মডেল -হাকালুকি হাওড়ের একজন মানব
বড় চাচা দারুন অসুস্থ। ঠিক সেই সময় বণ্যা চলছিল। আমাদের বাসা পানির তলে। আমরা পানিতে ভিজে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কোথাও হাটু পানি কোথাও কোমর পানি।
মানুষজন দলে দলে ছুটে চলছে। স্বাধীনতাযুদ্ধকালীন সময়ে নাকি এভাবেই মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে ছুটে চলেছেন। নাটকে সিনেমাতেও তাই দেখেছি। এখন আমরাও যাচ্ছি। পার্থক্য তখন পানি ছিলনাএখন আছে।
তখন মানুষ দিকভ্রান্ত। অজনার উদ্দেশ্যে গমন। আমরা যাচ্ছি আমাদের ছোট গাঁয়। নৌকাডুবি,পানিতে ডুবে মৃত্যু হরহামেশাই হচ্ছে। চারদিকে পানি আর পানি।
মনে হয় সমুদ্র। সমুদ্রের মাঝখান দিয়ে মুসা (আঃ) আর তার কওম পালিয়েছিল ফেরউনের কাছ থেকে আমাদের যাত্রা সেরকমই। রাজপথে হাঁটুপানি আর দুইপাশে বিশাল জলরাশি।
স্রোতে ভেসে যাচ্ছে খরকুটু,আবর্জনা,মরাজন্তু । পানিতে অনেক বড় ঢেউ।
মাঝখানে দূর সম্পর্কের এক ফুপুর বাসায় অবস্থান নিলাম। আর বদরুল চাচাকে গ্রামে পাঠিয়ে দেয়া হলো। দাদাবাড়ী থেকে নৌকা নিয়ে আসলে আমরা সেটায় চড়ে গ্রামে চলে যাব বদরুল চাচা আসলেই বদ। নৌকা পাঠান নি। বাবা বড় একটা নৌকা ভাড়া করলেন।
সোজা গ্রামের বাড়ী যাব। খুশিতে আর ধরেনা মন। পালতোলা নৌকা। ঢেউয়ের পরে ঢেউ ভেঙ্গে নৌকা চলছে। বড় বড় ঢেউ।
মাঝি বৈঠা ধরেছেন শক্ত হাতে। প্রচন্ড বাতাস। পানকৌরি ডুব দিয়ে মাছ ধরছে। সাদা একদল বক উড়ে চলছে আকাশে। অনেক বাড়ীঘর পানির নিচে।
উচু ভিটা দ্বীপের মতন জেগে আছে। এই পানিতেই সাতার কাটছে দুষ্টু ছেলের দল। জেলেরা মাছ ধরা জাল পেতেছে। আমন ক্ষেত ডুবে গেছে প্রায়। বড় বড় বৃক্ষ ডুবু ডুবু।
বালি হাসের দল ভেসে চলেছে। আকাশে একদল মুক্ত বলাকা। আর আমরা প্রতীক্ষায় কখন গ্রামের বাড়ি পৌছবো। অবশেষে বাড়ি পৌছলাম। নানাবাড়ির সবাই দারুণ উৎফুল্ল।
বণ্যার কদিন আনন্দে কাটলো। এককথায় তুমি মোর আনন্দ হয়ে এসেছিলে ধরায়। দীর্ঘ ছুটি। স্কুল নেই পড়ালেখা নেই। পড়ব কোথায়?রাতে ঠিকমত শোয়ার যায়গা নেই।
উঠানে কোমর পানি। অনেক ঘরের মেঝেতে পানি।
পাশের বাড়ির শহরবানু ফুফুকে জিনে আছর করেছে বদজ্বীন। চিৎকার চেচামিচি করে পাড়া মাথায় তুলেছে্। পানিতে ডুব দিয়ে মরতে যান্ ।
কয়েকজন মিলেও তাকে ধরে রাখা যায়না। চুল ধরে মারেন। গায়ের কাপড়চোপর খুলে ফেলেন্। সবার সামনে ব্লাউজ খুলে ফেললেন। তার গাপন সৌন্দর্য বেড়িয়ে পড়ল।
পুরুষরাতা হা করে গিলছিল। একজন ওঝা আনা হলো জ্বিন তাড়াবার। উনাকে শুকনা মরিচ পুড়ে দেয়া হবে। একটা শলার ঝাড়ু আনা হয়েছে। তার কঠিন ট্রিটমেন্ট হবে।
না করে উপায় কি?হিজল গাছে আগডালে উঠে বসে ছিল। সেখান থেকে কত কষ্টে তাকে নামানো হয়েছে। অই হিজল গাছই দুষ্ট জ্বিনের আখরা। ধূপের ধুয়ায় সারা বাড়ি ভুতুরে পরিবেশ বিরাজ করছে। ৭দিন পর তিনি সুস্থ হলেন।
গ্রামে অনেকদিন থাকার পর বন্যাশেষে ঢাকায় চলে এলাম। আবার স্কুলে যাওয়া আবার সেই পড়ালেখা।
বড় চাচা মারাগেছেন । সেপেটম্বরের উনত্রিশ তারিখ। হার্ট এটাক হয়েছিল।
অফিসে যাওয়ার পথে স্ট্রুক করলেন। আর হাসপাতালে নিতে নিতে মরে গেলেন। ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করল। চাচীরা সবাই ঢাকা চলে এলেন। সুন্দুরী আপা থেকে গেলেন।
আমরা সবাই একসাথে খাই। ঘুমাই। কেরামবোর্ড কেনা হলো। আমি ,রনী,বড় চাচী,বদরুল চাচা কেরামবোর্ড খেলি। চাচা বেশি ভাল খেলতে পারে না।
বদরুল চাচা আর কুলসুম চাচীর অনেক ভাব। তাদের মধ্যে সুখের খুনসুটি। মওকামত একজন আরেকজনকে ছুয়ে দেন। গ্রামের বাড়ী থেকে কেরামত চাচা আসেন। কেরামত চাচা বড় চাচার সৎ ভাই।
৫বার ডিগ্রী পরীক্ষায় ফেল করে আবারও পরীক্ষা দেয়ার প্রসতুতি চালাচ্ছেন। ফুলি আপার সাথে আমার দারুণ ভাব। ফুলি আপা লম্বা,উজ্জল শ্যামলা । আমাকে চা বানিয়ে খাওয়ান। বদরুল চাচার সাথে ঝগড়া করে কেরামত চাচা বাড়ী চলে গেলেন।
চাচীকে নিয়ে ঝগড়া। একফুল দু মালী । চাচী কথা বলেন আহলাদ করে। মনে হবে চৌদ্দ বছরের কিশোরী। স্বামী মারা গেছে।
তিনি কামনা দেবী। বয়স মোটে সাইত্রিশ। স্বামী নাই। তিনি দারুন কামনার্ত। তেতুল খান।
যৌনক্ষুধায় ছটফট করনে। আমাকে খু্ব স্নেহ করেন। তিনি বদরুল চাচার সাথে প্রায়ই ফিসফিস করে কথা বলেন। চাচীকে দারুন সুখি দেখায়। বাবা সবার বাজার একসাথে করতে পারেন না।
কতদিন এত টানা যায়। স্বলপ আয়। আমরা আলাদা হয়ে যাই। সবাইকে অবাক করে দিয়ে বদরুল চাচা কুলসুম চাচীর সাথে থাকলেন। এই নিয়ে বাবা মার মধ্যে ঝগড়া।
বদরুল চাচা আমাকে পড়া দেখিয়ে দেন না্ আমাদের ঘরে আসেন না। উচ্চতর গণিত কিছুই বুঝি না। ফেল করার আশঙ্কা। বাবার অনুরোধের পরও তিনি আমাকে পড়ান না। অবশেষে আমাকে পড়াতে রাজি হলেন কুলসুম চাচীর অনুরোধে।
তাও পরীক্ষার আগের রাতে। কুলসুম চাচীর প্রতি আমার ভাললাগা আরও বেড়ে গেল। বদরুল চাচার একটা ভাল চাকরি হলো। বদরুল চাচা কুলসুম চাচীকে নিযে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যান। ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয় ,বৈশাখী মেলা,চিড়িয়াখানা,রমনা।
একদিন ফজর নামাযের সময় দেখি বদরুল চাচা কুলসুম চাচীর ঘরে ঘুমুচ্ছেন। কুলসুম চাচি জায়নামাজে বসা। এই জমানার রাধাকৃষ্ণ। ফুলি আপার বিয়ে হলো। সবাই ফুলি আপার শ্বশুর বাড়ি।
টিভিকক্ষে চাচা আর কুলসুম চাচী। টিভি দেখতে গেলাম। দেখি বদরুল চাচা কুলসুমচাচী । ফুলি আপার বাসর রাতে তাদের মনে কুসুম কুসুম সুখ।
রাতে সবাই একসাথে টিভি দেখি।
বিশেষ করে বাংলা নাটক। সেইদিনের নাটক মহুয়ার মন। মহুয়া কালো আদিবাসি। নায়িকার প্রেমে পড়েছেন। নায়িকা অন্য একজনকে ভালবাসেন।
তীর ছোড়া প্রতিযোগিতায় জিতে যান মহুয়া। এই প্রতিযোগিতায় যে জিতবে নায়িকাকে সে বিয়ে করবে। নায়িকা পালিয়ে যান প্রেমিকের সাথে। মহুয়ার সকল প্রচেশ্টা ব্যর্থ। একসময় নায়িকার স্বামী তাকে ফেলে চলে যায়।
নায়িকা নিজ গ্রামে ফিরে আসে। একটি শিশুসহ। ঘোষণা দেয়া হয় এক বিকলাঙ্গের সাথে তার বিয়ে দেয়া হবে। মহুয়া নিজহাতে একটি চোখ অন্ধ করে বিকলাঙ্গ হয়। নায়িকার বিয়ে দেয়া হয় অন্য এক বিকলাঙ্গের সঙ্গে।
বিকলাঙ্গ স্বামী নায়িকার সন্তানকে মেরে ফেলার চক্রান্ত করে। মহুয়া শিশুটিকে চুরি করে রক্ষা করে। বিকলাঙ্গ স্বামী খুন হয়। দোষ পরে মহুয়ার ঘারে। ফাঁসির অর্ডার হয় মহুয়ার।
চৌদ্দ শিকের ভিতর থেকে মহুয়ার তীব্র আর্তনাদ "আমি জিত্তা গেছি"। মহুয়ার চরিত্রে কিংবদন্তী অভিনেতা ফরীদির অভিনয় লা জবাব। সবার চোখে পানি। সোহেলি আপার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
অসম প্রতিযোগিতা।
ভালরেজাল্ট করব কিভাবে। সহপাঠিরা একাধিক শিক্ষকের কাছে পড়ে। তারাই খাতা দেখেন । নম্বর দেন। আর আমি ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার।
সামনে এসএসসি পরীক্ষা রাত জেগে পড়ছি। পড়ার টেবিলে একা। কুলসুম চাচী রুমে এলেন। এসে আমার পিঠে হাত রাখলেন ঘুরে দেখি কুলসুম চাচী। অনেক সুন্দর।
শ্যামলা । সুন্দর স্বাস্থ্য । ঠোটগুলো দারুন সুন্দর। মাথাভর্তি ঘন কাল দীঘল চুল। কোমর পর্যন্ত বিস্তৃত।
ছোট ছোট চোখ। হাসলে আরও ছোট হয়ে যায়। চোখ হাসে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। ওনি কি আমাকে কিছু বলতে চান?
সকালবেলা ঘুম ভাঙলো।
কুলসুম বিবি উঠানে কাপড় কাচছেন। তার ব্লাউজ ভিজে গেছে। তার ঠোট থেকে পানের রঙিন রস পড়ছে। উনি ইচ্ছে করে তার সৌন্দর্য প্রদর্শন করছেন?। আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে তোমায় পাইনি আমি দেখতে তোমায় পাইনি।
চাচী এমন হলেন কেন?বদরুল চাচার পাত্রী খুজা হচ্ছে্। বাবা উঠে পরে লেগেছেন। তার বিয়ে দিতে হবে।
বদরুল চাচার পাত্রি ঠিক। পাত্রি অনেক ধনী।
ধানমন্ডিতে তার বাবার বাড়ী আছে। আমার রেজাল্ট বেশি ভাল হয়নি। পরীক্ষার মধ্যে জলবসন্ত। সিকবেডে পরীক্ষা দিতে হল। প্রচন্ড জ্বর হুমোপ্যাথিক ওষুধ রিঅ্যাক্ট করাতে অসুস্থতা দীর্ঘতর হলো।
উচ্চতর গণিত পরীক্ষাটা সুস্থ হয়ে দিলাম। সেটায় ১০০ মার্কস পেয়েছি। যাইহোক বদরুল চাচা খুশি নন। কুলসুম চাচীর যৌবনে মজেছেন তিনি। বাবার কাছে বলার সাহস নাই।
পাঁচ সন্তানের জননী। ইতিমধ্যে নানী হয়ে গেছে। তাকে বিয়ে করবেন কিভাবে?চাচীর বিরহের শেষ নাই। সমাজ বলে একটা কথা আছে। চাচীর মনের বয়স অনেক কম।
আচরনেও তিনি কিশোরী। উনি অবলীলায় একজন তরুনের প্রেমে পরে যেতে পারেন। এটা প্রেম নয় প্রতিশোধ। চাচাকে অন্যত্র বিবাহ দেয়া বাবার অন্যায়্ । তার স্বামীর মৃত্যু।
সিলেট থেকে চলে আসা্। সোহেল তার থেকে বিচ্যুত। বদরূল চাচার বিয়ে ঠিক। এটা তার কাছে প্রেম প্রতারণা। পুরুষ ছাড়া তিনি থাকতে পারেননা।
স্রষ্টা তাকে সেখানেই বঞ্চিত করেছেন।
বিয়ে সামাজিক বন্ধন। ভাগ্যের লিখন। বদরুল মিয়ার মন খারাপ। কারো সাথে কথা বলেন না।
চাচীও শুকিয়ে গেলেন । অজানা আশংকায়। জীবনটা অনেক লম্বা আর অনেক যন্ত্রণার।
বাসার অন্যদেরও মিশ্র প্রতিক্রিয়া। পশুপাখির জীবন অনেক সহজ।
মুহুর্তের ভাললাগা। মুহুর্তেই সঙ্গম আর হারিয়ে যাওয়া। কিন্তু সেটাতো মানবজীবন নয়। পাত্র-পাত্রীর ম্যাচিং হলে সামাজিক স্বীকৃতি মিললে সেটি বিয়ে। তাই বিয়েতে এত ধূমধাম।
আতশবাজী,খওয়া দওয়া এত আয়োজন।
বাবা,মা দুইজনই চিন্তিত। বিয়েটা ঠিকমত হবে তো?নাকি কোন সমস্যা হয়?আজানা আশংকা মনে।
বদরুল চাচা আর কুলসুম চাচীর সম্পর্ক তাসের ঘরের মতই। সামান্য ঝড়েই সেটি উড়ে যাবার সম্ভাবনা বেশি।
তারা কি এগুতে পারেবেন আর। সমাজকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে। তার এতিম সন্তানদের ভবিষ্যৎই বা কি? তারাই বা কি ভাববে? তাদের প্রেম কি ধামাচাপা পড়ে যাবে? দায়িত্বের চাপে। সময়ের চাকায় পিষ্ট হয়ে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।