সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com
১.
তখন আজকের কাগজে কাজ করি। আমরা সিগারেট খাইতাম সাধারণত অসিফের নিচে নাইমা। তো কোনো এক ঈদের ছুটির পর প্রথম দিনের অফিস। কাজ কাম কম।
নিচে সিগারেট ধরাইছি। পাশে এক ছেলে আর এক মেয়ে কথা কইতেছিল। দুই জনে খুব উত্তেজিত। জোরে জোরে কথা বলতেছিল। আমি অলসভাবে সিগারেট টানতে টানতে হালকা মনোযোগ দিলাম।
ফোনের আলাপের সূত্রে ওনাদের দেখা হইছে। উপলক্ষ ঈদ। তো ছেলে কোলাকুলি করতে চায়। মেয়েও রাজি। কিন্তু উপযুক্ত পরিস্থিতি পাইতেছে না।
আশপাশে তুলনামূলক ভাবে কম লোক হইলেও কিছু লোক তো আছেই। আর আমি সবচেয়ে নিকটবর্তী। বুইঝা একটু সরে গেলাম। তৎক্ষণাত দুইজনে একটু কাছাকাছি আইসা হালকা কোলাকুলি সাইরা নিলো। চড়াই পাখির এক মিনিটের স্নানের মতো।
মনে দুঃখ পাইলাম। আহারে, এই পোলাপাইন ঈদের মধ্যে একটু ভাল কইরা কোলাকুলি করবে তারও ব্যবস্থা এই রাষ্ট্র করতে পারে নাই। এই রাষ্ট্রের থাইকা কী লাভ!
২.
সমকালে কাজ করি তখন। একদিন পত্রিকা অফিসে তদবির করতে আসা এক লোকের সঙ্গে পরিচয় হইলো। কোনো এক বিষয়ে নিউজ করলে তার সুবিধা হয়।
আমার সাথে তার আলাপ পরিচয় কিছুই আছিল না। চা খাইতেছি তো ভদ্রলোক আইসা তার কথা কইতে থাকলেন। খেলোয়াড় হিসাবে বিদেশ গেছিলেন। সেইখানে কোনো এক মেয়ে তারে হাগ দিতে আইলে তিনি মেয়েরে শক্ত কইরা ধইরা ফালাইছিলেন। পরিমিতি বোধের অভাবে তাকে অ্যাবিউজের অভিযোগে পড়তে হয়।
ফল স্বরূপ দল থেকে বহিষ্কার। ওনার বক্তব্য হইলো, এইটা হইলো একটা সাজিস। ষড়যন্ত্র।
লোকটার পরিস্থিতি সুখকর নয়। আবার তার আবালপনাও সমর্থনীয় নয়।
একটা মিশ্র অনুভূতি হইলো।
৩.
গত বছর এক অনাবাসি বন্ধুর সঙ্গে কথা হইতেছিল। তো তারে জিগাইলাম যে, হাগ হোল্ড এইগুলা একটু ক্লিয়ার কইরা বলো। বন্ধু বলে, হাগ তুমি যে কাউরে করতে পারো। বিষয়টা একটু সামাজিক।
নিরাপদ দূরত্ব রাইখা হাগ করা হয়। কিন্তু কেউ কাউরে ঘনিষ্টভাবে হাগ করতে পারে। সেইটা তখন বিশেষ হয়া দাঁড়ায়। এখন কেউ কাউরে হাগ করতে গিয়া আবেগবশত যদি তারে শক্ত কইরা জড়াইয়া রাখে সেইটারে কয় হোল্ড। তো বন্ধুরে জিগাইলাম, সে অর্থে হাগের চেয়ে বেশি কিছুরে হোল্ড কওয়া যায়, কী বলো।
বন্ধু কয় কইতে পারো। তারপর কী? বন্ধু কয়, এরপরে কিস আসতে পারে।
ফেসবুকে অহরহ বন্ধুরা বন্ধুদের হাগ পাঠায়। জিনিশটা ভালই। কোলাকুলির মতো ঘটনা।
বাহুদিয়া জড়ায়ে ধইরা অনুভূতি প্রকাশ।
৪.
কাতারিনা কৈফ গান গাইতেছিলেন......বিন তেরে সনম..... ডিং ডা ডিং ডা ডাং....... অমুক তমুক........ কিস মি কিস মি...... হোল্ড মি হোল্ড মি.......। বিশাল প্রগতিশীল গান। হিন্দি সিনেমার মধ্য দিয়া হোল্ড ব্যাপারটার সঙ্গে আমাদের চিনপরিচয় ঘটলো।
৫.
ছোটবেলায় ট্রান্সশ্লেন করতে গিয়া কোলাকুলির ইংরেজি শিখছিলাম এমব্রেস।
পরে জানা গেল, এসব্রেস শুধু মানুষে মানুষে না কোনো মত, ভাব বা বিষয়কেও এমব্রেস করা যায়। বিশাল ব্যাপার। ফলে, কোলাকুলি বলতে যা বুঝায় তা সীমিত অর্থে হাগ হইতে পারে বইলা আমার মত।
৬.
একবার ঈদের সময় বাড়ি গিয়া কোলাকুলি করতে গিয়া কোলাকুলি করতে গিয়া, সংখ্যায় অধিক পইড়া গেল। ফল হিসাবে ঘাড়ব্যথা শুরু হইলো।
কোলাকুলি শব্দটা অসাধারণ। কোলের সঙ্গে সম্পর্ক নাই। সম্পর্ক ঘাড়ের সঙ্গে। শব্দের উৎস ও ব্যবহারের এই তফাৎ আমাদের সংস্কৃতিতে অধিকতর সম্ভব। কিন্তু ব্যাপারটা আইলো কোত্থিকা?
৭.
একবার ঢাকা শহরে ঈদ করতে গিয়া কষ্ট পাইলাম।
পুরা ঈদটা কোলাকুলি ছাড়া শুধু টিভির অনুষ্ঠান দেইখা কাইটা গেল। আর সে অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠান হয় অল্প। খালি বিজ্ঞাপন আর পাঁচদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রচারণা। সেবার অবশ্য টিভিতে প্রচুর কোলাকুলি দেখছিলাম। টিভিতে কোলাকুলি দেখতে হইলে বিটিভি দেখবেন।
বিশেষ করে খবরের সময়।
৮.
জীবনে ওই একবারই ছেলেমেয়ের কোলাকুলি দেখছিলাম।
সিনেমায় প্রচুর হাগ দেখছি। বাস্তবে হাগ দেখছি কি না মনে পড়ে না। এইগুলা আমাদের দেশে চালু হইতে প্রচুর সময় লাগতেছে।
৯.
মূলত ছেলেরাই ছেলেদের সঙ্গে কোলাকুলি করে। মেয়েরা মেয়েদের সঙ্গে করছে এমন কোনো নমুনা এখন পর্যন্ত দেখলাম না। তারমানে মেয়েরা সবদিক থিকাই সামাজিক কোলাকুলি বঞ্চিত আনন্দ পালন করে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।