি-শহরের মানুষের মনের দুঃখের নিদান পল্লীর কাদাপানিতে আছে। আল্লায় রাইখা দিসে। আর কে রাখব।
শোনেন আপনারে একটা কথা কই। ১০ বছর আগে আমার কি হইল জানেন। তখন খুলনায় ইউসুফ জুটমিলে চাকরি করি। খালি পানির পিপাসা। ঘন ঘন প্রশ্রাব।
বাসে উঠলে ঝামেলা। মেয়ে পড়ে ময়মনসিং মেডিকেলে। ডাক্তারে কইল ডায়াবেটিস। শুইনা এমন মন খারাপ হইল। তখন আমার এক কলিগে কইল হাঁটেন আর কালিজিরার তেল খান।
খাইলাম। ইনশাল্লা এখন অবধি সমস্য নাই ... তাই কইলাম, শহরের মানুষের মনের দুঃখের নিদান পল্লীর কাদাপানিতে আছে। আল্লায় রাইখা দিসে। আর কে রাখব। আবার কবে আসবেন।
পোলা-মাইয়া নিয়া আইসেন।
আরও কিছুক্ষণ কথা বলে মোবাইল অফ করলেন রহমান সাহেব।
সিগারেট শেষ করে অ্যাসট্রেতে গুঁজে সিধে হয়ে বসে রহমান সাহেবের দিকে তাকালেন জুবায়ের রহমান। চোখে প্রশ্ন।
রহমান সাহেব বললেন,মিসেস রুবি ইসলাম।
গত বছর আসছিল। মেয়ের সমস্যা ছিল। গায়ে কাদা মাখায়া ঠিক হইয়া গেছে।
ও। জুবায়ের রহমান অবাক হলেন না।
তিনি পদ্মাপাড়ের জলকাদা অনেক আগেই শরীরে মেখেছেন। ছাত্রজীবনে।
তা তখন পিঠা লইয়া কি কইতেছিলেন? রহমান সাহেব জিজ্ঞেস করলেন।
জুবায়ের রহমান বললেন, এই রকম শীতের সময়ে পিঠা উৎসব করতে পারেন। গ্রামের মেয়েরা অংশ নেবে।
তবে একসঙ্গে সবাই না। একদিন একটা পরিবার। আগে থেকে তারিখ বলে দেবেন।
চমৎকার। আচ্ছা।
তয় রাঙার মা রে দিয়া শুরু করি। আগামী পরশু। তালতলার মাঠে। রাঙার মা স্পেশাল। আজ সকালে চিতই পিঠা খাইলেন না?
খাইনি আবার।
কতদিন পর মায়ের কথা মনে পড়ে গেল। জুবায়ের রহমানের কন্ঠে বাস্প জমে। এমনিতেই তিনি নিছক আবেগ পাত্তা দেন না। বাস্তববাদী চিন্তাবিদ বলেই হয়তো।
পিঠা কে করসে কন তো?
রাঙার মা?
তাইলে বুঝেন।
তা হইলে রাঙার মারে দিয়াই শুরু করি। তুই কি কস শামসুল?
শামসুল কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল। সে হাসল। মাথা নাড়ল।
রহমান সাহেব বললেন, চলেন পাল পাড়ায় যাই।
প্রদর্শনী কেন্দ্র কোথায় হবে ঠিক কইরা আসি। তয় বিপিনের বাড়িতে করলেই ভালো। রানি মাসিমা আমারে যে কি স্নেহ
করতেন। আমি আর বিদেশ গেলাম না।
চলেন।
জুবায়ের রহমান উঠে দাঁড়ালেন। মাথা সামান্য টলে উঠল। কদিন ধরে অল্প অল্প উইক লাগছে। কালিজিরার তেল খেতে হবে। হোসেনপুর থেকেই নিয়ে যাবেন ১ কেজি।
রহমান সাহেব বললেন, আসার পথে মোমিন বাউলের বাড়িও যামু। প্রথম চুক্তি তাঁর সঙ্গেই করমু। শুনছি শরীরটা নাকি তার ভালা না। বিজয় সরকারের দারুণ ভক্ত মোমিন বাউলা। কি চমৎকার বিজয় সরকারের গান গায়! জানিতে চাই দয়াল তোমার আসল নামটা কি।
তা হলে তো শুনতে হয়। জুবায়ের রহমান হেসে বললেন।
নিশ্চয়ই শুনবেন।
ওরা উঠানে নেমে আসেন।
শামসুল দুজন পাগলাটে মানুষের পিছু নেয়।
জুবায়ের রহমান ততক্ষণে আরেকটা সিগারেট ধরিয়েছেন।
ইয়ে, মানে, সিগারেটটা ছাড়লে হয় না? রহমান সাহেব মিনমিন করে বললেন।
কি দরকার। মাই ওনলি ভাইস। জুবায়ের রহমান বললেন।
বাদ দেন। এখন শুনেন কি বলি। বাংলাদেশে প্রায় সত্তর হাজার গ্রাম,না?
হ।
ঢাকা শহরের মানুষই ধরুন দেড় কোটি মানুষ। আমি মাত্র ২ লাখ মানুষ চাই।
ক্যান?
বলছি। ঢাকা শহরের দেড় কোটি মানুষের মধ্যে যদি মাত্র ১ লাখ মানুষ বা আরও কিছু বেশি মানুষ নিয়মিত গ্রামে ভিজিট করে তো শহরের টাকা গ্রামে চলে আসে না।
আসে।
তখন ৭/৮ কোটি ছিন্নমূল মানুষের অন্নের সংস্থান হওয়ার সম্ভাবনা ...
কথাগুলি শামসুল ঠিক বুঝল না। তবে এটুকু বুঝল-একদিন ওর একটা গাড়ি হবে।
ওর গাড়ির খুব শখ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।