হিমাদ্রি শেখর ভদ্র
সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত জনপদ শাল্লা উপজেলা। এখানে মধ্যযুগের মতো আজও বহাল তবিয়তে আছে দ্রব্য বিনিময় প্রথা। শাল্লা যাওয়ার কথা শোনলে মানুষ আতকে ওঠে। কারণ একটাই কবি নজরুলের সেই বিখ্যাত কবিতা “দূর্গমগিরি দুস্তর মরু কান্তারও পারাবার হে লঙ্গিতে হবে রাত্রি নিশিতে যাত্রীরা হুশিয়ার”। এতো গেল মানুষের যাত্রা কথা।
এবার আসা যাক পত্রিকার যাত্রা কথায়। দূগর্ম শাল্লা দেশের জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা মোট তিনটি রুটে পরিবহন করা হয়। এগুলোর মধ্যে প্রথম রুটটি হলো হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা থেকে সড়ক পথে হবিগঞ্জ জেলা সদর। সেখান থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌযানে চড়ে হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জ উপজেলা সদর হয়ে একই জেলার পাহারপুর বাজার। সেখান থেকে পদযাত্রায় মানুষের কাঁধে চড়ে শাল্লা উপজেলা সদরে জাতীয় পত্রিকার শুভাগমন ঘটে।
দ্বিতীয় রুটটি হলো, কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলা সদর থেকে লঞ্চে যোগে পাহারপুর বাজার। সেখান থেকে প্রথম রুটের পথ-পরিক্রমার চিরায়ত নিয়ম অনুযায়ী শাল্লা উপজেলা সদর। তৃতীয় রুটটি হলো ঢাকা থেকে মৌলভীবাজার জেলার শেরপুর। সেখান থেকে শেরপুর লঞ্চঘাট। তারপর সকাল ৭ টার লঞ্চে চড়ে আজমিরিগঞ্জ উপজেলার পাহাড়পুর বাজারে পত্রিকা পৌঁছে দুপুর ১২ টায়।
বিকেল ২/৩ টায় শাল্লা উপজেলা সদর। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় জাতীয় একবান্ডিল পত্রিকা কে সবমিলিয়ে ৮০/৯০ কিলোমিটার নৌপথ পাড়ি দিতে হয়। নৌপথে ভাড়ার পরিমাণ কম আর তাই নৌকা, লঞ্চ, জেটির কেউই পত্রিকা পরিবহনের জন্য নগদ টাকা ভাড়া নেয় না। সবাই একটি করে জাতীয় পত্রিকা ভাড়া হিসেবে রেখে দেয়। তিনটি রুটে পত্রিকার বান্ডিল শাল্লা উপজেলা সদরে পৌঁছতে খরচ হয় ৫/ ৬ টি জাতীয় পত্রিকা।
জেটিতে, লঞ্চে পাহাড়পুর বাজারে মুটেও বান্ডিল নামানোর ভাড়া বাবদ নেয় হয় একটি জাতীয় পত্রিকা। নগদ টাকার পরিবর্তে ভাড়া খরচ হয় পত্রিকা। এভাবেই একবান্ডিল পত্রিকা পথ পরিক্রমার প্রান্তসীমা শাল্লায় উপনীত হয়। শাাল্লা উপজেলা সদরে সাহেব বাবুবিবি দেশ-বিদেশের খবর জানার জন্য মাত্র চারকপি পত্রিকা পড়ে থাকেন। এছাড়া স্থানীয় ঘুঙ্গিয়ারগাঁও বাজারে বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থায় কর্মরত প্রতিনিধিরা ৭/৮ কপি পত্রিকা কিনে নিয়ে পড়ে থাকেন।
এরুটে আগত পত্রিকা সুনামগঞ্জের শাল্লা, হবিগঞ্জের আমিরিগঞ্জ, মারকুলি উপজেলা সদরে পত্রিকা বিক্রি করা হয়। বিভিন্ন সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক দৈনিকে কর্মরত শাল্লা উপজেলা প্রতিনিধিগণ নিজ খরচে ভরাবর্ষায় যন্ত্রচালিত নৌ-যানের মাঝি, নিকট আত্মীয়র মাধ্যমে দিরাই উপজেলা সদর থেকে তাদের নিজ নিজ পত্রিকা সংগ্রহ করেন। শুষ্ক মৌসুমে একই পন্থায় চলে পত্রিকা সংগ্রহের কাজ। যান্ত্রিক ত্র“টির কারণে নৌযান আসতে বিলম্ব হলে অথবা ঢাকার পত্রিকার গাড়ী আসতে দেরী হলে সকালের পুর্ব নিধারিত নৌযানটি পত্রিকার বান্ডিল ফেলে চলে যায় আপন গন্তব্যে। সেই সাথে ফেলে চলমান ইতিহাসের খন্ডিত দলিল দৈনিক পত্রিকা।
পর দিন পুরোনো পত্রিকা ও নতুন পত্রিকা দুটি একত্রে পৌঁছে যায় শাল্লার সচেতেন পাঠকের দ্বারে। শাল্লা উপজেলায় ৫/৬ বছর ধরে পত্রিকার এজেন্টের কাজ ও সাংবাদিকতা করে আসেছন শীর্ণকায় জে সি বিশ্বাস (যতীন)। তার বাড়ি শাল্লা উপজেলার ভেড়াঢহর গ্রামে। জেসি বিশ্বাস বলেন, আমি নিজে পত্র-পত্রিকার সাথে জড়িত। হকারের কোন সমস্যা হলে তিনি নিজে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন।
তিনি আরও বলেন দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে প্রত্যন্ত শাল্লার মানুষের সাথে দেশ ও বহিঃ বিশ্বের যোগাযোগ স্থাপন করার ুদ্র প্রচষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। জে সি বিশ্বাস বলেন, পুরো শাল্লা উপজেলা সদরে পত্রিকার বাকী খেলাপী গ্রাহকের কাছে কয়েক বছরে তার বকেয়া পাওনা ছিলো ১০/১২ হাজার টাকা। দীর্ঘদিন যাবৎ খেলাপী পত্রিকা গ্রাহকদের বকেয়া আদায়ের তাগদা দিয়ে অবশেষে তিনি শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহিরুল ইসলামের বরাবরে বকেয়া টাকা আদায় করে দেওয়ার জন্য দরখাস্ত করেন। পরে তারই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১০/১২ জন মোটাদাগের বিলখেলাপীর টাকা আদায় করে দেন তিনি। জে সি বলেন, শাল্লার মানুষ যদি পত্রিকা পড়ে এতোটুকুও জ্ঞান লাভ করে থাকে তবেই তার পত্রিকায় কাজ করা ও পত্রিকা বিক্রির স্বার্থক হিসেবে বিবেচিত হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।