বিশ্বদৃষ্টি মৌলিক সমস্যাসমূহের সমাধান
ভূমিকাঃ
যখনই মানুষ বিশ্বদৃষ্টির মৌলিক সমস্যাগুলোর সমাধান এবং সত্য ধর্মের মূলনীতির পরিচিতি সম্পর্কে জানতে চাইবে, প্রথমেই এ প্রশ্নের সম্মুখীন হবে যে, কোন্ পথে এ বিষয়গুলোর সমাধান করতে হবে এবং কিরূপে সঠিক মৌলিক পরিচিতি সম্পর্কে জানা যেতে পারে? মূলতঃ পরিচিতির জন্যে কী কী উপায় বিদ্যমান? এদের কোনটিকে পরিচিতিসমূহ সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্যে নির্বাচন করতে হবে ?
এ বিষয়টির কৌশলগত ও পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা ও পর্যালোচনার দায়িত্ব দর্শনের পরিচিতি বিজ্ঞান (Epistemology) বিভাগের। দর্শনের ঐ বিভাগে মানুষের বিভিন্ন পরিচিতি সম্পর্কে আলোচনা করতঃ এদের মূল্যমান নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এদের সবগুলো সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে আমরা আমাদের লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যাব। সুতরাং আমাদের আলোচনা -সংশ্লিষ্ট যে বিষয়গুলো প্রয়োজনীয়, শুধুমাত্র সেগুলোর উল্লেখ করেই ক্ষান্ত হব। তবে ঐ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা ও পর্যলোচনা যথাস্থানে করা হবে।
পরিচিতির প্রকারভেদঃ
পরিচিতিসমূহকে এক দৃষ্টিকোণ থেকে চার ভাগে বিভক্ত করা যায়ঃ
১। অভিজ্ঞতালব্ধ ও বৈজ্ঞানিক পরিচিতি (বিশেষ পারিভাষিক অর্থে)ঃ এধরনের পরিচিতি ইন্দ্রিয়ানুভূতির সাহায্যে লাভ করা যায়। তবে বুদ্ধিবৃত্তি ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বোধসমূহের বিমূর্তন (Abstraction) এবং সম্প্রসারণের (Generalization) ক্ষেত্রে স্বীয় ভূমিকা পালন করে থাকে। অভিজ্ঞতালব্ধ ও বৈজ্ঞানিক পরিচিতি বৈজ্ঞানিক বিষয়সমূহে যেমনঃ পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ণ বিজ্ঞান এবং জীব বিজ্ঞানে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
২।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিচিতিঃ এধরনের পরিচিতি নির্বস্তুক ধারণার মাধ্যমে রূপ
পরিগ্রহ করে এবং এ পরিচিতিতে বুদ্ধিবৃত্তি মূল ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও পরীক্ষালব্ধ কোন কোন বিষয়, ধারণা লাভের উৎস অথবা যুক্তিপদ্ধতির কোন কোন প্রতিজ্ঞারূপে ব্যবহৃত হতে পারে। যুক্তিবিদ্যা, দর্শনশাস্ত্র ও গণিতশাস্ত্র, এ পরিচিতির অন্তর্ভুক্ত ।
৩। ধর্মবিশ্বাসগত পরিচিতিঃ এধরনের পরিচিতি দ্বিস্তর বিশিষ্ট।
বিশ্বস্ত উৎসের পূর্ব পরিচিতির ভিত্তিতে এবং বিশ্বস্ত বর্ণনাকারীর বর্ণনা থেকে এধরনের পরিচিতি অর্জিত হয়ে থাকে। যে সকল বিষয়সমূহ সকল ধর্মের অনুসারীগণ ধর্মীয় নেতাগণের বক্তব্যের ভিত্তিতে গ্রহণ করে থাকেন, সে সকল বিষয়সমূহ এ পরিচিতির অন্তর্ভুক্ত। কখনো কখনো এধরনের বিষয়বস্তর বিশ্বস্ততা, ইন্দ্রিয় ও পরীক্ষালব্ধ বিষয় বস্ত অপেক্ষা অধিকতর।
৪। প্রত্যক্ষ অনুভূতিভিত্তিক পরিচিতিঃ এধরনের পরিচিতি পূর্ববর্তী সকল পরিচিতির ব্যতিক্রম এবং কোন প্রকার মস্তিষ্ক প্রসূত অনুধাবন ও আকৃতির মাধ্যম ব্যতীত অবিকল জ্ঞেয় সত্তার সাথেও সম্বন্ধ স্থাপন করে থাকে।
এধরনের পরিচিতিতে কোন প্রকার ভুল-ত্রুটির স্থান নেই। তবে প্রত্যক্ষ অনুভূতিভিত্তিক ও আধ্যাত্মিকতা ভিত্তিক পরিচিতি বলে যা সাধারণতঃ বর্ণিত হয়ে থাকে, প্রকৃতপক্ষে তা হল এধরনের পরিচিতির মস্তিষ্কে অংকিত ব্যাখ্যারূপ যা ভুল-ত্রুটি বর্জিত নয়।
বিশ্বদৃষ্টির প্রকারভেদঃ
ইতিপূর্বে পরিচিতির যে শ্রেণী বিভাগ করা হয়েছে, তার ভিত্তিতে বিশ্বদৃষ্টিকে নিম্নরূপে বিভক্ত করা যেতে পারেঃ
১। বৈজ্ঞানিক বিশ্বদৃষ্টিঃ অর্থাৎ মানুষ অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের ভিত্তিতে সামগ্রিকভাবে অস্তিত্ব সম্পর্কে অবগত হয়।
২।
দার্শনিক বিশ্বদৃষ্টিঃ যা যুক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে অর্জিত হয়ে থাকে।
৩। ধর্মীয় বিশ্বদৃষ্টিঃ যা ধর্মীয় নেতাগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও তাদের বক্তব্যকে গ্রহণের মাধ্যমে অর্জিত হয়ে থাকে।
৪। এরফানী বা আধ্যাত্মিক বিশ্বদৃষ্টিঃ যা উদ্ভাবন, অন্তর্জ্ঞান ও এশরাক্বীয় পথে অর্জিত হয়ে থাকে।
এখন, দেখতে হবে যে, বিশ্বদৃষ্টির মৌলিক বিষয়গুলোকে কি সত্যিকার অর্থে উল্লিখিত চার উপায়ে সমাধান করা সম্ভব? অতঃপর দেখতে হবে, এদের কোন একটির বিশেষত্ব ও অগ্রাধিকারের প্রশ্ন বিবেচনার পালা আসে কিনা ?
সংগৃহিত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।