আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘কেউই কথা রাখছে না’

আপাতত খেলা নেই। ফাঁকা সময়ে দেশে বসে না থেকে সাকিব আল হাসান চলে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনে, স্ত্রীর কাছে। সেখান থেকে ইংল্যান্ডে গিয়ে কাউন্টি ক্রিকেট খেলে ফিরবেন দেশে। তবে কাল দেশ ছাড়লেন এক বুক হতাশা নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে বিপিএলের পাওনা নিয়ে সে হতাশার কথাই বলে গেছেন তিনি তারেক মাহমুদ-এর কাছে

 বিপিএলে খেলোয়াড়দের পাওনা টাকা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে।

আপনার বকেয়ার অবস্থা কী?
সাকিব আল হাসান: আমি প্রথম ২৫ পার্সেন্ট টাকা পাওয়ার পর আর পাইনি। এখন পর্যন্ত আমার অর্ধেক টাকা পেয়ে যাওয়ার কথা। জুন মাসের মধ্যে ক্লিয়ার হয়ে যাওয়ার কথা পুরো টাকাই। সেখানে জুন মাস চলে আসছে, এখনো ২৫ পার্সেন্টেই আছি। বাকি ২৫ পার্সেন্ট পাইনি, এরপর যে আরও ৫০ পার্সেন্ট পাওয়ার কথা, সেটার তো কোনো চান্সই দেখছি না।

সেকেন্ড পেমেন্ট পাইনি, থার্ড-ফোর্থ পেমেন্ট কীভাবে পাব? বোর্ড বলেছিল, তারা আমাদের টাকা দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে। কিন্তু আমি তো কোনো উদ্যোগ দেখছি না কিংবা এমন কিছু দেখছি না, যাতে মনে হবে আমরা টাকাটা পেতে পারি। আল্লাহই জানেন, কবে টাকা পাব। আশা করে বসে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
 এ ব্যাপারে আপনার ফ্র্যাঞ্চাইজি কী বলে?
সাকিব: ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে কথা হয়নি।

যেহেতু দায়িত্বটা বোর্ড নিয়েছে, আমরা তাদের ওপরই ভরসা করে আছি। গতবার ব্যাপারটা ফ্র্যাঞ্চাইজিদের হাতে ছিল। তাদের কাছ থেকে যেভাবে টাকা নেওয়া যায়, সেভাবে চেষ্টা করা হয়েছিল। এবারের চেয়ে প্রথমবার পেমেন্টের অবস্থা ভালো ছিল। এবার বেশি খারাপ।


 বোর্ডের কাছে আপনারা জানতে চাননি, কেন টাকাটা দেওয়া হচ্ছে না?
সাকিব: এখন এটা নিয়ে একজন গিয়ে কথা বললে তো আবার সে খারাপ হয়ে যাবে (হাসি)। ব্যাপারটা কেমন না...একজন গিয়ে কীভাবে কথা বলে! বোর্ডের আশায় বসে আছি...দেখা যাক। আর আমাদের পক্ষে তো ওনাদের যেয়ে যেয়ে খোঁচানো সম্ভব নয়। আমরা খোঁচাব, তারপর ওনারা কাজ করবেন...। আমার মনে হয়, তাঁদের এই কাজগুলো আরও আগে থেকে শুরু করা উচিত ছিল।


 আশা ছিল বিপিএল ক্রিকেটারদের আর্থিক সচ্ছলতা দেবে। সে স্বপ্ন কি অনেকটাই ফিকে এখন?
সাকিব: অনেকটা সে রকমই। খেলোয়াড়েরা সবাই আশা নিয়েই খেলেছে। খেলাটা সবাই খুব মন দিয়ে খেলেছে। আমার মনে হয় না, কেউ বলবে যে বিপিএলে মাঠের খেলার কোয়ালিটি কখনো খারাপ ছিল।

এ জায়গায় খেলোয়াড়েরা সৎ। বাকি যে জিনিসগুলো আছে...ফ্র্যাঞ্চাইজি বলেন, বোর্ডই বলেন কিংবা গেম অন, কেউই তাদের কথা রাখছে না।
 অন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গেও নিশ্চয়ই এ নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে। বিশেষ করে, যাঁরা এখনো তারকা ক্রিকেটার নন, তাঁদের মধ্যে কী রকম হতাশা দেখছেন?
সাকিব: এখন তো দেখি সবাই বলে, দূর, বিপিএল না হয়ে প্রিমিয়ার লিগ ঠিক সময়ে হলেই ভালো। প্রিমিয়ার লিগে যদি পুরো টাকা না-ও পাওয়া যায়, অন্তত কাছাকাছি পাওয়া যায়।

বিপিএলে তো টাকাই পাওয়া যায় না! বিশেষ করে, যারা জাতীয় দলে খেলে না, তাদের পেমেন্ট খুবই কম থাকে বিপিএলে। প্রিমিয়ার লিগের চেয়েও কম থাকে। তারাও যদি মাত্র ২৫ পার্সেন্ট পায়, তাহলে আর কী পেল? ৭৫ পার্সেন্টই নেই! কোনো কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি হয়তো অর্ধেক করে টাকা দিয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগই দেয়নি। ১০ পার্সেন্ট, ৫ পার্সেন্ট করে পেয়েছে অনেক ক্রিকেটার।

কেউ কেউ কিছুই পায়নি। জানি না, কেউ এ নিয়ে আদৌ চিন্তা করে কি না। এটা ভেবে খুবই হতাশ হই যে, আমরা এখনো এত আনপ্রফেশনাল! শুধু খেলোয়াড়েরা প্রফেশনাল হলেই হবে না, সবার প্রফেশনাল হতে হবে। খেলার পর সারাক্ষণ টাকা নিয়ে চিন্তা করতে হলে সেটা খুবই খারাপ।
 এ অবস্থায় বিপিএলের প্রতি খেলোয়াড়দের আস্থা আসলে কতটা আছে?
সাকিব: ধরেন, দেশে ও দেশের বাইরে একই সময়ে দুটি টুর্নামেন্ট হচ্ছে।

দুই জায়গায়ই আমার খেলার সুযোগ আছে, আমাকে একটি বেছে নিতে বলা হলো, আমি দেশের বাইরেরটাতেই খেলতে চাইব। সেখানে অন্তত নিশ্চয়তা থাকবে যে, আমি যতটুকু পরিশ্রম করব, তার ফল পাব।
 বিপিএল বাংলাদেশের ক্রিকেটের গোটা শৃঙ্খলাই নষ্ট করে দিয়েছে। টাকাপয়সা নিয়ে সমস্যা, ফিক্সিং বিতর্ক, এমনকি ঘরোয়া ক্রিকেটের ক্যালেন্ডারও ঠিক রাখা যাচ্ছে না এর জন্য। আপনি কী মনে করেন?
সাকিব: আমি মনে করি, এটা সিস্টেমের ভুল।

আমাদের চিন্তাভাবনায় ভুল আছে। পৃথিবীর কোনো দেশেই একটার জন্য আরেকটা আটকায় না। ইংল্যান্ডের জাতীয় দল যখন খেলে, ওদের কাউন্টি কি বন্ধ থাকে? সব দেশেই নির্দিষ্ট ক্যালেন্ডার থাকে, সে হিসাবে ঘরোয়া ক্রিকেট চলতে থাকে। জাতীয় দলের খেলোয়াড় না খেললে ঘরোয়া ক্রিকেট হবে না, তারা খেললেই কেবল হবে, এ রকম পৃথিবীর কোনো দেশে হয় বলে মনে হয় না। আসলে বোর্ড তো বেশির ভাগ ক্লাব কর্মকর্তারাই চালান।

তাঁদের চাহিদা থাকে। আর সে চাহিদা পূরণ করাই সবার দায়িত্ব হয়ে যায়।
 বিপিএল দেশের ক্রিকেটে এত সমস্যার সৃষ্টি করছে, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এটা কি আর চলা উচিত?
সাকিব: পরিস্থিতির উন্নতি না হলে কারও ক্রিকেটই খেলা উচিত নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এ রকম চলতে থাকলে কোনো খেলোয়াড়েরই বিপিএলে অংশ নেওয়া উচিত নয়।
 বিপিএলে ফিক্সিংয়ের অভিযোগও উঠেছে।

আপনার কী ধারণা, ফ্র্যাঞ্চাইজি ও বোর্ড ঠিকভাবে পাওনা শোধ করলে খেলোয়াড়েরাও কি অনৈতিক কাজগুলোতে উৎসাহ কম পেতেন?
সাকিব: অবশ্যই। তবে এটাই যে একমাত্র পথ, তা নয়। খেলোয়াড় নিজে সৎ থাকলেই কেবল এটা রোধ করা সম্ভব। সঙ্গে সবকিছুতে যদি পেশাদারি থাকে, এটা আরও কমে আসবে। কিন্তু এসব ঠিক না থাকলে অন্যায় কাজের প্রবণতা বাড়বে।

জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের বিপিএল ছাড়াও আয়ের পথ আছে। জাতীয় দলের বাইরের খেলোয়াড়দের জন্য ঘরোয়া ক্রিকেটই সব। ১০ হাজার ডলার কন্ট্রাক্ট ফির কোনো খেলোয়াড়কে কেউ যদি বলে, ফিক্সিং করলে আমি তোমাকে এক ম্যাচের জন্যই ১০ হাজার ডলার দেব, সে তো কাজটা খুশিমনেই করবে। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.