আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঔপনিবেশিক আমলের শাষন কাঠামো বা অভ্যন্তরীন উপনিবেশবাদ

মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার, ধর্মান্ধতা ও দলান্ধতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। শাষন কাঠামো নিয়ে আমি এর আগে "তবে আসুন সমকন্ঠে আওয়াজ তুলি" শিরোনামে কিছু আলোচনা করেছি, এই লেখায় চেষ্টা একই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে। যে আইন বা বিধান দ্বারা বিদেশী শাসকেরা দেশ শাষন করেছে সে আইন বা বিধান ঠিক রেখে একটি স্বাধীন জাতি যখন দেশ শাষন করে তখন তারা মুক্তি পেতে পারেনা, যতক্ষন না তারা নিজ জাতি-স্বত্তার উপযোগী কোন আইন বা শাষন কাঠামো তৈরী করতে পারবে। সংবিধান সংশোধন বা নতুন সংবিধান রচনাম মাধ্যমে কোন জাতি বন্ধী শৃংখলা থেকে মুক্ত হতে পারেনা যতক্ষন না তারা নিজের অভ্যন্তরীন উপযোগী শাষন কাঠামো তৈরী করে নিবে। অভ্যন্তরীন যুগ-উপযোগী শাষন কাঠামো তৈরী না হলে বিদেশী শাসকের যায়গায় তারা শোষিত হবে দেশীয় শাসক শ্রেনী দ্বারা ঔপনিবেশিক আমলের শাষন কাঠামো দিয়ে দেশ পরিচালনা হলে তা সাধারন জনগনের জন্য সৃষ্টি করে এক ধরনের পরাধীনতা বা দেশীয় শাসক দ্বারা পরাধীন জাতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় অভ্যন্তরীন উপনিবেশবাদ।

আমরা যদি ইতিহাসের পাতায় দৃষ্টিপাত করি তবে আমরা দেখতে পাই ততকালীন জমিদারী শাষন ব্যবস্থার আমলে যে সকল জমিদার নিজ নিজ রাজ্য শাষন পরিচালনা করেছে তাদের সিংহ ভাগই ছিল উক্ত রাজ্যেরই জনগোষ্ঠীর মানুষ ছিল, কিন্তু তথাপী উক্ত রাজ্য সমূহে বাসকারী সাধারন জনগন ছিল তাদের অধীন বা প্রজা। উক্ত রাজ্যে সমূহে প্রজাগন নিজ নিজ মাতৃভূমিতে জন্ম গ্রহন করার পরও ছিল স্ব-জাতির জমিদার শ্রেনীর প্রজা, জমিদার আমলে যে সকল ফরমান জারি করা হতো তা ছিল প্রজাদের শাষন করার জন্য জমিদারদের পক্ষে জারিকৃত আইন। এভাবেই একজন মানুষ নিজ মাতৃভূমিতে থাকতো পরাধীন হয়ে। তারপর একটা সময় আসে যখন জমিদারের শাষনের বিলুপ্তি ঘটিয়ে সৃষ্টি হয় কোম্পানী শাষন বা ইংরেজ শাষন আমল, ইংরেজরা ছিল আমাদের জন্য ভিনদেশী শাসক সেই ভিনদেশী ইংরেজরা তাদের শাসন সুবিধার জন্য তৈরী করলো জমিদারী ফরমানের জায়গায় বিটিশ শাষন কাঠামো বা ঔপনিবেশিক শাষন কাঠামো যা জনগনের কল্যানে সৃষ্টি ছিলোনা, উদ্দেশ্য ছিল আমাদের শোষন করে তাদের দেশকে উন্নত করা, আর এই কাজে তাদের সহযোগী হলো বিভিন্ন জমিদার শ্রেনী জামিদারা তাদের জমিদারী টিকিয়ে রাখার জন্য ভিনদেশী বেনিয়া ইংরেজদের প্রতক্ষ্য সহযোগীর রুপে নিজেদের মেলে ধরলো, ভিনদেশী বেনিয়া ইংরেজ ও জমিদারদের সংমিশ্রনে সৃষ্টি নতুন করে গোলামীর পথ চলা এবং সেই গোলামী চলল দুইশত বছরকাল। ইংরেজ শাষন আমলের আগে এই উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ইতিহাস খুব একটা দেখা যায় না, ইংরেজরা তাদের শাষনের সুবিধার জন্য সাম্প্রদায়িক বীজ বুনে দিলো হিন্দু মুসলমানের ভিতর।

তারই ফলশ্রুতিতে ইংরেজ শাষনের সমাপ্তিতে এসে ভারত ভাগ হয় দ্বি-জাতিক ভিত্তিকে সামনে করে, সৃষ্টি হয় মুসলমানদের জন্য পুব-পশ্চিম নামে পাকিস্তান রাষ্ট্রের। ইংরেজ বিতাড়িত হবার পর পূব-পশ্চিম নামের পাকিস্তান রাষ্টটি শাষন হতে থাকে ঔপনিবেশিক আমলের শাষন কাঠামো অনুযায়ী এবং সেই সাথে যোগ হয় পশ্চিমের শাসকদের আনুকূল্য আরো কিছু কাঠামো ক্ষমতা থেকে যায় পশ্চিমের হাতে পূবের জনগন শোষনের স্বীকার হয় জমিদার ও বিটিশদের জায়গায় পশ্চিম পাকিস্তানীদের হাতে। এভাবে চলতে চলতে এক সময় পূবের মানুষগুলো জ্বেগে উঠে স্বাধীনতার জন্য নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর সৃষ্টি হয় স্বাধীন বাংলা। দেশ স্বাধীন হবার পর তৈরী হলো একটি স্বাধীন দেশের সংবিধান, কিন্তু অতিব দুঃখের বিষয় এই যে, গোলামীর জিঞ্জির সেই জমিদারী ফরমানের মতই রয়ে যায় ঔপনিবেশিক আমলের শাষন কাঠামো। বিটিশরা তাদের সুবিধার জন্য যে শাষন কাঠামো তৈরী করে পাকিস্তানীরা তাদের সুবিধার জন্য তা বহাল রাখে, আর দেশ স্বাধীনতার পরে আমাদের শাষকগন তাদের সুবিধার জন্য আগের সেই ঔপনিবেশিক আমলের শাষন কাঠামো বহাল রাখে এবং তা আজও বহাল রয়েছে, তাহলে এখন দেখা যাচ্ছে যে, জমিদারের জায়গায় আসলো ইংরেজরা আর ইংরেজদের জায়গায় পাকিস্তানীরা এবং পরিশেষে পাকিস্তানীদের জায়গায় আসলো দেশীয় শাসক নামে সেই শোষক শ্রেনীই।

ক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্থানকারী মানুষ গুলো ভিনদেশী বা বিটিশ নয় বরং স্ব-জাতি কিন্তু তারপরও কি সাধারন জনগনের ভাগ্যের কোন হের-ফের হচ্ছে না কি দিনকে দিন শুধু শোষিতই হচ্ছে? এর মূলে রয়েছে শাষন ব্যবস্থা যা সধারন জনগনের কল্যানে কোন ভূমিকাই রাখতে পারছেনা, অথাৎ শাষন ক্ষমতা যার হাতে সকল শাষন কাঠামোই তার পক্ষে রয়ে যাচ্ছে। সাধারন জনগন সেই জমিদার আমল থেকে আজ অবদি শোষিত হয়েই যাচ্ছে কারন রাষ্ট্রযন্ত্রই ক্ষমতার কেন্দ্রের লোক গুলোকে সেই সুবিধা দিয়ে চলছে, অতএব আমাদেরকে যদি এই বন্ধীদশা অথাৎ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে অভ্যন্তরীন উপনিবেশবাদ থেকে মুক্ত হতে হয় তবে আমাদেরকে প্রথমেই পাল্টাতে হবে ঔপনিবেশিক আমলের শাষন কাঠামো, তৈরী করতে হবে ক্ষমতার ভারসাম্য অনুযায়ী সংবিধান। মোদ্দাকথা ঔপনিবেশিক আমলের শাষন কাঠামো পাল্টানো ও ক্ষমতার ভারসাম্য অনুযায়ী সংবিধান যতদিন সৃষ্টি না হবে ততদিন সাধারন জনগন স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারবেনা তা রয়ে যাবে গুটি কয়েক মানুষের হাতে। দেশের রাষ্ট্রীয় শাসনকাঠানো আর সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আমার কিছু প্রস্তাব সরকার ব্যবস্থা হবে 'ফেডারেল ' পদ্ধতির কেন্দ্রীয় সরকার। (a) রাষ্ট্রপতি থাকবেন রাষ্ট্র প্রধান (b) একজন উপ-রাষ্ট্রপতি থাকবেন (c) সংসদীয় ব্যবস্থা থাকবে (b) প্রধানমন্ত্রী হবেন সরকার প্রধান এবং নির্বাহী প্রধান থাকবেন (e) বাংলাদেশ কয়েকটি প্রদেশে বিভক্ত হবে জনসংখ্যা অনুপাতে (f) উপজেলা ভিত্তিক 'স্ব-শাসিত স্থানীয় সরকার' ব্যবস্থা থাকবে (g) জাতীয় 'প্রতিরক্ষা বিভাগ' রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত থাকবে (h) সংবিধান সংশোধ বা সংযোজন হবে গনভোটের মাধ্যমে (i) একটি যুগউপযোগী সংবিধান প্রনয় করতে হবে এবং তা বিশদ ব্যখ্যার মাধ্যমে সাধারন জনগনের কাছে তুলে ধরতে হবে তারপর সাধারন জনগনের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনে নতুন কিছু যুক্ত বা বিযুক্ত করে গনভোটের মাধ্যমে বহাল করতে হবে নতুন সংবিধান ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.