সরকার ও বিরোধী দলের সংলাপের দুয়ার খুলেও খুলছে না। আবার একেবারে বন্ধও হচ্ছে না সংলাপের সম্ভাবনা। দুই দলকে আনুষ্ঠানিক সংলাপে বসাতে পর্দার আড়ালে কূটনৈতিক মহলের জোর তৎপরতা চলছে। সংলাপ ও সমঝোতা ইস্যুতে সর্বশেষ গতকাল দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের বাসায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা মিলিত হয়েছিলেন এক মধ্যাহ্নভোজে। বিদেশি কূটনীতিক, দেশীয় ব্যবসায়ী ও বিশিষ্টজনদের চেষ্টা-তদবির সত্ত্বেও দুই দলের অবস্থানগত বরফ গলছে না।
উভয় দলই যার যার অবস্থানে অনড়। সমাধানের পথে হাঁটছে না কেউই।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের আশা- নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনের পথে পা বাড়াবে। অন্যদিকে বিএনপি নেতাদের মতে, বিরোধী দলকে বাইরে রেখে নির্বাচন করতে গেলে সারা দেশে সরকারবিরোধী গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে। নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচন হলে তা প্রতিহত করা হবে।
এদিকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে বিশ্লেষকরা বলছেন, সংলাপ সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচন না হলে সংঘাত অনিবার্য। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন না হলে তা দেশি ও আন্তর্জাতিক মহলেও গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
সংলাপ সমঝোতা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আওয়ামী লীগ সংলাপ চায় বলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতাকে ফোন করেছেন। তাদের জন্য এখনো সংলাপের দরজা খোলা। কিন্তু বিএনপি জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য একের পর এক হরতাল দিয়ে যাচ্ছে।
আমরা সর্বদলীয় সরকারে অংশ নেওয়ার জন্য বিএনপিকেও অনুরোধ করছি। যদি তারা না আসে তাহলে তো আমরা বসে থাকব না। বিএনপির বাইরে অন্য দলগুলোকে নিয়ে সর্বদলীয় সরকার গঠন করা হবে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই হবেন সেই নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের প্রধান। অন্যদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে বলেন, সরকার সংলাপ সমঝোতার পথ উন্মুক্ত না করলে চূড়ান্ত সমাধান হবে রাজপথেই।
সব দলের অংশগ্রহণে একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, সরকার নির্বাচন নিয়ে লুকোচুরি খেলছে। সংলাপ নিয়ে নাটক করছে। বিএনপিকে বাইরে রেখে একতরফা নির্বাচন এ দেশের মানুষ গ্রহণ করবে না। এদিকে আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সর্বদলীয় সরকারে বিএনপির অংশীদারিত্বের পক্ষে। এ প্রশ্নে বিএনপি নমনীয় হলে প্রয়োজনে বিএনপিকে আনুপাতিক হারের তুলনায় বেশি সংখ্যায় মন্ত্রী দেওয়া যেতে পারে সর্বদলীয় সরকারে।
এমনকি গুরুত্বপূর্ণ একাধিক মন্ত্রণালয় ছেড়ে দিতেও মানসিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে সরকারি দল। এর বাইরে অন্যকিছু ভাবছে না আওয়ামী লীগ। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান করে গঠিত কোনো সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। নির্দলীয় সরকার দাবিতে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের মুখে নির্দলীয় সরকার পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে বাধ্য হবেন শেখ হাসিনা, এমনটাই আশা করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা।
এ দাবিতে আগামী সোমবার থেকে টানা ৯০ ঘণ্টা হরতাল দেওয়ার কথাও ভাবছে দলটি। এর পর প্রয়োজনে লাগাতার কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে বাধ্য করার কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তবে দলের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাসীনরা যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি কিংবা অন্য কারও নেতৃত্বে সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দেয় সেক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশ নিতে রাজিও হতে পারে বিরোধী দল। এক্ষেত্রে মন্ত্রিসভায় সমানসংখ্যক সদস্যসহ লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির প্রয়োজনীয় শর্ত দেওয়া হতে পারে। এদিকে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, চীনসহ প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো।
সংলাপ সমঝোতায় বসাতে দুই নেত্রীর সঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনের ফোন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির চিঠির পর কার্যত কোনো ফলাফল না এলেও এখনো জোর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা প্রধান দুই দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। গত দুই দিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল সম্পর্কিত পররাষ্ট্রবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান স্টিভ শ্যাবট। তিনি এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সর্বশেষ গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্টিভ শ্যাবট বলেন, তার দেশ চায় বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক।
এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের সংঘাত-সহিংসতা প্রত্যাশা করে না তারা। সব দলের অংশগ্রহণের জন্য সংলাপ করার পক্ষেও মত দেন তিনি। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরাও চাই সংলাপ সমঝোতার মাধ্যমে আগামীতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল সেদিকে না গিয়ে একতরফা নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে। তারা এখন নির্বাচনকালীন সময়ে সর্বদলীয় সরকার গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছে।
যার প্রধান হবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, সর্বদলীয় সরকারে আমরা যাব না। নির্দলীয় সরকারের অধীনেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে। এ জন্য প্রয়োজনে সব ধরনের আন্দোলনে যাব। শেষ পর্যন্ত সংলাপ হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, তার দল আশাবাদী দুই নেত্রীর মধ্যে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
সব দলের অংশগ্রহণে দেশে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, সংলাপ না হলে দেশে যে ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি হবে, এর দায় প্রধান দুই দলকেই নিতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।