আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মনের হাজারো আঁকিবুঁকি.....

জীবন যখন যেখানে যেমন

চোখের পলক ফেলার মতই যেন এক একটা দিন অতীতের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে। এক একটা সাল শুরু হওয়ার সাথে সাথে কিভাবে যেন শেষও হয়ে যাচ্ছে। আমাদের বয়সও বেড়ে চলেছে,মৃত্যুর খুব কাছাকাছি চলে যাচ্ছি আমরা সবাই। কার কপালে কখন যে এই পৃথিবী থেকে বিদায়ের ক্ষণ লেখা আছে তা কেউ জানিনা আমরা। সবাই জীবন নিয়ে এত চিন্তিত, কিভাবে আরো উপরে উঠা যায়, কিভাবে আরো টাকা কামানো যায়, উন্নতি করা যায়।

জীবন নিয়ে চিন্তা করেই যেন জীবনটা শেষ হয়ে যায়....জীবনটাকে উপভোগ করার মত সময়ই থাকে না। সেদিন বাংলাদেশ থেকে খবর আসলো আমাদের খুব পরিচিত একজন বন্ধু (বেলাল ভাই) মারা গেছেন। শুনে খুব খারাপ লাগলো...বেচারা আমার সাথে দেখা হলেই বলতো, "ভাবী আপনি তো আমাদের সিলেটে আর একবারও আসলেন না, একবার আসেন ঘুরে যান আমার নতুন বাড়িটা দেখে যান। " অনেক টাকা পয়সার মালিক ছিলেন তিনি কিন্তু কি হলো এত টাকা কামিয়ে কিছুই তো তার সাথে গেল না। বয়সও তার তেমন একটা বেশী ছিল না, ৪৫ বা তার থেকে একটু বেশী হবে।

তার সাথে আর কোনোদিনও দেখা হবে না ভাবলে খারাপ লাগে, তখন ভাবি আমাদের আপনজনদের মাঝেও কেউ যদি চলে যান তাহলে কি হবে, তখন তো তাকেও কোনোদিন দেখতে পাবো না আর, প্রবাসী হয়ে অনেক কিছু থেকেই এইভাবে বঞ্চিত হচ্ছি আমরা। সবার কাছ থেকে কতদূরে, কেউ মারা গেলে শেষ দেখাটুকুও দেখতে পাব না... যাইহোক কপালে যা আছে তা তো হবেই এত চিন্তা করে লাভ নাই। কথায় আছে....নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা। আমার ঠিক এই অবস্থাই হয়েছে এইখানে। রোজ রোজ মুরগী আর গরুর মাংস রান্না করে করে জীবনটা শেষ হয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে থাকতে তাও বিভিন্ন জিনিষ রান্না করা যেত, গরু মরগী বাদেও মাছ থাকতো সবজি থাকতো কত রকমের। একঘেয়েমি লাগতো না। আর এইখানে মাছ হলো সব সমুদ্রের, গন্ধের জন্য সেগুলো তেমন একটা ভাল লাগে না বলে খাওয়া হয়না আর সবজি বলতে ফুলকপি আর বাধাকপি, নয়ত গাজর,শশা,টমেটো। আর কিছু এরা চিনেইনা। এদের খাওয়া সব অন্য রকমের, নাম গুলাও সব আজব...ফুফু, বেংকু আর এই গুলার সাথে মাছ, মাংস, শামুক ঝিনুক,কাঁকড়া আরো যা যা পারে মিলিয়ে একটা সুপের মত তৈরী করে খায়।

এমন কি গরুর চামড়া পর্যন্ত এরা খায়... বলা উচিৎ না তবে এসব দেখলেও বমি আসে। কি যে হবে আমাদের,কবে যে এই আফ্রিকা থেকে বদলি হবো আমার আর ভাল লাগে না। আজকে আমার রান্না করতে মোটেও ভাল লাগছিল না। একবার ভাবলাম রাধবো না, পরে আবার কি মনে করে রাধতে বসলাম। এখন দেখি রান্নায় তেল একগাদা হয়ে গেছে।

একে তো গরুর মাংস তার উপরে তেল বেশী... মেজাজটা যা লাগছে না,এখন খাওয়া গেলেই হয়। ঈদ আসতে আরো কয়েকদিন বাকী। ভাবছি ঈদের দিন বাইরে কোথা ঘুরতে চলে যাব, তবে মনে হয় হবে না। না হয় ঈদের পরেরদিন যাব অবশ্যই। রোজা শুরু হওয়ার আগের শনিবার আমরা ভেবেছিলাম একটু দূরে "কেপ কোষ্ট "নামের একটা জায়গা আছে সেখানে ঘুরতে যাব, যখনি এসব ভাবি তখনি কোনো না কোনো ঝামেলা বাধে।

এইবারও বাধলো, ঢাকা থেকে অফিসের একজন এসে হাজির হলো তাকে দাওয়াত করে খাওয়ালাম সেদিন, আর ঘুরতে যাওয়া হলো না... এখন রোজার মাসে তো আর সারাদিনের জন্য ঘুরতে যাওয়া যায়না। ঈদের পরেরদিনই যাব আশা করছি এখন নতুন কোন ঝামেলা না হলেই হয়। আমি কানাডা থেকে ঘুরে আসার পরে আর বাড়ির বাইরেই বেরোনো হইনি... দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ঢাকায় থাকতে একাই বের হয়ে যেতাম আত্মীয় স্বজন মা বাবা সবার বাসায় ঘুরতাম...হাসবেন্ড তার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও কোনো অসুবিধা লাগতো না। আমি আমার মত ঘুরতাম, এইখানে পরেছি মহা ঝামেলায়।

কোথাও কেউ নাই কৈ যাব ঘুরতে একা একা। বাংলাদেশে থাকতে তার মায়া বুঝতাম না এখন বুঝি...দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝা উচিৎ, না হলে পরে পস্তাতে হয়। **** মাংসটা দেখে আসলাম, রান্নাটা তেমন একটা খারাপ হয়নি...খাওয়া যাবে... যাক বাঁচা গেল আজকের মত।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.