আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাজি (গল্প)



(এ গল্পটি সাপ্তাহিক পত্রিকার পাঠক ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে) বন্ধু রণি যখন আমার কাছ থেকে চট্রগ্রাম সর্ম্পকে জানল তখন থেকে তার মধ্যে সেখানে যাবার একটা প্রবণতা এমন ভাবে সৃষ্টি হয়েছিল যে যেন চট্রগ্রাম না গেলে কি একটা বড় ভুল হয়ে যাবে। আমাকে যাওয়ার জন্য খুব করে ধরল। কিন্তু আমি যেথে চাইনি কারণ কিছুদিন আগে আমি সেখান থেকে এসেছি। ও বাড়িতে ছিল তাই আমকে ফোন করে জানালো তাদের জন্য যেন দুটো ট্রেনের টিকেট কেটে রাখি। আমি তাই করলাম, নির্দিষ্ট দিনে তাদের জন্য দুটো টিকেট কেটে রাখলাম।

যথা সময়ে রওয়ানা হল চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে সেখান থেকে যাবে কক্সবাজারে। রণি ও তারা ফুফাতো ভাই জাহিদ এক সাথে যাত্রা শুরু করল। ভাল ভাবেই সেখানে তারা পৌছে ছিল। প্রথম বারের মত চট্রগ্রাম ও কক্সবাজার দেখে যার পরনাই তারা অভিভুত হয়নি। আমাকে সারাণ জানিয়েছে কোথায় কখন কি করছে।

অনেকটা খারাপও লাগল কারণ আমি এ অনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি বলে। পাঁচদিন ভ্রমন করার পর তারা ট্রেন যোগে হবিগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল চট্রগ্রাম থেকে। ট্রেন ছাড়ার পর একই বগিতে বাহুবলের মাহবুবের সাথে তাদের পরিচয় হয়। রণীদের সিটের বিপরীত বসেছে একটি পরিবার তাদের সঙ্গে দুই ছেলে ও একটি মেয়ে। মেয়েটি বোরকা পরিহিতা।

কেন জানি রণীর চোখের সাথে মেয়েটির বার বার চোখাচোখি হচ্ছে। মেয়েটি বার বার হাসছিল রণির দিকে থাকিয়ে। রণি যা করে মেয়েটি তার বিপরীতে একটা কিছু করে। রণি যদি চানাচুর খায় তবে মেয়েটি খায় পটেটো। এভাবে চলল অনেক ণ।

রণির মাথায় ভুত চাপল মেয়টি সর্ম্পকে জানতে হবে। কোথা থেকে এসেছে মেয়েটি আর যাবেই বা কোথায়? মেয়েটির ছোট ভাইকে পটানোর অভিযানে নেমে পড়লো তারা । ছোট ভাইটি ডাকে সাড়া দিচ্ছে না কারণ তার আপু তাকে নিষেধ করেছে যেন রণিদের সঙ্গে কথা না বলে। অনেক কষ্টে মেয়েটির ভাইর সাথে খাতির জমাল রণি। অনেক কথা বলার পর জানা হল তার আপুর নাম মৌসুমী।

তিন ভাই বোনের মধ্যে মৌসুমী প্রথম। বাবা মার সঙ্গে তাকে হবিগঞ্জের একটি রাবার বাগানে। বাবা সেখানকার সরকারী কর্মকতা। আর দেশের বাড়ি চট্রগ্রামে। রাত বারার সাথে সাথে মৌসুমীর বাবা মা পাশে খালি থাকা সিটে শুয়ে পড়লেন।

রণির দুষ্টুমি বাড়তে থাকে। মেয়েটির মুখ দেখার জন্য তার মাঝে একটা আগ্রহ সৃষ্টি হল। কারণ ট্রেনে উঠার পর থেকে মৌসুমীর মুখ দেখা যায়নি নেখাব থাকার কারণে। মৌসুমী রণির সাথে কথা বলতে চাইছিল এমন সময় বাবা মা জেগে উঠায় আর কথা বলা হয়নি। কথা বলতে না পারায় রণি ও মৌসুমীর মুখে একটা বিরক্তির ভাব।

ইতিমধ্যে ট্রেন যাত্রা বিরতী করল আখাউড়া স্টেশনে। সেখানে নেমে জাহিদ ও মাহবুব কিছু খাবার কিনল তাদের বাড়ির জন্য। রাত তিনটায় ট্রেন শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনে এসে থামল। রণি তখন গুনগুনিয়ে গান গাওয়া শুরু করল এই পথ যদি না শেষ হয়. . . . .। এত রাতে যেহেতু গন্তব্যে যাওয়ার জন্য কোন যানবাহন পাওয়া যাবে না তাই স্টেশনে বসে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

তাই মৌসুমীদের সাথে প্লাটপর্মে বসে আছে ওরা। কথার ফাঁকে রণি সুহেল কে বলে দিয়েছে যে তোমার আপুকে বলবে একদিন তোমাদের বাসায় এককাপ চা খাওয়ার জন্য আসব। মৌসুমী শুনে হেসে উড়িয়ে দিয়েছে। মৌসুমী যেহেতু হেসে উড়িয়ে দিয়েছে তাই তাদের বাসায় যে করে হোক একদিন যেতেই হবে। ভোর ছয়টার দিকে মৌসুমী একটি বাসে করে তাদের গন্তব্য বাহুবলের উদ্দেশ্যে রওয়ান হল।

বাসে উঠার আগে মৌসুমী বার বার হাত দিয়ে বিদায় জানাচ্ছিল রণিদের। আর যতটুকু দেখা যায় ততন জানালা দিয়ে বার বার চেয়ে দেখছিল মৌসুম। ভাবতে কষ্ট হয় জয়ের যে মেয়েটি ট্রেনে তেমন একটা পাত্তা দিল না সে কেন এমন করছে বার বার! ঈদের ছুটিতে রণি বাড়িতে গেছে ইউনিভার্সিটি বন্ধ থাকার কারণে। ভাবছে এই সময় জাহিদকে সাথে নিয়ে ঘুরে আসা যায় রাবার বাগান থেকে। মৌসুমীর সাথে দেখাও করা যাবে।

যদি না যায় তবে মৌসূমীর সাথে ধরা বাজিতে হেরে যাবে রণি। ঈদের পর দিন সক্লা ১০টার দিকে যাত্রা শুর করে ঘন্টা দেরেকের মধ্যে তারা রাবার বাগানে পৌছে গেল। মোটর সাইকেল রেখে অনুমতি নিয়ে তারা রাবার বাগানের ফ্যাক্টটির দেখা শুরু করল। তার সাথে ফটো তুলতে তারা ভূল করল না। রাবার বাগানের এ্ক কর্মকর্তার কাছে জানা হল বাগান সর্ম্পকে ও মৌসুমীদের বাসার ঠিকানা।

সাইকেল নিয়ে মৌসুমীদের বাসার সামনে যেতেই সুহেলের সাথে দেখা। সাথে সাথে সুহেলের ভো দৌড়। মৌসুমকে গিয়ে জানাল যে রণি ভাইয়া ও জাহিদ ভাইয় এসেছে। মোটর সাইকেলের শব্দ শুনে বাসা থেকে বেড়িয়ে এসেছেন মৌসুমীর বাবা মা, রণিকে দেখে বললেন তোমাদের যেন কোথায় দেখেছি। রণি সঙ্গে সঙ্গে বলল চট্রগ্রাম থেকে হবিগঞ্জ আসার সময় ট্রেনে।

রণি আরও বলল আপনাদের রাবার বাগান দেখার জন্য এসেছিলাম হঠাৎ করে পানির পিপাসা পেল তাই পানি খেতে চলে এলাম। আমরা জানতাম না আপনার এখানে থাকেন। তিনি আগ্রহের সঙ্গে জানালেন বাবারা ঘরে আস। সুহেলেকে ডেকে বললেন ভাইয়াদের জন্য ঠান্ডা লেবুর শরবত নিয়ে আস। ঘরের বসার পর থেকে রণির চোখ শুধু মৌসুমীকে খুজছে।

আর মৌসুমীও পর্দার আরাল থেকে উকি মারছে দেখার জন্য। ব্যাপারটা রণির চোখ এড়ালো না। কিছু পর লেবুর শরবত এসে হাজির সাথে ঈদের জন্য তৈরী করা বিভিন্ন পিঠা। খাওয়া হল ঠিকই কিন্তু মৌসুমীর সাথে আর কথা কলা যাচ্ছে না। কারণ সুহেলের বাবা মা কেউই উঠছেন না তাদের সামন থেকে।

অনেণ বসে থেকে রওয়ানা দিতে হল। শেষ পর্যন্ত মৌসুমীর সাথে কথা হল না। সুহেলকে ডেকে রণি বলল তোমাকে বলেছিলাম তোমাদের বাসায় আসব একথা শুনে তোমার আপু হেসেছিল। এটি ছিল জীবনের প্রথম বাজি তাতে তো আর হারতে পারি না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।