আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জয়নাল- বৈকালিক আলাপনের পর

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

জয়নাল হাঁফ ছেড়ে বেচেছে,14 বাই 12 একটা ঘর মানুষকে কিভাবে পিষ্ট করে এর কোনো বোধ আগে তার ছিলো না, সাজানো একটা পরিবেশে নিজের উৎপাত মনে হয়েছে, সংশয়ের চেয়ে বেশী ছিলো সংকোচ, কোথাও দাগ পড়লো কি না, কোনো একটা বিচু্যতি ঘটলো কি না, এত সব ভাবনা ভাবলে কি আর সহজ বসে থাকা যায়। আন্দালিফ ভাই ডেকেছিলেন কেনো জানা হলো না, তেমন আলোচনাই হয় নি, যে টুকু সময় ছিলো, মনে হচ্ছিলো অনন্ত কাল একটা রায় শোানার অপেক্ষায়, অনেকটা জাজের সামনে দাঁড়ানোর মতো, আদালতের মোটা কাঠের রেলিং ঘেরা জায়গাটা চেপে ধরে, বুকের উপর চেপে বসে, আর সংকীর্ন আদালতের উচু ছাদে ক্রমশ নীচে নামতে থাকে, সেই সাবেকী বেঞ্চগুলোর অবস্থান বদলায়, অবশেষে সব কিছু হুড়মুড় উঠে আসে বুকের উপরে, দমবন্ধ লাগে, মনে হয় কিছু একটা আটকে আছে গলার নিচে, অবশ্য শুনানির সময়টা বেশী না,ব্যাকিংয়ের জোড় বলেই হয়তো, নিয়মিত হাজিরা দিতে যায়, উকিল আদালতের সামনে পেশ করে ইওর অনার আমার মককেল একজন সম্মানিত মানুষ,তার নিজস্ব ব্যাবসাপ্রতিষ্ঠানের কাজে তার বাইরে থাকা প্রয়োজন, তাই তার জামিনের সময়কাল বাড়িয়ে দিন- এমন সব শব্দগুচ্ছের পর, আরও 1 মাস পরে শুনানির ডেট দিয়ে মামলা ডিশমিশ করে দেন, এজলাস থেকে বেড়িয়ে আসার পর চমৎকার একটা অনুভুতি হয়, মনে হয় বাতাস ঢুকছে শরীরের প্রতিটা গহবরে। অবশ্য সম্পুর্নটাই একটা ছল, আই ওয়াশ, তার আবার ব্যাবসা কি, অবশ্য উকিলের মুখে সম্মানিত শব্দটা শুনে অন্য রকম একটা আবেশ তৈরি হয়, এমন একটা সাজানো গোছানো সভ্য গোছের জীবন যাপনের স্বপ্নও তার ছিলো। উকিল পেশাটা তার পছন্দ না মিথ্যার বোসাতি, অকারনে মিথ্যাচর্চা, তার ইচ্ছা ছিলো- আসলে কত কি ইচ্ছা ছিলো তার, সময়ের সাথে সাথে ইচ্ছাগুলোরও পালা বদল হয়েছে, পরিবর্তন হয়েছে, দ্্বান্দ্বিক বস্তুবাদের মতোই, পরিবেশের প্রভাবে মানুষের চেতনার পরিবর্তন হয়। বস্তুসমুহের অবস্থান, সজ্জ্বা মানুষকে নিয়ন্ত্রন করে-জলিল ভাই বলেছিলেন, বার বার ভাঙতে হবে।

বৃত্তকে ভেঙে নতুন একটা পয়েন্টে নিয়ে যাবে, ডিসেন্টরালাইজেশন, মোরালিটি, কমিউন, কত কি। ইস্পাত অবশ্য পাঠ্য ছিলো, আলোচনা সভায়, নিকোলাই আর কালীচরনের ভেটরের প্রভেদ খুঁজে নেওয়া, সেসব নিয়ে নৈয়ায়িক, নৈর্ব্যক্তিক তর্ক খারাপ লাগতো না, মনে হতো অনেক কিছুই ঘটছে জীবনে, এই ঘুনে ধরা সমাজটাকে বদলাতে হবে, এই স্বপ্নটাকেই আঁকড়ে ধরে বাঁচতে হবে, পরিবর্তন আসবেই একদিন, সম্মিলিত মানুষের চেতনা এক দিনে বদলায় না, মানুষের রক্তের স্রোতে নির্মিত হয় ভাবনার দেয়াল, এক একটা আত্মত্যান এই দেয়ালের বুনিয়াদ শক্ত করবে, একএকটা শবের আঘাতে মানুষের ঘুনে ধরা চেতনার দেয়ালটা নড়ে উঠবে, একজন দুই জন এভাবেই আঘাতে আঘাতে সব ভেঙে ফেলতে হবে। এবং আমজনতার মুখের ভাষা জোগাবে অন্য জনায়, এই জায়গাটাই আমাদের বৌদ্ধিক উৎকর্ষতা, শ্রমিকেরা শ্রম দেয়, তাদের চেতনা শানিত করা, তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তাদের পাশে থাকা, এবং তাদের প্রাপ্য কি এটা তাদের বুঝিয়ে দেওয়া, এই বোঝানোটাই আসল, শ্রমিক যদি নিজেই বুঝতে পারে তার কি অধিকার, তাহলে সেই অধিকার রক্ষার অনুপ্রেরনা আসবেতার ভেতর থেকে। এই যে গনসঙ্গিত এটারও প্রয়োজন আছে, এক একটা শব্দ জমবে, মেহনতি মানুষের মুখের ভাষায় উঠে আসবে বিপ্লবের চেতনা, এবং শানিত এইসব মানুষেরা সম্মিলিত ভাবে ভেঙে ফেলবে পুঁজিবাদের শেকল, এটা সব মানুষের সমাজ হবে, এই স্বপ্নের পথা আমরাই প্রথম যাত্রা করছি না, এর আগেও অনেকে এই পথে রওনা দিয়েছে, তাদের যা কিছু অর্জন তার সুফল ভোগ করছি আমরা, আর আমাদের পরিশ্রমের সুফল ভোগ করবে ভবিষ্যত প্রজন্ম। দ্্বন্দ্ব আর বিরোধই আমাদের সব কিছু চিনতে সাহায্য করে, আমাদের ভাবনায় সংশ্লেষিত হয় সত্য, আর সত্যের প্রকোপ ভয়ংকর, এই সত্য চিনতে পারলেই শ্রমিকশোষন সম্ভব হবে না তাই ধর্মের আফিম দিয়ে মুখবন্ধ করে রাখে শ্রমিকদের, আমাদের এ জায়গাটাকে চিনটে হবে, এদের স্বরূপ বুঝতে হবে, বুঝটে হবে মানুষ সরল যুক্তিহীন বিশ্বাসে চলে।

কোনো রকম প্রশ্ন করে না, প্রশ্নবিবর্জিত শ্রমিক কলুর বলদের মতো, তার শ্রমে ভিজে যাওয়া দেহ, তার পেশল অবয়বে দ্্রোহ নেই, সে জানেও না, অনেকটা দুর হেঁটেও সে আসলে একটা জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছে, তাকে শোষন করে শর্ষের তেল নামিয়ে নিচ্ছে পুঁজিবাদী, আইার তার শ্রম শোষনের সময় তাকেও ক্রেতা করে তোলার একটা প্রক্রিয়া করছে পুঁজিবাদী সমাজ, পূঁজিবাদী সমাজে সবাই এক একজন পন্য, সবাইকে সমাজ বিভিন্ন মুল্যে কেনার প্রস্তাব পেশ করে, সবাই নিজের দাম উপরে উঠানোর লড়াই করে, এর বিপরীতে আমাদের সামাজিক চেতনা ভিন্ন, আমরা একই সত্যকে একটু আলাদা ভাবে দেখি, এখানে মানুষ কোনো পন্য না, এরা সমাজের সম্পদ, আর কেবল মাত্র মার্ক্সবাদই এই সম্পদের সুষ্ঠ ব্যাবহার নিশ্চিত করতে পারে, আমাদের এই জায়গাতে ভাবতে হবে। অবশ্যই পথের দাবি পড়বে, সেখানে শরত বাবু বাংলাদেশের যে চিত্রটা এঁকেছেন, সেটাই বহুলাংশে বাংলাদেশের মানসিকতাকে ধারন করে, কত রকম উদাহরন আর ব্যাখ্যায় জলিল ভাই দিনের পর দিন তাদের চেতনার মান উন্নয়ন করে গেছেন। যৌনতাও পুঁজিবাদী আফিম, এই যে প্লেবয়, ভোগ সবই একএকটা ম্যাসেজ দিয়ে যাচ্ছে, আমাদের ভোগবাদী হওয়ার প্ররোচনা দিচ্ছে, আর যত সব অনৈতিক ছবি( অবশ্য কেনো যেনো জলিল ভাই কখনই নৈতিকতার বাইরে থেকে ভাবতে পারতেন না কোনো কিছু, তার জীবন ছিলো নৈতিকতা আর অনৈতিকতার দাগ মেপে চলা একজন মানুষের। ) যা আমাদের চেতনাকে কলুষিত করে, এসব দেখার পর আমাদের স্বাভাবিক চেতনা লুপ্ত হয়, অবশ্যই জীবনে যৌনতার প্রয়োজন, তবে তা কদর্য পথে না, আমাদের শ্রমিকের কামনা হবে শ্রমিকের দেহের মতোই বলিষ্ঠ এবং শোভন। অবশ্য জলিল ভাইয়ের শোভন কামনার কোনো অংশই এখন অবশিষ্ঠ নেই, আন্দালিফ ভাইয়ের বৌয়ের শরীরটা বেশ চমৎকার।

ভেতরে কেউ লাল বাতি জ্বেলে শাসন করছে, আহা পর স্ত্র ীকে নিয়ে ভাবা অনৈতিক, একটু ঝাকিয়ে দিলেই জলিল ভাই সম্পুর্ন তিরোহিত হয়ে যায়, তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না ভেতরে, কিংবা তার স্বরও এখন বন্ধ শিফনের স্বচ্ছতার আড়ালে মসৃন ত্বক, একটু উম্মোচিত হাত, সব কিছুই আলাদা আলাদা করে মনে পড়ে, চোখের নীচে আলতো কালিমা, না ঘুমানোর ক্লান্তি, সামান্য পৃথুলা, লাবন্যময়, তবে সি্নগ্ধ,কোথাও কামনা উপচে পড়ে না,কোনো কামভাব জাগে না, এ নারী শিল্পের নারী, ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়ালে যেমন অনুভুতি হয়, এমন একটা অনুভুতি ক্রমশ চেতনাকে আচ্ছন্ন করে তার। হয়তো এটাই শিক্ষার প্রভাব, অন্য কোনো ভাবে কামনাকে নিয়ন্ত্রন করতে শেখায়, কোনো রকম আড়ালে আশ্রয় নিয়ে, রূপকের পরিসীমায় বেঁধে রাখে দুর্মর কামনা কে। অবশ্য মানুষের ভাবনা বিচিত্র, সবর্তগামী, সিঁড়ি বেয়ে মানতে নামতেই রাস্তা চোখে পড়ে, এবং সমস্ত ভাবনা তার রাস্তায় স্থাপিত হয়, চারপাশে অনুসন্ধিৎসু চোখ বুলিয়ে দেখে, কোথাও জটলা নেই, দুরের টংয়ের দোকানে কেউ নেই, সামনের ঠালার সামনেও অলস কেউ দাঁড়িয়ে নেই, স্বাভাবিক প্রকৃত্তির মতোই হয়ে গেছে এখন এই পরিবেশ যাচাইয়ের প্রক্রিয়া। সবার শরীরের আনাচ কানাচ পর্যবেক্ষন করে নিশ্চিত হয়ে রাস্তার উপরে উঠে আসলো জয়নাল। কোথাও একটা সামান্য অসম্পুর্নতা আছে, কোথাও একটা বৈসাদৃশ্য নিশ্চিত আছে,হোটেলের দরজা দিয়ে হেঁটে আসা 2 টা ছেলেকে দেখছে সে, ছেলেগুলোর শার্ট নামানো,হাতে সিগারেট, অথচ তার ভেতরে কোথাও একটা গোলমালের নমুনা রয়েছে।

রাস্তার ওপাশে দাড়ানো ছেলেটা- উঁহু সে ঝট করে একশনে যেতে পারবে না, তার ভঙ্গি সেরকম না। দরজার কাছে দারোয়ানের সাথের ছেলেটাকে কোথাও দেখেছে, এবং ঐ হোটেলের সামনে থেকে রাস্তায় নেমে আসা ছেলে 2টাকেও পরিচিত মনে হচ্ছে- আর একটু সময়ের ভেতরেই পষ্ট হয় কোথায় দেখেছে তাকে, কল্যানপূরের শফিক আর ওরসাথে ঢ্যাঙা মতো যেই ছেলেটা থাকে, আর দারোয়ানের সাথে দাড়ানো ছেলেটা কালা আঙ্গুর। আন্দালিফ ভাইয়ের বাসা পর্যন্ত এসেছে তার মানে তাকে সম্পুর্ন রাস্তাটাই অনুসরন করে এসেছে, কোনো প্রয়োজন থাকলে ওরা আগার গাওয়ে যেতো, এখানে আসার কথা না। এটাই তাহলে অসস্তির কারন। হোন্ডার সামনে দাঁড়িয়ে জয়নাল প্যান্টের পিছনে হাত দিয়ে শক্ত করে বাঁট চেপে ধরলো, ফাইভ স্টার, তবে রেঞ্জ ভালোই, ঠিক মতো নিশানা করতে পারলে 100 ফুট দুরের মানুষকেও ফেলে দেওয়া সম্ভব।

আর এটা 20 ফুট, তবে দারোয়ানের সাথে যে দাড়িয়ে আছে ঐ সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে। 10 ফুটের মতো দুরত্ব, তার উপর দারোয়ানের আড়াল, একটু ভুল হলেই দারোয়ান বাবাজির জীবন শেষ। ওটাকেই প্রথমে ফেলতে হবে যদি কোনো সমস্যা হয়, আর এখান থেকে বাইরে যাওয়ার উপায় নেই, বাংলামোটর পর্যন্ত জ্যাম থাকবে, জ্যাম থাকবে সিদ্ধেশ্বরির ভেতরেও স্কুল ছুটির সময়, অন্য উপায় সোজা মালিবাগ হয়ে বাসাবো হয়ে বিশ্বরোড। সেসুযোগ পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না তার পরও। দারোয়ান ছিটকে যাওয়ার সময়ে জয়নালের ভাবনা স্থির হলো আঙ্গুরের উপর, ওকে সামলানোই ভালো, কোনো রকম ভাবনা না করেই, সোজা ঘোড়া টানলো, বদ্ধ জায়গায় ভয়ংকর আওয়াজ, সামনে হোটেলের ঝাঁপ পড়ছে, রাস্তা থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে মানুষ, কোনোটাই এখন স্পর্শ করছে না জয়নালকে।

একেবারে আদিম মানুষ, আঙ্গুর হাটু ভেঙে পড়ার পর, শফিকের দিকে নজর দিলো, ওর হাতের জিনিষটা কি সেইটা খতিয়ে না দেখেই তাক করলো, ঢ্যাঙা মতো ছেলেটা দৌড়াচ্ছে উলটো দিকে, শফিককে ঠান্ডা মাথায় বলবে না কি ঘোড়া দাবাবে এই সিদ্ধান্ত নিতে সামান্য সময় লাগছে। শফিককে গুলি করলো সে, ঠান্ডা মাথায়, পড়ে যাওয়ার পর আরও একবার, তার পর হাতরে দুরে যেতে থাকা আঙ্গুরের সামনে দাঁড়ালো, কেনো হঠাৎ এই সমস্যা হলো তার, কেনো তাকে সরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা, আঙ্গুরের মতো ভাড়াটে খুনী অকারনে তাকে ঘাঁটাবে না, তোর উপকারের কথা ভুলি নি আমি, কিন্তু আমাকে বল কে হিট করতে পাঠাইছে, অযথা আমার পিছনে আঙ্গুল দেওয়ার মানুষ তুই না, নামটা বলে ফেল। আর বাছেত পুরে আমাকে শেলটার দিছিলি এই জন্য তোকে কিছু বলবো না আমি, তবে সব আগুন সবার হজম হয় না, আমাকে হজম করতে চাইলে আমি ছাড়ে কথা বলবো না। আঙ্গুরকে রেখে হোন্ডার স্টার্ট দিলো, মানুষের স্তম্ভিত ভাব কেটেছে, ছুটে পালানো মানুষগুলো একাট্টা হয়ে উঠার আগেই তাকে এ জায়গা ছেড়ে ভাগতে হবে। মানুষের ধাওয়া দেওয়ার সাহস সংগ্রহ করতে আর কিছুক্ষন লাগবে এই সময়েই কেটে পড়া ভালো।

মালিবাগের দিকে রওনা দিলো সে, আহা আন্দালিফ ভাইয়ের বৌটা, বড় মায়া কাড়া চেহারা, আর ঘরটাকে শো পিস বানিয়ে রেখেছে, ঢুকে রীতিমতো অসস্তি, অবশ্য শেষ মুহূর্তে গ্লাসে সিগারেৎা ফেলে দেওয়া উচিত হয় নি, ফেলে দেওয়ার পর তার মনে হয়েছে কাজটা অনুচিত হয়েছে তবে তখন আর চাল ফিরিয়ে নেওয়ার উপায় নেই, হোয়াট ইজ ইয়োর মোবাইল নাম্বার- ফাটিয়ে বাজছে, মালিবাগ মোড়ে। সেখান দিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে জয়নাল......

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।