অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা
পোষ মানে না পাখী আমার পোষ মানে না
খাঁচার পাখী খাঁচায় থেকেও বশ মানে না
সে যে উড়াল দিয়ে পালাতে চায়
সে যে উড়াল দিয়ে পালাতে চায়
খাঁচার আকাশ ভাল্লাগে না ও তার খাঁচার আকাশ ভাল্লাগে না।
সদর ঘাটের প্লাটুনে বসে জয়নাল দেখছিলো বৃদ্ধকে, দোতারা বাজিয়ে গান গাইছে, সাথে একটা ছোটো ছেলে হাতে ডুগডুগি, তাল দিচ্ছে আর গলা মেলাচ্ছে বৃদ্ধের সাথে।
মনটা বিক্ষিপ্ত অনেক কারণেই। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, শহর ছেড়ে চলে যেতেখবে কয়েক দিনের জন্য। অবশ্য দেশের পরিস্থিতি বদলে গেছে।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের সময় এখন। নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা ছাড়বে শীঘ্রই। যাওয়ার আগে হঠাৎ করেই আন্তঃকলহ বেড়ে গেছে, পরবর্তি কয়েকটা মাস কোনো রাজনৈতিক তদবিরের জোর থাকবে না জেনেই হয়তো নিজের ক্ষমতা প্রদর্শনের শেষ সুযোগটা ছাড়ছে না কেউ।
বগার কাছে গিয়ে কোনো লাভ হয় নি আদতে, তবে বল্টুর সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত ভুল ছিলো না। অন্তত কয়েকটা বিষয় পরিস্কার হলো।
আপাতত গা ঢাকা দিয়ে থাকতে হবে ওকে। এর বাইরে অন্য কোন পথ খোলা নাই। কিন্তু যাওয়ার জায়গা সীমিত। ভারতে গিয়ে লুকিয়ে থাকা যায় এই কয়েক মাস, পরিস্থিতি বদল হলে নিরাপদে ফিরে আসা যাবে, কিন্তু এত দিন নাজনীনের সাথে দেখা না করে থাকা সম্ভব না।
কিশোরগঞ্জে গিয়ে মোখলেস ভাইয়ের সাথে কাটানো যায় এই সময়টা।
তবে তাকে দেওয়ার মতো কোনো উত্তর নেই জয়নালের। কেনো শহর আর পড়াশোনা ছেড়ে এই ৪ মাস সে কাটাবে ওখানে? একটা জুতসই উত্তর খুঁজে বের করতে হবে তাকে।
পুরানো ঢাকার গলি, জ্যাম, মানুষের কোলাহল ফেলে বুড়িগঙ্গার নোংরা আবর্জনাই আপাতত একমাত্র এলাকা যেখানে তাকে হঠাৎ কোনো ঝামেলার চিন্তা করতে হবে না। হোন্ডাটা নবাববাড়ীর সামনে রেখে সিগারেটের দোকানীকে বলে এসেছে দেখে রাখতে।
ঘাটের এইপারে সমস্যা কম কিন্তু নদীর ঐ পাড়ে বিস্তর ঝামেলা চলছে, লালবাগ আর হাজারি বাগের মানুষদের ভেতরে চামড়ার ঝুট নিয়ে সমস্যা।
কামরাঙ্গীর চরে সেই দোলা লাগে, সেখানেও লাশ পড়ে। আধিপত্য আর বশ্যতার মন্ত্র সব খানেই একই ভাবে কাজ করে। প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকারক যেকোনো উপাদানই আগাছার মতো নির্মূল করে ফেলা হয়।
অন্ত্যজ এবং সমাজবহির্ভূত হলেও সম্মিলিত ভাবে তারাও একটা প্রতিষ্ঠানের অংশ, সমাজের বিরোধী প্রতিষ্ঠান এমন না, সমাজের প্রয়োজনেই এমন প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়। সমাজই এমন প্রতিষ্ঠান তৈরিতে সহায়তা করে এবং এইসব প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখে।
তবে পরিবেশটা নির্মম, অবশ্য সমাজ প্রতিষ্ঠানটি সামগ্রীক ভাবে নির্মম। মোখলেস ভাইয়ের সাথে আলোচনার অধিকাংশই সময়ই নির্বাক শ্রোতার ভুমিকাই ছিলো বেশী। তার কথাগুলো ফেলে দেওয়ার মতো নয়, গত ২ বছরে এটা অনেকবারই উপলব্ধি করেছে জয়নাল। অন্তত আমাদের প্রচলিত সমাজে এইসব উপেক্ষা আর ছদ্মসম্মানের বিভ্রান্তি চলমান।
তিলপা পাড়ায় এক ছেলেকে দেখিয়ে মোখলেস ভাই বললো এই ছেলেটাকে চিনে রাখো, ওর নাম সুলেমান।
বলতে পারো এই এলাকায় ওর কথার উপরে কেউ কথা বলবার সাহস রাখে না। সবাই ওকে সমীহ করে চলে। এলাকার যত দোকানদার, সে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে ব্যবসা করুক আর রাস্তায় মাদুর পেতে ব্যবসা করুক সুলেমান যাওয়ার সময়ে সবাই সালাম দেয়।
মুকুট ছাড়া রাজার মতো সুলেমানের প্রতি এই সমীহ কিন্তু তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধের প্রকাশ হয়, বরং তার ধ্বংস করবার ক্ষমতা তার সহিংসতার প্রতি সম্মান।
মানুষ ঝামেলা এড়াতে চায়, মানুষ নিরাপত্তা চায় নিয়মিত।
অন্তত সুলেমান পুলিশের চেয়ে বড়, সে এখানে মানুষদের নিরাপত্তা দিচ্ছে, তার নির্মমতা দিয়েই সে এই নিরাপত্তা প্রদান করে, ঐ যে হোটেলটা দেখতেছো, ক্যাফে রুস্তম, ঐখানে এক মেয়ের ব্যাগ নিয়ে দৌড়ি দিছিলো এক ছোকরা। সুলেমান সেখানেই ছেলেটাকে খুন করলো। দোকান কয়েক ঘন্টার জন্য বন্ধ ছিলো, তবে অজ্ঞাতনামা খুনীকে কেউ শনাক্ত করে নি।
সুলেমান নির্মম, তবে মানুষ তাকে দেখলে ভরসা পায়, একই সাথে তার দুর্বীনিত চেহারাকে ঘৃণা করে। এই সামাজিক ঘৃনাই তার একমাত্র প্রাপ্তি।
সমাজ তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে পারে না, তাই তাকে উপেক্ষা করে, কিন্তু অবজ্ঞা করে না। , অবজ্ঞার পরিণতি মৃত্যু।
পরিস্থিতি বদলাবে, একদিন অন্য কোনো সুলেমান তৈরি হবে এখানে, সেই এই সুলেমানের কতৃত্বকে ছিনতাই করবে, সুলেমানও একদিন রাস্তায় লাশ হয়ে পড়ে থাকবে। এবং সেই দিন তাকে যে খুন করলো সেই মানুষটাকেও কেউ শনাক্ত করবে না, মেরুদন্ডহীন মানুষেরা নতুন ভীতির কারণ খুঁজে নিবে কিন্তু সম্মিলিত ভাবে এর প্রতিরোধ করবে না। যুথবদ্ধতার শক্তিকে উপলব্ধি করবার ক্ষমতা নেই এইসব শহুরে মানুষদের।
তারা নিজস্ব জীবনের খাঁচার বন্দী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।