আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কক্সবাজার ভ্রমন ০৬

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

সুইমিং পুলটা বাঁক খেলানো, একটা পাশে পানির উচ্চতা কম, অন্য দিকে অথৈ পানি। গভীরতা মনে হয় ৩ ফুট থেকে ৮ ফুট। যেখানে গভীরতা ৮ ফুট সে জায়গাটা ৫ মিটার ব্যসার্ধের একটা বৃত্তের মতো, তার সামনে আরও একটা বৃত্ত সেটা হয়তো ৪ মিটার ব্যসার্ধের। সবটাই আনুমানিক হিসাব। সেখানেই দেখলাম সাপের মতো প্যাঁচিয়ে আছে একটা জুটি।

বয়েস খুব বেশী হলে ২৪ থেকে ২৬। সামান্য পৃথুল, ছেলেটা এবং মেয়েটার গোলগাল চেহারা, গোলগাল শরীরে, গায়ে গায়ে লেপ্টে কিনারা ধরে ঘুরছে চারপাশ। মাঝে মাঝে পানির নীচে ডুব দিয়ে চুমি খাচ্ছে, জড়িয়ে দাড়িয়ে থাকছে, ছেলেটার পিঠের উপর ভাসছে মেয়েটা। মেয়েটা উপুর হয়ে শুয়ে আছে পানির উপরে, ছেলেটার ঘাড়ে ভর রেখে, সাঁতার শিখবার চেষ্টা করছে। কক্সবাজারে ঈদ পূজার যৌথ বন্ধে গ্রামশুদ্ধ মানুষ নিয়ে হাজির হয়ে পাব্লিকেরা।

সামনেই একটা এমন পরিবার দেখা গেলো, ছেলে মেয়ে মা বাবা শ্বশুর শ্বাশুরী এবং তাদের পরিবার নিয়ে বিশাল এক দঙ্গল। একজন নিসঙ্গ মহিলা হাতে একটা বল নিয়ে ভাসছে। তার স্বামী একটু দুরে সুইমিং পুলে পা ডুবিয়ে বসে আছে। তার ছেলে দুর থেকে দৌড়ে আসলো, এসেই মহিলার ঘাড়ে চেপে বসলো। ছেলেটা সাঁতার জানে না তেমন, মহিলার হাঁশফাস অবস্থা, ডুবে যাচ্ছে।

কোনো মতে কিনারে এসেই দমাদ্দম ছেলের পিঠে, তার পর স্বামীর কাছে অনুযোগ। স্বামীও ক্ষিপ্ত স্বরে ছেলেকে ধমক। অনেক রকম নাটক হয়ে যাচ্ছে চারপাশে। স্বামীর তলপেটে স্তন চেপে বসে আছে এক মহিলা। কি ঘটছে সেখানে দেখার উপায় নেই।

তবে সেই এলাকায় না যাওয়াই উত্তম। আমি নীচে নেমে আমার সাঁতারের স্বল্প জ্ঞানের প্রকাশ ঘটাতে গেলাম। বেশী না আড়াআড়ি ৮ মিটার পার হবো। শালার মানুষের শরীরের তুলনায় মাথা ভারী, অন্য কোনো প্রাণীকে কখনই সাঁতার শিখতে হয় না, তাদের মাথার গড় ঘনত্ব পানির গড় ঘনত্বের কম। কিন্তু মানুষের শরীরে গড় ঘনত্ব পানির ঘনত্বের কম হলেও মাথার ঘনত্ব পানির গড় ঘনত্বের দ্বিগুনের বেশী।

সুতরাং আমাদের যাবতীয় সাঁতারের প্রাথমিক কলাকৌশল আদতে আমাদের মাথাকে পানির উপরে রাখবার প্রচেষ্টা। অনেক বছর পদার্থ বিজ্ঞান কিংবা অংক নিয়ে পড়লে সব কিছুর গাণিতিক সমীকরণ খুঁজবার একটা বদাভ্যাস তৈরি হয়েই যায়। আমিও সাঁতার শুরু করবার আগেই সমীকরণ মেলাতে বসি। ভেসে থকবার জন্য তেমন কিছু কি করার প্রয়োজন আছে? আমাদের শরীরের অপসারিত পানির ওজনের সমান ওজন আমরা হারাবো, আর্কিমিডিস এই আবিস্কার করে ন্যাংটা হয়ে শহরের রাস্তায় দৌড় দিয়েছিলো, আমি শর্টস পড়ে তার চেয়ে একটু সামনে আগাই, আদতে যদি আমি সোজা দাঁড়িয়ে থাকি তাহলেও আমার সমান ওজন হারানোর কথা থাকলেও আমার উপরে পানির চাপ বেড়ে যাবে। সুতরাং সাঁতার শেখবার প্রথম ধাপই হলো শরীরকে পানির সাথে সমান্তরাল রাখতে হবে।

এরপরেই সমস্যার শুরু হবে, মাথা যেহেতু সামনে ঝুঁকে যাবে তাই আমাকে একটু বাঁকা হয়েই শুরু করতে হবে যেনো মাথাটা নীচে ডুবে যাওয়ার আগেই আমি পাল্টা ধাক্কা দিতে পারি পানিতে। এইচএসসি পড়বার সময় জিকরুল স্যার একটা গম্ভীর কথা বলেছিলো। এই আজকে ভেক্টর শেখা শুরু করেছো, যদি বিজ্ঞান নিয়ে থাকো তবে সারাজীবন এটা নিয়েই থাকতে হবে। ভেক্টর তোমাকে ছাড়বে না। নিউটন মহামান্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ধারণার কথা বলেছে, প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।

তুমি দেয়ালকে যত জোরে ধাক্কা দিবে দেয়ালও তত জোরেই তোমাকে ফিরতি ধাক্কা দিবে। সাঁতারের দ্বীতিয় ধাপ এই ধাক্কা আর পাল্টা ধাক্কা। আমি হাত আড়াআড়ি করে পানিতে ধাক্কা দিয়ে পানি পেছনে সরাবো, পানিও ফিরতি ধাক্কায় আমাকে সামনে ঠেলে নিয়ে যাবে, তবে ধাক্কাটা দিতে হবে একটু আড়াআড়ি যেনো সেই ধাক্কার প্রতিক্রিয়ায় আমার মাথাটা ভেসে থাকে। বিবেচনা করে সাঁতার শুরু করলেও হঠাৎ মনে হলো এইসব গণিত বিষয়ক উপপাদ্য কোনো কাজেই আসবে না যদি তীক্ষ্ণ দেয়ালের কোনায় গিয়ে ধাক্কা লাগে। সুতরাং সাঁতারের স্বল্প গতিকেও শূণ্যে নামিয়ে আনি, মাথা উঁচিয়ে দেখি সীমানা কতদুরে, ক্রিয়া থামা মাত্রই প্রতিক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়, আমিও ডুবতে থাকি, আবারও সক্রিয় হয়ে সামনে আগাই।

অবশেষে একটু দুরে থাকতেই হাত বাড়িয়ে কোণা ধরলাম। হাঁপ ধরে গেছে। শালার ফেলপস চুদির্ভাই নাকি দিনে ৮ কিলোমিটার সাঁতার কাটে, ঐটা মানুষ না জানোয়ার? গভীরতা মাপতে চাই, ধীরে ধীরে ডুবে যাওয়ার সময় সামলে নিয়ে ঝুলে থাকি পানির ভেতরে। সামনে আগাই। অনেক হলো সাঁতার, একটু উপরে উঠি, সিগারেট টানবো।

খুব আয়েশ করেই হাতের উপর ভর দিয়ে অনেকটা উপরে উঠে পাছাটা টাইলস বসানো সীমান্তে রাখতেই পিছলে গেলো, সোজা পানিট ভিতরে চলে গেলাম। সিঁড়ি বেয়ে উঠা যায়, তবে পৌরুষের অপমান হয়ে যাবে। সামনে জলকেলীরত জুটির কাছে মানইজ্জত থাকবে না। হাঁচরেপাচরে উপরে উঠে বসলাম। সিগারেটে টান দিয়ে আবার ঝাঁপিয়ে পড়লাম।

কিছুক্ষন বল নিয়ে লুফালুফি করে একবন্ধুর সাথে বাজী ধরলাম ১০ মিটার সাঁতার দিবো। ও সাঁতার জানে। ও অন্য পাশে যাওয়ার পরে আমি শুরু করবো। ভাই মাঝরাস্তায় ডুবতে ধরলে অন্তত উদ্ধার করিস। যা থাকে কপালে, সাঁতার কাটা তেমন কঠিন না মোটেও।

তবে শেষ প্রান্তে যাওয়ার আগেই মনে হলো যদি দেয়ালে গিয়ে ঠোক্কর লাগে তাহলে শেষ। হাত বাড়িয়ে দেয়ালের কোণা ধরতে গিয়ে ব্যর্থ হলাম। আজ্জব কাহিনি পায়ের নীচে মেঝে পাই না, ডুবছি, মাথার এক হাত উপরে চলে গেলো পানি। নীচে ঠেলা দিয়ে ভুস করে ভেসে উঠলাম। বন্ধু হাত ধরে পাশে নিয়ে রাখলো।

শালার এত গভীর? সুইমিং পুলেই হালকা স্ন্যাকস আর পানীয়ের ব্যবস্থা আছে। চাইলে হার্ড লিকারও নেওয়া যায়, একটা বীয়ার ৫০০ টাকা, এক পেগ হুইস্কি ৩৫০ টাকা। আর আমার পছন্দের টাকিলার পেগ ৪০০ টাকা। এইসবের ভিতরে না গিয়ে লাস্যি বললাম, এক গ্লাস ৭০টাকা। অন্য সবাই আপেল জুস বললো আর মিল্কশেক।

আপেল জুস কিংবা ফলের জুসের বোতল খেতে জঘন্য লাগে , তবে সবচেয়ে খারাপ লাগে আপেলজুস, এরপরের তালিকায় থাকলে গ্রেপজুস। অরেঞ্জ জুস তাও গলায় ঢালা চলে, তবে সবচেয়ে ভালো তরমুজের জুস। গন্ধটাই অন্যরকম। অর্ডার দিয়ে বসে আছি, খাওয়ার আসবার কোনো পাত্তা নেই। সুইমিং পুলেই টুল বানিয়ে বসবার ব্যবস্থা, সেখানেই কাউন্টার।

তবে একটু ঝুঁকিপূর্ণ, মানে বেখেয়াল হলেই গোত্তা খাওয়ার একটা সম্ভবনা আছেই। আমি বসতে গিয়ে টার্গেট মিস করলাম, প্রতিসরণের সূত্র ভুলে গিয়েছিলাম। আমাদের নির্ধারিত ঘন্টা শেষ, পাশেই গরম পানির ছোট্টো পুল, ১ মিটার ব্যসার্ধের পুলের চারপাশ দিয়েই গরম পানি আসছে। হঠাৎ সেখানে পাফিয়ে পড়বার পড়ে মনে হলো গা পুড়ে যাবে। কিছুক্ষণ পরে বেশ আমারদায়ক উষ্ণতায় ঘুমঘুম ভাব চলে আসলো।

মিনিট ১০ সেখানে বসে যখন আবার সুইমিং পুলে ব্যক করলাম মনে হলো কেউ আমাকে হঠাৎ করেই আটলান্টিকে নামিয়ে দিলো শীতের দুপুরে। এমন ঠান্ডার ঠান্ডা। আমাদের উঠে যেতে হবে, আমরা খাওয়ার তাড়া দেই, খাওয়া আসলো যখন তখন মোটামুটি আমাদের নির্ধারিত সময়ের পরেও আধাঘন্টা পার হয়ে গেছে। সবটুকু ভেজা গা নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে রুমে ঢুকলাম। গোসল করতে হবে।

গোসল করে খেতে যাবো। গাড়ী নষ্ট হয়েছে গতকাল রাতে , সেটা ঠিক করবার প্রচেষ্টা চলছে সকাল থেকেই, তবে বেল্ট পড়ানো এখনও শেষ হয় নি। হোটেলে ঢুকে খাওয়া শেষ করতে করতেই গাড়ীর কাজ শেষ হলো। আমরাও খাওয়া শেষ করে হোটেলের সামনের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানতেছি, এমন সময় পাশ থেকে একজন মৃদু গলায় বললো, মামা কিছু লাগবো? সব আছে। আমিও নিশ্চিত হই, কি কি আছে মামা।

সব আছে কি লাগবো বলেন? কি কি আছে মদ গাঞ্জা ফেন্সিডিল। মদ ছোটোটা ৮০০ বড়টা ১৬০০। দেশি না বিদেশী মামা, ইয়ে মানে দেশী মানে ইন্ডিয়ান। না তাইলে লাগবো না। ইয়াবা আছে- গত দুই সপ্তাহে ঘুমানো হয় নি, শরীর ভেঙে ঘুম আসছে, ইয়াবা খেতে পারলে খারাপ হতো না।

কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম লিস্টিতে আর কিছু যোগ হয় কি না। কক্সবাজারে এখনও তেমন প্রকাশ্যে এসকর্ট সার্ভিসের অফার দেওয়া হয় না মনে হয়। কি আর করার লাগবো না মামা। হোটেলে ফিরে আসলাম। আজকের রাতটাই আছে শুধু।

কালকে সকালেই চলে যাবো। কিভাবে কিভাবে ২টা দিন চলে গেলো কোনো খবরই পাইলাম না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।