সুশীলের ভেকধারী এক মহা ভন্ড!
২০০৫ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর আমি বাইরে আসি। আসার সময়ে এয়ারপোর্টে বাবা আসছিলো সাথে, আর আম্মু আর ছোট ভাই বাসা থেকেই বিদায় দেয়। ইমিগ্রেশনে দেখি অফার লেটার দেখলো, আর ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টসগুলো দেখলো। তারপর ছেড়ে দিলো। প্লেনে ওঠার পর আমি চিন্তা করতেছিলাম কিভাবে কি করবো, পাশের একজন বললো সিট বেল্ট বেঁধে বসে থাকেন।
সিট বেল্ট বাঁধার পরে চিন্তা করতেছিলাম, শুধু কি এই নাকি আরো সেফটি মেজার আছে! পরে দেখি, না খালি সিট বেল্ট! তারপর খাবার দিলো, আমি ল্যাম্ব নিলাম, খাওয়ার পর কেমন কেমন জানি লাগতেছিলো। স্বাদ পছন্দ হয় নাই। চুপচাপ দেখলাম প্লেন ওড়া, পেট শক্ত করে বসেছিলাম। কিন্তু কিছুই তেমন টের পাই নাই ওড়ার সময়ে। যাইহোক, দুবাইতে ছিলো ৬ ঘন্টার ওয়েটিং।
চুপচাপ বসে আছি। ম্যাকডোনাল্ডস থেকে শখ চাপলো খাইতে। যেয়ে হাল্কা কিছু কিনে খাইলাম। তারপর এক দোকানে দেখি খুচরা বিড়ির প্যাকেট বেঁচে, বিড়ি কিনে খাওয়া শুরু করলাম। সাথে একটা গল্পের বই ছিলো, সেইটাও পড়লাম, তাও টাইম কাটে না! পরে ভোর বেলাতে ফ্লাইট আমার।
গেটের কাছে যেয়ে বসে থাকলাম।
ইংল্যান্ডে নামার পরে পাসপোর্ট কন্ট্রোলে যেয়ে আমি সব কাগজপত্র বের করে বসে আছি। কিন্তু ইমিগ্রেশনের লোকে শুধু অফার লেটার দেখলো (সিউর না, যতদূর মনে হচ্ছে অফার লেটারও দেখে নাই) আর কোর্সের নাম জিজ্ঞাসা করলো। তারপরই ছেড়ে দিলো। আমি অবাক, কারন কিছুদিন আগে লন্ডনে বোমা হামলা হয়েছে, আমি ভেবেছিলাম ভালোই জেরা করবে সাউথ এশিয়ান দেখে।
তারপর আমাকে একটা চেয়ার দেখিয়ে ওয়েট করতে বললো। আমি একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম, ওয়েট কিসের জন্য! কিছুক্ষণ পর এক মহিলা এসে একটা রুমে নিয়ে গিয়ে আমার ঠিকানার পোস্টকোড ভেরিফাই করলো, সিউর হবার জন্য আমার অ্যাকোমোডেশন ওকে আছে নাকি। টিবির টেস্ট তখন বাধ্যতামূলক ছিলো না, কিন্তু তাও আমি করে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেইটাও দেখালাম। তারপর বের হয়ে লাগেজ নিয়ে বের হলাম কাস্টমস এরিয়া থেকে।
সেখানে ইউনি থেকে ওয়েলকাম স্কিমের লোকজন ছিলো। তারা বললো একটু ওয়েট করার জন্য। আরেকজন আসবে, তারপর নিয়ে যাবে হলে। আমি বিড়ি খাওয়ার কথা জিজ্ঞাসা করলাম তাদেরকে। বলে বাইরে যেয়ে খেতে।
আমি বাইরে বের হয়ে চিন্তা করতেছি, যে কোন জায়গায় খাওয়া যাবে নাকি কোন আইন আছে! দেখি এক বুড়ো বুড়ি বিড়ি খাচ্ছে। তাদের কাছ থেকে লাইটার নিয়ে বিড়ি ধরিয়ে ছাই ফেলার কথা চিন্তা করতেছি। তখন দেখি তারা সেইখানেই বিড়ির ফিল্টার ফেলে চলে গেলো! আমি বুঝলাম দেশি স্টাইল, কোন সমস্যা নাই!
তারপর হলে এসে পৌঁছালাম। আমি একটু হতাশ। বিদেশ বলতে যেরকম বুঝি সেইরকম লাগতেছে না।
রাস্তাঘাট ময়লা ময়লা, রাস্তায় বৃষ্টির পানি, পাতা পড়ে আছে।
আসার পরে বের হলাম হল থেকে দেশে ফোন করার জন্য। একজনকে জিজ্ঞাসা করায় সে একটা দোকানে যেতে বললো, যেয়ে একটা কলিং কার্ড কিনে ফোনবুথ থেকে বাবাকে ফোন দিলাম। তখন পর্যন্ত বিদেশে আসার ফুর্তিতে আছি। বাবা ফোন ধরে আমার গলা পেয়ে কথা বলার স্টাইল কেমন জানি চেঞ্জ হয়ে গেছে।
ঐসময়ে খুব খারাপ লাগছিলো। ইচ্ছে হচ্ছিলো দেশে ফিরে যাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।